১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

স্বার্থ হাসিলে রাজনীতিঃ মনিষা চক্রবর্তীকে নিয়ে বিতর্কের ঝড় !

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

শফিক মুন্সি :
সরকারি বরিশাল কলেজের নাম পরিবর্তনের পক্ষে বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে বরিশালের বিভিন্ন গোষ্ঠী। তাদের নানা কর্মসূচিতে গত কদিন যাবৎ উত্তপ্ত নগরীর রাজনৈতিক অঙ্গন৷ এরই মধ্যে গত বুধবার সকালে বরিশাল শহরের মধ্যভাগে প্রতিষ্ঠিত অশ্বিনী কুমার দত্ত (টাউন) হলের সামনে পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ও গণস্বাক্ষর কার্যক্রম পরিচালনা করে দুটি পক্ষ। তবে সেদিনের কর্মসূচিতে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) নেত্রী ডাঃ মনীষা চক্রবর্তী শিশু কিশোরদের ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কলেজটির নাম অপরিবর্তিত রাখার দাবিতে আন্দোলন করা অনেকে বর্তমান করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের হাতিয়ার হিসেবে শিশুদের ব্যবহার করা অমানবিক ও অশোভন হিসেবে দেখছেন। অন্যদিকে বাসদের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে ঘটনাটি স্বাভাবিক। এছাড়া যথাযথ স্বাস্থ্য বিধি মেনে তারা সমাবেশ করতে গেলে বিরোধী পক্ষের কারণে সেটা সম্ভব হয় নি বলে পাল্টা অভিযোগ ছুঁড়েছে তারা।

বরিশাল সিটি করপোরেশনের বর্তমান প্যানেল মেয়র এবং সরকারি বরিশাল কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী এড.রফিকুল ইসলাম খোকন শিশুদের ব্যবহার করে ডাঃ মনীষা চক্রবর্তীর সমাবেশ করাকে অমানবিক আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত তাঁর সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়ে চলে যান৷ পরবর্তীতে বরিশালের কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তি নিজেদের প্রচেষ্টায় আজকের সরকারি বরিশাল কলেজ প্রতিষ্ঠা করে।আমরা যারা প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা আছি তারা সবাই চাই কলেজটির নাম অপরিবর্তিত থাকুক। সেখানে ডাঃ মনীষা এবং তাঁর দল জনসমর্থন না থাকায় শিশুদের নিয়ে কলেজটির নাম পরিবর্তন করার পক্ষে অযৌক্তিক আন্দোলন করছে। সবচেয়ে ভয়ানক ব্যাপার এই সংক্রামক পরিস্থিতির তোয়াক্কা না করে লোক সমাগম করতে ব্যবহার করছে শিশুদের। যেটা সম্পূর্ণ অমানবিক।

আর করোনা পরিস্থিতিতে শিশুদের রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে বাসদ রাজনৈতিক হীনমন্যতা ও দৃষ্টিকটু উদাহরণ সৃষ্টি করেছে বলে দাবি বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এড. একেএম জাহাঙ্গীরের। তিনি সরকারি বরিশাল কলেজের সাবেক ভিপি এবং বর্তমানে কলেজটির নাম অপরিবর্তিত রাখার চলমান আন্দোলনের প্রধান নেতা হিসেবে বিবেচিত। তিনি বলেন, বিশেষ স্বার্থান্বেষী মহলের স্বার্থ চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে এবং শান্তিপূর্ণ বরিশালে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার জন্য ডাঃ মনীষা চক্রবর্তী মিছিল – সমাবেশ করছেন। তিনি তাঁর কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে করোনা সংক্রমণের কথা চিন্তা না করে বরিশাল কলেজের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় এমন মানুষজন এবং শিশুদের ব্যবহার করছে। যা রাজনৈতিকভাবে সম্পূর্ণ অশোভন ও দৃষ্টিকটু।

এ ব্যাপারে বাসদ নেত্রী ডাঃ মনীষা চক্রবর্তী জানান, বরিশালে যেকোনো রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন গুলোর চেয়ে তাদের কর্মীরা করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কে বেশি সচেতন। যখন দেশের সরকার কিংবা অন্য কেউ বরিশালে করোনা প্রতিরোধে কাজ করে নি তখন থেকে তারা করোনার সংক্রমণ ও প্রতিরোধ বিষয়ে সকলকে সচেতন করেছেন। তাই বুধবারের মিছিলে কিংবা সমাবেশে অংশগ্রহণ করা সকলেই ব্যক্তিগত জায়গা থেকে এ বিষয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে।এমনকি তাদের মিছিলে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত হয়েছে। কিন্তু অশ্বিনী কুমার হলের সামনে তাদের পূর্ব নির্ধারিত সমাবেশ স্থলে হঠাৎ আওয়ামী পন্থীদের উপস্থিত হওয়ার কারণে শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করে দাঁড়ানোর সুযোগ ছিল না।

