বরিশাল বাণী: বরিশাল শের-ই বাংলা হাসপাতালে দুই ওয়ার্ডবয়কে তুলে নিয়ে বিবস্ত্র করে ঘন্টাব্যাপি নির্যাতন চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে ইন্টার্নি চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত ইন্টার্নি চিকিৎসকরা জোরপূর্বকভাবে ওই দুই ওয়ার্ডবয়কে ইন্টার্নি ডক্টরস হোস্টেলের ২য় তলার একটি রুমে তুলে নিয়ে নির্যাতন চালায়। পরে সেখানে দরজা বন্ধ করে ১০/১৫ জন ইন্টার্নি চিকিৎসক ওই দু’ওয়ার্ড বয়কে বিবস্ত্র করে শক্ত লাঠি দিয়ে নির্যাতন চালায়। এসময় ওই দুই ওয়ার্ডবয় অভিযুক্ত ইন্টার্নি চিকিৎসকদের কাছে আকুতি-মিনতি জানালেও তারা নির্যাতন থেকে রক্ষা পায়নি।
অপরদিকে নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন না করে হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেন উল্টো নির্যাতিত ওই দুই ওয়ার্ডবয়কে শোকজ করেন।
নির্যাতনের শিকার ওয়ার্ডবয় দিদারুল ইসলাম ও নুরুল ইসলাম জানান, গত ২৯ জুন মেডিকেলের জরুরী বিভাগের ট্রলি ম্যান বাদশা করোনায় আক্রান্ত হয়ে করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি হন। বিষয়টি জানতে পেরে ওয়ার্ড বয় দিদারুল ও নুরুল রাতে ডিউটি করা সুবাদে বাদশাকে ওই দিনই রাতে করোনা ওয়ার্ডে দেখার জন্য যান। কিন্তু বাদশা করোনা ওয়ার্ডের কোন রুমে চিকিৎসাধীন রয়েছে সেটা তাদের জানা ছিল না। এ সময় তারা ভুলবশত করোনা ওয়ার্ডের ১৫নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ৪৬তম ব্যাচের অপর এক নারী ইন্টার্নি চিকিৎসকের দরজায় নক করে। এতে ওই নারী ইন্টার্নি চিকিৎসক ক্ষিপ্ত হন। তবে দিদার ও নুরুল বিষয়টি বুঝিয়ে বললে ওই নারী ইন্টার্নি চিকিৎসক বুঝতে পারে এবং বাদশার রুম নম্বর বলে দেন। শুধু তাই নয় দিদার ও নুরুল ওই ঘটনার পরের দিনও নারী ইন্টার্নি চিকিৎসকের নিকট পূর্বের ঘটনার জন্য পুনরায় দুঃখ প্রকাশ করেন।
কিন্তু বিষয়টি ওই নারী ইন্টার্নি চিকিৎসকের ব্যাচমেট সজল পান্ডে ও আরিফ জানতে পারলে ফোন করে দিদার ও নুরুলকে দেখা করার জন্য বলে। পরে গত মঙ্গলবার রাতে কর্মস্থলে যোগদানের পূর্বে দিদার ও নুরুল দেখার করার জন্য ইন্টার্নি চিকিৎসক সজল ও আরিফকে ফোন করে। পরে সজল ও আরিফসহ আরও ১০/১৫ জন ইন্টার্নি চিকিৎসক দিদার ও নুরুলকে ইন্টার্নি ডক্টরস হোস্টেলের ২য় তলার একটি রুমে তুলে নিয়ে যায়। পরে সেখানে দরজা বন্ধ করে সজল ও আরিফসহ অন্যান্য ১০/১৫ জন ইন্টার্নি চিকিৎসক ওই দিদার ও নুরুলকে বিবস্ত্র করে শক্ত লাঠি দিয়ে ঘন্টাব্যাপি নির্যাতন চালায়।
অভিযুক্ত সজলের নিকট জানতে চাইলে তিনি মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেন এবং দিদার ও নুরুলের বিরুদ্ধে করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন নারী ইন্টার্নি চিকিৎসককে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ করেন।
বৃহস্পতিবার (২ জুলাই) বেলা ১১ টার দিকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেনের কাছে বিচার চাইতে যান হাসপাতালের তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীরা।
দুই কর্মচারী অফিস সহায়ক দিদুরুল ইসলাম ও নুরুল ইসলামকে ইন্টার্ন চিকিৎসক কর্তৃক মারধরের ঘটনার অভিযোগ করেন তারা।
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র জানায়, হাসপাতালের এক নারী ইন্টার্ন চিকিৎসক গত ২৭ জুন করোনা আক্রান্ত হয়ে করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি হন। তিনি তৃতীয় তলার একটি কক্ষে ছিলেন। ২৮ জুন উল্লেখিত দুইজন তাদের এক সহকর্মী বাদশাকে দেখতে যান। সেখানে তারা ভুলক্রমে করোনাআক্রান্ত ওই ইন্টার্ন চিকিৎসকের কক্ষে খোঁজ করেন। বিষয়টিকে উত্যক্ত উল্লেখ করে তিনি তার সহকর্মীদের মুঠো ফোনে জানান।
এরপর ২৯ জুন রাতে দিদারুল ও নুরুল ইসলামকে হাবিবুর রহমান ছাত্রাবাসে নিয়ে বিবস্ত্র করে অমানুসিক মারধর করে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।
ভুক্তভোগীরা আরো বলেন, ইন্টার্ন চিকিৎসকের রুমে তারা ভুলে ঢুকে পড়েছিলেন এবং তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষমাও চেয়েছেন।
এদিকে, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মো. মোদাচ্ছের কবির কর্মচারীদের মারধরের ঘটনার বিচার দাবি করেছেন। এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক।