২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ইন্টারভিউ’র আগেই নিয়োগের সিদ্ধান্ত চুড়ান্তঃ সভাপতি-অধ্যক্ষের ভাগাভাগি

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

বিশেষ প্রতিনিধি:
বাকেরগঞ্জ দাড়িয়াল ইউনিয়নের উত্তমপুর নূরিয়া সিনিয়র (ডিগ্রী) ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরূদ্ধে ৩য় শ্রেণি কর্মচারী নিয়োগের নামে বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। কয়েজন প্রার্থীর কাছ থেকে প্রায় পনের লক্ষ টাকা ঘুস গ্রহণের অভিযোগ তুলে নিয়োগ সংক্রান্ত মিটিং ও কার্যক্রম প্রত্যাখ্যান করেছেন গভর্নিং বডির একাধিক সদস্য। তাছাড়া নিয়ম বহির্ভুতভাবে কমিটির সভাপতিকে মনোনীত করা, সরকার বিরোধী নাশকতা মামলায় অধ্যক্ষ সোহরাব হোসেন হাজতবাস করেও নিয়মিত নিজের বেতন ভাতা উত্তোলন করার অভিযোগ করেছেন খোদ গভর্নিং বডির একাধিক সদস্য। এ বিষয়ে জান্নাতুল ফোরদৌস নামে সংক্ষুব্ধ এক ভুক্তভোগী বরিশাল জেলা প্রশাসক, ইসলামি আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার সহ সংস্লিষ্ট কয়েকটি দফতরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উত্তমপুর নূরিয়া সিনিয়র (ডিগ্রী) ফাজিল মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সভাপতি পদে দীর্ঘ বছর যাবত রয়েছেন শহীদুল ইসলাম। ২০২১ সালের ১২ অক্টোবর ইসলামি আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মারক নং ই বি/রেজি/গভ/বিবিধ/২০২০/১১১৬ তে অফিস আদেশ দেওয়া হয় যে, ফাজিল (সমমান) মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সভাপতিকে অবশ্যই কমপক্ষে ফাজিল / সমমান পাশ হতে হবে। যদি কোথাও এটি না থাকে তাহলে কমিটি ভেঙ্গে পুনরায় ডিগ্রি পাশ সভাপতি মনোনয়নের জন্য ১৫দি সময় বেঁধে দেওয়া হয়। এই নির্দেশনা ভঙ্গ করে তথ্য গোপন করার মাধ্যমে ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর ডিপ্লোমা পাশ সভাপতি শহীদুল ইসলামকেই আবারো সভাপতি রেখে কমিটি পাশ করানো হয়। ইসলামি আরবী বিশ্ববিদ্যালয়কে ভুল ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে এই কমিটি পাশ করিয়েছেন অধ্যক্ষ সোহরাব হোসেন।
অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়, মাদ্রাসায় শূন্য কোটায় ২টি পদে তিনজন নিয়োগ দেয়া হবে। কয়েকবার এ নিয়োগ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়েছে। সম্প্রতি এ নিয়োগ চূড়ান্ত করার লক্ষে প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। অনৈতিক সুবিধা নিয়ে প্রতিটি পদে নিয়োগ দেয়ার জন্য প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও অধ্যক্ষ কাজ করছে এমন খবর গোটা এলাকাজুড়ে সকলের মুখে মুখে।
কম্পিউটার অপারেটর ও অফিস সহকারী পদে দু’জনের নিয়োগের সিদ্ধান্ত মৌখিকভাবে আগেই চুড়ান্ত করেছে অধ্যক্ষ এবং সভাপতি এমন সংবাদ পেয়ে গত ১৭ ফেব্রুয়ারী গভর্নিং বডির সভা বর্জন করেছেন কমিটির অভিভাবক সদস্য মোঃ রফিকুল ইসলাম, অভিভাবক সদস্য কবির হোসেন মোল্লা ও বিদ্যোৎসাহী সদস্য মোঃ মোতাহার আলী হাওলাদার। তাছাড়া কয়েকজন সদস্য মিটিংয়ে অংশ নিলেও তারা এসব অনিয়মের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
মাদরাসার বিদ্যোৎসাহী সদস্য মোঃ মোতাহার আলী হাওলাদার বলেন, নিয়োগের আগেই সভাপতি ও অধ্যক্ষ ভিন্ন পথ অবলম্বন করছেন। আমরা জানতে পেরে কমিটির অধিকাংশ সদস্যই সেই সভায় যাইনি। আশাকরি উদ্র্ধতন কর্তৃপক্ষে হস্তক্ষেপে অনিয়ম বন্ধ হবে।
মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতার পুত্র মাওলানা মনির হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মাদ্রাসার সভাপতি একজন আওয়ামী লীগ নেতা হয়েও জোট করেছেন জামায়াত নেতা সোহরাব হোসেনের সাথে। ইতিপূর্বেও গ্রান্থাগারিক নিয়োগের ছয় লক্ষ টাকা তারা দু’জনে ভাগাভাগি করেছেন। এবারও তারা দু’জনে সেই ধান্ধা করতেছেন। দু’জন দুটি রাজনৈতিক মতাদর্শের হলেও নিয়োগ বানিজ্যের বেলায় তারা একাট্টা থাকেন।
অফিস সহকারী পদে চাকুরী প্রত্যাশী মোঃ মোফাজ্জেল হোসেন জানান, আমার ছোট ভাই মহসীন এই প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন যাবত চাকুরী করে। আমার চাকুরীও প্রায় নিশ্চিত শুধু ইন্টারভিউ হলেই হয়।
মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সোহরাব হোসেন বলেন “নিয়মতান্ত্রিকভাবে নিয়োগ দেয়া হবে। আমাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন। বাকি কার্যক্রম বিধি অনুযায়ী সম্পাদন করা হবে। তাছাড়া কমিটির সভাপতির শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়ে যে প্রজ্ঞাপন জারী করেছে ইসলামি আরবী বিশ্ববিদ্যালয় তা এখনো কার্যকর হয়নি। আমি হাজতবাস করেছি সত্য, তাতে অফিসিয়াল কর্মকান্ডে কোন প্রভাব পড়েনি।’’
ইসলামি আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) বলেন, ফাজিল মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সভাপতি ন্যুণতম ফাজিল / ডিগ্রি পাশ হওয়ার যে আদেশটি দেওয়া হয়েছিল তা বলবৎ আছে। কোথাও এর ব্যাত্যয় ঘটে থাকলে সেই কমিটির বৈধতা নেই।
এ বিষয়ে জানতে গভর্নিং বডি কমিটির সভাপতি শহীদুল ইসলামকে একাধিক বার তার মোবাইল নাম্বারে কল দিলেও তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি।

সর্বশেষ