২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শেবাচিমে এক বছর যাবত মেয়াদোত্তীর্ণ ডিভাইস দিয়ে চলছে পরীক্ষা

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

খান আব্বাস।।

বরিশাল শেরই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নারীদের গর্ভধারন নিশ্চিতকরণ ডিভাইসটি প্রায় এক বছর ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও তা দিয়ে কাজ চালাচ্ছে প্যাথলজি বিভাগ।

বর্তমানে যে ডিভাইস দিয়ে গর্ভধারন টেস্ট করা হচ্ছে সেটি তৈরি করা হয়েছে ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে। আর এটির মেয়াদোত্তর্ণী হয়েছে ২০১৯ সালের আগস্ট মাসে।

ডিভাইসটি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় নারীদের গর্ভধারন সঠিকভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব হচ্ছে না। গর্ভবতী না হয়েও ওই মেয়াদোত্তীর্ণ ডিভাইস দিয়ে পরীক্ষা করায় রিপোর্ট পজেটিভ আসছে। আবার গর্ভবর্তী থাকলেও অনেক সময় নেগেটিভ আসে।

এভাবেই প্রায় ১ বছর ধরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় সেবা নিতে আসা রোগীরা বিপাকে পড়ছেন।
এমন এক ভুক্তভোগী চলতি বছরের জানুয়ারী মাসে স্বরূপকাঠী এলাকার আনিসুর রহমানের স্ত্রী কাজল বেগম শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার প্রেগেনন্সি অর্থাৎ গর্ভধারণ টেস্ট করতে আসেন। টেস্ট করানোর পর রিপোর্টে তার গর্ভধারণ নিশ্চিত করা হলেও তার সন্দেহ হয়। ওই সন্দেহে ফার্মেসি থেকে প্রেগেননিস্ট কুইক টেস্ট দিয়ে নিজেই পরীক্ষা করেন। সেখানে দেখা যায় তিনি গর্ভবতী নন। এতে করে কাজলের শংকা আরো বেড়ে যায়। তিনি পুনরায় হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগের তার টেস্ট করাতে আসেন। সেই রিপোর্টেও তার গর্ভধারণ রিপোর্ট সে গর্ভবতী বলে রিপোর্ট দেয়া হয়।

এভাবে একের পর এক পজেটিভ নেগেটিভ পরীক্ষার রিপোর্ট আসাতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন কাজল।
উপায়ান্তু না পেয়ে কাজল নগরীর একটি প্রাইভেট হাসপাতালে গিয়ে তার পূর্বের পরীক্ষার রিপোর্ট দেখান। এতে করে চিকিৎসক পুরোপুরি নিশ্চিত হতে কাজলকে গর্ভধারণের আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে বলেন। কাজল আল্ট্রাসনোগ্রামের রিপোর্ট নিয়ে চিকিৎসককে দেখালে গর্ভবতী নন বলে চিকিৎসক কাজল কে নিশ্চিত করেন। এতে করে শেরই বাংলা হাসপাতালের গর্ভধারন ডিভাইসের পরীক্ষা ভুল বলে প্রমানিত হয়।

এমন ভাবে আরো অনেক নারী শেরই বাংলা হাসপাতালের প্রেগেনন্সি টেস্ট করাতে এসে বিড়াম্বনার শিকার হয়েছেন। তাদের সকলেই কাজলের মত এভাবে হয়রানীর শিকার হতে হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে প্যাথলজি বিভাগের সিনিয়র টেকনোলজিস্ট ইনচার্জ আশিষ কুমার সোম ডিভাইস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে আতাঁত করে ওই প্রতিষ্ঠানকে লাভবান করতে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে ১ বছর ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ ডিভাইস দিয়ে কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন।

ওই মেয়াদোত্তীর্ণ ডিভাইস দিয়ে গর্ভধারণ পরীক্ষা অনিরাপদ বলে মনে করছেন সিনিয়র ক্লিনিক্যাল প্যাথলজিস্ট ডা. আশিক দত্ত ও ডা. মলয় কৃষ্ণ বড়াল। তারা জানিয়েছেন, প্রেগনেন্সি টেস্ট ডিভাইসটি’র মেয়াদোত্তর্ণীর খবরটি আমাদের আগে জানা ছিলনা। জানার সাথে সাথে সংশ্লিস্ট টেকনোলজিস্টদের ওই ডিভাইস দিয়ে পরীক্ষা না করার নির্দেশ দিয়েছি।
এছাড়া প্রায় ১ বছর ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ ডিভাইস দিয়ে কিভাবে পরীক্ষা করা হচ্ছে সেটি খতিয়ে দেখা হবে। তবে ইনচার্জ আশিষ কুমার সোম অসুস্থ অবস্থায় বাসায় চিকিৎসাধীন থাকায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
বর্তমানে ওই পদে ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা মজিবর রহমান জানান, প্রগনেন্সি টেস্ট ডিভাইসটি’র মেয়াদোত্তর্ণীর খবরটি আমিও জানতাম না। এখানকার দায়িত্ব নিয়ে আমি ডিভাইসটি’র মেয়াদোত্তর্ণীর বিষয়টি আশিষ কুমারের কাছে জিজ্ঞেস করলে তিনি মেয়াদোত্তীর্ণের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। আশিষকে বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানালেও তারা কর্ণপাত করেনি বলে অভিযোগ করেছেন।
প্যাথলজি সূত্রে জানা যায়, গত ২০১৮ সালে টেকনোলজিস্ট ইনচার্জ আশীষ কুমার সোম ইনডেন করার পর আর কোন ইনডেন করা হয়নি। তবে বর্তমানে মেয়াদের কোন প্রেগনেন্সি ডিভাইস নেই বলে ও জানা যায়।

হাসপাতালের ওষুধের স্টোর সূত্রে জানা যায়, গর্ভধারণ ডিভাইসটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর তাৎক্ষণিক কর্তৃপক্ষকে জানানো উচিত ছিল। তাছাড়া প্যাথলজি বিভাগের ইনচার্জ সিনিয়র টেকনোলজির আশীষ কুমার সোম কেন মেয়াদোত্তীর্ণ ডিভাইস দিয়ে এক বছর ধরে পরীক্ষা করবে বিষয়টি সবার স্পষ্ট থাকার কথা। তিনি সংশ্লিষ্ট সরবরাহকারী ঠিকাদারের সাথে হাত মিলিয়ে নিজে লাভবান হওয়ার জন্য মেয়াদ উত্তীর্ণ ডিভাইস দিয়ে কাজ চালিয়েছেন। এতে করে অনেক গর্ভধারণ রোগীরা বিড়ম্বনার শিকার হয়েছে। টেকনোলজিস্ট আশীষ কুমার সোমের বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে মনে করেন রোগীর স্বজন সহ হাসপাতালের স্টাফরা।

এ সকল বিষয়ে হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মনিরুজ্জামান শাহীন জানান, প্রেগনেন্সি টেস্ট ডিভাইসটি’র মেয়াদোত্তর্ণীর খবরটি আমাদের আগে জানা ছিলনা। আমি জানতে পেরে সাথে সাথে ব্যবস্থা গ্রহন করা নির্দেশ দিয়েছি। তাছাড়া কেন এতদিন মেয়াদ উত্তীর্ণ ডিভাইস দিয়ে কাজ করে আসছিলেন সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে

সর্বশেষ