২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
চরকাউয়ায় যুবলীগ নেতা খান মামুনের গণসংযোগ বাংলাদেশে বর্তমানে ভারতের তাবেদার সরকার শাসন করছে : বরিশালে ভিপি নুর বরিশালে নামাজের সময় মসজিদের এসি বিস্ফোরণ, ইমামের কক্ষে আগুন উজিরপুরে ধর্ষণ মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তার কাউখালীতে পাটি খাতে রূপালী ব্যাংকের ক্লাস্টার ভিত্তিক ঋণ বিতরণ বিআরডিবি'র কার্যক্রম পরিদর্শনে সচিববৃন্দ মনপুরায়, কিশোরীদের সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ ও উঠান বৈঠক বরিশালে ‘সাড়ে তিনশ’ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত শহর রক্ষা বাধ দখলের মহোৎসব উজিরপুরে মাদকসহ জেলা ডিবি'র খাচায় ১ মাদক কারবারী আটক রাজাপুরে নিখোজ ভ্যান চালকের লাশ ভাসছিলো নদীতে কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় মা ও ভাইকে মারধরের অভিযোগ।।

আজ বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ হযরত মাওঃ মোঃ আব্দুল ওহাব সাহেব খুলনার হুজুর (রহঃ) এর ৪র্থ মৃত্যু বার্ষীকি।

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

✒️কবি মাহমুদা বেগম, কবি দিলরুবা ও মুহাঃ ইমাদুল হক ফিরদাউছ প্রিন্স।

প্রাককথনঃ– জগতে প্রতিনিয়ত এমন অনেক ঘটনা ঘটছে যা আমরা স্বাভাবিক ও স্রষ্টার অপার লীলারুপে মেনে নেই।কারো জন্ম, মৃত্যু সাময়িকভাবে আনন্দ ও বেদনার সঞ্চার করলেও সামগ্রিকভাবে হৃদয়ে গভীরভাবে রেখাপাত করে না। দৃষ্টির গোচরে -অগোচরে কত ফুল যে ঝরে যায়, কিংবা উর্মিমুখর তরঙ্গরাজির বুদবুদ কিভাবে যে মিলিয়ে যায়, কজনেই বা তার খবর রাখে। কিন্তু জগতে এমন কিছু ঘটনাবলীও সংগঠিত হয় যা হৃদয় ও মনে গভীরভাবে রেখাপাত করে। স্বাভাবিক পর্যায়ের হলেও তা আমাদের ব্যাপকভাবে নাড়া দিয়ে যায়। মহাপুরুষ ও মহামনীষীগণের আগমন ঘটে মানব সমাজের প্রতি মহান রাব্বুল আলামীনের নিতান্ত করুণা ও মেহেরবানী স্বরুপ। মানব সৃষ্টির প্রকৃত উদ্দেশ্য তথা সৃষ্টি রহস্য অনুধাবন করতে সক্ষম হওয়া যায় মহাপুরুষগণের সাধনা, দর্শন, শিক্ষা-দীক্ষা ও বর্ণাঢ্য জীবনের ঘটনা প্রবাহ দ্বারা। যারা প্রভু প্রদত্ত প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে বিভ্রান্ত ও পথভ্রষ্ট মানব সমাজকে প্রদান করেন সীরাতে মোস্তাকিমের দিশা। মহাপুরুষগণ তাই মানবসমাজের জন্য অপরিহার্য ও অমূল্য ধন। পৃথিবীতে তাদের শুভাগমন যেভাবে পরম কাংখিত ও আনন্দ সংবাদ তদ্রুপ তাদের তিরোধান মানব সমাজের জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও দুঃসংবাদ। সুশীল সমাজ তাদের বিয়োগ ব্যাথায় হন আবেগ আপ্লুত ও উদ্বেলিত। তাদের ইন্তেকালে যে শুন্যতার সৃষ্টি হয় তা আদৌ পূরণ হয়না।
আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মুহম্মদ আব্দুল ওহাব সাহেব খুলনার হুজুর (রহ.) কাল প্রবাহে একটি বিস্ময়ের নাম। স্মৃতির প্রখরতা, জ্ঞানের গভীরতা, চিন্তার বিশালতা, চারিত্রিক দৃঢ়তা, অটুট সততা আর বিশাল পর্বতসম হিম্মতের এক মূর্ত প্রতীক এই মহাপুরুষ। তিনি আধুনিক ইলমে হাদীসের এক বিজয়ী সম্রাট। খুলনার হুজুরের মাকাম ও মর্যাদা ফুটিয়ে তোলার জন্য এই সংক্ষিপ্ত জীবনীতে তাঁর বৈচিত্রময় শুভ্র-সুন্দর জীবনের বিভিন্ন দিক ও তাঁর জ্ঞানবিদ্যার যৎসামান্য পরিচয় তুলে ধরতে সামান্য চেষ্টাচরিত্র করা হয়েছে মাত্র। ইতিহাস কেবল অতীত নয়, এক কথায় আমাদের ভবিষ্যতও। আমাদের মনীষীদের গৌরবময় ইতিহাসের চর্চা যতই বেগবান হবে ততই মুসলিম উম্মাহর আত্মার রূপরেখা নির্মাণের কাজটি সহজ হবে। আল্লাহ্ তাআলা এ ক্ষুদ্র প্রয়াসকে কবুল করুন। আমীন। আসুন, খুব সংক্ষেপে আমরা এই মনিষীকে জানার চেষ্টা করি।
এমন জীবন তুমি করিবে গঠন/মরণে হাসিবে তুমি কাঁদিবে ভুবন।’ কবিতার লাইনগুলো যেন তার জন্যই লেখা। যার কাছে মানুষের পরিচয় ছিল কেবল মানুষ হিসেবে। যিনি ছিলেন জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের আস্থাভাজন ও পরম শ্রদ্ধেয়। তাইতো ইন্তেকালের ৩ বছর পরও হাজারো ব্যস্ততা উপেক্ষা করে তার বাড়িতে এবং কবরস্থান ও তার নির্মিত মসজিদে ছুটে আসেন অসংখ্য মানুষ। তিনি আর কেউ নন, তিনি হলেন লাখো আলেমের প্রিয় উস্তাদ আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মুহম্মদ আব্দুল ওহাব সাহেব খুলনার হুজুর (রহ.)।
লাখো শিক্ষার্থী, আত্মীয়-স্বজন ও ভক্তকে শোকসাগরে ভাসিয়ে ২০১৯ সালের ১৩ জানুয়ারী ইন্তেকাল করেন হযরত খুলনার হুজুর (রহ.)। ইন্তেকালের ০৩ বছর পেরিয়ে গেলেও তিনি হারিয়ে যাননি বরং দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন পর্যায়ের ধর্মিয় ও সামাজিক নানান সঙ্কটে তার অভাব অনুভব করছে দক্ষিণাঞ্চলবাসী।

