২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
আমতলীতে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ১৫ বরিশালে ব্রেক ফেল করা বাসেরচাপায় হেলপার নিহত হবিগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের ৪ জন গলাচিপার গলাচিপায় বিভিন্ন শ্রমজীবীদের মে দিবসে সমাবেশ ও আলোচনা গলাচিপায় জাতীয় স্বাস্থ্য ও ৫০ তম কল্যাণ দিবস পালিত গলাচিপায় বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আব্দুল বারেক মিয়ার ২৮ তমতম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত মেহেন্দিগঞ্জে নির্মাণাধীন ঘরে পানি দিতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে রাজমিস্ত্রির মৃত্যু বরিশালে মসজিদ থেকে ১৩ কেজি গরুর মাংস চুরি মহান মে দিবসে জনতা ব্যাংক পিএলসি,এরিয়া কমিটি সি,বি,এর উদ্যোগে নানা কর্মসূচী পালন দুমকিতে চেয়ারম্যান প্রার্থী মেহেদী মিজান'র নির্বাচনী অফিস উদ্বোধন

এজন্যই নতুন করে হয়তো আর কোনো সুকান্ত, নজরুল, বশিরুজ্জামান জন্ম হবেনা

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

কবি বশিরুজ্জামান বশির ৯০ দশকের সংগ্রামী কবি নামে এদেশের সাহিত্য অঙ্গনে বেশ পরিচিত। তার নামের আগে সংগ্রামী লেখার কারন হলো, তিনি উঠে এসেছিলেন জীবনযুদ্ধে চরম সংগ্রাম করে। দিনমজুর রিকশা চালক থেকে পেশাধারী লেখক কবি হয়েওঠার গল্প হয়তো এদেশে একটাই, আর সেটা কবি বশিরুজ্জামান বশির। সেসময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছিলনা বলেই হয়তো নামের আগে ভাইরাল শব্দ টি লেখা হয়নি। তার শৈশব কেটেছে এতিমখানায়, ৮ম শ্রেনি পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ফুলস্টপ হয়। তারপর জীবব ও জীবীকার তাগিদে কখনো রিকশা চালিয়ে, কখনো ঢাকার গলি পথে টিয়াপাখি দিয়ে ভাগ্য গণনা করে চলতে থেকে সাহিত্য কর্ম।
আমার সাথে পচিয় ২০০৪ সালে। বরিশালে আমার বড় বোনের বাসায় গিয়ে টেবিলে দেখতে পাই “সময় উত্তম” নামে একটি জন্মদিনের স্মরনীকা, প্রচ্ছদে মাথায় ঝাকড়া চুল গোঁফ আওলা এক টগবগে যুবকের ছবি, আমি স্মরণিকাটি বাসায় নিয়ে এসে সব পড়ে ফেলি। কবি’র জীবন কাহিনি পড়ে হৃদয়ের গভীরে দাগ কাটে। তারপরে বশিরূজ্জামন বশির এর সাথে দেখা করার ইচ্ছে হয়। ২০০৫ সালে আমার প্রথম কবিতার বই ব্যথিত চোখের জ্বল প্রকাশ করার জন্য ঢাকায় গিয়ে খুজে বের করি তাকে। আগারগাঁও বস্তিতে তখন তার বসবাস। সেখানে গিয়ে ফোন দিতেই বললেন, অমি আসতেছি অপেক্ষা করুন। একজন রিকসাওয়ালা দিনমজুর কিবকে দেখার আকুলতা নিয়ে অপেক্ষা করছি, কিছুক্ষণের মধ্যেই মাধায় একরাশ রুক্ষ ঝাকরা চুল নিয়ে সামনে হাজির, চোখে তাকিয়ে বোঝা যায় এক সাগর না-বলা সাহিত্য পিপাসা নিয়ে আছে উদাস দুটি চোখ। সেই থেকে পথচলা, আজ পর্যন্ত আছে।
এবার তার লেখালেখি সম্পর্কে একটু বলে নেই। ২০০৫ সালে আমার প্রথম কবিতার বই ব্যথিত চেখের জল প্রকাশ করার সময় টানা ১০ দিন আমার সাথে পাশে থেকে সহযোগিতা করেছে বিনা পয়সায়। এরপর তার সম্পাদিত বিভিন্ন সাহিত্য পত্রিকা, ম্যাগাজিনে নিয়মিত আমার কবিতা ছাপা হতে লাগল, সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা কবি সাহিত্যিক এর সাথে আমার পরিচয় হতে শুরু হলো।
প্রতি মাসে অন্তত ২ টি সাময়িকী প্রকাশ না করলে যেনো তার জীবন চলেনা এমন অবস্থা, তাই নিয়মিত চিঠি দিয়ে লেখা নিত, কিভাবে পত্র পত্রিকায় লেখা দিতে হয়, কিভাবে একটি লেখাকে আতুরঘর থেকে বই আকারে প্রকাশ করে পাঠকের হাত পর্যন্ত নিয়ে যেতে হয়, সবই তিনি শেখালেন।
