১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
দুমকিতে কাওসার আমিনের উঠােন বৈঠকে হাজার হাজার জনতার ঢল গলাচিপা উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে ১৫ জন ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত থাকবেন হজ ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ স্বর্ণের দাম আরও বাড়ল ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের আভাস, হুঁশিয়ারি সংকেত সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্তরায় এমপি পঙ্কজ, হিজলায় চেয়ারম্যান প্রার্থীর অভিযোগ শেবাচিমের সব সংকট কাটিয়ে উঠতে স্বাস্থ্য বিভাগ কাজ শুরু করেছে : স্বাস্থ্য সচিব দুমকিতে চেয়ারম্যান প্রার্থী ও সমর্থকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন উজিরপুরে মসজিদের কমিটি ও ইমাম দ্বন্দ্বে ,ফ্যান, মাইক ও আইপিএস খুলে নিলো প্রতিপক্ষরা। সাতলায় রাশেদ খান মেনন এমপি'র ৮১ তম জন্মদিন পালন।

১৫ আগস্ট ও সেরনিয়াবাত পরিবার

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

আরিফ হোসেন:
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভয়াল কালরাতে স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতকের নির্মম বুলেটে শহীদদের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সের ছিলেন সুকান্ত বাবু সেরনিয়াবাত। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে বর্তমানে মন্ত্রী পদমর্যাদায় থাকা আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপির অতি আদরের বড় পুত্র সুকান্ত বাবু সেরনিয়াবাত। সেইদিন ভাগ্যক্রমে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ প্রাণে বেঁচে গেলেও ঘাতকের নির্মম বুলেটে ক্ষতবিক্ষত হয়ে পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে শহীদ হওয়া চার বছরের আদরের সন্তানের মুখটাও শেষবারের মতো দেখার সুযোগ হয়নি তার। সেই কষ্ট এখনও তাড়িয়ে ফেরে হতভাগ্য পিতা আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহকে। ঘাতকের নির্মম বুলেটে বড় ছেলেসহ বাবা, ভাই, বোনকে হারিয়ে সেইদিনের নির্মম ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী গুলিবিদ্ধ সহধর্মীণী সাহান আরা বেগমকে নিয়ে টানা ৪৪ বছর শোকদিবস পালন করেছেন আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ। রাজনৈতিকভাবে নানা চড়াই উৎরাইয়ের সঙ্গী সাহান আরা বেগমকে ছাড়া এবছরই প্রথম শোক দিবস পালন করতে হবে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহকে।

কারণ ঘাতকের নির্মম বুলেটবিদ্ধ হয়েও প্রাণে বেঁচে যাওয়া শহীদ জননী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সাহান আরা বেগম চলতি বছরের ৭ জুন রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চিরদিনের জন্য দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন। ফলে এবারের শোক দিবস আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর জন্য আরও বিষাদের ছায়া বয়ে এনেছে। সূত্রমতে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভয়াল কালরাতে ধানম-ি ৩২ নম্বরে স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ির সঙ্গে সঙ্গে মিন্টো রোডের ২৭ নম্বরে তার (বঙ্গবন্ধু) বোনজামাতা ও তৎকালীন পানিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের বাড়িতেও হামলা চালায় ঘাতকরা। যেখানে খুনীরা নির্মমভাবে গুলি চালিয়ে হত্যা করে আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, তার ভাইয়ের ছেলে সাংবাদিক শহিদ সেরনিয়াবাত, কন্যা বেবী সেরনিয়াবাত, পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতি সুকান্ত বাবু সেরনিয়াবাত এবং বরিশালের ক্রিডেন্স শিল্পীগোষ্ঠীর সদস্য আব্দুর নঈম খান রিন্টুকে। এ ছাড়া ঘাতকের নির্মম বুলেটে সেদিন আহত হয়েছিলেন-আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের সহধর্মিণী ও বঙ্গবন্ধুর বোন আমেনা বেগম, পুত্রবধূ সাহান আরা বেগম, কন্যা বিউটি সেরনিয়াবাত, হামিদা সেরনিয়াবাত, পুত্র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত, ক্রিডেন্স শিল্পীগোষ্ঠীর সদস্য খ ম জিল্লুর রহমান, ললিত দাস, রফিকুল ইসলাম ও সৈয়দ মাহমুদ।

