২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

বরিশাল বিভাগের সর্ববৃহৎ দুর্গাপূজার আয়োজন করেছে ‘রাজ মন্দির’ !

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

বরিশাল বাণী: ভিন্নধর্মী নানান আয়োজন আর ২৫১ টি প্রতিমা নিয়ে গোটা বরিশাল বিভাগে সবথেকে বড় দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার কবুতরখালীর রাজ মন্দিরে। এরইমধ্যে প্রতিমা তৈরিসহ পূজোর আয়োজনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। শুধু শেষ মুহুর্তে এসে আলোকসজ্জা সম্পন্নসহ খুটিনাটি কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
আয়োজকরা জানান, বিগত অর্থযুগের ঐতিহ্য ধরে রাখতে এবারে ৫ শত প্রতিমা তৈরির ইচ্ছে থাকলেও সামাজিক ও অর্থনৈতিকসহ নানান বিষয় চিন্তা করে ২৫১ টি প্রতিমা দিয়ে দুর্গাপূজোর আয়োজন করা হয়েছে। তবে ধারাবাহিকবাভাবে আগামীতে প্রতিমার সংখ্যা ৫ শত এবং ১ হাজার ১ টি প্রতিমা করার ইচ্ছা রয়েছে।
এবারের আয়োজনে বিগত বছরের সাথে নতুন অনেক কিছুই যুক্ত হচ্ছে। যেমন বিগত বছরগুলোর মতো এবারেও দুর্গাপূজা যে কয়দিন চলবে প্রতিদিন ২-৩ হাজার লোকের জন্য প্রসাদের ব্যবস্থা রাখা হবে। দুরদূরান্ত থেকে আসা মানুষদের জন্য খাবারের পাশাপাশি থাকার ব্যবস্থাও নিশ্চিত করা হবে। অসহায়, দুস্থ নারীদের মাঝে বস্ত্র বিতরণ এবং দরিদ্র-মেধাবী ও কন্যাদায়গ্রস্থ পিতা-মাতাকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে ।
তবে এবারের পূজোয় নতুন প্রজন্মের জন্য ডাক্তার বাড়ি ও রাজ মন্দির প্রাঙ্গনে অনেককিছু সংযোজন করা হয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মু‌জিবুর রহমানের ম‌্যুরালের পাশাপাশি তাকে নিয়ে লেখা বিভিন্ন বই, তথ্য ও চিত্র নিয়ে বঙ্গবন্ধু কর্নার, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে লেখা বইয়ের সংযোজন ঘটিয়ে শেখ হাসিনা কর্নার, মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন তথ্য- চিত্র নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ কর্নার ও শেখ রাসেল কর্নার করা হয়েছে। যেখান থেকে মানুষ জাতির পিতা,মুক্তিযুদ্ধ, আমাদের প্রধানমন্ত্রী ও শেখ রাসেল সম্পর্কে বিভিন্ন কিছু জানতে পারবেন। এছাড়া পুরো ডাক্তার বাড়ি ও মন্দির এলাকাকে ঘিরে বিভিন্ন লেখক-মনিষী,বিখ্যাত ব্যক্তিদের বানি সংবলিত প্লাকার্ড, ছবি, ব্যানার সাটানো হয়েছে। সেইসাথে প্রজেক্টরের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু,মুক্তিযুদ্ধসহ পূর্বের পূজা নিয়ে তৈরি প্রদর্শনও করা হবে প্রতিদিন।
রাজ মন্দিরের সভাপতি ডাঃ সুদীপ কুমার হালদার বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিবছর রাজ মন্দিরের দুর্গাপূজার আয়োজনে কয়েক লাখ লোকের সমাগম ঘটে। আর আগতদের সেবায় ডাক্তার বাড়ির সকল লোকজন নিজেদের নিয়োজিত করেন। গত একমাস ধরে আমাদের ৪০ জন আত্মীয় স্বজন পূজোর আয়োজনকে কেন্দ্র করে শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। সাতক্ষীরার শকর পালের নেতৃত্ব ৬ জন পাল ২৫১ টি প্রতিমা তৈরির কাজ করেছে।