নলছিটি উপজেলার মোল্লারহাট জেড এ ভুট্রো ডিগ্রি কলেজের এবং ঝালকাঠির আকলিমা মোয়াজ্জেম ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ জনাব মোঃ কাঞ্চন আলী মোল্লা বলেন, হযরত মাওলানা মোঃ আব্দুল ওহাব সাহেব খুলনার হুজুর (রহঃ) এর ৮৪ বছরের অধ্যাপনার কর্মময় ও সংগ্রামী জীবন এক বিস্ময়কর উপখ্যান। তিনি পথভোলা মানুষের আত্মিক পরিশুদ্ধি ও নৈতিক সমৃদ্ধির সর্বাত্মক প্রচেষ্টা যেমন চালিয়েছেন তেমনি শিরক বিদআতের মোকাবেলা করেছেন। তিনি গণমানুষের মুক্তির জন্যে অধিকার আদায়ের জন্যে তার সাধ্যমত আন্দোলন ও সংগ্রাম করেছেন। আবার শিক্ষা সংস্কার তালিম তারবিয়াতেও আত্মনিয়োগ করেছেন। ঝালকাঠি সরকারি মহিলা কলেজের স্বনামধন্য অধ্যক্ষ জনাব মোঃ হেমায়েত উদ্দিন বলেন, হযরত খুলনার হুজুর (রহঃ) এর জীবন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, পঠন, পাঠন, লেখালেখি, জ্ঞান আহরণ ও জ্ঞান বিতরণ, ওয়াজ ও নসিহতের বাইরে অন্য কোনো ক্ষেত্রে তার পদচারণা ছিল না বললেই চলে। রাজনীতি, কূটনীতি, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অংশীদারিত্ব ও ম্যাকিয়াভেলিয়ান মারপ্যাঁচের ঊর্ধে ছিলেন তিনি। তিনি ছিলেন সাদাসিধে, আড়ম্বরবর্জিত, সহজ-সরল এক দরবেশ। সৌজন্যবোধের প্রাবল্য ও শান্ত সমাহিত মন মেজাজের কারণে তিনি মানুষকে সহজে বিশ্বাস করতেন। মূলত তিনি ছিলেন অন্তর্মুখী জ্ঞানগবেষক, নীরব সাধক ও প্রচারবিমুখ এক বুজুর্গ।
হুজুরের সুযোগ্য ছাত্র বর্তমানে ভেরনবাড়ীয়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মোঃ শহিদুল ইসলাম বলেন, ইসলামি অঙ্গনের এ অবিসংবাদিত নেতা ও আমাদের বহু আলেম-ওলামার উস্তাদ হযরত খুলনার হুজুর (রহঃ) দীর্ঘদিন যাবৎ ইলমে দ্বীনের খেদমতে নিয়োজিত ছিলেন। হাদিস ও ফিকহশাস্ত্রের একজন প্রখ্যাত বিশেষজ্ঞ এবং ছিলেন দক্ষিণ জনপদের একজন গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী ব্যক্তিত্ব। মুসলিম উম্মাহর ঐতিহাসিক অহংবোধের প্রতীক এক উজ্জ্বল চরিত্রের মানুষ। তিনি আরো বলেন, জ্ঞান সরোবরের গভীর অতলান্ত পদ্ম, ইলম, আমল এবং অধ্যাবসায়ের আকাশের অত্যুজ্জ্বল নক্ষত্র হযরত মাওলানা মোঃ আব্দুল ওহাব সাহেব খুলনার হুজুর (রহঃ) আমাদের গর্ব ও গৌরবের প্রতীক। আখলাকে নববীর মিছালি ও বাস্তব নমুনা। জ্ঞানের আকাশে ভূবন আলোকিত করা পূর্ণিমার স্নিগ্ধ চাঁদ। কূলহীন জ্ঞানসমুদ্র। তাঁর অসাধারণ জ্ঞান, অপরিমেয় প্রজ্ঞা এবং বিপুল বিশাল প্রতিভার ছবি আঁকা আমাদের মত ক্ষুদ্রগনের পক্ষে সত্যি দূরূহ। তাঁর বিদ্যাপর্বতের পরিমাপ করা, তাঁর অবাক করা আখলাক ও মহামানবোচিত চরিত্রকে সঠিকভাবে চিত্রন করা আমাদের জন্য সত্যি কঠিন। তাই তো হুজুরের সুযোগ্য ছাত্র কাঠিপাড়ার পীর সাহেব, চরমোনাই দরবারের সিনিয়র খলিফা হযরত মাওলানা মোঃ সেকান্দর আলী ছিদ্দিকী মন্তব্য করেছেন— ‘যদি আমরা তাঁর বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলীর বিশদ বিশ্লেষণ করি, তাহলে বক্তব্য অনেক দীর্ঘ হয়ে যাবে; আর আমরা এ মহিমা কীর্তনের চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছুতে পারব না। কেননা তিনি ছিলেন আলেম, আলেম বিল্লাহ ওয়া বি- আমরিল্লাহ, ব্যক্তি জীবনে ধর্মীয় অনুশাসনের যত্নবান অনুসারী, যাহেদ, দুনিয়া নির্মোহতায় চূড়ান্ত, (অতি উচ্চ মার্গের) ইবাদতগুজার, খোদাভীরু ও মুত্তাকী এবং ইলমে শরীয়াতের গ্রহণযোগ্য আলেম।’

সুবিদপুর ইসলামিয়া হাছানিয়া সিনিয়র মাদ্রাসার প্রিন্সিপ্যাল হযরত মাওলানা মোঃ ইমামুল হক খান বলেন, আমার শ্রদ্ধেয় শ্বশুর আব্বা হযরত খুলনার হুজুর (রহঃ) এর চাল-চলন, কথা, আচার-আচরণেই বুজা গেছে তিনি যে মহান আল্লাহর একজন খাটি ওলি ছিলেন।

নাম ও বংশ : নাম- আবদুল ওহাব, উপনাম–মাওলানা সাহেব/খুলনার হুজুর । বংশপরম্পরা- মাওলানা মোঃ আব্দুল ওহাব বিন মোঃ দলিল উদ্দীন বিন মোঃ আব্দুল করিম বিন মোঃ আবুল হোসেন। তিনি দক্ষিণাঞ্চলের প্রসিদ্ধ জমিদার গোত্রের উপগোত্র জোমাদ্দার-এর অন্তর্ভুক্ত। খুলনা গ্রামে জন্মগ্রহণ করায় তিনি ‘খুলনার হুজুর’ নামে অধিক পরিচিত।