জীবিত অবস্থায় (২০১৮ সালে) সেই বিভীষিকাময় রাতের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপির সহধর্মিণী সাহান আরা বেগম বলেছিলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ফজরের সময় অতর্কিত হামলায় কেঁপে উঠে ঢাকার ২৭ নম্বরের মিন্টো রোডের বাড়ি। সেদিন ফজরের আজানের সময় গুলির প্রচন্ড শব্দে হঠাৎ আমাদের ঘুম ভেঙ্গে যায়। আমার শাশুড়ি (বঙ্গবন্ধুর বোন আমেনা বেগম) বলেন, বাড়িতে ডাকাত পড়েছে, আমার ভাইকে (বঙ্গবন্ধু) ফোন দাও। তখন আমার শ্বশুর আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বঙ্গবন্ধুকে ফোন করেছিলেন।

কিন্তু কী কথা হয় তা আমরা জানি না। সাহান আরা বেগম আরও বলেছিলেন, এরইমধ্যে আমি শেখ ফজলুল হক মনি ভাইকে ফোন করলাম। ফোনে তাকে বললাম, আমাদের বাড়ির দিকে কারা যেন গুলি করতে করতে আসছে বুঝতে পারছি না। মনি ভাই বলেন, কারা গুলি করছে দেখো। বললাম বৃষ্টির মতো গুলি হচ্ছে, দেখা যাচ্ছে না। হঠাৎ আমাদের দরজা ভাঙ্গার শব্দ পেলাম। ঘাতকরা বাড়ির দরজা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে। তারা রুমে প্রবেশ করে হ্যান্ডস আপ বলে আমাদের সবাইকে কর্ডন করে নিচতলার ড্রইংরুমে সারিবদ্ধ করে দাঁড় করিয়ে রাখে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে সাহান আরা বেগম বলেছিলেন. সিঁড়ির অর্ধেক নেমেই বাবু (সুকান্ত বাবু সেরনিয়াবাত) বলে, মা আমি তোমার কোলে উঠব। আমি ওকে কোলে নিতে পারলাম না। শহিদ ভাই বাবুকে কোলে নিল। পরে নিচে নামার পর অস্ত্র ঠেকিয়ে ওরা (ঘাতক) আমাকে জিজ্ঞাসা করে, ওপরে আর কে কে আছে? এমন সময় আমার শ্বশুর আমার দিকে এমনভাবে তাকালেন তার চোখের ইশারায় আমি বললাম, ওপরে আর কেউ নেই। যে কারণে ওপরের রুমগুলো তল্লাশি না হওয়ায় ঘাতকরা আমার স্বামীকে (আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ) খুঁজে পায়নি। পরবর্তীতে ঘাতকরা ব্রাশ ফায়ার শুরু করে। আমরা মাটিতে পড়ে যাই। আমি আমার শ্বশুরের পেছনে ছিলাম, আমার কোমরে গুলি লাগে। ব্রাশ ফায়ারে ছয়জন মারা যায়। আমরা গুলিবিদ্ধ হয়ে জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে কয়েকজন কাতরাচ্ছিলাম। এরমধ্যে আবার একদল লোক গাড়ি নিয়ে আসে। তখন ভাবলাম এইবার বুঝি আর রক্ষা হবে না। কিন্তু পরে দেখি রমনা থানার পুলিশ এসেছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভয়াল কালরাতে ঢাকার ২৭ মিন্টো রোডের বাসায় গুলিবিদ্ধ মায়ের কোলের মধ্যে থেকে অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া স্বজনের রক্তে ভেজা সেই সময়ের মাত্র দেড় বছরের শিশু আজকের বরিশাল সিটি কর্পোরেশেনর মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। স্বল্প সময়ের মধ্যে নিজের মেধা, প্রজ্ঞা ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতা দিয়ে পাদ প্রদীপের আলোয় আসা এক উদীয়মান সূর্য সাদিক আব্দুল্লাহর আলোয় আলোকিত বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতির অঙ্গন।

