১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
বিয়ের দাবী নিয়ে ইডেন পড়ুয়া ছাত্রী চরফ্যাশন প্রেমিকার বাড়িতে ২দফা অনশন! শিক্ষিকাকে কুপিয়ে হত্যার চেস্টা, গ্রেপ্তার-১ সাংবাদিক শাহিন হাফিজের "মা" র মৃত্যু, এনডিবিএ'র শোক প্রকাশ মহাসড়কে যানবাহনের গতিসীমা নিয়ন্ত্রণ করতে বরিশাল জেলা প্রশাসনের অভিযান পটুয়াখালীর দুমকিতে প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী  উদ্বোধনী ও সমাপনী অনুষ্ঠান বরিশালে গাঁজাসহ ২ মাদক ব্যবসায়ী আটক বানারীপাড়ায় তহশিলদার ও সার্ভেয়ারের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ প্রিজন সেলে হাজতিকে হত্যার দাবি স্বজনদের, কারারক্ষীসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দাম বেড়ে ফের রেকর্ড, স্বর্ণের ভরি ১ লাখ ২০ চরকাউয়া ইউনিয়ন যুবলীগের মতবিনিময় সভায় খান মামুন

সাহান আরা বেগমের শূন্যতায় কেমন আছে বরিশালে সেরনিয়াবাত পরিবার

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

শাকিব বিপ্লব॥

অপ্রত্যাশিত বিয়োগয়ান্তে শোকের কালো মেঘে ছেঁয়ে ফেলেছে বরিশাল আ’লীগের রাজনীতির সুতিঘার সেরনিয়াবাত পরিবারকে। পত্নি সাহানারা বেগমের আকস্মিক মৃত্যুতে স্বামী কেন্দ্রীয় আ’লীগ নেতা আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ ও পুত্র সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাদিক আবদুল্লার শোকে এখন স্তস্মিত। সেই সাথে অপর দুই পুত্র আশিক আবদুল্লাহ ও মঈন আবদুল্লাহ শোকে মুহ্যমান, হয়েছেন বাকরুদ্র। মৃত্যু অমঘ সত্য, কিন্তু কেহই সাহানারা আবদুল্লাহর এভাবে চলে যাওয়াকে স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারছে না। বিশেষ করে বেশি মাত্রায় ভেঙ্গে পরেছেন আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ সাথে বড় পুত্র সাদিক আবদুল্লাহ। প্রথম জন নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক রাখার সচেষ্ট থেকে অনুমতি সাপেক্ষে দলীও শুভাকাঙ্খি স্বাক্ষাৎ দিলেও পুত্র সাদিক আবদুল্লাহ কারো সম্মুখেই আসছেন না। এমনকি মায়ের তিন দিন অতিক্রম কালে মিলাদ মাফিলের পারিবারিক আয়োজনের ক্ষেত্রেও ছিল ভিন্নতা।
আগৈলঝাড়ার শেরালস্থ গ্রামের বাড়ি ও বরিশাল শহরের কালিবাড়ি সড়কে সাদিকের বাসভবনে কোন মিলাদ মাফিলের আয়োজন ছিলনা। তবে পারিবারিক ও দলীয় উদ্যোগে উভয় এলাকা প্রতিটি মসজিদে মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
৭ জুন রাতে অসুস্থ অবস্থায় সাহানারা বেগমের মৃত্যু পর থেকেই এই খবর শুরু করে দাফনকার্য পযর্ন্ত সেরনিয়াবাত পরিবার সবকিছুতেই সংকোচিত করে সর্ব শেষ নিজেদের আড়ালে রাখার ভিতর রহস্য কি? তা নিয়ে এক ধরনের উৎসুক প্রশ্ন দলীয় নেতাকর্মী থেকে সমর্থকরা উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছেন। কিন্তু কেহই যেন মুখ খুলছে না, তেমনি সেরনিয়াবাত পরিবারের কাছে এ বিষয় প্রশ্ন রাখার সাহস নিচ্ছে না।
এই পরিবার ঘনিষ্ট একটি সুত্র প্রথম থেকেই বলে আসছে, একাধারে অনেক গুনের অধিকারী এবং বরিশাল রাজনীতির পরিচিতি মুখ সাহান আরা বেগমের মৃত্যু পরবর্তি যে ধরনের বরিশাল পরিস্থিতি হওয়ার কথা ছিলো তার কিছুই ঘটেনি। উপরন্ত এই মৃত্যুর খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়লেও এ নিয়ে শোকতাপের আয়োজন দেখা যায়নি।
নেই কোন শোকসভা, বড় পরিসরে দোয়া অনুষ্ঠান থেকেও বিরত থাকা হয়েছে।
দলীয় নেতা কর্মীরা এখন মুসলিম গোরস্থানে তার সমাধীস্থলে প্রতিদিনই জড়ো হচ্ছেন আত্মার মাগফেরত কামনায়, দিচ্ছেন শ্রদ্ধাস্বরুপ ফুল। ফুলে ফুলে ঢেকে গেছে সাহানারা বেগমের অন্তিম শয়নস্থল।