তিনি বলেন, এবারেও সার্বিক নিরাপত্তায় সিসি ক্যামেরা স্থাপনসহ নিজস্ব ভলান্টিয়ার ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন। পূজো ‍শুরুর দিন থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিদিন আগতদের উদ্দেশ্যে অন্য প্রসাদের ব্যবস্থা করা হবে। রাজ মন্দিরের পাশেই নারী ও শিশুদের জন্য ব্রেষ্ট ফিডিং কর্নার, নারীদের স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে কাউন্সিলিং পয়েন্ট ও ফ্রি স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণ, পূজা চলাকালে টানা ৪ দিন বিকেল ৩ টা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্পের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ৫ টি তোরণের পাশাপাশি মন্দির এলাকায় পদ্মাসেতুর আদলে একটি স্প্যান বানানো হয়েছে। যারমধ্যে লাইব্রেরসিহ তিনটি কর্নার স্থাপন করা হয়েছে। রয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আলাদা বসার স্থান।
রাজ মন্দিরের পুজোর আয়োজক অবসর প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বাবু শৈলেশ্বর হালদার বলেন, এখানে দুর্গাপূজার আয়োজনের পাশেই রয়েছে,মা কালির মন্দির, মা মনসা মন্দির, শিব ঠাকুর মন্দি, বাবা লোকনাথের মন্দির, মা স্বরস্বতীর মন্দির। আমরা চাই উৎসবমুখর পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে পুজোর আয়োজন শেষ করতে। এরইমধ্যে স্থানীয় প্রশাসন আমাদের সার্বিক সহযোগীতা করছেন।
অপর আয়োজক নমিতা হালদার বলেন, তার ৪ সন্তানসহ স্বজনদের অংশগ্রহনে কয়েকবছর ধরে বৃহৎ আকারে রাজ মন্দিরে দুর্গাপূজার আয়োজন চলছে। বিশেষ করে ডাঃ সুদীপ কুমার হালদার, তার স্ত্রী ডাঃ স্নিগ্ধা চক্রবর্তী পুরো আয়োজনের সকল কাজের দেখভাল করে থাকেন। যাতে পুজোতে আসা কোন মানুষ কষ্ট না পান। আমাদের এখানে হিন্দুধর্মালম্বীদের পাশাপাশি বিভিন্ন ধর্মের মানুষ আসেন পূজো দেখতে।
স্থানীয় বাসিন্দা হরিদাস জানান, এ পূজোকে ঘিরে আশপাশের মানুষদের মাঝেও বেশ উৎসাহ রয়েছে, এ মন্দিরকে ঘিরে গ্রামীন মেলাও বসবে। আর দিনে দিনে এতো ভিড় বাড়ছে যে আশপাশের সড়কগুলোতেও যানবাহন চলাচলে নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হয়। শুনেছি এবারে নাকি বিভিন্ন মন্ত্র লেখা সংবলিত লিফলেটও করা হচ্ছে। যা মন্দির এলাকায় প্রবেশ করেই পাঠ করতে পারবেন যে কেউ। যাতে করে নতুন প্রজন্ম ধর্মের ওপর আরও শ্রদ্ধাশীল হবে বলে মনে করছি।
উল্লেখ্য নিজের ইচ্ছে ও বাবার মানত পূরণ করার লক্ষ্যে দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর ডাঃ সুদীপ কুমার হালদার কবুতরখালীর ডাক্তার বাড়ির রাজ মন্দিরে গত ২০১৬ সালে ৪১‌টি প্রতীমা দি‌য়ে প্রথম বৃহৎ আকারে দুর্গাপূজার আয়োজন করেন।এরপরের বছর ১ শত এবং পরের বছর আড়াইশতটি প্রতিমা নিয়ে দুর্গাপূজার আকার বড় হতে থাকে। তবে করোনার কারনে দুই বছর বৃহৎ আকারের আয়োজন বন্ধ থাকার পর এবারে আবার ২৫১ টি প্রতিমা নিয়ে পূজোর আয়োজন করা হয়েছে। পূজা মন্ডপ এলাকায় বাহারি রংয়ের আলোকসজ্জার মাঝেই সাজা‌নো হ‌য়ে‌ছে কৃত্তা রাক্ষসী, কুম্ভকর্ন, জগদ্ধাত্রী, কা‌লি, মনসা, সরস্বতী, শিব, রাধা কৃষ্ণ, শ্রী‌চৈতন‌্য মহাপ্রভু, লক্ষ্মী নারায়ন, রাম সীতা, দুর্গা, হনুমান সহ প্রতীমাগু‌লো।
এদিকে ব‌রিশাল বিভা‌গের ম‌ধ্যে ব‌রিশাল জেলায় প্রথমবা‌রের মত ২৫‌টি প্রতীমা তৈরী ক‌রে পূজা শুরু কর‌বে সদর উপ‌জেলার জাগুয়া ইউনিয়নের আস্তাকা‌ঠি সার্বজনীন শ্রী শ্রী হ‌রি ও দুর্গা ম‌ন্দি‌র।

সর্বশেষ