২০১৮ সালের ৩০ জুলাই অনুষ্ঠিতব্য বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে নৌকা মার্কার মেয়র প্রার্থী হিসেবে তিনি (সাদিক) বিপুল ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি (সাদিক) বঙ্গবন্ধুর বোন জামাতা শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের জ্যেষ্ঠপুত্র মন্ত্রী পদমর্যাদার পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ কমিটির আহবায়, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সিনিয়র সদস্য ও বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপি’র জ্যেষ্ঠপুত্র।

তাই পূর্বপুরুষের পদাঙ্ক অনুসরণ করে মুজিব অন্তঃপ্রাণ সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ নিজেকে শুধু যোগ্য উত্তরসূরী হিসেবেই নয়; দলীয় নেতাকর্মীদের আশা ও ভরসার প্রতীক হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। ফলশ্রুতিতে বিএনপির কাছে বেদখল হয়ে যাওয়া বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদটি পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। দলীয় মনোনয়নে মেয়র নির্বাচিত হয়ে সাদিক আব্দুল্লাহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বরিশাল নগরীকে একটি তিলোত্তমা অপরূপা শহরে রূপান্তরিত করার মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভয়াল কালরাতে রক্তঝরা অচিন্তনীয় বিয়োগান্তক অধ্যায়ের শোকগাঁথায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সঙ্গে দাদা তৎকালীন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ও চার বছরের ভাই সুকান্ত বাবু সেরনিয়াবাতসহ পরিবারের অনেক স্বজনকে হারিয়েছেন সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ।

সেই ভয়াল কাল রাতে অলৌকিকভাবে তার (সাদিক) বাবা আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ, বুলেটবিদ্ধ হয়ে মা শাহান আরা বেগম ও তার কোলে থাকা দেড় বছরের শিশুপুত্র সাদিক আব্দুল্লাহ প্রাণে বেঁচে যান। শরীরে ঘাতকের বুলেট বহন করে অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে মা শাহান আরা বেগম ও স্বজন হারানো বাবা আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর ন্যায় সাদিক আব্দুল্লাহও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সুখ-দুঃখের অংশীদার।

৭৫’র পরবর্তী সেনাশাসক জিয়াউর রহমান থেকে শুরু করে বিএনপি-জামায়াতের জোট সরকার এবং ১/১১’র সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেও মিথ্যা মামলাসহ নানা ষড়যন্ত্রে হয়রানির শিকার করা হয় আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ ও তার পরিবারকে। তবে সকল চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের মাঝেও এ পরিবারটি বরিশালে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের একমাত্র ভরসাস্থল ও শেষ ঠিকানা। আজও তারা করে স্বজন হারানোর দুঃসহ বেদনা ভয়াল ও আতঙ্কের কালো রাত্রির রক্তাক্ত অধ্যায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকরা বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের পাশাপাশি হামলা চালিয়েছিল সেরনিয়াবাত পরিবারের ওপর। ওইদিন ভোর সোয়া পাঁচটার দিকে কৃষকলীগের প্রতিষ্ঠাতা ও তৎকালীন মন্ত্রী (বঙ্গবন্ধুর বোন জামাতা) আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের ২৭ মিন্টো রোডের বাসভবনে পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয়। ঘাতকরা তাদের পরিকল্পনা সফল করতে হেভি মেশিনগান সংযোজিত দ্রুতগতির জীপ, প্রচুর পরিমাণে এমুনিশন ও গুলিসহ এক প্লাটুন ল্যান্সার সৈন্য নিয়ে ইতিহাসের ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে।

আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের মিন্টো রোডের বাসভবনে উপস্থিত ছিলেন পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজনসহ বরিশালের একটি ব্যান্ড গ্রুপের সদস্যরা। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় জানা গেছে, হামলাকারীরা প্রথমেই বাসার সিকিউরিটিকে নিষ্ক্রীয় করতে খুব দ্রুতগতিতে পুরো বাড়িটি ঘিরে ফেলে। শুরু করে বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণ। গুলি শব্দে বাড়ির সকলের ঘুম ভেঙ্গে আতঙ্কিত হয়ে পরেন।