জন্ম ও প্রতিপালন : হজরত মাওলানা মুহাঃ আব্দুল ওহাব সাহেব খুলনার হুজুর (রহঃ) ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার নাচনমহল ইউনিয়নের খুলনা গ্রামের বিশিষ্ট সমাজ সেবক মরহুম মোঃ দলিল উদ্দিন জোমাদ্দার ও মৃত্যু মোসাঃ আমেনা খাতুন দম্পতির ঘর আলোকিত করে জন্মগ্রহণ করেন।জনাব দেলাল উদ্দিন জোমাদ্দার ছিলেন তৎকালীন সময়ের খুলনা গ্রামের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের অন্যতম। মাতা আমেনা খাতুন ছিলেন একজন দ্বীনদার, পরহেজগার,খোদাভীরু মহিলা।হুজুরের জন্মের সন নিয়ে কিছু মতবেদ থাকায় হাফেজ মাওলানা মোঃ ছিদ্দিকুর রহমান বলেন : বিশুদ্ধ মতে হযরত খুলনার হুজুর (রহঃ) এর জন্ম সন হল ১৯৩৪ সালের ০১ মার্চ (বৃহস্পতিবার) ১৫ জিলকদ্দ ১৩৫২, ১৭ ফাল্গুন ১৩৪০ বঙ্গাব্দ। বিশিষ্ট রাস্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর মোঃ আনোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, হযরত খুলনার হুজুরের পরিবার নলছিটি উপজেলার নাচনমহল ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক মর্যাদার অধিকারী ছিল। তাঁর পিতা একজন ধর্মভিরু, শিক্ষানুরাগী, সমাজ সংস্কারক ও দান বীর ছিলেন। সম্ভ্রান্ত সমাজ ও দ্বীনী পরিবেশের জ্ঞানপিপাসা নিয়েই তিনি প্রতিপালিত হন।হযরত খুলনার হুজুর (রহঃ) সমগ্র জীবনব্যাপী জ্ঞান-গবেষণা ও মহান আল্লাহর ‘ইবাদত বন্দেগীতে নিয়োজিত ছিলেন। তাঁর ৮৪ বছরের জীবন ছিল একটি আলোকোজ্জ্বল জীবন।

শিক্ষা জীবনঃ- বিদ্যান পিতার ঔরসে, বিদুষী মায়ের গর্ভে জন্ম বিধায় জন্মলগ্ন থেকেই হযরত মাওলানা আব্দুল ওহাব সাহেব (রহঃ) এর অসাধারণ মেধা ও চারিত্রিক গুণাবলী পরিপুষ্ট হতে থাকে। বাল্যকাল থেকেই তিনি প্রখর মেধার অধিকারী ছিলেন। এছাড়াও বংশীয়ভাবে তাঁদের পরিবার ছিল দ্বীনী জ্ঞানচর্চায় অগ্রগামী। এজন্য তিনি শিশুকাল হতেই শিক্ষা শুরু করেন। বিশেষ করে তাঁর মাতা তাকে শিক্ষার প্রেরণা যোগান। হযরত খুলনার হুজুর (রহঃ) বলেন আমার ছোট সময় আমি একদিন মাকে বললাম, ‘‘আমি চট্রগ্রামের হাটহাজারীতে পড়ালেখা করতে যাব! মা বললেন, আস শিক্ষার লেবাস পড়, অতঃপর আমাকে ভাল পোষাক পড়ালেন, মাথায় টুঁপি দিলেন এবং তার উপর পাগড়ী পড়িয়ে দিলেন, এরপর বললেন : এখন পড়া লিখার জন্য চট্রগ্রামের হাটহাজারীর দারুলউলুমে দেশের শীর্ষ আলেমদেরকাছে জ্ঞান শিক্ষার জন্য এবং মহান রবের খাটি বান্দা হতে যাও। এভাবে তিনি হাটহাজারী এবং ফরিদপুরের দেশের তৎকালীন প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস, ফকীহদের নিকট হতে শিক্ষালাভ করেন।

হুজুরের বন্ধু মানুষ বিশিষ্ট সমাজ সেবক জনাব মোঃ আব্দুল খালেক জোমাদ্দার বলেন, হুজুর ছাত্র জীবনে মেধার স্বাক্ষর রেখে গেছেন। বুযুর্গ পিতা-মাতার তত্ত্বাবধানে এবং দ্বীনী পরিবেশে তাঁর শিক্ষার হাতে খড়ি হয়। মাত্র ৫ বছর বয়সে তিনি পার্শবর্তি গ্রামস্থ ডেবরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আমার সাথে ভর্তি হন। পাশাপাশি পিতা-মাতার যত্নে স্থানীয় মক্তবে পবিত্র কুরআন শিক্ষা শুরু করেন। তিনি ছিলেন একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। সড়কপথে যোগাযোগের বেহাল অবস্থার মধ্যে বর্ষাকালে কাপড়-চোপড় ও কিতাবাদির বোঝা মাথায় নিয়ে এক বুক পানি দিয়ে প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে আমাদের ডেবরা গ্রামের প্রাইমারী স্কুলে আসতেন। ডেবরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়েন। ৫ম শ্রেণীর ফাইনাল পরীক্ষায় তিনি ১ম স্থান অধিকার করেন। হাফেজ মোঃ আব্দুল মান্নান বলেন, হযরত খুলনার হুজুর (রহঃ) ১৯৪৫ সালে দেশের শীর্ষ ইসলামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চট্রগ্রামের হাটহাজারীর দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম মাদ্রাসায় ভর্তি হন। এখান থেকে কৃতিত্বের সাথে দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স) পাস করেন। পুনরায় তিনি ফরিদপুরের বিখ্যাত গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসা হতে মিসকাত নিয়ে ‘দাওরায়ে হাদীছ’ (মাস্টার্স) পাস করেন। পরবর্তিতে আবার আলিয়া নেছাবে ১৯৭৮ সনে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ঝালকাঠির নলছিটি ইসলামিয়া ফাজেল মাদ্রাসা থেকে সুনামের সহিত ফাজিল (ডিগ্রী) পাশ করেন । ১৯৭৯ সনে ঝালকাঠির নেছারাবাদ ছালেহিয়া আলিয়া মাদ্রাসা থেকে তাফসির বিষয়ে কামিল (মাস্টার্স) পাশ করেন। হাটহাজারী মুঈনুল ইসলামে দাওরায়ে হাদীসে তিনি প্রথম স্থান লাভ করেন।
অসংখ্য বিদ্যানের নিকট তিনি শিক্ষালাভ করেন। হযরত মাওলানা হাফেজ মোঃ ছিদ্দিকুর রহমান (প্রতিষ্ঠাতা ও পেশ ইমাম, খুলনা জংশন রেলওয়ে জামে মসজিদ) বলেন, আমার শ্রদ্ধেয় কাকা ‘‘হযরত খুলনার হুজুর (রহঃ) শতাধিক শিক্ষকের কাছে শিক্ষা গ্রহণ করেন। শিক্ষাজীবনে তাঁর উস্তাদগণের মধ্যে উলে­খযোগ্য ছিলেন মুফতীয়ে আ’যম হযরত মাওলানা আবদুল মুঈয বিহারী (রহঃ), প্রখ্যাত মুহাদ্দিস মুজাহিদে আ’যম হযরত মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী (রহঃ), আল্লামা আহমাদ শফী (রহঃ) আল্লামা হেদায়াতুল্লাহ (রহঃ), হযরত মাওলানা মুহাম্মদ উল্লাহ হাফেজ্জী হুযূর (রহঃ), হযরত মাওলানা আবদুল মজীদ ঢাকুবী হুযূর (রহঃ) এবং শাইখুল হাদীস আল্লামা হযরত মাওলানা আজিজুল হক (রহঃ) প্রমুখ যুগশ্রেষ্ঠ বুযুর্গ আলিমদের নিকট অধ্যয়ন করেন।

