কামরুল হাসান, স্টাফ রিপোর্টার:
পটুয়াখালীর বাউফলে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিশেষ অবদানের জন্য ৫জন নারীকে জয়িতা সম্মাননা প্রদান করেন উপজেলা মহিলা বিষায়ক অধিদপ্তর। এদের মধ্যে সফল জননী নারী ক্যাটাগরিতে সম্মাননা পেলেন উপজেলার মদনপুরা গ্রামের বাসিন্দা বীরমুক্তিযোদ্ধা মৃত এবিএম আব্দুল খালেকের সহধর্মীনি মোসা. মনোয়ারা বেগম (৬৮)।
বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে উপজেলা পরিষদ হল রুমে জয়িতাদের হাতে সাবেক চিফ হুইপ আ.স.ম ফিরোজ (এমপি) ওই সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন । উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আল আমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন উপজেলা পরিষদ ভাইস-চেয়ারম্যান মো.মোশারেফ হোসেন খাঁন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মরিয়ম নিশু, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সামসুল আলম মিয়া, থানা কর্মকর্তা আল মামুন, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা কানিজ মার্জিয়া, জয়িতার বড় ছেলে ও প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আল মামুন। এ সময়ে সফল জননী মনোয়ারা বেগম অসুস্থ থাকায় তাঁর পক্ষে ক্রেস্ট গ্রহণ করেন তাঁর বড় ছেলে বাউফল প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি আল মামুন।
অনুষ্ঠানে মনোয়ারা বেগমের বড় ছেলে আল মামুন বলেন, আমার বাবা বীরমুক্তিযোদ্ধা এবিএম আ. খালেক তৎকালীন সময়ে উপজেলা প্রকৌশলী পদে সরকারি চাকুরীর সুবাদে দেশের বিভিন্ন স্থানে কর্মরত ছিলেন। বাবা হিসাবে সন্তানদের তেমন সময় দিতে পারতেন না। মা মনোয়ারা বেগম পরম যত্নে আমাদের ৮ ভাইবোনকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করেন। আমরা ৮ ভাইবোন সবাই এখন উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত।
ভাইদের মধ্যে মো. মোস্তাফিজুর রহমান রহমান বিএসসি (সিভিল)প্রকৌশলী, ছোট মো. মুজাহিদুল ইসলাম একজন বার-এট-ল (ব্যারিষ্টার) হিসেবে লন্ডন ও বাংলাদেশে আইন পেশায় আছেন। আমি নিজেও গ্রাজুয়েশন করেছি। বোনদের মধ্যে মধ্যে খাদিজা আক্তার একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কর্মরত ,আরেক বোন মোসা. নারগিস পারভীন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব, মোসা. নাসরিন পারভীন নুপুর পাসপোর্ট অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক, মোসা.শারমিন পারভীন ইসলামী ফাউন্ডেশনে ,ঢাকায় কর্মরত আছেন।
তিনি আরো বলেন,১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযোদ্ধার সময় বীর মুক্তিযোদ্ধ এ বিএম আব্দুল খালেক উপজেলা সিওডেপ অফিসে ওভারসিয়ার হিসেবে কর্মরত থাকার সুবাদে মুক্তিযোদ্ধের সদস্যদের কাছে লিফলেট পৌছে দেয়ার জন্য ওই অফিসে থাকা একমাত্র সাইক্লোষ্টাল(ফটোকপি) মেশিনটি সংগ্রাম কমিটির সংগঠক কমরেড মো. মোকছেদুর রহমানের কাছে হস্তান্তর করে আমার বাবা পঞ্চম আলী ও বারেক বাহিনীর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। এরপর আমার বাবা এবিএম আব্দুল খালেককে হন্য হয়ে খুজতে থাকে পাকহানাদার বাহীনি। না পেয়ে পাক ১৬ সেপ্টেস্বর চন্দ্রপাড়া গ্রামের তাঁদের বাড়ীসহ পাঁচটি বাড়িতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় এবং ১৮ জনকে গুলি করে হত্যা করে পাকবাহীনি। পরে আমারমা মনোয়ারা বেগম ৬ জন সন্তানসহ ধানক্ষেতে আশ্রায় নেয় এবং পাকবাগীর হাত থেকে রক্ষা পেতে বিভিন্ন বাড়ীতে আশ্রয় নেয়। এক পর্যায়ে বীরপাশা গ্রামের বাবার বাড়ী গিয়ে সংগ্রাম কমিটিরসদস্যসহ মুক্তিযোদ্ধার রান্না করে খাবার সরবরাহ করে।