ব্যাপক আক্রমণের একপর্যায়ে ঘাতকরা বাড়ির সবকিছু তছনছ করে দরজা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে। বাড়িতে আক্রমণের শুরুতেই আব্দুর রব সেরনিয়াবাত তার বাড়ির লেন্ডফোন দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ মনিকে বিষয়টি অবহিত করে জানতে পারেন বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়ির চারদিকেও একই অবস্থা। এতে সে (রব সেরনিয়াবাত) তাৎক্ষণিকভাবে বিমূঢ় হয়ে বসে পরেন।

সে সময় আব্দুর রব সেরনিয়াবাত শুধু মুখে একটি কথাই বলেছিলেন, ‘হে আল্লাহ বংশে বাতি দেয়ার মতো তওফিক রেখ’। ঠিক সেই মূহূর্তে ঘাতক সৈনিকরা দরজা ভেঙ্গে বাসার মধ্যে প্রবেশ করে সকলকে নিচতলায় নিয়ে আসে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, তার স্ত্রী আমিনা বেগম, মেয়ে বেবী ও বিউটি সেরনিয়াবাত, ছেলে আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত, আরিফ সেরনিয়াবাত, শহীদ সেরনিয়াবাত, আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর স্ত্রী শাহান আরা বেগম ও তার সন্তানসহ বরিশালের অনেকেই।

ঘাতকরা দোতালা থেকে সবাইকে অস্ত্রের মুখে নিচতলায় নামিয়ে আনার সময় আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর ৪ বছর ১ মাস ২৩ দিন বয়সের শিশুপুত্র সুকান্ত বাবু সেরনিয়াবাত মায়ের কোলে যেতে চাইলে শহীদ সেরনিয়াবাত তাকে কোলে তুলে নেন। পরিবারের সদস্যসহ অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনদের ঘাতকরা একটি কক্ষে দাঁড় করিয়ে রাখেন। এ সময় ঘাতকের হুংকারে আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের স্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুর বোন আমিনা বেগম ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন-‘বাবা তোমরা কি আমাদের মাইরা ফেলবা’ এর সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় ঘাতকদের নির্মম ব্রাশফায়ার। ঘাতকের ক্রমাগত ব্রাশফায়ারে একে একে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পরেন আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, তার স্ত্রী আমিনা বেগম, পুত্রবধূ শাহান আরা বেগম, শহীদ সেরনিয়াবাত ও কোলে থাকা সুকান্ত বাবু সেরনিয়াবাতসহ অন্যান্যরা। কোমরে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় শাহান আরা বেগমসহ অন্যরা কাতরাচ্ছিলেন।

ঘাতকরা এ অবস্থায় চলে যায়। এ সময় আহত বিউটি সেরনিয়াবাত রক্তাক্ত রব সেরনিয়াবাতকে ধরে চিৎকার করে কেঁদে উঠলে ঘাতকরা ফিরে এসে দ্বিতীয় দফায় গুলি চালায়। ঘাতকের নির্মম ১৬টি বুলেট বিদ্ধ হয় বেবী সেরনিয়াবাতের শরীরে। এ সময় ভাগ্যক্রমে রক্ষা পেয়ে যায় আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর একমাত্র মেয়ে কান্তা সেরনিয়াবাত ও দেড় বছরের ছেলে (বর্তমানে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র) সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। ঘাতকের গুলিতে সেদিন আরও নিহত হয়েছিলেন বরিশালের ক্রিডেন্স ব্যান্ড গ্রুপের সদস্য আব্দুর নাঈম খান রিন্টু ও আহত হন ক্রিডেন্স ব্যান্ডের সদস্য ডাঃ খ ম জিল্লুর রহমানসহ অনেকে।

সেই ভয়াল কাল রাতে তৎকালীন মন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের মিন্টো রোডের বাড়িতে বরিশালের ছয়জন নারী-পুরুষ নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন। তারা হলেন, সাবেক মন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুর বোনজামাতা কৃষক নেতা আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, তার ভাইয়ের ছেলে সাংবাদিক শহীদ সেরনিয়াবাত, মেয়ে বেবী সেরনিয়াবাত, ছেলে আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতি সুকান্ত বাবু সেরনিয়াবাত, ক্রিডেন্স শিল্পগোষ্ঠীর সদস্য আব্দুর নঈম খান রিন্টু। আহত হয়েছিলেন নয়জন।