আলহাজ্জ্ব মাওলানা আব্দুল ওহাব খুলনার হুজুর (রহঃ) সারা দেশে হাজার হাজার ছাত্রের শিক্ষক হিসেবে জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন। জীবনের প্রতিটি পরতে পরতে মেধার স্বাক্ষর রেখে যাওয়া বিশিষ্ট এই ব্যক্তিত্বের ইন্তেকালে জন্মমাটি ঝালকাঠিসহ দেশের পরিচিত মহলে শোকের ছায়া নেমে আসে । আধুনিক ইলমে গভীর পান্ডিত্য ও নিষ্কলুষ ধর্মনিষ্টা, অমায়িক ব্যবহার ও নির্মল চরিত্রের অধিকারী খুলনার হুজুর রহঃ এর রুহের মাগফিরাত কামনা করেছিলেন দেশের বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তি, সামাজিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ তখন শোক প্রকাশ করে তার পরলৌকিক জীবনের সর্বোচ্চ সফলতা কামনা করেছেন।

শৈশবকালঃ- শৈশবে হযর মাওলানা মোঃ আব্দুল ওহাব (রহঃ) ছিলেন ভদ্র, শান্ত,শিষ্ট প্রকৃতির অমায়িক আচার-আচরণের অধিকারী। এলাকার আবাল বৃদ্ধা, বণিতা সবার নিকট ছিলেন তিনি প্রিয়ভাজন ও আস্হাভাজন।

শিক্ষকতা: দেশের বরেণ্য শিক্ষাবিদ, খুলনার হুজুর (রহঃ) ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। (১৯৭৫-৭৯) সালে হাড়িখালী ফাজেল মাদ্রাসা (১৯৭৯-৮৮) ভেরনবাড়ীয়া ও (১৯৭৩-৭৫) দেবীপুর সিনিয়র ফাজেল মাদরাসায় বিভিন্ন সময় অধ্যক্ষ এবং হেড মাওলানার দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালে নলছিটি সদর সিনিয়র ফাজেল মাদ্রাসা, (১৯৭৮-৭৯) সালে হদুয়া বৈশাখিয়া সিনিঃ মাদ্রাসা, ১৯৭০-৭১ সালে তুষখালী সিনিয়র মাদ্রাসা, সর্বশেষ রাজাপুর উপজেলার ভাতকাঠি সিনিয়র মাদ্রাসায় ১৯৮৮ ইং সন থেকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত সুনামের সহিত অধ্যাপনা করেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, প্রধান পরিক্ষক, হল পরিদর্শক, আবাসিক হল প্রভোস্টসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিস্ঠানে অধ্যাপনা আর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মুফতির দায়িত্ব পালনই প্রমাণ করে তিনি যে একজন মেধাবী ব্যক্তিত্ব ছিলেন। খুলনার হুযূর (রহঃ) হাদীস, তাফসীর, ফিক্বহ, উসূল ইত্যাদি সব ধরণের কিতাবই পড়াতেন। তিনি “মাকামাতে হারিবী”ও অনায়াসে পড়াতেন, যাতে তার আরবী ভাষা ও সাহিত্যে দক্ষতা প্রস্ফুটিত হয়ে উঠত। দাওরায় টাইটেল জামায়াতে তিনি ইবনে মাজাহ শরীফের দরসে দিতেন। এছাড়া তিনি শামায়েলে তিরমিযীও নিয়মিত পড়াতেন। মাঝে মাঝে বুখারী শরীফের দরস দিতেন। এসব কিতাব ছাড়া মিশকাত শরীফ, হিদায়া, শরহে বিকায়া, নূরুল আনওয়ারসহ দরসী প্রায় সব কিতাবের তিনি পাঠদান করতেন।

জ্ঞান গবেষণায় হযরত খুলনার হুজুর (রহঃ)- হযরত খুলনার হুজুর (রহঃ) জন্মগতভাবেই অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। মেধা শক্তি ছিল খুবই প্রখর। হুজুরের স্নেহের ছোট ভাই বর্তমানে কানাডা প্রবাসী, বিশিষ্ট কৃষি বিজ্ঞানী ড. মোঃ মজিবুর রহমান বলেন: আমাদের ভাই ‘হযরত খুলনার হুজুর (রহঃ) স্বীয় যুগে সর্বাধিক মেধা শক্তি সম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন। অতএব হযরত খুলনার হুজুর (রহঃ)এর অসাধারণ পান্ডিত্বের সাথে গভীরভাবে জ্ঞান গবেষণা ও সংরক্ষণ সম্পর্কে আর বেশী কিছু বলার অপেক্ষা রাখে না।