কবি বশিরুজ্জামান বশির শতাধিক বই সম্পাদিত করেছেন, মৌলিক গল্প ও কবিতার বইয়ের সংখ্যাও অনেক, এছাড়াও ডজন খানেক সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন নিয়মিত। তার প্রকাশিত কবিতার সংখ্যা ৫ হাজারের বেশি। প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে অন্যতম “স্বদেশে জরিপ” “পোস্টার তোমার চাই ” উপন্যাস “একদিন তুমিও কাদবে ” “আবার আমরা যুদ্ধে যাব” ইত্যাদি।
এবার আসি তার করুন পরিনতির কথায়।
জীবন সংগ্রামের ৪৯ বছরে তীব্র সংগ্রাম করে দুই ছেলেকে বড় করেছেন, বরিশালের রূপাতলিতে ৩ শতক জমি কিনে ছাদ পর্যন্ত করেছিলেন, রাতুল গ্রন্থ প্রকাশ নামে একটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান করে ছিলেন। সুখ না থাকলেও পেটের খুধা মিটানো সমার্থ অর্জন করেছিলেন, ঠিক সেই মুহূর্তে কবির জীবনে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার।
গত সবেবরাতের পরে বাড়ি থেকে ঢাকায় চলে যায়, যাওয়ার পরের দিন রাত থেকে আর ফোন রিসিভ করছেনা, এভাবে তিন দিন তিন রাত কেটে যায়, অবশেষে স্ত্রী অছিয়া বেগম লঞ্চে করে ঢাকায় খোঁজ নিতে যায়। কল্যানপুরে ৭ নং রোডে একটি বাসায় ব্যাচেলার হিসেবে একটি রুম নিয়ে ভাড়া থাকতেন। সকালে স্ত্রী সেই বাসায় গিয়ে দরজা ধাক্কা দিলেন খুলে যায়, দরজা খোলা তবে চাপানো ছিল, ভিতরে ঘুটঘুটে অন্ধকার, নাক দিতেই দুর্গন্ধ বেড়িয়ে আসে। লাইট জ্বালানি দেখা যায় বিছানায় চিত হয়ে পরে আছে কবির অচেতন দেহ। নাকে হাত দিয়ে বোঝা যায় প্রাণ আছে, তবে গায়ে মল-মুত্র লাগানো, ছেলেকে নিয়ে বাথরুমে গোছল কিরিয়ে নিয়া যাওয়া হয় ডাঃ এর কাছে। ডাক্তার জানায় ব্রেইন স্ট্রোক করেছে। এখন কথা হলো একটা মানুষ স্ট্রোক করে ৩দিন ৩ রাত পরে রইলো, পাশের রুমে লোক থাকা সত্ত্বেও কেউ উঁকি দিয়ে দেখেনি। এই হলো নির্মম ঢাকা শহর।
বেশ কয়েকদিন চিকিৎসা শেষে মোটামুটি সুস্থ হলো, লাঠি ভর করে হাটতে পারে, কথাও একটু বলতে পারে। এমতাবস্থায় বাড়ি নিয়ে আসা হলো। কিন্তু বিধি বাম, কুরবানির পরে আবার দ্বিতীয় দাফায় স্ট্রোক করে, এবার আর কবি কথা বলা ও হাঠতে পারলোনা। চিকিৎসা খরচ চালতে না পেরে আবার বরিশাল রূপাতলী বাড়িত নিয়ে আসা হলো।
বাংলাদেশে প্রতিদিন কতো কোটি কোটি টাকা উড়ানো হয় আমোদ প্রমোদ করে অথচ একজন দেশপ্রেমিক কবি বিনা চিকিৎসায় ধুকে ধুঁকে মরছে। যার হাত ধরে এদেশে কত শত লেখক কবি জন্ম হয়েছে। প্রতিদিন সারা দেশ থেকে লেখকদের শত-শত লেখা আসতো তার ঠিকানায়, যার মাধ্যমে আলোর মুখ দেখেছে বহু গল্প কবিতা আজ সেই কবির পাশে কেউ নেই।
এদেশে প্রতিদিন কতো পাগল ছাগলকে নিয়ে মিডিয়া ব্যস্ত হয়ে ওঠে অথচ একজন কবি’র করুন পরিনতির কতা ছাপা হয়নি কোনো পত্রিকার পাতায়, ছবি ভেসে ওঠেনি কোনো টিভি পর্দায়। এজন্যই নতুন করে হয়তো আর কোনো সুকান্ত, নজরুল, বশিরুজ্জামান জন্ম হবেনা। সর্বশেষ বলতে চাই রাষ্ট্র কি পারেনা, কবি বশিরুজ্জামান বশির এর সামান্য চিকিৎসা খরচ বহন করতে। উন্নত চিকিৎসা পেলে কবি হয়তো শেষ বয়সটা আরো কিছু দিন পৃথিবীর আলো দেখতে পারতো, এভাবে বিছানায় বসে অসহায় চোখে তাকিয়ে থাকতে হতনা তার। আসুন রাষ্ট্র বহন করুক আর নাই করুক, আমরা যায় যায় স্থান থেকে সাহায্যের হাত বাড়াই তার দিকে। কবি আবারো ফিরে আসুক আমাদের মাঝে।

_লেখক এস এম পলাশ
রুপশী টিভি ডটকম
01718087261

সর্বশেষ