৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের তাৎপর্য অনুধাবন ও আমাদের করণীয়

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

প্রফেসর ড. আফ্জাল হোসেন

বাংলাদেশে প্রতি বছর ৮৯টি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস পালিত হলেও ১৯৭২ সাল থেকে ১৪ ডিসেম্বর প্রথাগতভাবে পালিত হয়ে আসছে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। তবে এবারেই সারাদেশে প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হয়েছে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। তাই এবারের শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৯৭১ সালের এই দিনে শেষ বারের মতো বাংলার স্বাধীনতাকে বিলীন করে দিতে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী তাদের এ দেশীয় দোসরদের নিয়ে বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নৃশংসভাবে হত্যা করে। কিন্তু তাদের শেষ প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় এবং ফলশ্রুতিতে দু’দিন পরেই ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় বাঙালিদের চূড়ান্ত বিজয়। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ও প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয় যে, পাকিস্তান হানাদার বাহিনী তাদের নিশ্চিত পরাজয় জেনেই এ ঘৃণ্যতম হত্যাকান্ড পরিচালনা করে। যে দুই স্থানে এই ঘৃণ্যতম হত্যাকান্ড পরিচালিত হয় তার একটির নাম মিরপুর কবরস্থান ও অন্যটি রায়েরবাজার বধ্যভূমি।
১৯৭১ সালে দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয় ৩০ লাখ বাঙালি, নির্যাতনের শিকার হয় ২ লাখ মা-বোন। কিন্তু এর মধ্যে বুদ্ধিজীবীদের হত্যার পেছনে থাকে এক বিরাট গুঢ় রহস্য! বুদ্ধিজীবী হত্যা ছিল একটি সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশবিশেষ, অন্যথায় স্বাধীন বাংলাদেশ হিসেবে স্বীকৃতি প্রাপ্তির ঠিক দু’দিন আগে এমন নৃশংস হত্যাকান্ড সম্ভব নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শহীদ জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতার স্ত্রী বাসন্তী ঠাকুরতা কর্তৃক প্রকাশিত এক গ্রন্থে বলেন, “নীল নকশার রেখা অংকন শুরু হয়েছিল একাত্তরের পহেলা মার্চের আগেই বা সত্তরের ১৭ ডিসেম্বর গণভোট বা তারো অনেক আগে ঊনসত্তরের গণ আন্দোলনের পরে”। মূলতঃ বাংলাদেশ যাতে করে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে সেজন্যই তালিকা করে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। জাতিকে মেধাশূণ্য করে দিতেই শেষ ছোঁবল মারতে তাই তারা এতটুকু কুন্ঠাবোধ করেনি।
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকায় তাই তারা বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত চিন্তাবিদদের সংযুক্ত করেন; যেমন-শিক্ষক, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, আইনজীবী, প্রকৌশলী, কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, ক্রীড়াবিদ, চিত্রশিল্পী, সঙ্গীতশিল্পী ও চলচ্চিত্রকার প্রমুখ। এ সকল বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে অধ্যাপক মুনির চৌধুরী, অধ্যাপক মুনিরুজ্জামান, অধ্যাপক জিসি দেব, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, অধ্যাপক গিয়াসউদ্দীন আহমেদ, অধ্যাপক আনোয়ার পাশা, অধ্যাপক রাশীদুল হাসান, ড. আবুল খায়ের, ড. ফজলে রাব্বী, ড. মুর্তজা, জ্যোর্তিময় গুহ ঠাকুরতা, ডা. আলিম চৌধুরী, শহীদুল্লাহ কায়সার, জহির রায়হান, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, গোবিন্দচন্দ্র দেব, আলতাফ মাহমুদ, সাংবাদিক সিরাজুদ্দিন হোসেন, সাংবাদিক খন্দকার আবু তাহের, নিজামুদ্দীন আহমদ, এসএ মান্নান, এ এন এম গোলাম মোস্তফা, সৈয়দ নাজমুল হক, সেলিনা পারভিন ও মেহেরুন্নেসা অন্যতম।
তাই এবারের শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের প্রতিপাদ্য হওয়া উচিত-ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পুনর্জাগরণ। আমার মতে, শুধুমাত্র একটি দিনের জন্য বুদ্ধিজীবীদের প্রতি সম্মান জানিয়ে কেবলমাত্র দায়মুক্ত হওয়া সম্ভব নয়, বরং তাদের প্রতি প্রকৃত সম্মান জানাতে হলে জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সুষ্ঠুভাবে কাজ করতে হবে। কেননা, ব্যক্তি থেকে পরিবার, পরিবার থেকে সমাজ তথা দেশের উন্নয়ন তখনই সম্ভব যখন সম্মিলিত প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকে, অন্যথায় নয়। তাহলেই আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের তথা শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগ সফল হবে, জানানো হবে প্রকৃত শ্রদ্ধাবোধ।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনে বর্তমান সরকারের ভূমিকা অন্যতম। বর্তমান সরকারের আমলেই নির্মিত হয় মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ। এমনকি এ সরকারের আমলেই বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী, মানবতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা হয়। তাছাড়া বর্তমান সরকারের আমলেই রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রথমবারের মতো পালিত হলো এবারের শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। আশা করছি, এ দিবসটি অচিরেই সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তালিকাভুক্ত হবে এবং শহীদদের প্রতি জাতিকে কিছুটা হলেও দায়মুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হবে। #প্রিন্স

লেখকঃ- প্রফেসর ড. আফ্জাল হোসেন

মার্কেটিং বিভাগ, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

 

সর্বশেষ