১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

নলছিটিতে বন কর্মকর্তার গাফিলতিতে কোটি টাকার গাছ লুটপাট

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

ঝালকাঠি ::: ঝালকাঠির নলছিটিতে বরিশাল বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) ড. মো. আব্দুল আউয়ালের গাফিলতিতে কোটি টাকা মূল্যের শত শত গাছ লুটপাট হয়ে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এখনও যেগুলো উপড়ে ফেলা অবস্থায় রয়েছে সেগুলো শুকিয়ে ও পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তবুও বিপুল পরিমান গাছ সংগ্রহ কিংবা দরপত্র আহবানের কোন উদ্যোগ দেয়া হয়নি। এমন একটি অভিযোগ তুলে গত ৩ মার্চ ২০২৪ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রীর বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ৯নং দপদপিয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো.নজরুল ইসলাম তালুকদার।

সরজমিন পরিদর্শন করে দেখা গেছে, খাজুরতলা-হলতা ভায়া শিমুলতলা-জুরকাঠি সড়ক। মানপাশা-সরমহল-তালতলা-ভবানীপুর ভায়া নাচনমহল সড়ক। শিমুলতলা বাজার-কুলকাঠি ইউপি সড়কের দুপাশে খালে-পুকুরে, ডোবায় এবং জঙ্গলে চাম্বুল, রেইন্ট্রি, মেহগনি, কড়াই ইত্যাদিসহ কিছু গাছ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে। এই গাছগুলো প্রায় ২ যুগ আগে বরিশাল বন বিভাগ, স্থানীয় উপকারভোগী,ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক রোপন করা হয়েছিল বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। বর্তমানে উক্ত সড়কগুলোতে নলছিটি এলজিইডি কর্তৃক সম্প্রসারিত ও উন্নয়নমূলক কাজ চলমান রয়েছে। সড়কের উন্নয়নের জন্য রাস্তার ২ পাশে ৩ ফুট করে অর্থাৎ সড়কের দুই পাশে মোট ৬ ফুট জায়গা সম্প্রসারিত করা হয়েছে। সে জন্য সড়কের দুপাশে থাকা বন বিভাগের রোপনকৃত কয়েক হাজার গাছ অপসারনের জন্য বরিশাল বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) ড. মো.আব্দুল আউয়ালকে অবহিত করে চিঠি প্রদান করেন নলছিটি উপজেলা নির্বাহী অফিসার, নলছিটি উপজেলা বন বিভাগ, নলছিটি এলজিইডি প্রকৌশলী ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাছগুলো অপসারনের জন্য বরিশাল বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) ড. মো. আব্দুল আউয়ালকে অনুরোধ করে ২০২৩ সালের ৬ মার্চ এবং একই বছরের ৩ আগস্ট চিঠি লিখেন নলছিটি এলজিইডি প্রকৌশলী। একই সাথে নলছিটি উপজেলা বন বিভাগকেও চিঠি প্রদান করেন প্রকৌশলী। অন্যদিকে নলছিটি উপজেলা বন বিভাগের কর্মকর্তারা উপড়ে ফেলা গাছগুলোকে দরপত্রের মাধ্যমে টেন্ডারের আহবান জানিয়ে ২০২৩ সালের ৩ জুন থেকে আদ্য পর্যন্ত মোট ৬ বার বরিশাল বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) ড. মো. আব্দুল আউয়ালকে চিঠি প্রদান করেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। কিন্তু নানা অপকমের অনুঘটক (ডিএফও) ড. মো. আব্দুল আউয়াল এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত উপড়ে ফেলা গাছের দরপত্র আহবান তো দুরের কথা একটি বারের জন্য খোঁজ দেখেনি। কিংবা গাছগুলো অপসারন ও দরপত্রের ব্যবস্থা গ্রহন করেনি। তাই সড়কের উন্নয়ন কাজ চালিয়ে নিতে গত ৯মাস পূর্বে বাধ্য হয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সড়কের দুপাশে থাকা গাছগুলো ভেকু মেশিনের মাধ্যমে উপড়ে ফেলে উন্নয়ন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। গাছগুলো উপড়ানোর পরও কোন ধরনের ভ্রুক্ষেপ কিংবা সংগ্রহ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি নলছিটি বন বিভাগ।

