২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

যেভাবে তৈরি করবেন কোরআনের প্রতি ভালবাসা

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে বিশুদ্ধ ও শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ আল-কোরআন। কোরআনকে আল্লাহ তাআলা বিশ্ববাসীর জন্য নাজিল করেছেন কোরআন থেকে মানুষ উপদেশ গ্রহণ করার জন্য। কোরআন পাঠ, কোরআন নিয়ে ভাবনা, কোরআন বোঝার চেষ্টা করা—সবই ইবাদত। এত শ্রেষ্ঠ কিতাবের প্রতি আমাদের অনেকেরই ভালোবাসার কমতি আছে। এ কারণে আমাদের জীবনে কোরআনকে আমরা জীবনের অবিচ্ছেদ অংশ বানাতে পারিনি। মানুষ যখন কোনো জিনিসকে ভালোবাসে, সেই জিনিসের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে, তখন সে জিনিস ছাড়া ভালো লাগে না। তেমনি যখন আমাদের ভেতরে কোরআনের ভালোবাসা চলে আসবে তখন কোরআন ছাড়া আমাদের ভালো লাগবে না।

বর্তমানে আমাদের অনেকেই কোরআন তিলাওয়াত করে; কিন্তু অনেক সময় ব্যস্ততার অজুহাত দিয়ে কোরআন তিলাওয়াত কমিয়ে দেই বা একদম তিলাওয়াত করি না। অথচ নিজের কাজকে সহজ করার জন্য ব্যস্ততার সময় আমাদের আরো বেশি করে কোরআন তিলাওয়াত করার কথা ছিল। কারণ কোরআনুল কারিম মৃত আত্মাকে সজাগ করে। ঘুমন্ত বিবেককে জাগিয়ে তোলে। বিক্ষিপ্ত মন, অস্থির ভাবনা, উদাস দৃষ্টিকে মুহূর্তেই শান্ত করে তোলে। ছড়িয়ে দেয় দিক-দিগন্তে সৌভাগ্যের কিরণ। নিম্নে আমরা কোরআনের প্রতি ভালোবাসা তৈরি হবে তা নিয়ে আলোচনা করব।

ছোট বয়স থেকে কোরআন শেখানো

শিশুকে ছোটবেলা থেকেই বয়স বেঁধে কোরআন পাঠে অভ্যস্ত করে তোলা। এটি খুবই জরুরি। প্রথমেই তাকে ছোট ছোট সুরা শিক্ষা দেওয়া। এর পর ধীরে ধীরে বড় বড় সুরা শিক্ষা দেওয়া। এরপর একটু বুঝ পরিপক্ব হলেই কোরআনের অর্থ বুঝতে সাহায্য করা। কোরআনে আল্লাহ তাআলা কী বলতে চেয়েছেন! বিভিন্ন জিনিসের কত সুন্দর বর্ণনা দিয়েছেন! তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া। এর মাধ্যমে তার ভেতরে শিশুকাল থেকেই কোরআনের প্রতি ভালোবাসা তৈরি হবে, ইনশাআল্লাহ।

রাতে তিলাওয়াতের গুরুত্ব দেওয়া

রাতে কোরআন তিলাওয়াত করা। কারণ কোরআন তিলাওয়াতের উদ্দেশ্য তার অর্থ ও মর্ম ভালোভাবে আয়ত্ত করা। এর জন্য সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত সময় রাতের বেলা। দিনের বেলা মানুষের কোলাহুলের কারণে নিরিবিলি একাগ্রচিত্তে গভীরতার সঙ্গে তিলাওয়াত করা সম্ভব হয় না। সে জন্য নিয়মিত কিছু সময় রাতের গভীরে তিলাওয়াত করা। এর মাধ্যমে কোরআনের মধ্যে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা মনি-মুক্তা খুঁজে পাওয়া যাবে।

কোরআনের সুগভীর সমুদ্রে অবগাহনের সুযোগ পাবে। ধীরে ধীরে কোরআনের প্রতি ভালোবাসা ও মহব্বত বাড়বে। হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, দুই ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারো সঙ্গে ঈর্ষা করা যায় না। এক ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ তাআলা কোরআন শিক্ষা দিয়েছেন এবং সে তা দিন-রাত তিলাওয়াত করে। আর তা শুনে তার প্রতিবেশীরা তাকে বলে, হায়! আমাদের যদি এমন জ্ঞান দেওয়া হতো, যেমন অমুককে দেওয়া হয়েছে, তাহলে আমিও তার মতো আমল করতাম। অন্য আরেক ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ সম্পদ দান করেছেন এবং সে সম্পদ সত্য ও ন্যায়ের পথে খরচ করে। এ অবস্থা দেখে অন্য এক ব্যক্তি বলে, হায়! আমাকে যদি অমুক ব্যক্তির মতো সম্পদ দেওয়া হতো, তাহলে সে যেমন ব্যয় করছে, আমিও তেমন ব্যয় করতাম। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫০২৬)

