১২ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সরকারি জমি বেচাকেনা রাজের রাজত্ব সরকারি জমিতে

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

সঞ্জিব দাস, গলাচিপা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
জমির মালিকানা সরকারি সংস্থা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো)। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ ঘেঁষা সেই জমিতে বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এক নেতা। ইতোমধ্যে দ্বিতল ভবনের ছাদ দেওয়া এবং ইটের গাথুনির কাজ শেষ। চলছে পলেস্তরা এবং পেছন দিকে বর্ধিতকরণের কাজ। পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজ স্লুইস বাজার থেকে পাঁচ শ’ গজ উত্তরে বেড়িবাঁধ ঘেঁষে এই ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। ফলে বেদখল হচ্ছে সরকারের এই সম্পত্তি। সরেজমিন ঘুরে সংশ্লিষ্ট ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। স্থানীয়রা জানায়, সরকারি জমিতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় উপ-গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ওয়াহিদ খান রাজ এবং তার ভাই চরমোন্তাজ ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি শহিদুল খান যৌথভাবে ভবনটি নির্মাণ করছেন। সরেজমিনে দেখা গেছে, গতবছর চরমোন্তাজ স্লুইস বাজার-চরমণ্ডল বাজার বেড়িবাঁধ সড়কের পূর্বপাশে ভবনটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। একেবারেই বেড়িবাঁধ সড়ক ঘেঁষে ভবনটি নির্মিত হচ্ছে। দ্বিতীয় তলার কাজ শেষে পেছনের অংশ বর্ধিতকরণ এবং তৃতীয় তলার কাজও চলমান। স্থানীয় ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চালকরা বলছেন, বেড়িবাঁধের সড়ক এমনেতেই সরু। এরমধ্যে ভবন সড়ক ঠেকিয়ে উঠানোর কারণে মোটরসাইকেল এবং যানবাহন চলাচল বিঘ্ন হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য বলছে, বেড়িবাঁধের ভেতর অংশে ১৫-২০ ফুট জমি পাউবোর মালিকানাধীন। অথচ সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, পাউবোর সেই জমি দখল করেই ভবনটি নির্মাণ করা হচ্ছে । স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, দিয়ারা জরিপ অনুযায়ী চরমোন্তাজ মৌজার ১৫২ নম্বর জেএল এর ৩ নম্বর খতিয়ানের ৫৭৮১ নম্বর দাগ পাউবোর এবং ১ নম্বর খতিয়ানের ৫৮২৩ দাগের জমি সরকারের খাস সম্পত্তিতে নির্মাণাধীন ভবনটির অবস্থান। সে অনুযায়ী ভবনটির সামনের অংশ পাউবোর এবং পেছনের অংশ খাস খতিয়ানভুক্ত সম্পত্তি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানান, প্রথম পাউবোর জায়গায় ভবন নির্মাণ করে ছাত্রলীগ নেতা রাজ ও তার ভাই স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা শহিদুল। পরে খাস জমি ফাঁকা পেয়ে এখন ভবন বর্ধিতকরণের কাজ শুরু করেছেন তারা। নির্মাণাধীন ভবনের প্রধান রাজমিস্ত্রী সোহরাব হোসেন বলেন, ভবনটির ভিত্তি (ফাউন্ডেশন) পাঁচ তলা । এটির দৈর্ঘ্য ৩৫ ফুট এবং প্রস্থ্য ২৪ ফুট। মোট ৮৪০ বর্গফুটের এ ভবনের তৃতীয় তলার কাজ চলমান। এ বিষয়ে সরকারি জমি দখলদার ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় উপ-গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ওয়াহিদ খান রাজ বলেন, ‘চরমোন্তাজে আমি একটা বিল্লিং (ভবন) করতেছি। ওখানে জুয়েল মাতুব্বর নামে এক ভদ্র লোকের কাছ থেকে জায়গটা আমার কেনা (ক্রয় করা)। স্ট্যাম্প আছে, দলিল আছে। কিন্তু এক অংশ জায়গা হলো তার দখলী সূত্রে, যেটা রাস্তায় চলে গেছে। আরেক অংশ দলিল সূত্রে। ওখানে সব জমিইতো দখলী। যত বিল্লিং আছে ঘর আছে সবইতো কারও না কারও দখলে। আমি টাকা দিয়ে স্ট্যাম্প নিয়ে ঘরটা করেছি। কাউকে ঠকাইয়ে বা জোর করে না।’ যার কাছ থেকে জমি কিনেছেন, তিনি আপনাকে দলিল দিয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘দলিলের অংশের টাকা সে নিয়েছে। হয়তো দুই-এক দিনের মধ্যে সে দলিল দিয়ে দিবে। আমার ভাই শহিদ খানকে স্ট্যাম্প দিয়েছে।’ সরকারি এই জমি বিক্রেতা স্থানীয় জুয়েল মাতুব্বর বলেন, ‘আমি রাজ এবং শহিদুল খানের কাছে দুই শতক জায়গা বিক্রি করেছি। প্রথমে দুই লাখ দিয়েছে এবং পরে দেড় লাখ টাকা নেওয়া হয়েছে। শোনেন বাজারের যত জমি আছে মুখশা (মাথা) দাবি করেই একটা জায়গা ক্রয় করে। অবদার (বাঁধ) মুখশা একটু সাইডে (পাশে) বাজে এটা স্বাভাবিক। ১৫ ফুট হলো অবদার ঢালের খাস। আর জমি রেকর্ডি। যার জায়গার সামনে অবদা থাকে ওটার দাবিদার সেই। যার সম্পত্তির মুখশা সেই ওটা ভোগদখল করে। আমরা সবাই ওটা দখল করে রাখছি। এতে নিজের রেকর্ডি জমিও কিছু বিক্রি হয়, মুখশাও দিয়ে দেওয়া হয়।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জমির দলিল এখনও দেই নাই। দুই একের মধ্যে দলিল করতে যাবো।’

জানতে চাইলে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ সালেক মূহিদ বলেন, ‘আমরা এবিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে অবশ্যই ব্যবস্থা নিব।’ এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কলাপাড়া নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ হোসেন বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি দখল করে ভবন নির্মাণের কোন সুযোগ নেই। বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। আমরা দুই-একদিনের মধ্যে সেখানে এসও (তদারকি কর্মকর্তা) পাঠাবো এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’

সর্বশেষ