স্থানীয়রা জানিয়েছে, গাছগুলো বরিশাল বন বিভাগের। ভেকু দিয়ে গাছ উপড়ে ফেলার পরে এলাকায় হইচই পড়ে যায়। যে যার মত পেরেছে লুটপাট করে নিয়েছেন। বন বিভাগ কোন ভূমিকাই রাখেনি।

এবিষয়ে জানতে বরিশাল বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) ড. মো. আব্দুল আউয়ালের অফিসে গিয়েও তার নাগাল পাওয়া যায়নি।

জানা গেছে, গাছগুলোকে অপসারন করতে সর্বশেষ গত ১২ ফেব্রুয়ারি বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) ড. মো. আব্দুল আউয়ালকে একটি চিঠি প্রদান করেন নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম।

ইস্যু করা চিঠির স্মারক নং- ০৫.১০.৪২৭৩.০০২.০১.০০১.২৪-১০২। চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে উপজেলা বন কর্মকর্তা, নলছিটি পত্র নং এলজিইডি, নলছিটি দপ্তরের পত্র নং-৪৬.০২.০০০০.৪২৭৩.২৩.২১৬, তাং-০৬/০৩/২০২৩।ক) নল ১৩.২০২৩.১৭ তাং-০৩/০৬/২০২৩। খ) নল, ১৩.২০২৩.২৬ তাং-০১/০৮/২০২৩। গ) নল.১৩.২০২৩.২৯ তাং-২৩/০৮/২০২৩। ৩) এলজিইডি, নলছিটি
দপ্তরের পত্র নংঃ ৪৬.০২.০০০০.৪২৭৩.২৩.৯৭৫ তাং-০৩/০৮/২০২৩। ৪) উপজেলা বন কর্মকর্তা, নলছিটি। ক) নল ১৩.২০২৩.৪০ তাং-০৫/১১/২০২৩। খ) নল, ১৩.২০২৩.৫০ তাং-০৩/১২/২০২৩। গ) নল.১৩.২০২৪.০৭ তাং-২২/০১/২০২৪। ঘ) নল.১৩.২০২৪.১০ তাং -২৯/০১/২০২৪ উপর্যুক্ত বিষয় ও সুত্রোক্ত স্মারকপত্রের পরিপ্রেক্ষিতে জানানো যাচ্ছে যে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, নলছিটি কর্তৃক রাস্তা স¤প্রসারন ও উন্নয়নমূলক কাজের জন্য নলছিটি উপজেলাধীন ১) খাজুরতলা-হলতা ভায়া শিমুলতলা- জুরকাঠি সড়ক। ২) মানপাশা-সরমহল-তালতলা-ভবানীপুর ভায়া নাচনমহল সড়ক। ৩) শিমুলতলা বাজার-কুলকাঠি ইউপি সড়কে উন্নয়নমূলক কাজের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট সড়কের বন বিভাগের সৃজিত বনায়নের গাছসমূহ বিধিমোতাবেক অপসারনের জন্য বিভিন্ন সময়ে সুত্রস্থ স্মারকে বারবার পত্র যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু অদ্যাবধি উল্লিখিত সড়কের গাছ অপসারন না করায় রাস্তার কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। একইসাথে, সড়কে অবস্থিত মূল্যবান গাছসমূহ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বন বিভাগ কর্তৃক সৃজিত গাছসমূহ অপসারন না করায় সরকারের যেমন আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে তেমনি উন্নয়নমূলক কাজ যথাসময়ে সম্পন্ন না হওয়ায় জনগনের ভোগান্তি সৃষ্টি হচ্ছে।