তারা হলেন, আমিনা বেগম, শাহান আরা বেগম, বিউটি সেরনিয়াবাত, হেনা সেরনিয়াবাত, আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের কনিষ্ঠ পুত্র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত, রফিকুল ইসলাম, ললিত দাস ও সৈয়দ মাহমুদ। পরেরদিন সকালে তৎকালীন রমনা থানার ওসি এসে আহতদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে দীর্ঘ চিকিৎসায় গুলিবিদ্ধ হয়েও প্রাণে বেঁচে যায় রব সেরনিয়াবাতের স্ত্রী আমিনা বেগম, মেয়ে বিউটি সেরনিয়াবাত, ছেলে আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতসহ আরও কয়েকজন।

সেদিন ভাগ্যক্রমে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ ঘাতকের নির্মম বুলেট থেকে প্রাণে বেঁচে গেলেও আজও ভয়াল রাতের দুঃসহ স্মৃতি ও স্বজন হারানোর তীব্র বেদনা বইয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি (হাসানাত) সহ সেরনিয়াবাত পরিবারের সদস্যরা। সাহান আরা বেগম বরিশাল শহরের কাউনিয়া প্রথম গলীর মুসলিম সম্ভ্রান্ত কাজী পরিবারে ১৯৪৮ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারী জন্ম গ্রহন করেন। জন্মের পর থেকে তিনি বরিশাল শহরের বুকেই বড় হয়ে ওঠেন। ফলে বরিশালবাসীর সাথে তার নিবির এক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তিনি স্কুল জীবন শেষে বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজে ভর্তি হন।

সেসময় তিনি কলেজে সাধারন শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন অধীকার আদায়ে শিক্ষার্থীদের সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। ফলে সমস্ত কলেজে তিনি শিক্ষার্থীদের একজন প্রিয় মানুষে পরিনত হন। পরবর্তিতে শিক্ষার্থীদের দাবীর মুখে তিনি ১৯৬৬ সালে ছাত্র ইউনিয়ন থেকে ভিপি নির্বাচিত হন। তার রাজনৈতিক জীবনের শুরুতেই তিনি সাফল্যের দেখা পান। এরপর ১৯৬৭ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ভাগ্নে ও আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের বড় ছেলে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ’র সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তার নিজের রাজনীতি ও সেরনিয়াবাত পরিবারের রাজনীতি দুই মিলে দেশ স্বাধীনের পূর্ব থেকে নানান চরাই উৎরাইর মধ্য দিয়ে তার নতুন বৈবাহিক জীবন শুরু হয়। দেশের প্রয়োজনে, দেশের মানুষের প্রয়োজনে তিনি কখনো নিজের কথা ভাবেননি, সর্বদা মানুষের জন্য কাজ করেছেন।

১৯৭১ সালে দেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি মুজিব বাহীনির সকল কার্যক্রমে সরাসরি অংশগ্রহন করেন। অংশ নেন বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে। সাহান আরা বেগম রাজনীতির পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে সরাসরি অংশগ্রহন করেন। রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের কারনে দিনের বেশীর ভাগ সময়েই তাকে ব্যস্ত সময় পার করতে হয়েছে।

কিন্তু শত ব্যস্ততাও তাকে স্বামী, সন্তান বা শশুর,শাশুরীর প্রতি সঠিক দায়িত্বপালনে বাধা দিতে পারেনি। তিনি যেভাবে শশুর, শাশুরীর প্রতি যতœবান ছিলেন ঠিক তেমনি স্বামী, সন্তানদের কখনো তার অভাব অনুভব করতে দেননি। কিন্তু ১৯৭৫ সালে সমস্ত বাংলাদেশের মত তার জীবনেও অন্ধকার নেমে আসে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট ঘাতকরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, শেখ ফজলুল হক মনির বাড়ীতেও হামলা চালায়। সেই হামলায় অন্যদের সাথে সাহান আরা বেগমের চার বছরের শিশু পুত্র সুকান্ত বাবু নির্মমভাবে হত্যাকান্ডের স্বীকার হয়। সেদিন তিনি নিজেও বুলেটে আঘাতপ্রাপ্ত হন। কিন্তু বুলেটে আঘাত প্রাপ্ত হয়েও আরেক শিশু পুত্র আজকের বরিশাল সিটি কর্পোরেশন মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে বুকে জড়িয়ে কোনভাবে প্রানে বেঁচে যান।