মুহতারাম আম্মাজান এর ভবিষ্যৎবাণীঃ– হযরত খুলনার হুজুর (রহঃ) এর আম্মাজান (মুছাম্মাৎ আমেনা খাতুন) অত্যন্ত উঁচু স্তরের খোদাভীরু নারী ছিলেন। তিনি খাতুনে জান্নাত হযরত ফাতেমা (রাঃ) এর আদর্শ ও গুণে গুণান্বিত পুণ্যবতী এক অনন্য নারী। তার সম্পর্কে হযরত মাওলানা আব্দুল ওহাব খুলনার হুজুর (রহঃ) বলেন, “আমার আম্মাজানের নামাযের দৃষ্টান্ত আমি শুধু শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক (রহঃ) এর মধ্যে দেখেছি। সেই মহীয়সী নারী নিজ প্রাণপ্রিয় সন্তান হযরত খুলনার হুজুর (রহঃ) সম্পর্কে ভবিষ্যৎবাণী করতে গিয়ে বলেন, বাবা, আমি তোমার কাছ থেকে মহান আল্লাহর ওলি-আউলিয়া, সাহাবা কেরাম রা. এর সুঘ্রান পাচ্ছি।” এছাড়াও শৈশবকাল থেকেই হযরত খুলনার হুজুর (রহঃ) এর মধ্যে আল্লাওয়ালা সুলভ দ্বীনি ব্যাকুলতার একটা ছাপ বিদ্যমান ছিল, যা দেখে হযরত শামসুল হক ফরিদপুরী (রহঃ) পর্যন্ত বলতেন, “মাওলানা আব্দুল ওহাবকে দেখলে আমার সাহাবা কেরামদের কথা মনে পড়ে যায়।” পরবর্তীকালে তার ব্যক্তিত্বে দ্বীনি জযবা ও আবেগের যে সুসংগঠিত প্রকাশ ঘটেছিল তা তাঁর, স্বভাবের মধ্যেই নিহিত ছিল। পরিবেশ, শিক্ষা ও আল্লাহওয়ালাদের সান্নিধ্য তার সেই স্বভাবে স্ফুলিঙ্গ এর প্রজ্বলন ঘটিয়েছিল মাত্র। তাই দেখা যায় শিশু আব্দুল ওহাব এমন কিছু কাজ করতেন যা সাধারণ শিশুদের স্তর থেকে ভিন্ন হতো ।

লেখাপড়ায় গভীর অধ্যবসায়ঃ- হযরত খুলনার হুজুর (রহঃ) ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ায় গভীর মনযোগী ছিলেন। প্রতি দিনের সব পড়া শেষ করে বাকি সময় যিকির ও অন্যান্য অযিফায় কাটিয়ে দিতেন। শেষ রাত্রে নিয়মিত তাহাজ্জুদ, নামাজ, যিকির, দু‘আ ও রোনাজারি-আহাজারিতে নিমগ্ন থাকতেন।

হাদীস শিক্ষাদান ও ফতোয়া প্রদানঃ- হযরত খুলনার হুজুর (রহঃ) শুধু হাদীস শিক্ষা ও আমল করেই ক্ষান্ত হননি, বরং শিক্ষার পাশাপাশি মানুষকে শিক্ষা দান ও ফতোয়া প্রদানে বিড়াট অবদান রেখেছেন। ডেবরা গ্রামের হযরত মাওলানা আব্দুল খালেক বলেন হযরত খুলনার হুজুর (রহঃ) ২৫ বছর বয়সে হাদীসের পাঠদান ও ফতোয়া প্রদানে পূর্ণ যোগ্যতা লাভ করেন। হযরত খুলনার হুজুর (রহঃ) বলতেন : ইচ্ছা করলেই শুধু হাদীস শিক্ষা ও ফতোয়া প্রদানের জন্য মসজিদে বসা যায় না, রবং এ ক্ষেত্রে যোগ্য ও বিজ্ঞ ব্যক্তিদের পরামর্শ নিতে হবে, তারা যদি উপযুক্ত মনে করেন তাহলে এ কাজের জন্য নিয়োজিত হতে পারে। মাওলানা মোঃ নুরুল হুদা হাদি (রহঃ) বলেন ‘‘হযরত খুলনার হুজুর (রহঃ)কে কোন হাদীস জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি অযূ করে ভাল পোষাক পড়ে সুন্দরভাবে প্রস্ততি নিতেন, তাঁকে এরকারণ জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জবাবে বলেন : এ হল রাসূল সা.-এর হাদীসের জন্য সম্মান প্রদর্শন।’’ দেশে বিভিন্ন প্রান্ত হতে জ্ঞান পিপাসুরা শিক্ষার জন্য পাড়ি জমান এবং হযরত খুলনার হুজুর (রহঃ)র মত মুহাদ্দিসের নিকট হতে হাদিস/তাফসির শিক্ষালাভ করে ধন্য হতেন। হযরত খুলনার হুজুর (রহঃ) ফতোয়া প্রদানেও যথেষ্ট গুরুত্ব প্রদান করতেন। জটিল বিষয়গুলো দীর্ঘ গবেষণার পর ফতোয়া প্রদান করতেন। হাফেজ মোঃ আনছার আলী এবং মাওলানা মোঃ ফখরুল ইসলাম বিবিচিনি হুজুর বলেন : ‘‘হযরত খুলনার হুজুর (রহঃ) কোন বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি প্রশ্নকারীকে বলতেন যাও আমি ওই বিষয়ে চিন্তা- গবেষণা করি।’’ হাফেজ মোঃ আব্দুল মান্নান বলেন আমার চাচা হযরত খুলনার হুজুর (রহঃ) বলেন, ‘‘কখনও এমন মাস‘আলা এসেছে যে, চিন্তা-গবেষণা করতে আমার গোটারাত কেটেগেছে।’’ হযরত খুলনার হুজুর (রহঃ)কোন বিষয় উত্তর না দেয়া ভাল মনে করলে ‘‘জানি না’’ বলতেও কোন দ্বিধাবোধ করতেন না। কারণ তিনি মনে করতেন প্রশ্নের সম্মুখীন হওয়া মানে জান্নাত ও জাহান্নামের সম্মুখীন হওয়া। প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে যেন আখিরাতে জবাব দিহিতার সম্মুখীন হতে না হয়।

হযরত মাওলানা সৈয়দ মোঃ রেজাউল করিম পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, হযরত খুলনার হুজুর (রহঃ) আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আক্বীদায়ে বিশ্বাসী ছিলেন। কুরআনুলকারীম ও সহীহ হাদীসের আলোকে হযরত খুলনার হুজুর (রহঃ) ঈমান আক্বীদাহর সকল বিষয়ে হকপন্থীদের সাথে একমত ছিলেন। অবিসংবাদিত বুজুর্গ হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল ওহাব খুলনার হুজুর (রহঃ) ছিলেন একটি ইতিহাস, একটি আদর্শ ও একটি প্রতীক, এ প্রতীক হলো হক ও হক্কানিয়্যাতের প্রতীক, এ প্রতীকের ছায়াতলে আশ্রয় পেয়েছিলো দক্ষিণ বাংলার মুসলমানগণ এক দীর্ঘকাল, এই অঞ্চলে বাতিল যখনই মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে এ প্রতীক তখনই গর্জে উঠেছে চিরঅকুতোভয় সিংহের গর্জন নিয়ে। দীন ও শরীয়তবিরোধী কোনো কিছুর আপোষ করে চলার চিন্তাও যার ভিতরে কখনো আসেনি, শেষ রাতে সেহেরগাহিতে মহান আল্লাহর সমীপে যারযার হয়ে রোনাজারি করতেন নিত্য রজনী, কিন্তু কোনো দিন বাতিলের রক্তচক্ষু দেখে একবারের জন্যও কান্না আসেনি তার চোখে। তিনি বিশ্বাস করতেন, মৃত্যু মানুষের একবার আসে, বীর মরে একবার আর কাপুরুষ মরে হাজারবার। কোনো সন্দেহ নেই যে, দীনকে হেফাজত করার এই বীর সৈনিকেরা যুগে যুগে আছে বলেই ইসলাম আজো টিকে আছে বিশুদ্ধ অবয়ব নিয়ে।