উল্লেখ্য যে, সংশ্লিষ্ট দপ্তর হতে আসন্ন বর্ষা মৌসুমের আগেই কাজ সমাপ্ত করার জোর তাগিদ রয়েছে মর্মে জানা যায়। এমতাবস্থায় বর্ণিত বিষয়ে জরুরীভিত্তিতে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য অনুরোধ করা হলো। যার অনুলিপি বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার, ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক, নলছিটি উপজেলা প্রকৌশলী, নলছিটি উপজেলা বন কর্মকর্তার কাছেও পাঠানো হয়েছে। সর্বশেষ এই চিঠির আগেও নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, নলছিটি উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী এবং ঠিকাদারের পক্ষ থেকেও গাছের মালিক বরিশাল বন বিভাগকে একাধিকবার চিঠি প্রদান করা হয়। কিন্তু একটি বারের জন্যও চিঠিতে সাড়া দেয়নি বন বিভাগের কর্তা বাবুরা। পরে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে গত ৮ মাস পূর্বে রাস্তার দুপাশে থাকা কোটি টাকা মূল্যের গাছগুলো ভেকু মেশিন দিয়ে উগলাইয়া ফেলে এবং শ্রমিক দিয়ে কেটে ফেলে রাখা হয়েছে। উপড়ে ফেলার পর থেকেই রাস্তার দু’পাশে থাকা কয়েক হাজার চাম্বুল,রেইন্ট্রি, মেহগনি, কড়াই ইত্যাদিসহ বিভিন্ন ধরনের গাছ স্থানীয় বিভিন্ন ব্যাক্তিরা নিয়ে গেছেন। অনেক স্থানে গাছ ভেকু দিয়ে উঠিয়ে সেখানে মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। তাই ঐ জায়গায় গাছ ছিল কিনা তাও এখন বোঝা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। কেউ কেউ নিজের লাগানো গাছ বলে বিক্রিও করে দিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় ফারুক ও মনির এবং হানু মাস্টার।

যদিও নলছিটি বন বিভাগের ফরেস্ট অফিসার মো. শহিদ উদ্দিন জানিয়েছেন, গাছগুলোকে মার্ক (লাল রং দিয়ে চিহ্নিত) করে টেন্ডার আহবানের জন্য বরিশাল বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও)কে একাধিকবার জানানো হয়েছে। কিন্তু তিনি কোন দিক নির্দেশনা দেয়নি। আমরা স্যারের নির্দেশ ছাড়া কিছু করতে পারি না। সরজমিন পরিদর্শন করে দেখা গেছে, উক্ত সড়কের পাশে এখনও কিছুগাছ পুকুরে-ডোবায়, জঙ্গলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে। তবে বেশিরভাগ গাছ লুটপাট হয়ে গেছে। উগলিয়ে ফেলা রাখা যে গাছগুলো রয়েছে তাও ইতিমধ্যে শুকিয়ে ও পচে নষ্ট হচ্ছে। কিন্তু কোটি টাকার সরকারী সম্পদ রক্ষায় কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহন করেনি বরিশাল বন বিভাগ। এতে উপকারভোগীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, বন বিভাগের সিদ্ধান্তহীনতায় কোটি টাকা মূল্যের গাছগুলো চুরি হয়ে গেছে। যে কয়টা এখনও আছে তাও শুকিয়ে ও পচে নষ্ট হওয়াতে সামাজিক বনায়নের উপকারভোগীরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তেমনি সরকারও হারাচ্ছে মোটা অংকের রাজস্ব।

ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা বলেন, বন বিভাগ যদি দরপত্রের মাধ্যমে গাছগুলো বিক্রি করতো তাহলে সরকার কমপক্ষে ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা রাজস্ব পেত। উপকারভোগীরা কিছু অর্থ পেত। কিন্তু বন বিভাগের গাফিলতিতে সরকার হারালো মোটা অংকের রাজস্ব ও অর্থ থেকে বঞ্চিত হলো উপকারভোগীরা। ৯নং দপদপিয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও লট ব্যবসায়ী এবং স’মিল মালিক মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার তার অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, বরিশাল বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) ড. মো. আব্দুল আউয়াল কর্তৃক গাছের লট বিক্রির দরপত্র আহবান করতে তার কাছে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ চেয়েছেন। তা না পেয়ে তিনি গত এক বছরেও টেন্ডার আহবান করেনি। ফলে সড়কের বেশিরভাগ গাছ বেহাত হইয়া যাওয়ার কারণে সরকারের প্রায় ৫০/৬০ লক্ষ টাকা রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত সদস্য, (প্যানেল চেয়ারম্যান) লট ব্যবসায়ী ও স’মিল মালিক। আমার স’মিল লাইসেন্স নবায়ন করার জন্য সকল কাগজপত্র দপ্তরে জমা দেই। কিন্তু দীর্ঘদিন ঘুরিয়া অফিস সহকারী মোস্তফা কামালের মাধ্যমে জানিতে পারি, ডিএফও স্যারকে ঘুষ না দিলে লাইসেন্স নবায়ন হবে না। এর প্রেক্ষিতে আমি ডিএফও স্যারকে অফিস সহকারী মোস্তফা কামালের মাধ্যমে ২০ হাজার টাকা ঘুষ প্রদান করার প্রেক্ষিতে আমার স’মিল লাইসেন্স নবায়ন করা হয়।

উল্লেখ্য যে, যে সকল লটক্রেতা লটের টেন্ডার পান নাই। তাহাদের লটের দরপত্রের সহিত দাখিলকৃত বায়নার টাকার পে-অর্ডার ডিএফও কর্তৃক অবমুক্ত করিতেও প্রতি পে-অর্ডারে প্রায় ৭০০/-(৫০০+২০০) টাকা ঘুষ দিতে হয় এবং ঘুষ চাওয়ার কারণে আমি আমার ১৯টি পে-অর্ডার দীর্ঘ ১ বছর পর্যন্ত অবমুক্ত করাইতে যাই নাই। আমার ইউনিয়নের ২টি রাস্তা ১) দরগা বাড়ী হইতে শিমুল তলা পর্যন্ত ৪ কি.মি. এবং ২) আকরপাড়া হইতে কুলকাঠি ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত ৪ কি.মি পর্যন্ত রাস্তার দুই ধারে বন বিভাগ-উপকারভোগী+ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক সৃজিত বাগান মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরে যথা নিয়মে বিক্রয়ের জন্য মার্কাও করা হয়। রাস্তার নির্মাণের লক্ষ্যে রাস্তার গাছ অপসারণের জন্য এলজিইডি বিভাগ, বন বিভাগকে চিঠি লিখেন বলিয়া শুনিতে পাই। এরপরেও ডিএফও উক্ত ২টি রাস্তার গাছ বিক্রয়ের জন্য দীর্ঘদিন দরপত্র আহবান করেন নাই। পরে ডি.এফ.ও এর দপ্তরে যাই এবং তাকে বলি স্যার গাছ বিক্রির দরপত্র আহবান করেন এবং আমরাও দরপত্রের অংশগ্রহন করিব।

তখন ডিএফও বলেন, দরপত্র আহবান করিতে অনেক খরচ আছে এবং ২টি রাস্তার জন্য ৫০ হাজার টাকা করে দিয়ে যান। দরপত্র আহবান করিতে ডিএফও কর্তৃক অগ্রিম ঘুষ চাওয়ার কারণে, আমরা আর এ ব্যাপারে খোঁজ রাখি নাই। বর্তমানে উগলাইয়া ফালানো গাছগুলি চুরি/বেহাত হইয়া গেছে।

এ বিষয়ে জানতে নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলামের প্রতিক্রিয়া জানার জন্য চেষ্টা হলেও তা সম্ভব হয়নি।

সর্বশেষ