তিনি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট কালরাতের একজন প্রতক্ষদর্শী। সেই ১৯৭৫ সাল থেকে মৃত্যুর পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত দীর্ঘ ৪৫ বছর ঘাতকের বুলেটের ক্ষত নিয়ে বেঁচে ছিলেন শহীদ জননী, বীর মুক্তিযোদ্ধা সাহান আরা বেগম। ১৯৭৫ পরবর্তি সময়ে তাকে পার করতে হয়েছে আরো ট্রাজেডিময় জীবন। তৎকালনি রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারনে তার ছোট ছোট সন্তান নিয়ে তাকে ঘর ছাড়তে হয়েছে। জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে পার করতে হয়েছে জীবনের প্রতিটি মূহুর্ত। স্বামী, সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে হয়েছে। কিন্তু জননী সাহসিকা সাহান আরা বেগম তার দৃঢ়চেতা মনোবলের কারনে বড় বড় বিপর্যয়ের সময়ে ভেঙে পরেননি। তিনি সকল বিপর্যয় শক্ত হাতে সামাল দিয়েছেন। অন্যদিকে ১৯৭৫ পরবর্তি সময়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দলকে পুনঃগঠন করার জন্যে তিনি একজন মহিয়সী নারীর ভূমিকা পালন করেন। ফলে আতংকময় জীবনে দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে তিনি হয়ে ওঠেন নির্ভরযোগ্য আশ্রয়স্থল।

বিভিন্ন প্রয়োজনে দলীয় নেতা কর্মীরা তার কাছে ছুটে যেত এবং তিনিও মায়ের স্নেহ দিয়ে সকলকে আগলে রেখেছেন। তার কর্মদক্ষতার কারনে একসময় তাকে বরিশালের রাজনীতি থেকে কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে দায়িত্ব্য দেয়া হয়। সেখানেও তিনি সফলভাবে দায়িত্ব্য পালন করেন। মৃত্যুর পূর্বে তিনি কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন।

ছিলেন বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত থেকে রক্তক্ষয়ী ত্যাগ এবং সক্রিয় থেকে সাংগঠনিক কাঠামো সুসংহত করার পরও তিনি কখনো নিজেকে জনপ্রতিনিধির আসনে বসানোর আকাংখা পোষন করেননি। নির্লোভ, নিরঅহংকার একজন মানুষ ছিলেন সাহান আরা বেগম। তিনি জীবনে রাজনীতি, সামাজিক কর্মকান্ড এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সমানভাবে বিচরন করেছেন। ফলে বরিশালের প্রতিটি স্তরে তিনি অনেক মানুষের অতি আপন একজন ছিলেন। যারা তার মৃত্যুতে শোকে স্তব্দ হয়ে পরেছেন। বরিশালের বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি তিনি বরিশালের শত শত অসহায়, দুস্থ মহিলাদের জন্য অসামান্য ভূমিকা রেখেছেন।

বর্তমান বরিশালের অনেক সচ্ছল মহিলাদের অসচ্ছল জীবন যুদ্ধে জয়ী হতে তিনি পথ দেখিয়েছেন। বরিশালের অনেক মসজিদ মাদ্রাসা নির্মানে তিনি যথাসাধ্য আর্থিক সহযোগিতা করেছেন। এছাড়া বরিশালের অনেক বেকার যুবককে চাকুরী পেতে সহযোগিতা করেছেন। কখনো ফোনের মাধ্যমে বা সরাসরি কাউকে বলে বেকার যুবকদের চাকুরী পেতে ভূমিকা রেখেছেন। সাহান আরা বেগম যেখানেই কাজ করেছেন সেখানেই তিনি সততা, কর্মদক্ষতা, মানুষের প্রতি অঘাত ভালবাসা দিয়ে সবাইকে জয় করে নিয়েছেন। প্রতিটি অঙ্গনেই তিনি ছিলেন সবার প্রিয় একজন সাহান আরা বেগম।

