মো: ইব্রাহিম সবুজ :
দেশে সুযোগ-সন্ধানী দুর্বৃত্তদের হাতে ফেসবুককে অনৈতিকভাবে ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য ব্যবহার করতে দেখা যাচ্ছে। তেমনি আবার ভাল লোকদের দেশ ও জনগণের কল্যাণেও এই ফেসবুককে ব্যবহার করতে দেখা যাচ্ছে।
ফেসবুক থেকে যদি অামরা লাভবান হতে চাই, তাহলে এর অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে৷ ব্যবহারকারীদের সজাগ, সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে৷ বুঝতে হবে কোনটা সত্য খবর আর কোনটা বানানো অসত্য খবর৷
সম্প্রতিক সময়ে লক্ষ করা যাচ্ছে দেশ নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব গণমাধ্যমকর্মীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ভাবে অপপ্রচার করে আসছে।
রিসোর্ট কাণ্ডে মামুনুলের ঘটনায় ফেসবুক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রায়ই একটি সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। অন্ধ ভক্তরা তার রুহানি বাবার পক্ষে প্রচারে নেমে সত্যকে আড়াল করতে দেশের গণমাধ্যমগুলো অসত্য সংবাদ প্রকাশ করেছে এমনটাই বুঝাতে চেয়েছে।
কিন্তু সত্য কখনো আড়াল করা যায় না। অামরা দেখেছি মামুনুলের বলাতকার সহ তৃতীয় স্ত্রীর সন্ধান মিলেছে এই যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে।
ফেসবুকে মহানবী (সাঃ) সম্পর্কে কটুক্তি করা হয়েছে এই অজুহাতে রামুতে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বাড়ি-ঘর আর বৌদ্ধ বিহার পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল৷ নাসিরনগরে বলা হয়েছিল ফেসবুক পোষ্টে মুসলমানদের কাবা ঘরের সঙ্গে হিন্দু দেবতা শিবের ছবি জুড়ে দিয়ে ইসলামের অবমাননা করা হয়েছে৷ সেই কারণ দেখিয়ে হামলা হলো এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর৷ অাবার ভোলাতেও তাই, মহানবী ও ইসলামকে কটাক্ষ করে ফেসবুকে পোষ্ট দেয়া হয়েছে সেই অভিযোগ তুলে শুরু হওয়া বিক্ষোভ সমাবেশে ঝরে গেলো চারজনের প্রাণ৷
বোঝাই যাচ্ছে, বাংলাদেশের সমাজ জীবনে ফেসবুক নামের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি বেশ ভালভাবেই আসন গেড়ে বসেছে। মানুষকে মুক্তভাবে কথা বলার ক্ষমতা দিয়েছে ফেসবুক৷ এই প্ল্যাটফর্মে সব শ্রেণী-পেশার মানুষ মুক্তভাবে নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা, আবেগ-অনুভুতি, ক্ষোভ, বিক্ষোভ ও মতামত প্রকাশের ক্ষমতা রাখে৷ ফলে, মতপ্রকাশের ক্ষেত্রটি কিছুটা গণতান্ত্রিক হয়েছে৷ ফেসবুকের সুবাদে পাবলিক পরিসরে এখন সাধারণ মানুষের কন্ঠস্বরও শোনা যাচ্ছে৷ মতপ্রকাশের পাশাপাশি নিজের ব্যক্তিত্ব ও ভাবমূর্তি অন্যের সামনে সহজে তুলে ধরার সুযোগ করে দিয়েছে ফেসবুক৷ সেই সঙ্গে ফেসবুকে সমাজ, রাজনীতি, মতাদর্শ ও ধর্ম-বিষয়ক প্রচার চালানোও খুব সহজ হয়ে গেছে৷ সেই সুযোগে কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লেখালেখি করে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বাহাবা নিচ্ছে।
পাশাপাশি বেশ কিছু ঘটনায় ইদানিং খুনখারাপি, হিংসা-বিদ্বেষ, হয়রানি-হানাহানি ছড়াতেও বড় ভূমিকা পালন করছে ফেসবুক৷ বুয়েট ছাত্র আবরারের খুনিরাও ফেসবুক মেসেঞ্জারে আলোচনা করে তাকে নির্যাতনের পরিকল্পনা করেছিল৷ বরগুনার আলোচিত রিফাত শরিফ হত্যার আগের রাতে জিরো জিরো সেভেন ফেসবুক মেসেজ গ্রুপে রিফাত হত্যার নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল৷ এসব কারণেই হয়তো অনেকে খুব রেগে গিয়ে বলেছেন, ফেসবুক হচ্ছে আধুনিক বিশ্বের ক্যান্সার৷ মানুষ ঘন্টার পর ঘন্টা তার মূল্যবান সময় পার করছে ফেসবুকে অন্যের ব্যক্তিগত জীবন ঘাটাঘাটি করে৷ মানুষ হয়ে যাচ্ছে যান্ত্রিক, অনুভূতিহীন ও সামাজিক দায়-দায়িত্বহীন৷
অনেকে মনে করেন, ফেসবুকের কারণেই এই সময়ে মানুষের মনোভাব বোঝা সহজ হয়েছে৷ বোঝা যাচ্ছে, কারা ভদ্রবেশী মুখোশ পরা শয়তান, আর কারা ধর্মীয় হিংসা তৈরির উস্কানি দাতা৷ জানা যাচ্ছে, ফেসবুক ব্যবহার করে কারা জনগণকে বিভ্রান্ত করেছে, কারা রামু ভোলা নাসিরনগরে সাম্প্রদায়িক সংঘাত তৈরি করেছে, কারা সংখ্যা লঘুদের উপর হামলা চালিয়েছে৷
অনেকে মনে করেন বর্তমানে যত রকমের সামাজিক অস্থিরতা হচ্ছে তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ফেস বুকের মাধ্যমেই ছড়াচ্ছে৷ কোন ভাবে একটা লেখা বা ছবি উদ্দেশ্যমূলকভাবে ভাইরাল করতে পারলেই হলো, সত্যতা যাচাই না করেই সবাই ঝাঁপিয়ে পড়েন মন্তব্য করতে, কেউ কেউ আবার এক কাঠি এগিয়ে নেমে পড়েন মাঠে৷ এক দল আছেন, যারা হয়তো ফেসবুক পোষ্টটা নিজের চোখে দেখেননি, অন্যের কাছে শুনেই হুঙ্কার ছাড়ছেন, মাথা ফাটাফাটি শুরু করে দিয়েছেন৷ তাদের এইসব ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডের ফায়দা লোটে দুর্বৃত্ত স্বার্থান্বেষী মহল৷
তাই সকলে ফেসবুক অাইডি ব্যবহারের ক্ষেত্রে এখনই সতর্ক না হলে ভবিষ্যতে ভয়াবহ ক্ষতির আশংকা পরবে৷ যে কোন স্বার্থান্বেষী মহল গুজব বা ভূয়া খবর ছড়িয়ে এই আনন্দময় ফেসবুকের জগতকে বিপজ্জনক ভাবে ব্যবহার করতে পারে দেশের বিরুদ্ধে, জনগণের বিরুদ্ধে৷ যার কিছু কিছু লক্ষণ এরই মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে৷ আরো বড় ক্ষতি হওয়ার আগেই, আমাদের সতর্ক হতে হবে৷