হুজুর (রহঃ)এর মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী অবস্থানঃ- হুজুরের পাশের বাড়ীর শ্রী নৃষি মাস্টার, শ্রী হরিপদ মাস্টার, শ্রী হরেন মাস্টার, লক্ষন রায়, মনোরঞ্জন রায় ও চিত্তরঞ্জন রায় বলেন, হযরত খুলনার হুজুর (রহঃ) সারাজীবন সাম্প্রদায়িকতার বিরোধী ছিলেন। নাচনমহল ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোঃ ফজলুর রহমান বলেন, হযরত খুলনার হুজুর (রহঃ) মহান মুক্তিযুদ্ধ আমাদের এলাকায় থেকে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং তখন তার বাড়িতে বহু হিন্দুদের থাকার ব্যবস্থা করেছিলেন। শ্রীমতি বিবাহ রায়, মন্জু রায়, কাকলি রায় বলেন, হুজুরের সাথে আমাদের দেখা হলে তিনি আমাদের সাথে হাসিমুখে কুশলাদি বিনিময় করতেন। হুজুরও আমাদের বাড়িতে আসতেন আমরাও হুজুরের বাড়িতে যেতাম এবং এখনো যাই। শ্রী সুরেন রায় জীবিত থাকাকালীন হুজুরের জমি বর্গা চাষ করতেন। হুজুর বলেছেন,‘…রাজনীতিতে যারা সাম্প্রদায়িকতার সৃষ্টি করে, যারা সাম্প্রদায়িক, তারা হীন, নীচ, তাদের অন্তর ছোট। যে মানুষকে ভালোবাসে সে সাম্প্রদায়িক হতে পারে না। আপনারা যারা এখানে মুসলমান আছেন তারা জানেন যে, মহান আল্লাহ্ যিনি আছেন তিনি রাব্বুল আলামিন তিনি সকলের সৃষ্টিকর্তা।

হুজুরের বড় জামাতা বিশিষ্ট রাস্ট্র বিজ্ঞানী জনাব এ কেএম জিয়াউদ্দিন বাবুল এবং মেঝ জামাতা জনাব আবুল হোসেন বাবুল হুজুর সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন, বিশ্বখ্যাত ফার্সী কবি শায়খ সাদী (রহ:) বলেছেন-‘সকল শিশির বিন্দু মুক্তা যদি হতো, বাজারে বিকাতো তাহা তরমুজের মতো। মুক্তা হওয়া অনেক বড় বিষয়। লাখো আলেমের মধ্যে মানিক মুক্তায় পরিণত হয়েছিলেন আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মোঃ আব্দুল ওহাব সাহেব খুলনার হুজুর (রহঃ)। তাঁর মেধা মননশীলতা, অধ্যাবসায়, আমল, আখলাক, চরিত্র-বৈশিষ্ট্য, ভারসম্যপূর্ণ মেজায, সদাচরণ, শালীনতা, ভদ্রতা শরাফত, বাইর-ভেতরের পরিচ্ছন্নতা, আলোকিত চিন্তা-ভাবনা, অন্তর্দৃষ্টি, উদারতা, সহনশীলতা, ইবাদত-বন্দেগীর নিমগ্নতা, শেষ রাতে মা‘বূদের দরবারে সিজদাবনত নৈমিত্তিক হাজিরা দান আর রুনাজারী, নিয়মিত কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত, জামাতে নামাযের গুরুত্ব, মেহমান নেওয়াযী, দূরদৃষ্টি, বিচক্ষণতা, মালিকের স্মরণে ব্যাকুলতা, স্বচ্ছতা, তাকওয়া-পরহেযগারী, কর্মক্ষেত্রে দক্ষতা, বর্ণাঢ্য অভিজ্ঞতা, শিক্ষা প্রশাসন ও সংস্থায় নেতৃত্বদান, সচরাচর একজনের মাঝে এতগুণের সমাবেশ দেখা যায় না। কী শিক্ষকতা, কী মাদরাসার দায়ীত্ব পালন, কী কোন সংকট সমাধানের সালিস, কী দারসে হাদীসের মসনদের শায়খ, কী আরবী সাহিত্যের আসরে অধ্যাপনা, কী গোল টেবিল বৈঠকের আলোচক বা মডারেটর, কী বিষয় ভিত্তিক আলোচনা সর্বত্রই তিনি ছিলেন সাবলীল স্বাচ্ছন্দ্য ও গতিশীল।

হযরত মাওলানা মোঃ খলিলুর রহমান নেছারাবাদী হুজুর (দাঃ বাঃ) হযরত খুলনার হুজুর (রহঃ) সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন, আরবী অলঙ্কার শাস্ত্রের কিতাব মুখতাসারুল মা‘আনীতে একটি নীতিকথা আছে ‘শারফুল মাকীনি বিল মাকান’ ব্যাক্তির মর্যাদা তার অবস্থান বা আসন দ্বারা নির্ণিত হয়; এটাই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু পৃথিবীতে কিছু ক্ষণজন্মা কিংবদন্তী মানুষের জন্ম হয় যাদের ক্ষেত্রে এ নীতির উল্টোটা ঘটে। তখন হয়ে যায় ‘শারফুল মাকানি বিল মাকীন’। যাদের কারণে তাদের অবস্থান/আসনের মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। এরকমই একজন মানুষ ছিলেন আলহাজ্ব হযরত মাওলানা আব্দুল ওহাব খুলনার হুজুর (রহ.)। তিনি যখন যে আসনে সমাসীন হয়েছেন সে আসনের মর্যাদা ও মহিমা অনেক বেড়ে গেছে।
শিক্ষার উদ্দেশ্য হচ্ছে-‘আচরণের কাক্সিক্ষত পরিবর্তন’ শিক্ষা মানুষের মাঝে ভদ্রতা-শরাফত, সম্ভ্রম ও সভ্যতা তৈরি করে। বহু মানুষ শিক্ষিত হয়, আলেম হয়, কিন্তু সভ্য, ভদ্র, শরীফ হতে পারে না, তার মধ্যে সম্ভ্রম তৈরি হয় না, তার আচরণে কাঙিক্ষত পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয় না। মানুষ তাদের থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকে। কিন্তু খুলনার হুজুর (রহঃ) শিক্ষার মূল উদ্দেশ্যকে ধারণ করেছিলেন। ফলে তাঁর মাঝে শরাফত ছিল পূর্ণ মাত্রায়। বিষয়টি বংশ বা সনদ কিংবা পোষাকের সাথে জড়িত নয়, এটি অনুশীলন ও অভ্যাসের সাথে জড়িত।

