২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শেবাচিম পরিচালক ও চিকিৎসকের উপর ক্ষুব্ধ হলেন স্বাস্থ্য সচিব

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

বরিশাল বাণী: নির্দেশ দেয়ার পরও বরিশাল শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল (শেবাচিম) হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ড নতুন ভবনে (কোভিড হাসপাতাল ভবন)স্থানান্তর না করায় পুনঃপরিদর্শনে এসে হতবাক হয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগের সচিব সহ কর্মকর্তারা।
বৃহষ্পতিবার (০১ ডিসেম্বর) দুপুরে মন্ত্রনালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব ড. মুঃ আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডঃ আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডাঃ এ কে এম আমিরুল ইসলামসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বরিশাল শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শনে আসেন।
এসময় তারা হাসপাতালের পূরাতন ভবনের পূর্ব পাশে থাকা নতুন ভবন পরিদর্শন করেন এবং নির্দেশ দেয়ার পর দীর্ঘ ৪ মাসেও মেডিসিন ওয়ার্ড পূরাতন ভবন থেকে নতুন ভবনে স্থানান্তর না হওয়ার কারন হাসপাতাল প্রশাসনের নিকট জানতে চান স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব ড. মুঃ আনোয়ার হোসেন হাওলাদার। তখন হাসপাতাল পরিচালক ডাঃ এইচ এম সাইফুল ইসলাম উপস্থিত চিকিৎসক ও গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে জানান, নতুন ভবনটিতে যেটুকু সংস্কার প্রয়োজন ছিলো তা করা হয়েছে, এখন স্থানান্তর করলেই হয়,তবে মেডিসিন ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা সেখানে যেতে চাচ্ছেন না। এরপর তিনি মেডিসিন ওয়ার্ডের প্রধান আনোয়ার হোসেন বাবলুর নিকট এর কারন জানতে চাইলে তিনি খোড়া যুক্তি দিতেই সচিব ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পাশাপাশি চিকিৎসক হয়ে তার পরিহিতো পোশাক নিয়েও তিরস্কার করেন সচিব। পরবর্তীতে সচিব হাসপাতাল পরিচালককে দ্রুত সময়ের মধ্যে মেডিসিন ওয়ার্ড হস্তান্তরের নির্দেশ দেন। সেইসাথে কোন কাজ বাকি থাকলেও তা সম্পন্ন করার জন্য বলেন।
প্রতক্ষদর্শী সাংবাদিকরা জানান, হাসপাতাল পরিদর্শনে এসেই মেডিসিন ওয়ার্ড স্থানান্তরের বিষয়টি জানতে চান সচিবসহ কর্মকর্তারা। পরে তিনি কর্মকর্তাদের নিয়ে নতুন ভবনেও যান। সেখানে গিয়ে মেডিসিন ওয়ার্ড স্থানান্তর না হওয়ার কারন জানতে চাইলে পরিচালকের উত্তরে মেডিসিন ওয়ার্ডের প্রধান আনোয়ার হোসেন বাবলুকে ডাকা হয়। তবে বাহারি রংয়ের পাঞ্জাবি-কোটি পরে আসা চিকিৎসককে দেখে চিনতে পারেননি সচিব। পরে পরিচয় শেষে ওই চিকিৎসককে জিজ্ঞাসা করতেই তিনি ভবনের কাজ শেষ না হওয়াসহ বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরেন। আর তার পাশে থাকা কামরুজ্জামান সেলিম নামে অপর এক চিকিৎসক ভবনটি ১০ তলা হওয়ার কথা রয়েছে, তাই এর কাজ শেষ না হওয়ার রোগীদের রাখার বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। তখন সচিব ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যখন ১০ তলা হবে ভবনটি, তখন আমিসহ আপনারা এখানে থাকবেন কিনা সেটাই তো বলতে পারছেন না। তাই সেই চিন্তা না করে বর্তমান অবস্থায় রোগীদের স্থানান্তর করুন। তাদের ভোগান্তি কমান।
পরবর্তীতে পূরাতন ও নতুন হাসপাতাল ভবন পরিদর্শন শেষে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব ড. মুঃ আনোয়ার হোসেন হাওলাদার সাংবাদিকদের বলেন, শেবাচিম হাসপাতালে জনবলের কিছুটা ঘাটতি রয়েছে যে বিষয়টি দেখা হচ্ছে। আর চিকিৎসকের ঘাটতি বা আনা-নেয়ার বিষয়টি থাকলে সেটিও দেখা হবে। তবে এ হাসপাতালে বরাদ্দ থাকা পদে সবাই রয়েছেন বলেই আমি জানি, তারপরও খালি থাকলে সেগুলো পূরণ করে দেয়া হবে।
মেডিসিন ওয়ার্ড নির্দেশ দেয়ার পরও স্থানান্তর না হওয়ার পেছনে রাজনৈতিক কোন বিষয় রয়েছে কিনা এবং সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে ড্যাবের চিকিৎসক নেতাদের অনুশাসনে হাসপাতাল চলতে বাধ্য হচ্ছে কিনা এমন বিষয়ে প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এখানে রাজনৈতিক বিষয় রয়েছে কিনা সেটি বলতে পারবো না। তবে ড্যাব (বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন )এর নেতারা সরকারি চিকিৎসক। তাদের প্রফেশনাল দিকগুলো দেখা প্রয়োজন, তারা যদি কোন ইগো ধরে রাখে সেটা অন্যায়। রোগীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো আমাদের দায়িত্ব। একটা হাসপাতাল ভবনের মধ্যে গাদাগাদি হয় দেখেই এটা করা হয়েছিলো, সুতরাং এখানে আসবে কি আসবে না এমন বিষয় থাকা উচিত নয়। এটা তো ইন্টারনাল ব্যাপার আমরা ঠিক করে ফেলবো।
আর হাসপাতালে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারীদের অনিয়ম রোধের বিষয়ে তিনি বলেন, চতুর্থ শ্রেনীর লোকজন আর আমরা দিবোনা। তারা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে হাসপাতাল জিম্মি করে এমন অভিযোগ আমাদের কাছেও রয়েছে। এজন্য আমরা এখন থেকে আউটসোর্সিং করি। আউটসোর্সিং এ দিলে ভালো কাজ করলে থাকতে পারবে নয়তো পরের বছর পাল্টে দেয়া হবে।
পরে তিনি বরিশাল শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ পরিদর্শন করেন এবং কলেজের সভাকক্ষে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষক-চিকিৎসকসহ স্থানীয় চিকিৎসকদের সাথে বৈঠক করেন। সেখানেও সচিব মেডিসিন ওয়ার্ড নতুন ভবনে স্থানান্তরের নির্দেশ দেন এবং পরিচালককে এ বিষয়ে সহযোগীতা করারও পরামর্শ দেন বাকী চিকিৎসকদের।
এসময় সচিবের সাথে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডঃ আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডাঃ এ কে এম আমিরুল ইসলামসহ বিভাগীয় ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