সাহানারা বেগম শুধু ঘরণী নয়, তিনি বরিশাল জেলা মহিলা লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থেকে ঢাকা পযর্ন্ত সাংগঠনিক কার্যক্রমে নিজের পরিচিতি পেয়েছিলেন। সেই সাথে আবুল হাসনাত সহধর্মিনী ও সিটি কর্পোরেশনের সাদিক আবদুল্লাহার মাতা হিসাবে তার মৃত্যুর খবরে র্নিদলীয় ও আপামার মানুষের ঢল নামবে , সঙ্গত কারনে এমটি অনুমান করা হয়েছিল।
ঐ সুত্রটির দাবী, বুকে ব্যাথা নিয়ে মৃত্যুর তিন দিন পূর্বে ঢাকা কলাবাগানের বাসা থেকে পিজি হাসপাতালে ভর্তির পর থেকেই সাহানারা বেগমের শারীরিক পরিস্থিতি নিয়ে সেরনিয়াবাত পরিবার গোপনীয়তা রক্ষার পাশাপাশি তাদের শুভাকাঙ্খি কাউকেই সেখানে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি। আবার মৃত্যুর পরবর্তি এই শোকের খবর প্রচারেও আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ আগ্রহী ছিলেন না। বরং ঢাকায় ছুটে যাওয়া স্বল্প সংখ্যাক দলীয় অনুসারিদের নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব সাহানারা বেগমের মর দেহ রাত পোয়াবার কিছু পরেই বরিশালে পৌচ্ছে তাৎক্ষনিক শহরের মুসলিম গোরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়। জানাযায় লোক সমাগমের ক্ষেত্রেও করাকরি আরপ করে স্বল্প লোকের অংশগ্রহনের সুযোগ দেওয়া হয়। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মানতেই এসব সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
ঢাকার একটি সুত্রের দাবী, হৃদরোগে আক্রন্ত হয়ে সাহানারা মৃত্যু ঘটলেও তাকে তরিগরি দাফনে সেরনিয়াবাত পরিবারে নিকট আত্ময়ীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনা থাকায় বরিশালে কোন রকম আয়োজনের কর্মসূচি রাখা হয়নি।
বরং শেরাল ও কালিবাড়ি সড়কের পুলিশ পাহারা জোরদার করে প্রথম কয়েক দিন সেখানে দর্শনার্থিদের প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। অবশ্য আগৈলঝাড়ার শেরালের গ্রামের বাড়িতে অবস্থানকারী আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ সেই করাকরি থেকে কিছুটা শিথিলতা টেনে এখন অনুমতি সাপেক্ষে শুভাকাঙ্খিদের স্বাক্ষাতের সুযোগ দিচ্ছেন। কিন্তু তাও সংখ্যায় সীমিত।
জানাগেছে, বর্ষিয়ান আ’লীগ নেতা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ দীর্ঘ ৭০ বছরের দাম্পত্য জীবনের সঙ্গি সাহানারা বেগমকে হারিয়ে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ নিজেকে ধরে রাখতে পারছেন না । অতীত স্মৃতি হাতরিয়ে মাঝে মধ্যে বিমর্ষ হয়ে চোখের জল কোন ভাবে সংবরন করছেন তিন পুত্র সম্ভব্য শোকে ভেঙ্গে পরতে পারে, এমন আশংকা বিবেচনায়।
সেখানে তার সাথে অবস্থানকারী মেঝ পুত্র আশিক আবদুল্লাহ ও কণিস্ট পুত্র মঈন আবদুল্লাহ উভয় এক প্রকার বাকরুদ্র অবস্থায় দিন পার করেছেন। মায়ের মৃত্যুকালে পাশে থাকা পুত্র আশিক আবদুল্লাহ সেই দিনের স্মৃতি ভুলতে না পারায় হঠাৎ হঠাৎ ডুগরে কেঁদে উঠছেন বলে জানিয়েছেন তাদের বাস ভবনে যাতায়াতকারী নিকট এক আত্মীয়।
