১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

সেই জেবুন্নেছা আফরোজের ফোন, কিন্তু জানা গেলোনা প্রতিক্রিয়া

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

শাকিব বিপ্লব:

রাজনৈতিক বিষয়াদি জানতে যাকে বারবার সেলফোনে যোগাযোগে একসন্ধ্যা অব্যাহত চেষ্টার মাঝেও সাড়া দেয়নি, সেই জেবুন্নেসা আফরোজ-ই স্বইচ্ছায় নিজ নম্বর থেকে এই প্রতিবেদককে ফোন দিয়েছিলো। ধারণা করা হচ্ছে, বরিশাল সদর আসনের আ.লীগ দলীয় সাবেক এই সাংসদকে নিয়ে অনলাইন পোর্টাল বরিশাল বাণীতে তার রাজনৈতিক উত্থান-পতনের নেপথ্যের কারন নিয়ে একটি তথ্যবহুল প্রতিবেদন প্রকাশ পাওয়ায় তিনি ফোন দিয়ে থাকতে পারেন। হয়তো কিছু বলতে চেয়েছিলো, কিন্তু সংশ্লিষ্ট এই সাংবাদিক সড়ক দূর্ঘটনায় সকালে গুরুতর আহত হয়ে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিয়ে নিজ বাসভবনে ফেরার পর সন্ধ্যায় ফের অসুস্থ হয়ে পড়ার মাঝে হঠাৎ এই নেত্রীর ফোন আসে। কয়েক দফা রিং বাজার পর তা আর রিসিভ করা সম্ভব হয়নি। ফলে দুর্ভাগ্যবশতই জানা গেলো না এই নেত্রীর প্রতিক্রিয়া। আবার সেলফোনের রিংটোন কয়েকবার বেজে উঠে তা থেমে গেলেও পুনরায় আর কল না আসায়, এটাও হতে পারে, তিনি সাংবাদিকের সাথে বাহাচে যেতে রাজি হননি।
তার রাজনৈতিক ঘনিষ্টদের অনুমান নির্ভর অভিমত, এই নেত্রী বরিশাল বাণীর প্রকাশিত সংবাদের সত্য উপস্থাপন হওয়ায় যেমন বিব্রত হয়েছেন, তার চেয়েও বেশী ক্ষোভ সামাল দিতে না পেরেই প্রকাশিত সংবাদের সংশ্লিষ্ট এই প্রতিবেদককে স্মরণ করতে বাধ্য হন। নচেৎ তিনি সহসায় ফোন দেয়ার ব্যাক্তি নন্ । বাস্তবতাও বলছে সেটাই। ফোন দেয়া তো দূরের কথা, তিনি কারো ফোন রিসিভ করেন না। বরিশাল না ঢাকায় অবস্থান করছেন তাও স্পষ্ট করতে চান না।
নিজ দলের ক্ষমতার এই আমলে রাজনৈতিক উত্থানে সুবর্ণ সুযোগ এবং পায়ের কাছে উপরে উঠার স্বর্নের সিড়ি পেয়েও অবমূল্যায়নে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছেন, ব্যার্থ হয়েছেন বিশাল কর্মী-সমর্থকবেষ্টিত রাজনৈতিক মঞ্চে স্থায়ীত্ব হতে। রাজনৈতিক অদূরদর্শীতা ও অহংকার পতনের কিনারায় নিয়ে যাওয়ায় তিনি একে একে সবই হারিয়েছেন। এই মন্তব্য তারই একসময়ের রাজনৈতিক সহোচরদের।
প্রয়াত আ.লীগ নেতা এবং বরিশাল উন্নয়নের প্রবর্তক শওকত হোসন হিরন রাজনীতিতে দীর্ঘকাল ত্যাগ স্বীকার করে অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আ.লীগে এসে নিজের প্রতিভার মাধ্যমে বিএনপি প্রভাবিত জেলা শহর বরিশালকে আ.লীগের ঘাঁটি এবং ভোটার সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি নতুন এক রাজনীতি উপহার দিয়েছিলেন। নিজের শৈল্পিক মন্ােভাব এবং কৌশলে উন্নয়ন বাজেট এনে বরিশালকে রূপ দিয়েছিলেন মডেল এক শহরে।
