১লা ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

বরিশালে গত ২৪ ঘন্টায় সর্বোচ্চ করোনারোগী শনাক্ত !

বরিশাল বাণী ডেস্ক: বরিশাল বিভাগে প্রতিনিয়ত বাড়ছে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর বরিশাল বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় একদিনে সর্বোচ্চ করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন।
আর এই সময়ে করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল বিভাগে নতুন করে ৩৪৩ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর আগের দিন ২৪ ঘণ্টায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৬০। আর সর্বশেষ আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে বিভাগে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৮হাজার ৬৩৭ জন।

এছাড়া একই সময়ে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসাপাতালের করোনার আইসোলেশন ওয়ার্ডে উপসর্গ নিয়ে ২ জনের এবং ঝালকাঠি জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। যা নিয়ে বরিশাল বিভাগে করোনায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৩১৫ জনে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস জানান, মোট আক্রান্ত ১৮ হাজার ৬৩৭ জনের মধ্যে এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১৫ হাজার ১৮১ জন। আক্রান্ত সংখ্যায় বরিশাল জেলায় নতুন সর্বোচ্চ শনাক্ত ১২১ জন নিয়ে মোট ৮ হাজার ১৯৫ জন, পটুয়াখালী জেলায় নতুন ২৭ জন নিয়ে মোট ২৫৪০ জন, ভোলা জেলায় নতুন ১৫ জন সহ মোট ২০৮৭ জন, পিরোজপুর জেলায় নতুন ৮২ জন নিয়ে মোট ২৪১৬ জন, বরগুনা জেলায় নতুন ২২ জন নিয়ে মোট আক্রান্ত ১৪৯২ জন এবং ঝালকাঠি জেলায় নতুন ৭৬ জন শনাক্ত নিয়ে মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯০৭ জন।

এদিকে শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় শুধুমাত্র বরিশাল শেবাচিম হাসাপাতালের করোনার আইসোলেশন ওয়ার্ডে উপসর্গ নিয়ে দুইজনের এবং করোনায় আক্রান্ত হয়ে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। যা নিয়ে শুধুমাত্র শেবাচিম হাসপাতালেই করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২১৫ জন এবং আইসোলেশন ওয়ার্ডে উপসর্গ নিয়ে ৫৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করা ৫৪৩ জনের মধ্যে ১১ জনের কোভিড টেস্টের রিপোর্ট এখনো হাতে পাওয়া যায়নি।

ওই হাসপাতাল পরিচালকের তথ্য সংরক্ষক জাকারিয়া খান স্বপন জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় (রোববার) সকাল পর্যন্ত শেবাচিমের করোনার আইসোলেশন ওয়ার্ডে ৩৮ জন ও করোনা ওয়ার্ডে ১৩ জন ভর্তি হয়েছেন। করোনা ও আইসোলেশন ওয়ার্ডে এখন ২১০ জন রোগী চিকিৎসাধীন। যাদের মধ্যে ৪৫ জনের করোনা পজিটিভ এবং ১৬৫ জন আইসোলেশনে রয়েছেন। আরটি পিসিআর ল্যাবে মোট ১৮৮ জন করোনা পরীক্ষা করান। যারমধ্যে ৫৯.০৪ শতাংশ পজিটিভ শনাক্তের হার।

সম্প্রতি করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ায় কিছুটা উদ্বেগেরও সৃষ্টি হয়েছে। হাসপাতালগুলোতে করোনার উপসর্গ ও আক্রান্ত হয়ে রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। আর তাই জনবল ও চিকিৎসকসহ চিকিৎসা সরঞ্জাম সংকট উদ্বেগও বাড়াচ্ছে।

এছাড়া শোবচিম হাসপাতালের টেকনোলজিস্ট পদ ও জনবল প্রয়োজনের তুলনায় কম থাকায় করোনা পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে একদল স্বেচ্ছাসেবক দিয়ে। যদিও তাদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে হয়রানি ও অতিরিক্ত অর্থ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। আবার হাজার শয্যার এ হাসপাতালটি চলছে ৫শ শয্যার অনুকূলের জনবল দিয়ে।

এদিকে গোট বরিশালে বিভাগের হাসপাতালগুলোতে ১ হাজার ৯৮ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও, সেখানে সাড়ে ৫ শতের কিছুবেশি চিকিৎসক রয়েছেন বলে স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের তথ্যানুযায়ী, গোটা বরিশালের মধ্যে ৫ শতাধিক বেড রয়েছে করোনার রোগীদের জন্য। আর শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ২২টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে। এছাড়া শেবাচিমের সাধারণ আইসিইউ ওয়ার্ডে রয়েছে আরো ১০ টির মতো বেড। এর বাইরে ভোলা সদর হাসপাতালে তিনটি এবং পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে করোনাকালীন এই সময়ে পাঁচটি আইসিইউ শয্যা স্থাপন করা হয়েছে। সময় ও ক্ষেত্রবিশেষে এগুলোও অপ্রত্যুল হয়ে দাঁড়ায়।

এছাড়া বরিশাল ও ভোলায় দুটি আরটি-পিসিআর ল্যাব থাকলেও তার ধারণক্ষমতার বেশি নমুনা সংগ্রহ হওয়ায় দেড় থেকে ৩ শত নমুনা প্রতিদিন ঢাকায় পাঠাতে হচ্ছে পরীক্ষার জন্য। সেক্ষেত্রে ফলাফল পেতেও বিলম্ব হচ্ছে।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ৬টি জেলা সদর হাসপাতাল ও ৪২টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মিলিয়ে বরিশাল বিভাগের সরকারি হাসপাতালের সংখ্যা ৪৭। কিন্তু এসব হাসপাতালের ৩৯টিতেই কেন্দ্রীয় অক্সিজেন ব্যবস্থা নেই। আর যাদের রয়েছে তাদের মধ্যে শুধুমাত্র বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে বড় আকারে অক্সিজেন সংরক্ষনের ব্যবস্থা রয়েছে। বাকি জেলা হাসপাতালগুলোর যাদের অক্সিজেন সংরক্ষণের ক্ষমতা আছে, তাদের মেনিফোল্ড পদ্ধতির অক্সিজেন ট্যাংকারগুলোর ধারণক্ষমতা মাত্র ৩ হাজার ৪২০ লিটার করে।

এছাড়া উপজেলা পর্যায়ে গৌরনদী, দুমকি এবং মির্জাগঞ্জে রয়েছে আরো ছোট আকারের মেনিফোল্ড অক্সিজেন রিজার্ভার। তবে এসব যাদের রিজার্ভার নেই তাদের রোগীদের জন্য দেড় হাজারের অধিক সিলিন্ডারে অক্সিজেন ভর্তি করে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। সেসঙ্গে বিভাগে ৭৫ হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা রয়েছে।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল জানান, পর্যায়ক্রমে বিভাগের সবকটি হাসপাতালেই কেন্দ্রীয় অক্সিজেন ব্যবস্থা স্থাপন করা হবে। এরই মধ্যে কয়েকটি উপজেলায় করা হয়েছে।

তার মতে গত দেড় বছরে পরিস্থিতি মোকাবিলায় বরিশালে স্বাস্থ্য বিভাগের সক্ষমতা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন না হয়ে সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান তিনি।

 

বাংলা নিউজ

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

সর্বশেষ