এদিকে বরিশাল শহরে কালিবাড়ি সড়কের দ্বিতল বাসভবনে একাকি থাকা বড় পুত্র ও বরিশাল সিটি কর্পোশনের মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ বাসা থেকে বেরতো হচ্ছেনই না, উপর থেকে নীচ তলাও নামছেন না। এই ভবনে দর্শনার্থি দলীয় নেতাকর্মীদের প্রবেশে এখনো করাকরি বলবৎ রয়েছে। দুই চারজন সাদিক আবদুল্লাহ ঘনিস্ট রাজনৈতিক সহ চর তার সাথে দেখা করার সুযোগ পেলেও স্বাক্ষাৎ দীর্ঘায়িত করতে চাচ্ছেন না। তবে রাজনীতি ও সিটি কর্পোরেশন নিয়ে বর্তমানে কোন ভাবনার মধ্যেও না থাকলেও বিশেষ বিশেষ কিছু কার্যক্রম সম্পাদনে তার সবচেয়ে নিকট সহচর নীরব হোসেন টুটুলকে দিক নির্দেশনা দিয়ে নিজেকে আড়াল করেই রাখছেন এই নেতা।
নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, রাজনৈতিক এত দুর অগ্রসরতা এবং পারিবারিক যে কোন সমস্যা সমাধানের মায়ের অনুপ্রেরনায় আজকের অবস্থানে আসা সাদিক আবদুল্লার কোন ভাবেই এই বিয়োগান্তের শোক সামাল দিতে পারছেন না। একাকি একটি রুমে অবস্থান করে থাকছেন মায়ের স্মৃতি ভুলে থাকার তাগিদে।
প্রবাসে থাকা যুক্তরাষ্ট্র থেকে স্ত্রী লিপি আবদুল্লাহ ও সন্তানরাও তার সাথে শোকের সাগরে ভাসলেও স্বামী সাদিক আবদুল্লাহকে দুর থেকে সান্তনা দিয়ে রাখছেন ।
একটি সূত্রে জানায়, সম্ভবত চলতি সপ্তাহে যে কোন দিন তার পরিবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে আসার কথা রয়েছে। যদি কিনা বিমান চলাচল স্বাভাবিক হয়। ঐ সূত্রটি জানায়, শাশুরীর মৃত্যুর সংবাদে ভেঙ্গে পরা লিপি আবদুল্লাহ বাংলাদেশে রওনা দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু বাংলাদেশের সাথে বিমান যোগাযোগ বন্ধ থাকায় সেই ইচ্ছা পূরন সম্ভবপর হয়নি। লিপি আবদুল্লাহ সাথে শাশুরী সাহানারা বেগমের প্রতি গভির দূর্বলতার কথা চেনাজানা সর্বমহলেই জ্ঞাত ছিল। সেই শাশুরীর মৃত্যুর সংবাদে তিনিও এখন ভঙ্গুর মানুষিকতায় শোকে মুহ্যমান।

গোটা পরিবারি এখন সাহানারা বেগমের শূন্যতা অনুভবে কাতর হয়ে পরেছেন । এক সময় প্রাণচঞ্চল্যে ভরপুর সেরনিয়াবাত পরিবারের হঠাৎ শোকের যে ছাঁয়া নেমে এসেছে তা কিভাবে এবং কবে নাগাত কাটিয়ে ওঠে স্বাভাবিক হবে তা বলা দুস্কর। সেই সাথে বরিশালের ক্ষমতাসীন দলীয় রাজনীতির গতি প্রকৃতি নির্ভর করছে। বলা যায় সাহানারা বেগমের মৃত্যু নিয়ে কোন কর্মসূচি পালিত না হলেও বরিশালকে শোকের শহরই বলা যায়। বিভিন্ন সড়কধারে বিশালকায় কালোআকৃতির বিলবোর্ড শোভা পাচ্ছে সাহানারা বেগমের প্রতিছবি সম্মিলিত শোকের বাণী গাঁথা বিভিন্ন লেখায়- ভোলা যায়না তোমায় হে মহিয়াসী নারী, স্মৃতির পাতায় তুমি রবে অনন্ত বরিশালে।

সর্বশেষ