১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

রাজস্ব কর্মকর্তার দর-কষাকষি করে ঘুষ নেওয়ার ভিডিও ভাইরাল

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

জাহিদ হাসান, মাদারীপুর প্রতিনিধি:
কাস্টমস্ ও এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগ মাদারীপুর সার্কেল অফিসের দুই রাজস্ব কর্মকর্তার ঘুষ নেওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ১০ মিনিট ১৩ সেকেন্ডের ফাঁস হওয়া ভিডিটিতে দেখা যায়, দুই রাজস্ব কর্মকর্তা এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে দর-কষাকষি করছেন। এমনকি চাহিদা মত প্রতি মাসে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মাসোহারা টাকা চাইছেন।
ভিডিওতে দেখা যায়, কাস্টমস্ ও এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগ মাদারীপুর সার্কেল অফিসের রাজস্ব কর্মকর্তা (সার্কেল-২) রফিকুল ইসলাম ও (সার্কেল-১) মো. ইমরান কবীর অফিস কক্ষে বসে ঘুষের টাকা গ্রহণ করছেন।
ফাঁস হওয়া ভিডিওর শুরুতে এক ব্যবসীয়কে উদ্দেশ্য করে রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এইডা কি আনছেন? পরে ৫০০ টাকার কয়েকটি নোট হাতে গুনে পকেটে ভরেন রফিকুল। এরপর রাজস্ব কর্মকর্তা রফিকুল ওই ব্যবসায়ী বলেন, কি যে করেন আপনারা? মানে…. মাদারীপুরের লোক এত ধনী, দেশের মধ্যে তৃতীয় ধনী জেলা। আপনারা কেন এমন করেন?’
একপর্যায় ব্যবসায়ীর ওপর ক্ষুদ্ধ হয়ে রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘যা দিছেন আমি এটা নিতে পারবো না। এটা ইমরান সাহেবকে কি দেব? আমি কিভাবে বুঝাবো? স্যারে তো বকবো! আমি এটা নিতে পারবো না। এই ৩ (তিন হাজার) আমি নিতে পারবো না। বাকিটা কখন দিবেন? আপনারা স্যারকে বলে যান, দেখা করে যান। কারণ তিনি (ইমরান কবীর) আপনার অরজিনাল স্যার। সেই আপনাকে বাঁচাতে পারবো, মারতে পারবো। বুঝচ্ছেন! শেষ কথায় রফিকুল ইসলাম ওই ব্যবসায়ীকে বলেন, প্রতি মাসে অফিস খরচ ১ হাজার টাকা দিয়ে যাবেন। এটা যেন আর না বলা লাগে। কথা যেন নড়চর না হয়। মাসের ১০ তারিখের মধ্যে টাকা আমার কাছে দিয়ে যাবেন।
ভিডিওটির ৮ মিনিট ৩৫ সেকেন্ডে পরে দেখা যায় রাজস্ব কর্মকর্তা (সার্কেল-১) মো. ইমরান কবীরকে। তিনি ওই ব্যবসায়ীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনার দোকানের আশেপাশে যারা দিচ্ছে ওয়েল এন্ড গুড। আর যারা দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। আপনার নম্বর দিয়ে যান। পরে ওই ব্যবসায়ী এক হাজার টাকা ইমরান কবীরের টেবিলে রাখলে তিনি টাকাটা গ্রহণ করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভিডিওতে থাকা ওই ব্যবসায়ীর নাম অমিত হাসান। তিনি মাদারীপুর পুরান বাজারের পোশাক ব্যবসায়ী। জানতে চাইলে ওই ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমার ছোট পোশাকের দোকান। প্রতি মাসের ১০ হাজার টাকা করে ভ্যাট দিতে বলেন স্যারেরা। পরে অফিসে গেলে তারা এক হাজার টাকা করে ভ্যাট দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়। কিন্তু শর্ত হলো, প্রতি মাসে অফিসে তিন হাজার টাকা দিতে হবে।’
ভিডিও সম্পর্কে রাজস্ব কর্মকর্তা (সার্কেল -১) মো. ইমরান কবীর বলেন, ‘ভিডিওটি আমারদের নয়, এটি সাজানো। এ বিষয় আমার আর কোন মন্তব্য নাই।’
রাজস্ব কর্মকর্তা (সার্কেল-২) রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ওই ব্যবসায়ী আমার কাছে আসার পর তাকে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে টাকা জমা দিতে বলেছিলাম, তার কাছে কোনো অনৈতিক দাবি করা হয়নি, ঘুষ দাবির ভিডিও প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কথোপকথনগুলো ভুলভাবে উপস্থাপন করছে। এসব ভিত্তিহীন অভিযোগ।’
জানতে চাইলে কাস্টমস্ ও এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগ মাদারীপুর সার্কেল অফিসের বিভাগীয় কর্মকর্তা ও ডেপুটি কমিশনার মো. এনামুল হক মুঠোফোনে বলেন, ‘আপনারা তো আসছিলেন, নিউজ করে দেন। অসুবিধা নাই।’ বলেই তিনি কল কেটে দেন।’
এ সম্পর্কে মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক রহিমা খাতুন বলেন, ‘দুই রাজস্ব কর্মকর্তা ঘুষ গ্রহণের ভিডিওটি আমি দেখেছি। পুরো ঘটনাটি যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। অনৈতিক কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত এসব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

সর্বশেষ