২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মেয়র সাদিক’র দুই বছরে কী পেলেন বরিশালবাসী

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

খান রফিক, ব্যুরো প্রধান, আলোকিত বাংলাদেশ :

টানা ২ বছর পার করল বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) বর্তমান চতুর্থ পরিষদ। করপোরেশনের বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহসহ তার পরিষদ বিপুল ভোটে জয়লাভ করে ২০১৮ সালের ২৩ অক্টোবর শপথ গ্রহণ করে। ২ বছরে বর্তমান পরিষদের কাছে নগরবাসীর প্রত্যাশা আর প্রাপ্তি নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ২০১৮ সালের ৩০ জুন বিজয় লাভ করেন বিসিসি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। তার এ বিজয়ে নগরীর আপামর জনতার সমর্থন ছিল, এমনটা জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ। দেখতে দেখতে মেয়র সাদিক এবং তার পরিষদের দুটি বছর শেষ হলো। কিন্তু কী পেলেন নগরবাসীÑ এ নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

প্রত্যাশা কতটা পূরণ হলো জানতে চাইলে বরিশাল নগরীর বর্ধিত এলাকা ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, অনেক বছর আগে তাদের এ এলাকা করপোরেশনের আওতায় আসে। এখন মুরগির খামার করতে হলেও বিসিসিকে কর দিতে হয়। কিন্তু এর বিপরীতে উন্নয়ন তেমন একটা হয়নি। তিনি তার এলাকায় এখনও কাদা পেড়িয়ে শহরে উঠতে হয় সাধারণ মানুষকে। সুপেয় পানির ব্যবস্থা নেই। অনেক রাস্তায় এখনও সড়ক বাতি পৌঁছায়নি।

সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন বরিশাল জেলা সাধারণ সম্পাদক ও নগরীর কাউনিয়ার বাসিন্দা কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, নগরবাসী বিসিসির বর্তমান পরিষদকে যে প্রত্যাশা নিয়ে ভোট দিয়েছিলেন, তা অনেকাংশে পূরণ হয়নি। নগরীর বেহাল সড়ক, জলাবদ্ধতা, খাল সংস্কার না করতে পাড়ায় জনগণ হতাশ। বিশেষ করে বর্ধিত এলাকার উন্নয়ন হয়নি গত ২ বছরে।

মেয়র সাদিক তারুণ্যের অহংকার এমনটাই জানেন নগরবাসী। এ প্রসঙ্গে নগরীর এক তরুণ সংগঠক বলেন, ভোটের সময় সবার মুখে মুখে ‘সাদিক ভাই’ ছিল। তিনি নগরীতে কয়েকটি পার্কও করেছেন। কিন্তু এ নগরী কতটা শিশুবান্ধব, তা নিয়ে এখন হতাশা দেখা দিয়েছে।

বাসদের বরিশালের সদস্য সচিব ও সিটি নির্বাচনে মেয়রপ্রার্থী মনিষা চক্রবর্তী বলেন, গত ২ বছরে বিসিসির বর্তমান পরিষদের কাছ থেকে যেমনটা প্রত্যাশা করেছেন তার কোনোটাই পূরণ হয়নি। বরং নগরবাসী পেয়েছেন ২০ গুণ বাড়তি হোল্ডিং ট্যাক্সের বোঝা, ভবনের প্ল্যানিংয়ে দীর্ঘসূত্রতা, নগরীতে জলাবদ্ধতা। তিনি বলেন, নগরীর উন্নয়নে তো সরকারি বরাদ্দই নেই। এ পরিষদের কাছে প্রত্যাশার চেয়ে ব্যর্থতা দেখছেন নগরবাসী। তিনি বলেন, ২ বছর অনেক সময়। এর মধ্যে কিছু না পাড়লে বাকি দিনগুলোতে কতটা পাড়বে, তা নিয়ে জনগণ শঙ্কিত।

তবে নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আক্তার উজ্জামান গাজী (হিরু) বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের ২ বছরে তাদের পরিষদ এবং মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর কাছে নগরবাসীর প্রত্যাশা অনেক ছিল। তবে করোনার কারণে কাক্সিক্ষত উন্নয়ন করতে পারেননি তারা। তারা এরই মধ্যে নগরীতে পাঁচটি টেকসই সড়ক নির্মাণ করেছেন। মেয়র নগরীর ১৩টি খাল সংস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন। করপোরেশনের দুর্নীতি দূর করে নগরভবনে প্রশাসনিক সংস্কার এনেছেন। তাদের বড় প্রকল্প পাস হলে সার্বিক উন্নয়নে নগরীর চিত্র পাল্টে যাবে। তিনি বলেন, হোল্ডিং ট্যাক্স, পানি সরবরাহ, প্ল্যানের জন্য পরিষদকে দায়ী করা যাবে না। এগুলো করপোরেশনের প্রশাসনের দায়। মেয়র বলেন, যেসব সক্টরে হোল্ডিং ট্যাক্স, পানির বিল অস্বাভাবিক দেখা দিয়েছে, তা সংশোধন করা হবে। এ ব্যাপারে বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র এবং সিটি কাউন্সিলর মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের ২ বছরে বর্তমান পরিষদ নগরবাসীকে সেবা দিতে চেষ্টা করেছেন। বিসিসির জন্য বড় প্রকল্প বরাদ্দ হওয়ার কথা থাকলেও তা একনেকে পাস হয়নি। সেটি ছিল ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। পরে কাটছাঁট করে সাড়ে ৬০০ কোটি টাকার প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। এটি পাস হলে উন্নয়ন কাজ শুরু হবে। তিনি বলেন, কিছু ভুলের কারণে হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। তবে মেয়র তা সংশোধনের আশ্বাস দিয়েছেন। নগরীতে ভবন নির্মাণে জটিলতা প্রসঙ্গে প্যানেল মেয়র রফিকুল বলেন, নগরী আগামী প্রজন্মের বসবাসের উপযুক্ত হিসেবে গড়ে তুলতে প্ল্যানিং পরিকল্পিতভাবে করতে হবে। কারও ২০০ গজ জমি থাকলে তিনি ৩তলা ভবন কীভাবে করবেন। জলাবদ্ধতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নদীর পানি ড্রেনে ঢুকে যাচ্ছে। তারা এ নিয়ে ভাবছেন। এজন্য নগরবাসীকে একটু তো কষ্ট করতেই হবে। একজন কাউন্সিলর হিসেবে তিনি নিজ এলাকায় রাস্তাঘাটের উন্নয়ন বাদে, সামাজিক কাজে সময় ব্যয় করেছেন বলে জানান রফিকুল ইসলাম। ২০১৮ সালের ২৩ অক্টোবর দায়িত্ব গ্রহণের ২ বছরে নগরভবনে কোনো কর্মসূচি রয়েছে কি না, তা জানতে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী ইসরাইল হোসেনকে ফোন দেওয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি।

সর্বশেষ