পারিবারিক জীবনঃ- হযরত খুলনার হুজুর (রহঃ) ১৯৭২ ইং সালে বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশা ইউনিয়নের ফুলতলা গ্রামের বিশিষ্ট সমাজ সেবক, বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম তবারক আলী মিয়া (৭৮) এবং মৃত মুসাম্মাৎ আমিন নেছা (৯৫)র মেঝ কন্যা মুসাম্মাৎ রাবেয়া বেগম (৬৫) এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। হুজুর এর রয়েছে ১ ছেলে ও ৫ মেয়ে। তার ৬ সন্তানকে তিনি সুশিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন-সমাজে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। একমাত্র পুত্র সন্তান মুহাম্মাদ ইমাদুল হক ফিরদাউছ (প্রিন্স) ঝালকাঠি এনএস কামিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল, আলিম, ফাজিল সম্পন্ন করে কুষ্টিয়া ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে স্নাতক (সম্মান) ও মাস্টার্স পাস করে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১১ ইং সালে ১ম শ্রেনির কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করে এখন ডেপুটি রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি দেশের বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অর্থ এবং জমি দান করেছেন। প্রতিটি সন্তান উচ্চ শিক্ষিত এবং কর্মক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। বড় মেয়ে কবি ও সাহিত্যিক মুসাম্মাৎ মাহমুদা বেগম পাখি (বিএ অনার্স এমএ বাংলা) বিভাগীয় প্রধান, বাংলা বিভাগ, সরকারি নলছিটি কলেজ, নলছিটি। জামাতা, (এমএসএস, রাস্ট্রবিজ্ঞান, ঢাবি) সিনিয়র ডেপুটি রেজিস্ট্রার, ইবি, কুষ্টিয়া। মেঝ মেয়েঃ মুসাম্মাৎ মারুফা বেগম (গৃহিণী)। জামাতাঃ মোঃ আবুল হোসেন বাবুল (বিকম, এমকম, জাবি) সিনিয়র একাউন্টেন্ট, রাজাপুর, ঝালকাঠি। সেজ মেয়েঃ মুসাম্মাৎ মাহবুবা খাতুন, (বিএ সম্মান, এমএ ইসলামিক স্টাডিজ, ইবি, কুষ্টিয়া)। ৪র্থ মেয়েঃ মুসাম্মাৎ দিলরুবা ইসরাত, বিএ সম্মান এমএ বাংলা, ইবি) কবি ও সাহিত্যিক। ৫ম মেয়েঃ- নাছরিন সুলতানা পাপড়ি, দাখিল, আলিম (১ম বিভাগ) ফাজিল, কামিল, সাগরদি আলিয়া ও বাঘিয়া আলিয়া মাদ্রাসা, বরিশাল। সকল মেয়েদের ইসলাম ও আধুনিক ও ইসলামিক বিষয়ে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করে বিয়ে দিয়েছেন, তারাও নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। তার নাতি- নাতনিদের অনেকে দেশে ও দেশের বাইরে শিক্ষা গ্রহণ করে কেউ কেউ প্রতিষ্ঠা পেয়েছে আবার কেউ কেউ অর্জনের পথে। এই সমাজেসবক, শিক্ষাবিদ হুজুরের স্বপ্ন, স্বাধ ও সাধনা ছিল সমাজের জন্য, মানুষের জন্য কল্যাণকর ও মঙ্গলময় কাজ করে যাওয়া। নিজস্ব জমিতে মসজিদ, ঈদগাহ ময়দান, মাদ্রাসাও পাঠাগারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেগেছেন।

প্রতিবছর গরিব, দুস্থ মানুষদের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রতিষ্ঠিত এই মধ্যবিত্ত পরিবার শুধু নিজেদের আয় উন্নতিতে নিয়োজিত নয় মানবমঙ্গলেও ব্রত রয়েছেন। কিভাবে আত্মত্যাগ করতে হয় হুজুরের এ পরিবারকে দেখলে বোঝা যায় অন্য অনেক ধনাঢ্য/মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য অনুকরণ এবং আদর্শ হতে পারে। খুলনার হুজুর (রহঃ) বলতেন, আমাদের সমাজে নারীরা এখনও পিছিয়ে। তারা অবহেলিত তাদের জন্য সবার কর্তব্য কিছু না কিছু করা। তাদের পাশে দাঁড়িয়ে এই সমাজে- এই দেশে প্রতিষ্ঠিত করা প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব। আমিও কিছু করছি মহান সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায়। হুজুর বলতেন আমি যত দিন বাঁচব মানুষের জন্য মানুষ করার জন্য কিছু করে যেতে চাই।

হযরত খুলনার হুজুর (রহঃ)- এর শিক্ষার্থীবৃন্দ :
হযরত খুলনার হুজুর (রহঃ) একজন প্রসিদ্ধ মুফতি, মুহাদ্দিস ও হেদায়াতুন্নাহু বিশেষজ্ঞ ছিলেন। তাই তাঁর ছাত্র রয়েছে অগণিত। খুলনার হুজুর (রহঃ) এর প্রসিদ্ধ কয়েকজন ছাত্রের নাম নিম্নে প্রদত্ত্ব হল : ১. হযরত মাওলানা মোঃ সেকান্দর আলী সিদ্দিকী (পীর সাহেব, কাঠি পাড়া দরবার)। ২. হযরত মাওলানা শেখ মোঃ আবু তৈয়ব (পীর সাহেব হদুয়া)। ৩. হযরত মাওলানা মোঃ ফয়জুল করিম (পীর সাহেব চরমোনাই)। ৪. হযরত মাওলানা মোঃ আব্দুর রশীদ (রহ) পীর সাহেব বরগুনা। ৫. হযরত মাওলানা মোঃ আব্দুল হাদী (রহঃ) নলছিটির হুজুর, ইত্যাদি।

এই দেশ বরেণ্য ইসলামি চিন্তাবিদ ও শিক্ষাবিদ মৃত্যুর পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত তাঁর নিজের প্রতিষ্ঠিত খুলনা (মাওলানা মার্কেট) নতুন জামে মসজিদ ও ঈদগাহ’র খতিব এবং ভাতকাঠি সিনিয়র মাদ্রাসায় অধ্যাপনার দায়িত্ব পালন করেন। সদালাপী, বন্ধুভাবাপন্ন, নিরহংকার ও অগাধ পান্ডিত্বের অধিকারী এই শিক্ষকের অনেক গুনগ্রাহী ছাত্র দেশ ও বিদেশে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন।

