১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

২১ আগস্টের নৃশংসতার স্মৃতি আজও কাঁদায় এমপি মিরাকে

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

রাহাদ সুমন,বিশেষ প্রতিনিধি॥

আওয়ামী লীগের অগণিত নেতা-কর্মীর মতো ১৫ আগস্ট ও ২১ আগস্ট এলে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয় বরিশালের সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সৈয়দা রুবিনা আক্তার মিরার হৃদয়েও। ১৫ আগস্টের সেই ভয়াল কালো রাতের নৃশংসতা সচক্ষে না দেখলেও ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টার সেই নৃশংসতা খুব কাছ থেকে দেখেছেন তিনি। সেই দিনের সেই ভয়াবহতায় আহত-নিহতদের রক্তমাখা শরীর,নিহতদের নিথর দেহ আর আহতদের আর্তনাদ তাকে আজও তাড়িয়ে ফিরছে। দুঃসহ এ স্মৃতি তিনি কিছুতেই ভুলতে পারছেন না। অ্যাডভোকেট সৈয়দা রুবিনা আক্তার মিরা সেই নারকীয় হামলার স্মৃতি বর্ননা করতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। অশ্রুসজল নয়নে জানালেন ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের সেই দূর্বিসহ দিনটির ভয়াল স্মৃতির কথা। দিনটি ছিলো ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের চরম দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সমাবেশ করছিলেন উপ-মহাদেশের প্রাচীনতম সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। সমাবেশে অস্থায়ীভাবে তৈরি মঞ্চ’র ওপরে (ট্রাক) দাঁড়িয়ে সমাপনী বক্তৃতা করছিলেন গনতন্ত্রের মানসকন্যা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও তৎকালীন জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা জননেত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে ১৭ আগস্ট দেশের ৩৪টি জেলায় তৎকালীণ সরকারের মদদেই সিরিজ বোমা হামলা হয়েছিলো। তাই ২১ আগস্টের সমাবেশে শেখ হাসিনাকে ঘিরে নেতা-কর্মীদের ছিলো মঞ্চের চারপাশে মানব দেয়াল তৈরি করা। বক্তৃতার শেষ পর্যায়ে তারেক রহমানের নির্দেশে এবং রাষ্টের পরোক্ষ পৃষ্টপোষকতায় সমাবেশে চালানো হয় ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা। মুহুর্তের মধ্যেই চারদিকে ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। সেদিনের নেতা-কর্মীদের মানব দেয়ালের কারণে প্রাণে রক্ষা পান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরে বাংলার আপামর সাধারণ মানুষ যার কাছে খুঁজে পায় শান্তি ও সুখের পরশ মানবতার মা আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিহত হন কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আইভি রহমান সহ অনেক নেতা- কর্মী। আহত হন অগণিত নেতা-কর্মী সমর্থক।এ যেন মানুষের রক্ত গঙ্গার এক তীব্র ¯্রােতধারা। তার পরেও সমাবেশ স্থল ছাড়েননি স্বাধীনতা,লাল সবুজ পতাকা ,স্বাধীন মানচিত্র ও মায়ের ভাষা এনে দেওয়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। এর মধ্যে আবার পুলিশ বাহিনীর অব্যাহত গুলি বর্ষণ। সেইদিন ওই সমাবেশে ছিলেন জাতীয় সংসদের বরিশালের সংরক্ষিত সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট সৈয়দা রুবিনা আক্তার মিরা। গ্রেনেড হামলায় আহত হয়ে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে পরে থাকা নেতা-কর্মীদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিতে ছুটেছেন তিনি। তিনি স্মৃতি আওরিয়ে জানান,যখন আহতদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিচ্ছিলেন তখন ওখানকার রাস্তায় যানবাহন বলতে কেবল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়ি গুলো ছিলো। অন্যকোন যানবাহন পাওয়াই যাচ্ছিলো না। পরে আহতদের কাঁধে করে তিনি এবং ওই সময়ে যারা উদ্ধার কাজ করছিলেন তারা অনেক দুর পর্যন্ত নিয়ে হাটার পরেই যানবাহন পেতেন। ওই সময়ে বর্তমান তথ্য মন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদকে আহতবস্থায় উদ্ধার করে তিনি এবং আরেকজন ছাত্রলীগ নেত্রী হাসপাতালে নিয়ে যান। এভাবে করে ওই দিন তিনি বেশ কয়েকজন আহত আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিতে ছুটেছেন। তখন তার কাছে মাত্র ৯শ’ টাকা ছিলো। এই সামান্য টাকা দিয়েই ওই সময়ে তিনি নেতা কর্মীদের চিকিৎসা করানোর দায়িত্বও নিজ কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। সেই দিনটির কথা মনে পড়লে আজও আৎকে ওঠেন তিনি। চোখে নামে কান্নার সাতাঁর। তিনি আক্ষেপ করে বলেন যাদের হাত রক্তে রঞ্জিত,রক্ত দিয়ে হলি খেলার মধ্য দিয়ে যারা রাষ্ট্রের পিছনের দরজা দিয়ে প্রবেশ করে ক্ষমতা দখল করেছিলো সেই জিয়াউর রহমান ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলার ইতিহাসের সবচেয়ে ঘৃনিত কালো অধ্যায় রচনা করেছিলো। অথচ এই জিয়াকেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ওই সময়ে সেনা বাহিনীর মেজর পদটি ভিক্ষা দিয়েছিলেন। জাতির পিতার কাছ থেকে ভিক্ষা পাওয়া সেই পদ ব্যবহার করেই জিয়া তাঁর বুককে করেছে ক্ষত-বিক্ষত। ইতিহাস বড়ই নির্মম খাল কাটার নাটক করা শাসক জিয়াও প্রাণ হারায় বুলেটের আঘাতেই। আর ২১ আগস্ট পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে নৃশংসতা ঘটানোর নেপথ্য খলনায়ক ছিলেন তারেক রহমান। যার বাস্তবায়ন ঘটিয়েছেন তৎতাকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবর। তারা হয়তো জানতো না রাখে আল্লাহ মারে কে। বাংলার মাটির সেই ঘৃনিত পাপিষ্টরা অনেকেই রয়েছে জেলের প্রকোষ্টে। আর যে কেবলই সাধারণ মানুষের রক্ত দেখতে অভ্যস্থ ও মানুষের রক্তে নেশা হয় যার সেই তারেক আজ বাংলার মাটিতেই দাঁড়াতে পারছে না। আর এটাই পাপের প্রায়শ্চিত্ব।

সর্বশেষ