তিনি উল্লেখ করেন, গত বুধবার নগরীর অশ্বিনী কুমার দত্ত হলের সামনে কর্মসূচি পালনের ঘোষণা তারা আগে দেয়। পরিস্থিতি ঘোলাটে করার জন্য তাদের কর্মসূচি দেখে অন্য পক্ষ সেখানে অবস্থান নেয়াতে একই সময়ে দুটি কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়েছে। এমনটা না হলে সেখানে পর্যাপ্ত জায়গা পাওয়া যেতো এবং শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করে কার্যক্রম সম্পন্ন করা যেতো। তাই যারা বাসদের দিকে করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য বিধি অনুসরণ না করার অভিযোগ তুলছে তাদেরকে স্বীকার করতে হবে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টির পিছনে তাদের দায় বেশি।

তবে সরকারি বরিশাল কলেজের নাম ‘মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত সরকারি কলেজ’ করার আন্দোলন সামনেও চলমান থাকবে এবং সেসব আন্দোলনে শিশু কিশোরেরা অংশগ্রহণ করবে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা বরিশাল নগরীর দুটি বস্তিতে দীর্ঘ ৮ বছর যাবৎ শিশু কিশোরদের জন্য বিনামূল্যে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রেখেছি।তাদেরকে একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি স্থানীয়, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক নানা মনীষীদের জীবনী পড়ানো হয়। এইসব শিশু কিশোরেরা মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্তের সম্পর্কে অনেক বয়োজ্যেষ্ঠদের তুলনায় বেশি জানে বিধায় নিজ শহরে এই মনীষীর অপমান তারা মেনে নেবে না।

এ ব্যাপারে বাসদ বরিশাল জেলা শাখার আহবায়ক ইমরান হাবিব রুমন জানান, মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে প্রতিটি গণতান্ত্রিক এবং নাগরিক অধিকার আদায়ের আন্দোলনে দেশের শিশু কিশোরেরা অংশগ্রহণ করেছে। এমনকি ৬৯ এর আন্দোলনে বরিশালের একমাত্র শহীদ স্কুলছাত্র আলাউদ্দিন পড়তেন নবম শ্রেণীতে। সরকারি বরিশাল কলেজের নাম পরিবর্তন করে মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্তের নামে করার যৌক্তিক আন্দোলনেও বিগত দিনের মতো শিশু কিশোরেরা অংশগ্রহণ করবে এটাই স্বাভাবিক।

বরঞ্চ তিনি অভিযোগ করেন, প্রায় দেড় হাজার মানুষের জনসমাবেশের মধ্যে মাত্র ছয়-সাত জন শিশু কিশোরের বিশেষ একটি মুহূর্তের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে একটি বিশেষ মহল পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে মোড় দেয়ার চেষ্টা করছে।তিনি বলেন, করোনার সময়ে জনগনের পাশে দাঁড়াতে পাঁচ মাস ধরে আমরা লক্ষাধিক সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ, ১০ হাজার মানুষের মধ্যে হ্যান্ডওয়াশ বিতরণ, ২০’০০০ মানুষের মধ্যে মানবতার বাজার থেকে ত্রাণ বিতরণ, ফ্রি এম্বুলেন্স, টেলিমেডিসিন, অক্সিজেন ব্যাংকসহ প্রতিনিয়ত আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এগুলো করছি জনগণের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা থেকে।যে মহান মানুষটির জন্য এই অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ আজও শিক্ষার আলো দেখার সুযোগ পাচ্ছে তাঁর প্রতিও আমাদের দায়বদ্ধতা আছে।নিজ বাসস্থানে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানটির নামের সঙ্গে মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্তের নাম যুক্ত করার দীর্ঘদিনের যে দাবি সেটা অবশ্যই আলোর মুখ দেখবে।

উল্লেখ্য, স্থানীয় সংস্কৃতিজনদের দাবির প্রেক্ষিতে গত ফেব্রুয়ারী থেকে বরিশাল জেলা প্রশাসন কলেজটির নাম পরিবর্তনের জন্য চিঠি চালাচালি শুরু করেন উপর মহলে। গত ২৯ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয় কলেজটির বর্তমান নাম পরিবর্তন করে “মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত সরকারি কলেজ” নামে রাখার জন্য সুপারিশ সহ মতামত চায় বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের কাছে। এসব গোপনীয় প্রশাসনিক বিষয় নিয়ে তেমন কোন উচ্চবাচ্য ছিল না বরিশালে। এ ব্যাপারে স্থানীয় গণমাধ্যমে সর্বপ্রথম গত ৫ জুলাই ‘পাল্টে যাচ্ছে সরকারি বরিশাল কলেজের নাম’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে৷ এর পরই প্রতিষ্ঠানটির নাম পরিবর্তনের বিষয়টি সবার সামনে আসে।যার প্রেক্ষিতে গত বুধবার কলেজটির নাম অপরিবর্তিত রাখার দাবিতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করে বরিশাল মহানগর আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে কলেজের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। ঠিক একই সময় রাস্তার উল্টো পাশে কলেজটির নাম পরিবর্তন করে ‘মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত সরকারি কলেজ’ করার আহবান জানিয়ে সমাবেশ করে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) এর নেতৃত্বে বরিশালের বিভিন্ন প্রগতিশীল রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন।

সর্বশেষ