আবার সহাবস্থানের রাজনীতি উপহার দিয়ে বিরোধী অপরাপর দলগুলোর নেতা থেকে কর্মী পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে সমীহ আদায় করে হয়েছিলেন অনন্য এক নেতা। ফলে ২০০০ পরবর্তী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিরন বরিশাল রাজনীতিতে হয়ে উঠেছিলেন অকল্পনীয় জনপ্রিয়তার অধিকারী।
৯ এপ্রিল ২০১৪ সালে হিরনের মৃত্যু ছিলো অপ্রত্যাশিত একঘটনা। মৃত্যুর সময়কালে এই নেতার জনপ্রিয়তা কোথায় গিয়ে ঠেকেছিলো তার প্রমাণ বহন করে বরিশাল বঙ্গবন্ধু উদ্যানের তার জানাযায় লাখো জনতার উপস্থিতি। বরিশাল রাজনীতিতে এমন দৃশ্য অতীতে দেখা যায়নি। জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা অবস্থায় নেতার অকালপ্রয়াণে সহানভ’তির চোখে এবং হিরনের অবদান হিসেবে তার পতœী জেবুন্নেছার আগ্রহে সদর আসনের দলীয় মনোনয়ন পেয়ে বিনা কষ্টে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন এই নেত্রী।
এরপর ক্ষমতার ব্যাবহার এবং নেতা-কর্মীদের কীভাবে আগলে রাখবেন তা বেমালুহ ভুলে যান তিনি। নিজের অনুসারী তো দূরের কথা, মিডিয়াকর্মীদের সাথে অসহযোগিতামূলক আচরনে প্রয়াত নেতা হিরনের রেখে যাওয়া জনপ্রিয়তার মঞ্চের বাঁশ-তাঁবু ভাঙতে থাকেন।
অন্যদিকে সেরনিয়াবাদ সাদিক আব্দুল্লাহ উদীত সূর্যের ন্যায় বরিশাল রাজনীতিতে পদার্পন করে আলো ছড়াতে থাকলে সময়ের আবর্তে জেবুন্নেছা আফরোজ অন্ধকারে ঢাকা পড়ে যায়। একদিকে জেবুন্নেসা স্বামীর জনপ্রিয়তা অন্যদিকে সাদিক পিতা হাসানাতের প্রভাব এই দুইয়ে লড়াইয়ে হেরে যায় প্রয়াত নেতার পতœী। এরপর একে একে সংসদে দলীয় মনোনয়ন ব্যার্থ সর্বশেষ নবগঠিত নগর আ.লীগের নেতৃত্ব বঞ্চিত হয়ে জেবুন্নেসা আফরোজ বরিশাল রাজনীতিতে গুরুত্বহীন হয়ে অদৃশ্যেই থাকনে। তার স্বামীর রেখে যাওয়া বিশাল কর্মী সমর্থক এবং অনেক ত্যাগী নেতা এই নেত্রীর কারনে আজ রাজনীতিতে পঙ্গু অথবা নিস্ক্রিয়তায় তিনি এখন একা।
বরিশালে করোনা দূর্যোগে প্রায় সব রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ মাঠে নামেন, অর্থ ও ত্রাণ সহায়তায় তৎপর হয়ে উঠেন। অবশ্য অনেকে অপ্রকাশ্যে থেকেও ভ’মিকা রাখছেন । সেক্ষেত্রে ব্যাতিক্রম জেবুন্নেছা আফরোজ। প্রাসঙ্গিক এই বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় রাজনীতিতে আলোচনা সৃষ্টি হলে তার বর্তমান অবস্থান ও গতিবিধি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। ফলশ্রুতিতে বরিশাল বাণীর অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে তিনি স্থায়ীভাবে ঢাকায় থাকেন, এমন ধারনা সত্য নয়। প্রায়শ সাবেক এই সাংসদ বরিশালে আসা-যাওয়ার মধ্যেই থাকেন। করোনা দূর্যোগেও তিনি বরিশাল অবস্থান করলেও মাঠে নামেননি, দেখা দেননি কারো সাথে।
একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, জেবুন্নেছা আফরোজ এখন রাজনীতির থেকে ব্যাবসা নিয়ে বেশী ব্যাস্ত। ঢাকায় বেশ কিছু ব্যাবসা বাণিজ্যের অংশীদার হয়েছেন। নিজের মালিকানাধীন গড়ে তুলেছেন শিপিং ব্যাবসা। বরিশাল রাজনীতিতে পদ না থাকলেও ঢাকার বিভিন্ন সরকারী দপ্তর ও মন্ত্রনালয়ে এখনও প্রভাব বিস্তার করেন- শুধু ব্যাবসায়িক স্বার্থে।
এসব তথ্য নিশ্চিত হতে এবং তার বর্তমান রাজনৈতিক গন্ডীর সীমানা খুঁজতে ও এপ্রসঙ্গে মন্তব্য জানতে গত শনিবার ৯ মার্চ রাতে এই প্রতিবেদক কয়েকবার তার সেলফোনে যোগাযোগ করে ব্যার্থ হন। রোববার রাতে আবার যোগাযোগ করা হলে প্রথম কল রিসিভ করেই এক বিব্রতকর পরিস্থিতির অবতারনা ঘটান। এই প্রতিবেদকের সাথে এমন ভাব নেন, যেনো তার ব্যাস্ততার শেষ নেই। কিছু মন্তব্যে তার সাথে আলাপ সংক্ষিপ্ত হয়ে যাওয়ায় প্রশ্নের উত্তর জানার বদলে তিনি উল্টো প্রশ্ন রেখে বিরক্ত করা থেকে বিরত থাকার দাওয়াই শুনিয়ে দেন। সেই সূত্র ধরেই গতকাল সোমবার সকালে বরিশাল বানী অনলাইন পোর্টালে,“বরিশাল রাজনীতিতে পদহীন নেত্রী জেবুন্নেছা আফরোজ বেজায় ক্ষুদ্ধ!” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
সংবাদটি সকালে ঐ পোর্টালে আপলোড করার পর প্রায় দেড়লাখ পাঠক অনসুরণ করে। কিন্তু দূর্ভাগ্য এর কিছু পরেই এই প্রতিবেদক সংবাদ সংগ্রহে মোটরসাইকেলযোগে লাহারহাটে যাওয়ার পথিমধ্যে সড়ক দূর্ঘটনায় পতিত হন। গুরুতর আহত হয়ে বরিশাল সদর হাসপাতালে সেবা নিয়ে নিজ বাসায় থাকার আগ্রহে চিকিৎসকরা তাকে ছাড়পত্র দেন। সন্ধ্যায় ফের তার শারিরীক পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। একপর্যায়ে সদর হাসপাতালের একজন চিকিৎসক ও নার্স তার রক্তক্ষরণ বন্ধে প্রান্তকর চেষ্টার মাঝে ৮টা ৫৪ মিনিটে সাবেক সাংসদ জেবুন্নেছা আফরোজের ফোনকল এই প্রতিবেদকের মোবাইলে বেজে ওটে।
কিন্তু ইচ্ছা সত্বেও রিসিভ করা সম্বব হয়নি। ধারনা করা হচ্ছে, প্রকাশিত সংবাদে তার অতীত ও বর্তমান ভুমিকায় রাজনীতির প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠায় তিনি হয়তো ক্ষুদ্ধ হয়েছেন। ফোন রিসিভ না করায় এই নেত্রীর প্রতিক্রিয়া জানা সম্ভব হলো না। যদি জানা যেতো তাহলে হয়তো জানিয়ে দিতেন সাবধানতার কথ্।া এমন ইঙ্গিত ই পাওয়া গেছে মঙ্গলর্বা তার এক ঘনিষ্টজনের মন্তব্যে।

সর্বশেষ