১৭ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

২৪ মাস বেতন বন্ধ, করোনা আক্রান্ত নার্স, অর্থাভাবে বিনাচিকিৎসায় মারা গেছে কর্মচারী

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

আল মামুন, অতিথি প্রতিবেদক:
বরিশাল নগরীর আমানতগঞ্জ এলাকায় অবস্থিত বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালের ৫ নার্স-কর্মচারীকে গত ২৪ মাস যাবত বেতন-ভাতা প্রদান করা হচ্ছেনা বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংস্থাটির সদর দপ্তর এবং হাসপাতালটির পরিচালনা কমিটির নিকট লিখিত আবেদন এবং সরাসরি ধর্না দিলেও কোন সুফল পায়নি ভুক্তভোগিরা।
পরিবার নিয়ে মানবেতন জীবনযাপনকারী নার্স-কর্মচারীরা বেতন-ভাতা না পেলেও নিয়মিত ডিউটি করে যাচ্ছেন।
এদিকে দীর্ঘদিন যাবত বেতন-ভাতা বঞ্চিত আয়া মোসা: নার্গিস বেগম অর্থের অভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন গত ফেব্রুয়ারী মাসে।
অর সিনিয়র স্টাফ নার্স মোসা: হোসনেয়ারা বেগমকে হাসপাতাল থেকে দেয়া মাত্র একটি পিপিই সাড়ে তিনমাস ব্যবহার করায় কোভিট-১৯ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর দুয়ার থেকে বেঁচে ফিরলেও একবারের জন্য তার খোঁজ নেননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
অভিযোগ রয়েছে- হাসপাতালের সিইও এবং পরিচালনা কমিটির কিছু সদস্যের খামখেয়ালিপনায় প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংসের ধারপ্রান্তে।
পরিচালনা কমিটির সভাপতি সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ হলেও স্থানীয় বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী সদস্য নিজ ইচ্ছামাফিক হাসপাতালটি পরিচালনা করেন।
তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবী- পরিচালনা কমিটির সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে হাসপাতাল পরিচালিত হচ্ছে। কমিটির আপত্তির কারণে ৫ নার্স-কর্মচারীর বেতন প্রদান করা হচ্ছেনা।
হাসপাতাল পরিচালনা কমিটির দাবী- যিনি ৫ নার্স-কর্মচারীর বেতন-ভাতা দেওয়ার চুক্তি করেছেন তিনি না দিলে আমাদের কি করার আছে।
বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির মহাসচিব মো. ফিরোজ সালাহউদ্দিন দৈনিক আমাদের সময় কে বলেন, হাসপাতাল পরিচালনা কমিটির সাথে মতবিরোধের কারণে চুক্তিতে নেওয়া ব্যক্তি হাসপাতাল উন্নয়ন কাজ বন্ধ করে চলে গেছেন। ৫ নার্স-কর্মচারীর বেতন-ভাতা হাসপাতাল পরিচালনা কমিটিকে পরিশোধের নির্দেশ দিয়ে একাধীকবার চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে। তারপরও তারা কেন বেতন-ভাতা দিচ্ছেনা তা বোধগম্য নহে। বিষয়টি সমাধানে শ্রীঘ্রই পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান রেডক্রিসেন্ট মহাসচিব।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ১৯৩৭ সালে মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবার জন্য বরিশাল নগরীর আমানতগঞ্জ এলাকায় বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করে। হাসপাতাল পরিচালনার জন্য রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি গত ২০১৩ সালে ২৫ এপ্রিল সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে ৮ বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ হন।
চুক্তি অনুযায়ী সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন নতুন ৫ তলা ভবন নির্মাণ এবং হাসপাতালের চিকিৎসা সংক্রান্ত সরঞ্জমাদি প্রদানের কথা। একইসাথে তিনি হাসপাতাল পরিচালনা করে চিকিৎসক, নার্স সহ অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন পরিশোধ করবেন।