জীবনের শেষদিকে তার রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কম ছিল, ডায়াবেটিক্স নিয়ন্ত্রনের বাহিরে ছিল, হার্টে সমস্যা ছিল। এজন্য তিনি বেশ কয়েকবার দেশে এবং বিদেশে চিকিৎসা করিয়েছেন। চিকিৎসা পরবর্তী তিনি অনেকটা সুস্থ ছিলেন কিন্তু গত ০৫ জুন, ২০২০ ইং তারিখে হঠাৎ তার বুকে ব্যাথা অনুভব হয়। তখন তাকে চিকিৎসার জন্য তৎক্ষনাত পিজি হাসপাতালে তাদের পারিবারিক বরাদ্ধ কেবিনে ভর্তি করা হয়। এরপর তাকে নিবির পর্যক্ষনে রাখা হয়। যদিও প্রথম অবস্থায় তিনি ততটা অসুস্থ ছিলেননা।
কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তার শারিরীক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। একপর্যায় শারিরীক অবস্থা অবনতির শেষ পর্যায়ে পৌছে যায়। অবশেষে গতবছর ০৭ জুন রাত ১১.৩০ টায় সবাইকে কাদিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান একজন মহিয়সী নারী, শহীদ জননী সাহান আরা বেগম। সেই সাথে সমাপ্তি ঘটে একজন মহিয়সী নারীর ৭২ বছরের হার না মানা আলোকিত সফল জীবনের। নানান চরাই উৎরাই, রক্তক্ষয়ী ত্যাগ, চোখের সামনে বুলেটের আঘাতে সন্তান হারানোর বেদনা, নিজের শরীরে ঘাতকের বুলেটের আঘাত বয়ে বেড়ান সহ আরো অনেক প্রতিকুলতা ছিল যার জীবনের প্রতিটি স্তরে স্তরে।

তার মৃত্যুতে সঙ্গিহীন হলেন দক্ষিন বাংলার রাজনৈতিক অভিবাবক আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ, মাতৃহারা হলেন ৪ সন্তান ( আঞ্জুমান আরা কান্তা, সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ, সেরনিয়াবাত মঈন উদ্দিন আব্দুল্লাহ, সেরনিয়াবাত আশিক আব্দুল্লাহ)। আওয়ামী লীগ হারাল একজন ত্যাগী দক্ষ সৈনিক, দলীয় নেতা কর্মীরা হারাল মায়ের স্নেহ দেয়া একজন অভিবাবক, বরিশালবাসী হারাল একজন অতি আপন মানুষ কে। যাকে বরিশালবাসী কোনদিন ভুলতে পারবেনা।

তিনি চীরজীবন বরিশাল বাসীর হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন। সাহান আরা বেগমের মৃত্যুতে বরিশাল সহ সমস্ত রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক অঙ্গন শোকের ছায়া নেমে আসেছিল। স্তব্দ হয়ে পরেছিল চারিদিক। বুক ভাঙ্গা কান্নায় ভেঙ্গে পরেন প্রতিটি মানুষ। তার মৃত্যুর পর ৭ জুন রাতে ঢাকায় প্রথম জানাযা এবং ৮ জুন সকালে বরিশালে দ্বিতীয় জানাযা শেষে, গার্ড অব অর্নার প্রদান করে বরিশাল মুসলিম গোরস্থানে তাকে চির নিদ্রায় শায়িত করা হয়। তার মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক প্রকাশ করেছিলেন ।

