শামীম আহমেদ :: দক্ষিানাঞ্চলের বরিশাল-ঢাকা নৌপথের বরিশালের হিজলা উপজেলার ধুলখোলা ইউনিয়নের মেঘনার শাখা নদীর মিয়ার চরে এমভি ফারহানা মোনেম নামের একটি সিমেন্ট বোঝাই কারগো জাহাজ প্রচণ্ড ঢেউয়ের স্রোতের মুখে পড়ে ডুবে যাওয়ার ঘটনায় বরিশাল-ঢাকা নৌপথের মিয়ার চর চ্যানেটি ঝুকিপূর্ণ হয়ে উঠায় প্রায় ২ ঘন্টা অতিরিক্ত সময় ব্যয় ও ৪ কিলোমিটার বিকল্প নৌপথ ঘুড়ে পাড়ি দিয়ে ঢাকাগামী বিলাশবহুল যাত্রীবাহী লঞ্চ সহ বিভিন্ন নৌযানকে চলাচলের জন্য বরিশাল বিআইডব্লিউটি’এ কর্তৃপক্ষ প্রাথমিকভাবে নির্দেশনা জারী করেছে।
প্রায় ২৫ ঘন্টা অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত ডুবে যাওয়া কারগো জাহাজটি পানির স্রোত বাধা হয়ে দাঁড়াবার কারনে ডুবন্ত অবস্থা থেকে উদ্ধার করার কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি। এমনকি প্রচণ্ড পানির স্রোত না কমা পর্যন্ত কিছুই করা হবে না। তবে আপাতত ঐ ঝুকিপূর্ণ চ্যানেল পথে কেহ যাতে নৌযান নিয়ে চলাচল না করে সেজন্য স্থানটি চিহ্নিত করে মার্কিং করে দেওয়া সহ বিআইডব্লিইটি’এর সদস্যরা অবস্থান করে নজরদারী করছেন।
এছাড়া আগামী সপ্তাহে মিয়ারচর চ্যানেলে নৌ চলাচলের জন্য নতুন করে ড্রেজিং করা সহ ডুবে যাওয়া কারগোটি উদ্ধারের জন্য ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে বলে বরিশাল বিআইডব্লিউটি’এ নদী বন্দর উপ-পরিচালক বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
কারগো জাহাজটি ডুবে যাওয়ার ঘটনায় যাত্রী ও নৌযানের নিরাপত্তার স্বর্থে ঝুকিপূর্ণ মিয়ার চর চ্যানেল পথ ব্যবহার না করে জেলার মেহেন্দিগঞ্জে উপজেলার উলানিয়ার কালিগঞ্জ নদী দিয়ে ঢাকাগামী যাত্রীবাহী লঞ্চগুলোকে চলাচল করার জন্য লঞ্চ মালিক পক্ষকে অবহিত করেছে বিআইডব্লিউটি’এ।
এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় লঞ্চ মালিক সমিতির সহ-সভাপতি ও সুন্দরবন নেভিগেশন কোং এর চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, বর্তমান করোনা কালীন সময়ে পূর্বের চেয়ে তিন ভাগের এক ভাগ যাত্রী নিয়ে লঞ্চ সার্ভিসটি চালু রাখা হয়েছে। আমরা শুধু যাত্রীদের সুবিধার্থে ও স্টাপদের অনুরোধে লঞ্চ সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছি। এখানে আমাদের যে পরিমান খরচ হয় তা উঠে আসে না। এরপর মিয়ারচর চ্যানেলটি বন্ধ হওয়ার কারনে আমাদের অতিরিক্ত ৪ ব্যারেল তেল সহ ৫২ হাজার টাকা লোকশান দিয়ে যাত্রীদের সেবা দিতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আমি সকালে বিআইডব্লিউটি’এর চেয়ারম্যান কমোডর সাদেক এর সাথে কথা বলেছি তিনি আমাকে আশ্বস্থ করেছে আগামী সপ্তাহের মধে পানির স্রোত কমে আসলে ড্রেজিং করার মাধ্যমে চর অপসারন করার মাধ্যমে চ্যানেলটি চালু করে দেবেন। তাই জনস্বার্থে লঞ্চ সার্ভিস চালু রাখতে হচ্ছে। এবিষয়ে বরিশাল নদী বন্দর উপ-পরিচালক আজমুল হুদা মিঠু বলেন, কারগো জাহাজটি মিয়ারচর এলাকায় নদীতে নিমজ্জিত হবার পরপরই ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। সেখানের নদীর অবস্থা পর্যবেক্ষেণ করে দেখা যায় উত্তরের বন্যার পানি দক্ষিণাঞ্চলে টান পড়ায় প্রচন্ড ঢেউ ও স্রোত বইছে সেখানে এক মিনিটের জন্য কোন নৌযান থামিয়ে রাখা যাচ্ছে না। এছাড়া ওখানে জরুরী প্রয়োজনে ড্রেজিং করার মাধ্যমে ডুবো অপসারন করতে হলে অন্তত পক্ষে ড্রেজিং জাহাজ বোর্ডগুলোকে অবস্থান করতে হবে।
বর্তমানে সেখানকার পাণির এত স্রোত বইছে যা এই মুহুর্তে ড্রেজিং বোর্ড আনা সম্ভব হচ্ছে না। তবে আগামী সপ্তাহের ভিতর ড্রেজিং করার মাধ্যমে মিয়ারচর চ্যানেলটি চালু করা হবে।
উল্লেখ্য, শনিবার বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে নারায়নগঞ্জ থেকে প্রায় ৫৫লক্ষ টাকার শাহ সিমেন্ট কোং এর ১৩ হাজর বস্তা সিমেন্ট নিয়ে যশোরের নওয়াপাড়া যাত্রাকালে বরিশালের হিজলা উপজেলার মিয়ারচর নামকস্থানে প্রচন্ড ঢেউয়ের কারনে গতি চরায় উঠে গিয়ে কাত হয়ে ডুবে যায় এমভি ফারহানা মোনেম সিমেন্ট বোঝাই কারগোবাহী জাহাজটি।
এসময় কারগোতে থাকা মাস্টার, সুকানী,গ্রিজার সহ ৯জন স্টাফ নদীতে লাফিয়ে পড়ে। পড়ে তাদেরকে নদীতে থাকা মৎস্য জেলেরা উদ্ধার করে তীরে নিয়ে আসেন।
এ ব্যাপারে মাস্টার আমির হোসেন বাদী হয়ে শনিবার রাতে মুলাদী থানায় একটি সাধারন ডায়েরী দায়ের করেন বলে হিজলা নৌ পুলিশের ওসি শেখ বেলাল হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।