কিন্তু ৪ তলা ভবন নির্মাণ সম্পন্ন এবং চিকিৎসা সরঞ্জমাদি প্রদানের পর হাসপাতাল পরিচালনা কমিটির সাথে বিরোধ দেখা দিলে একবছরের মাথায় হাসপাতাল ছেড়ে চলে যান সৈয়দ মোয়াজ্জেম।
তারপর দীর্ঘদিন চিকিৎসাসেবা এবং সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদিও বন্ধ ছিলো।
বর্তমান সিটি মেয়র নির্বাচিত হবার পর হাসপাতাল পরিচালনায় নতুন কমিটি গঠন করা হয়। নতুন কমিটি হাসপাতালের বিভিন্ন শূন্য পদে ৬০ জনকে নিয়োগ প্রদান করেন।
উল্লেখ্য: নতুন ৬০ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা সম্পূর্ণ পরিশোধ করা হলেও রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির স্থায়ী নিয়োগ পাওয়া ৫ নার্স-কর্মচারীর গত ২৪ মাসের বেতন-ভাতা বকেয়া রয়েছে।
ভুক্তভোগিদের অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির স্থায়ী নিয়োগ পাওয়া সিনিয়র স্টাফ নার্স মোসা: হোসনেয়ারা বেগম (মিডওয়াইফ), লীলা রানী মল্লিক ও জাহানারা বেগম (সহ-ধাত্রী), মো. মজিবর রহমান (দারোয়ান) এবং মৃত: মোসা: নার্গিস বেগম (আয়া) চাকুরি পরবর্তী নিয়মিত দায়িত্ব পালন করে আসছে। কিন্তু হাসপাতাল পরিচালনায় সৈয়দ মোয়াজ্জেমের সাথে পরিচালনা কমিটির বিরোধ দেখা দেওয়ায় তিনি চলে যান। তারপর থেকে গত ২৪ মাস যাবত তাদের বেতন-ভাতা পরিচালনা করছেন না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে হাসাপাতাল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি বরাবরের একাধিকবার লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ভুক্তভোগীরা।
উক্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত বছরের ১৯ মার্চ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির মহাসচিব মো. ফিরোজ সালাহ্ উদ্দিন চিঠি প্রেরণ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।
চিঠিতে হাসপাতালের সভাপতি এবং সিইও কে বলা হয়- হাসপাতালের নিজস্ব আয় থেকে ৫ জন কর্মচারীর বেতন/ভাতা পরিশোধ করার জন্য।
উক্ত চিঠি নিয়ে ভুক্তভোগী কর্মচারীরা হাসপাতাল পরিচালনা কমিটির সভাপতি সিটি মেয়রের সাথে স্বাক্ষাত করেন এবং মেয়র তাদের পাওয়া পরিশোধের নির্দেশ প্রদান করেন।
কিন্তু উক্ত নির্দেশনার সময়সীমা একবছর অতিক্রম করলেও তাদের পাওয়া মোটেও পরিশোধ করা হয়নি।
ভুক্তভোগীরা এজন্য হাসপাতালের সিইও মো. মোশাররফ হোসেনকে দায়ী করেন।
তবে সৈয়দ মোয়াজ্জেম রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালের সিইও মোশাররফ হোসেন বলেন- কমিটির সাথে মতবিরোধের কারণে ৫ কর্মচারীর বেতন দেওয়া হচ্ছেনা।
পরিচালনা কমিটির সভাপতি সিটি মেয়রের নির্দেশনার পরও কেন দেওয়া হচ্ছেনা জানতে চাইলে সিইও বলেন- এ ধরনের কোন চিঠি তিনি পাননি।
সভাপতির বক্তব্য জানার জন্য চেষ্টা করা হলেও বরাবরের ন্যায় সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ সেলফোন রিসিভ করেননি।
সৈয়দ মোয়াজ্জেম রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতাল পরিচালনা কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হয়েছে। যদি কেউ না পেয়ে থাকেন তাহলে সে যেন তার সাথে যোগাযোগ করেন বলে জানান তিনি।
সৈয়দ মোয়াজ্জেম রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতাল পরিচালনায় চুক্তিবদ্ধ ট্রাষ্ট্রি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন ক্ষোভের সাথে বলেন, চোর- ওরা চোর। বরিশালের সোনার ছেলেরা চুরি ছাড়া আর কিছু শিখেনি।
হাসপাতাল পরিচালনা কমিটির চুরি আর অনিয়মের কারণে ৮ বছরের স্থলে একবছরের মাথায় চলে এসে ইজ্জত রক্ষা করেছি বলে জানান তিনি।

সর্বশেষ