৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রাখার অভিযোগ ১০ লক্ষ টাকা যৌতুকের জন্য বিয়ের সাড়ে ৯ মাসের মাথায় লাশ হয়ে রিমা ফিরল বাবার বাড়ি

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

হারুন অর রশিদ, আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি।
সাড়ে ৯ মাস আগে বাবা মান্নান হাওলাদারের আদরের ধন ইসরাত জাহান রিমা (১৯) বৌ সেজে গিয়েছিল স্বামীর কর্মস্থল ঢাকার আগারগাওয়ের তালতলার বাড়িতে। হাতের মেহেদির রং মুছতে না মুছতেই মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে লাশ হয়ে ফিরল বাবার বাড়ি। ২০ লক্ষ টাকা যৌতুকের জন্য মেয়েকে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ বাবা মান্নান হাওলাদারের। ওই ঘটনা ঘটেছে ঢাকার আগারগাও তালতলায় অবস্থিত সংসদ ভবনের কর্মচারী কোয়ার্টারের এগারোতলায়।
জানা গেছে, আমতলী পৌর শহরের ৪ নং ওয়ার্ডের নিবাসী মোঃ মান্নান হাওলাদারের কলেজ পড়–য়া মেয়ে রিমা সাথে কুকুয়া ইউনিয়নের কুকুয়া গ্রামের মৃত হানিফ মোল্লার ছেলে সাদ্দাম হোসের সাথে ২০২২ সালের ১৩ জুলাই বিয়ে হয়। সাদ্দাম হোসেন জাতীয় সংসদ ভবনের পরিবহন শাখার কম্পিউটার অপারেটরের চাকুরি করেন। বিয়ের সময় ইসরাত জাহান রিমার বাবা মান্নান হাওলাদার একমাত্র মেয়ের সুখের কথা ভেবে ৮ থেকে ১০ লক্ষ টাকা ব্যয় করে ঢাকার সরকারী কোয়ার্টারে থাকার জন্য সকল আসবাবপত্র ক্রয় করে দেন। কানে, গলার ও হাতের চুরিসহ আরো প্রায় ৫ লক্ষ টাকা মূল্যের স্বর্নালংকার দিয়ে দেন। বিয়ের পর থেকেই শ্বাশুরী সাহিদা বেগম, ননদ আসমা বেগম ও ভগ্নিপতি মাসুদ রানা ওই বাসায় থাকতেন এবং রিমাকে কারনে অকারনে নির্যাতন করতেন। এতে স্বামীরও সায় ছিল।
বৃহস্পতিবার বিকেলে স্বামী রিমার বাবার বাড়ী থেকে ঢাকায় বাসা করার জন্য ২০ লক্ষ টাকা যৌতুক এনে দিতে বলেন। রিমা তার বাবার নিকট থেকে ওই টাকা এনে দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে ওই দিন বিকেলে এবং রাতে স্বামী সাদ্দাম হোসেন মোল্লা, শ্বাশুরী সাহিদা বেগম, ননদ আসমা বেগম ও তার স্বামী মাসুদ রানা মিলে রিমাকে ব্যাপক নির্যাতন করেন। নির্যাতনের পর মানুষিকভাবে ভেঙ্গে পরেন ইসরাত জাহান রিমা। বিষয়টি রিমা তার বাবা মান্নান হাওলাদারেকে জানালে সেও মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পরেন এবং এত টাকা সে কিভাবে দিবে তা মেয়েকে জানায়। পরের দিন শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে রিমা বাসার ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না পেচিয়ে আত্মহত্যা করেছে মর্মে লাশ উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে গেছে বলে স্বামী সাদ্দাম মোল্লার পরিবারের লোকজন রিমার বাবা মান্নান হাওলাদারকে জানায়।
রিমার বাবা মান্নান হাওলাদার অভিযোগ করে বলেন, মেয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে শুক্রবার বিকেলে ঢাকায় পৌছে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখি আমার মেয়ের কপালে কাটা দাগ এবং থুতনি এবং গলায় আঘাতে চিহ্ন রয়েছে। আমার মেয়েকে ওরা ২০ লক্ষ টাকা যৌতুকের জন্য হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রেখেছে।
রিমার ভাই রাব্বি হাওলাদার বলেন, আমার বোন আত্মহত্যা করে নাই। ওরা মেরে আমার একমাত্র বোনকে ঝুলিয়ে রেখেছে। ওদের করা একটা ভিডিও পাওয়া গেছে তাতে দেখা গেছে, আমার বোনের অর্ধেক হাটু খাটের উপর আর গলায় ফ্যানের সাথে ওড়না ঝুলছে। এটা কিভাবে আত্মহত্যা হয়।
রিমার ফুপু ফেরদৌসি বেগম বলেন, মোগো ফুটফুটে মাইয়াডারে টাহার লইগ্যা ওরা মাইর‌্যা হালাইছে। এইয়ার বিচার চাই।
রিমার খালা রাহিমা বেগম বলেন, বিয়ার সময় মাইয়াডারে সব দিয়া দিছি। হেইয়ার পরও পশুরা আমাগো মাইয়াডারে মাইর‌্যা হালাইছে।
শনিবার সকালে রিমার আমতলী বাসায় সরেজমিন উপস্থিত হয়ে দেখা গেছে, এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য। স্বজন আর রিমার মা রাজিয়া বেগম বার বার মেয়ের নাম ধরে ডাক চিৎকার দিচ্ছেন আর মুর্ছা যাচ্ছেন। ওই দৃশ্য দেখে পাড়া প্রতিবেশীদের চোঁখেও অশ্রু দেখা গেছে।
প্রতিবেশী আলফি আক্তার জানান, রিমা অত্যান্ত হাসি খুশি আর মিষ্টি স্বভাবের একটি মেয়ে ছিলো। অল্প বয়সে মেয়েটির বিয়ে হয়। নরপশু না হলে এরকম একটি ছোট এবং সুন্দর ফুটফুটে মেয়েকে মেরে ফেলতে পারে না।
রিমার মৃত্যু শুনে রনজিৎ কুমার শীল বলেন, যৌতুকের জন্য একটি মেয়েকে এভাবে মেরে ফেলবে এটা সহজ ভাবে মেনে নেওয়া যায় না। আমরা এর কঠিন বিচার চাই।
অভিযুক্ত স্বামী সাদ্দাম হোসেন মোল্লা স্ত্রী রিমাকে হত্যার কথা অস্বীকার করে বলেন, সে নিজে অভিমান করে আত্মহত্যা করেছে। তার নিকট কোন যৌতুক চাওয়া হয়নি এবং নির্যাতনও করা হয়নি।
ঢাকা শের-ই-বাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উৎপল বড়–য়া মুঠোফোনে বলেন, রিমার লাশ ময়না তদন্তের পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, শুক্রবার বিকেলে রিমার বাবা মান্নান হাওলাদার বাদী হয়ে স্বামী সাদ্দাম হোসেন মোল্লা, শ্বাশুরী সাহিদা বেগম, ননদ আসমা বেগম ও তার স্বামী মাসুদ রানাকে আসামী করে একটি হত্যা প্ররোচনা মামলা দায়ের করেছেন। মামলা দায়েরের পর আসামীদের প্রাথমিক জিঞ্জাসাবাদ করা হয়েছে। কি তথ্য পাওয়া গেছে সেটি এখন তদন্তের স্বার্থে বলা যাবে না। ময়না তদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