গতবছর বাংলাদেশ জাতিয় সংসদে বাজেট অধিবেসনের শুরুতে শোক প্রকাশের সময় প্রধানমন্ত্রী তার রক্তক্ষয়ী জীবন, ১৫ আগষ্টের প্রতক্ষ্যদর্শী ও সন্তানহারনোর কথা, দীর্ঘদিন শরীরে বুলেটের আঘাত নিয়ে জীবন যাপন করা সহ তার ত্যাগী জীবনের কথা উল্লেখ করেন এবং সবাইকে তার জন্য দোয়া করতে বলেন। আমরাও দোয়া করি, মহান আল্লাহ রাব্বুল আল আমিন তাকে জান্নাত দান করুন।তার নামে বীর মুক্তিযোদ্ধা সাহান আরা বেগম এর নামে বরিশাল নগরীতে নির্মিত হচ্ছে পাঁচ তলা বিশিষ্ট ‘ইমাম ভবন’। এর নামকরণ করা হয়েছে, ‘মুক্তিযোদ্ধা সাহান আরা বেগম ইমাম ভবন নির্মান করা হয়েছে। রাজনীতিতে এক যোগ্য উত্তরসূরী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। বংশ পরম্পরায় যার ধমনীতে বাঙালী জাতির অবিসংবাদিত নেতা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত প্রবাহিত।

সাদিক আব্দুল্লাহর বাবার আপন মামা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ফুফু প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনা, দাদা কৃষককুলের নয়নের মণি সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়াবাত এবং পিতা সাবেক চীফ হুইপ (বর্তমানে মন্ত্রী পদমর্যাদায়) আলহাজ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপি, গর্ভধারিনী মা বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি শাহানারা বেগমের আদর্শের সিঁড়ি বেয়ে বড় হয়ে ওঠেন সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভয়াল কালরাতে বাবা ও মায়ের সাথে অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া স্বজনের রক্তে ভেজা সেই সময়ের দেড় বছরের শিশু বরিশালের রাজনীতির বর্তমান ‘আইকন’ যুবরতও সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ নিজেকে যোগ্য উত্তরসূরী হিসেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

স্বল্প সময়ের মধ্যে তিনি নিজের মেধা, প্রজ্ঞা ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতা দিয়ে প্রদীপের আলোয় উঠে আসা এক “উদীয়মান সূর্য”। যার আলোয় “আলোকিত” বরিশালের আওয়ামী লীগের রাজনীতির অঙ্গন। শুধু তাই নয়; বিগত সময়ের চেয়ে বর্তমানে তার নেতৃত্বে বরিশালের আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠন সু-শৃঙ্খল ও সু-সংগঠিত। ফলশ্রুতিতে সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ আগামী ৩০ জুলাই বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার মেয়র প্রার্থী হিসেবে সর্বস্তরের ভোটারদের কাছে সর্বাপেক্ষা আলোচিত ও জনপ্রিয়।

ব্যক্তি সাদিক আব্দুল্লাহর জনপ্রিয়তায় গোটা বরিশাল নগরীজুড়ে নৌকা পক্ষে গণজোয়ারের সৃষ্টি হয়েছে। ১৯৭৫’র পর সেনা শাসক জিয়াউর রহমান, এরশাদ ও বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে (৯১-৯৬ ও ২০০১-২০০৬) মিথ্যা মামলাসহ নানাভাবে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ ও তার পরিবারকে হয়রানির শিকার হতে হয়। ওয়ান ইলেভেনের সেনা সমর্থিত সরকারের আমলেও ষড়যন্ত্রের শিকার হন এ পরিবারটি। তবে সকল চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের মাঝেও এ পরিবারটি বরিশালের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের একমাত্র ভরসাস্থল ও শেষ ঠিকানা।

স্বাধীনতার পর বরিশাল অঞ্চলের দৃশ্যমান যতো বৃহৎ উন্নয়ন কর্মকান্ড হয়েছে তার শুরুটা করেছিলেন শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত এবং অব্যাহত রেখেছেন তার সুযোগ্য পুত্র আলহাজ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ। তাইতো গৌরব ও ঐতিহ্যের যোগ্য উত্তরসূরী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে ৩০ জুলাইয়ের বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নির্বাচিত করে আগামীর উন্নত, আধুনিক ও আলোকিত এক তিলোত্তমা বরিশাল নগরী গড়তে স্বপ্নের জাল বুনছেন পুরো নগরবাসী।

সর্বশেষ