দোয়া করা

প্রথমেই আল্লাহর কাছে কোরআনের ভালোবাসার জন্য নিয়মিত প্রার্থনা করা। আল্লাহ যেন কোরআনের ভালোবাসা অন্তরে গেঁথে দেয়। কোরআন যে ব্যক্তির জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছে, তার সফলতা নিশ্চিত। কারণ হাদিসে এসেছে, কোরআন মানুষকে জান্নাতের দিকে টেনে নিয়ে যাবে। জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, এই কোরআন (কিয়ামতে) সুপারিশকারী; তার সুপারিশ গ্রহণযোগ্য হবে। (কোরআন) সত্যায়িত প্রতিবাদী। যে ব্যক্তি তাকে নিজ সামনে রাখবে, সে ব্যক্তিকে সে জান্নাতের প্রতি পথপ্রদর্শন করে নিয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তি তাকে পেছনে রাখবে, সে ব্যক্তিকে সে জাহান্নামের দিকে পরিচালিত করবে। (আত-তারগিব, হাদিস : ১৪২৩)

সে জন্য নিয়মিত আল্লাহর কাছে কোরআনের প্রতি আসক্তি ও ভালোবাসা তৈরির জন্য দোয়া করা।

শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা

শয়তান মানুষকে সব সময় প্ররোচনা দিতে থাকে। সত্য পথ থেকে দূরে রাখতে সে মরিয়া হয়ে থাকে। সে জন্য শয়তান থেকে আশ্রয় চাওয়া। আর আল্লাহ তাআলা এ ব্যাপারে বলেছেন, ‘সুতরাং আপনি যখন কোরআন পড়বেন, তখন বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করবেন।’ (সুরা : আন-নাহল, আয়াত : ৯৮)

গুনাহ বর্জন করা

সব ধরনের গুনাহ থেকে নিজেকে পূতপবিত্র রাখা। কারণ গুনাহ মানুষের অন্তরকে কলুষিত করে দেয়। তখন সে অন্তরে ভালো জিনিসের প্রতি আগ্রহ জাগে না। আর কোরআন হচ্ছে আল্লাহ প্রদত্ত নুর। এই নুর আল্লাহ তাআলা অপরাধীর অন্তরে প্রবেশ করাবেন না। সে জন্য নিজেকে সব ধরনের গুনাহ থেকে সর্বাত্মক হিফাজত রাখা। আর কখনো শয়তানের প্ররোচনায় গুনাহ হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর কাছে তাওবা করে নেওয়া। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এভাবেই আমি আমার নির্দেশে তোমার প্রতি ওহিরূপে নাজিল করেছি এক রুহ। ইতঃপূর্বে তুমি জানতে না কিতাব কী এবং (জানতে না) ঈমান কী। কিন্তু আমি একে (অর্থাৎ কোরআনকে) বানিয়েছি এক নুর, যার মাধ্যমে আমি আমার বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে চাই হিদায়াত দান করি। নিশ্চয়ই তুমি মানুষকে দেখাচ্ছ হিদায়াতের সেই সরল পথ।’ (সুরা : আশ-শুরা, আয়াত : ৫২)

কোরআনের শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কিত বিষয় পাঠ করা

যেসব আয়াত ও হাদিসে কোরআনের শ্রেষ্ঠত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে এগুলো বেশি বেশি অধ্যয়ন করা। তেমনি যারা কোরআনকে নিজেদের জীবনে ধারণ করেছেন নিজেদের জীবন কোরআনের জন্য যারা উৎসর্গ করে দিয়েছেন তাদের জীবন পাঠ করা। এতে করে নিজের মাঝে অনুপ্রেরণা জাগ্রত হবে। ঘুমিয়ে থাকা অন্তর প্রেরণা খুঁজে পাবে। এর মাধ্যমে কোরআনের মূল্যবোধ প্রকৃত সম্মান ইত্যাদি জানা যাবে। কারণ কোরআনের প্রতি আগ্রহ না হওয়ার মূল কারণ কোরআন সম্পর্কে অজ্ঞতা। কোরআনের শ্রেষ্ঠত্ব মর্যাদা সম্পর্কে দিল থেকে যে ব্যক্তি বিশ্বাস করবে, তার অবশ্যই কোরআনের প্রতি ভালোবাসা জাগ্রত হবে।

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে কোরআনের প্রতি ভালোবাসার তাওফিক দান করুন, আমীন।

লেখক:-

বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ লেখক ও কলামিস্ট হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী।

সর্বশেষ