১৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

পবিপ্রবিতে মেধাবী শিক্ষার্থীকে আত্নহত্যায় প্ররোচনা ও ঘুষের বিনিময়ে নিয়োগে ৭ জনকে লিগ্যাল নোটিশ

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
  1. মোঃ ইমরান হোসেন/পবিপ্রবি প্রতিনিধিঃ
    পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী দেবাশীষ মন্ডল। যার স্বপ্নই ছিলো দেশ সেরা বিদ্যাপিঠের শিক্ষক হওয়া।সর্বোচ্চ সিজিপিএ অর্জন করা সত্বেও একশ্রেণির লোভী, দুর্নীতিবাজ, স্বার্থান্বেষী মহলের কাছে পরাজিত হয় তার শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন। প্রভাষক নিয়োগের বাছাই পরীক্ষাতেও হন সবার সেরা। কিন্তু বিধি বাম মানুষ গড়ার কারিগর যে শিক্ষক, সে শিক্ষকেরাই তার কাছে ঘুষ হিসেবে চেয়েছে ১৫ লক্ষ টাকা।মেধাবী দেবাশীষ নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে ১০ লক্ষ টাকা জোগাড় করেন। বাকি টাকা জোগাড় করতে না পেরে বেছে নেন আত্নহত্যার পথ।কুষ্টিয়ায় ভাড়া মেসে আত্নহত্যা করেন তিনি।বিস্তারিত তদন্তে জানা যায় তৎকালীন ভিসি হারুন-অর-রশীদ এর মেয়াদকালে নিয়োগ প্রকৃয়ায় ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায়। প্রভাবশালী একটা চক্র এক হয়ে এই নিয়োগ প্রকৃয়া সম্পাদন করত বলে জানা যায়।সাবেক উপাচার্য হারুন-অর-রশীদের পালিত কন্যা নওরোজ জাহান লিপি, তার স্বামী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মনিরুজ্জামান এবং সাবেক ভিসির পিএস মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বর্তমান শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহীন হোসেন এসব অনিয়ম দুর্নীতির সাথে জড়িত ছিলেন বলে জানা যায়। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে প্রচুর লোক নিয়োগ দিয়েছেন-এই অভিযোগে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন অভিযুক্ত ৩ জন ছাড়াও মোট ৭ জনকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন।গত ৩০মে তাদের লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়।লিগ্যাল
    নোটিশে বলা হয়, পবিপ্রবি’র প্রভাষক পদে চাকরি প্রার্থী ছিলেন কুষ্টিয়ার দেবাশীষ মণ্ডল। ওই পদে চাকরি দেওয়ার জন্য তার কাছে বিপুল অংকের টাকা ঘুষ চাওয়া হয়েছিল। অথচ বাছাই পরীক্ষার ফলে তিনি সেরা ছিলেন। অধ্যাপক মনিরুজ্জামান ও রওশন জাহান লিপি এবং শাহীন হোসেন দেবাশীষের কাছে ১০ লাখ টাকা ঘুষ চেয়েছিলেন।

দেবাশীষ যেকোনো মূল্যে ওই চাকরি পেতে আগ্রহী ছিলেন। পরে সাক্ষাৎকার বোর্ড অনুষ্ঠানের আগ মুহূর্তে তাঁর কাছে ১৫ লাখ টাকা দাবি করা হয়। বাড়তি পাঁচ লাখ টাকা যোগাড় করতে তাঁকে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়।

সর্বোপরি দেবাশীষ ১৫ লাখ টাকা সংগ্রহ করতে না পারায় ওই চক্রটি রফিক উদ্দিন নামে আরেকজন নতুন প্রার্থীর কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা নিয়ে তাঁকে ওই পদে চাকরি দেন।

মৌখিক পরীক্ষা শেষে দেবাশীষ জানতে পারেন তিনি অকৃতকার্য হয়েছেন এবং তাঁর পরিবর্তে রফিক উদ্দিন নামের একজনের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে ওই পদে চাকরি দেওয়া হয়েছে। পরে দেবাশীষ ২০১৮ সালের ১৪ মে কুষ্টিয়ায় নিজ বাড়িতে ফিরে গিয়ে আত্মহত্যা করেন। অধ্যাপক মনিরুজ্জামান ও রওশন জাহান লিপি এবং শাহীন হোসেন দণ্ডবিধি ৩০৬ ধারায় অপরাধ করেছেন বলে নোটিশে দাবি করা হয়।

নোটিশে আরো বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের দায়িত্ব ছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগের ক্ষেত্রে যথাযথ নিয়মকানুন অনুসরণ করা হয় কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা। কিন্তু তা তাঁরা করেনি। এতে ওই নিয়োগটিতে ঘুষ-বাণিজ্যসহ অনৈতিক কার্যকলাপ হয়েছে। ওই নিয়োগে দেবাশীষ মণ্ডলের সিজিপিএ ছিল ৩.৮২। অথচ ওই পদে নিয়োগপ্রাপ্ত রফিক উদ্দিনের সিজিপিএ ৩.৬৪। যা দেবাশীষের চেয়ে কম।একই ভাবে অধ্যাপক মনিরুজ্জামানের ছোট ভাই ও নওরোজ জাহান লিপির দেবর মোঃ কামরুজ্জামান ও শাহীন হোসেনের বড় বোন নাজমুন নাহারকে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই নিয়োগ দু’টিকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে বাতিলের দাবিও করা হয় এই লিগ্যাল নোটিশে।
অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত)কেও নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
অন্যথায়, ন্যায়বিচার প্রাপ্তির জন্য উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করা হবে বলেও লিগ্যাল নোটিশে উল্লেখ হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রফেসর ড. মনিরুজ্জামান লিগ্যাল নোটিশ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চত করে বলেন,সেই সময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে আমি জড়িত ছিলাম না; লিগ্যাল নোটিশটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দেয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়টির রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) ড. মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নোটিশ হাতে পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য প্রফেসর ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত বলেন, বিষয়টি নিয়ে আইন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এ ব্যাপারে যথাযথ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

সর্বশেষ