সমাজ সংস্কার ও সমাজ সেবায় ভুমিকাঃ- বেদআত ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে তিনি আজীবন সংগ্রাম করেছেন। জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত কোরআনের বাণী প্রচারে ব্রত ছিলেন। সমাজ সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে সমাজ সেবামুলক কর্মকান্ডে সফলভাবে ভূমিকা রাখেন।

খুলনার হুজুর (রহ.)এর দানশীলতা ও উদারতাঃ-
আলহাজ্ব হযরত মাওলানা আব্দুল ওহাব খুলনার হুজুর (রহঃ) প্রচুর জমির মালিক ছিলেন। সেই জমি থেকে তিনি ১৯৯১ ইং সালে ঝালকাঠি-নলছিটি আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য মরহুম জুলফিকার আলী ভুট্টোর অনুরোধে হযরত খুলনার হুজুর (রহঃ) তার বাড়ির সামনে দিয়ে তার নিযের জমির উপর দিয়ে যাওয়া নাচনমহল-টেকেরহাট-কুলকাঠি সড়কের জন্য শতাধিক কাঠা চাষের জমি তার এলাকার মানুষের চলাচলের সুবিধার জন্য দান করেন। যখন ৫ ইঞ্চি জমি ছাড় দিতে, দান করতে অপারগ ছিল অধিকাংশ মানুষ। এত বিশাল জমি তখন আর কেহ দান করেনি। তখন ঝালকাঠি-২ আসনের জাতীয় সংসদের সদস্য জনাব জুলফিকার আলী ভুট্রো সাহেব খুলনার হুজুরের ঘরে দুপুরের ভাত খেয়ে জনসন্মুখে বলেছিলেন এই রাস্তাটি নির্মাণ করার জন্য হুজুর তার যে বিপুল পরিমান জমি দিলো তার জন্য এই রাস্তাটি হুজুরের নামেই হবে এবং সারাজীবন রাস্তাটি হুজুরের (হযরত মাওলানা মোঃ আব্দুল ওহাব সাহেব) রাস্তা নামে বলবে। রাস্তাটি তখন থেকেই অদ্যাবদি মাওলানা সাহেবের রাস্তা নামেই পরিচিত রয়েছে।

খুলনার হুজুর (রহ.) সম্পর্কে আলেম সমাজের প্রশংসাঃ-
১. মাওলানা আব্দুল মালেক সাহেব এবং টেকেরহাট বাজার মসজিদের ইমাম হাফেজ মোঃ আব্দুস সালাম বলেন : ‘‘আলিম সমাজের আলোচনা হলে হযরত মাওলানা আব্দুল ওহাব খুলনার হুজুর (রহ.) ছিলেন তাদের মধ্যে উজ্জ্বল নক্ষত্র, বর্তমানে আমাদের সমাজে কেউ খুলনার হুজুর (রহ.)এর স্মৃতিশক্তি, দৃঢ়তা, সংরক্ষণশীলতা ও জ্ঞানের গভীরতার সমপর্যায় নেই।
২. হযরত মাওলানা মোঃ কেরামত আলী হারদলের হুজুর এবং মাওলানা মোঃ দেলোয়ার হোসেন খাগরাখানার হুজুর বলেন, ‘‘বিদ্যানদের অন্যতম একজন খুলনার হুজুর (রহঃ)।, তিনি হাদীস ও ফিকাহ শাস্ত্রে একজন অন্যতম আলেম, জ্ঞান-বুদ্ধি ও আদাব আখলাকসহ রাসুল (সাঃ) এর প্রকৃত অনুসারী খুলনার হুজুর (রহ.)এর মত বর্তমানে আর কে আছে?
৩. হযরত মাওলানা হাফেজ মোঃ ছিদ্দিকুর রহমান এবং ক্বারী মোঃ মোজাম্মেল বলেন এই সময়ে আমার কাছে আমার চাচাজান হযরত খুলনার হুজুর (রহঃ) এর চেয়ে অধিক বিচক্ষণ আর আমাদের অঞ্চলে কেউ নেই এবং পবিত্র আল কোরআনের তাফসির, ফতোয়ার ক্ষেত্রে তাঁর চেয়ে অধিক আমানতদার এই সময় আমার কাছে আর কেউ নেই।

মসজিদ, মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠায় অবদানঃ- হযরত মাওলানা মোঃ আব্দুল ওহাব সাহেব (রহঃ) বরেণ্য আলেমদের শীর্ষ কাতারের এক মহান ব্যক্তিত্ব ছিলেন। বিরল প্রতিভার অদম্য মেধাবী ও তীক্ষ্ণধী সম্পন্ন এই মনীষীর দ্বারা সমাজের তৃণমুল পর্যায় থেকে সর্ব্বোচ্চ স্থর পর্যন্ত সবাই উপকৃত হয়েছেন। অবহেলিত ও অজ্ঞতার অন্ধকারে নিমজ্জিত খুলনা গ্রামকে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করতে ব্রতী হন। হযরত খুলনার হুজুর (রহ.) এর প্রত্যাক্ষ/পরোক্ষ সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত হয় ০১. খুলনা জামে মসজিদ ০২. খুলনা স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা, ০৩. খুলনা নতুন জামে মসজিদ ও ঈদগাহ ময়দান ২০১০ সালে নিজ জমির উপর প্রতিষ্ঠা। ৪. হাজরাগাতি জামে মসজিদ প্রতিষ্ঠা ৫. চাদপুরা করিম পিওনের বাড়ি জামে মসজিদ প্রতিষ্ঠা। এবং ৬. চাদপুরা আঃ মজিদ হাওলাদার এর বাড়ী জামে মসজিদ ৭. ভাতকাঠী ঘরামী বাড়ি জামে মসজিদ প্রতিষ্ঠা। এছাড়াও ডেবরা গ্রামের মরহুম নজির মাস্টার হুজুরের পরামর্শে প্রতিষ্ঠা করেন মেয়েদের জন্য গার্লস স্কুল এবং ডেবরা গ্রামের জাহাঙ্গীর মাওলানা হুজুরের পরামর্শ নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন ডেবরা দাখিল মাদ্রাসা।

খুলনার হুজুরের হজ্জব্রত পালনঃ- ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই হুজুর হজ্জের উদ্দেশ্য দেশ ত্যাগ করেন এবং সুন্দর ও সুস্থভাবে হজ্জ ও উমরাহ্ পালন করে ৯ অক্টোবর দেশে ফিরে আসেন।

বিদায় কথাটার মাঝেই বিচ্ছেদ বেদনার সুর লুকিয়ে আছে। বিদায় কথাটি কষ্টের, আর সে বিদায় যদি হয় সবচেয়ে ঘনিষ্ট আপনজনের চির বিদায়, সেটা আরো কষ্টের, আরো বেদনার। এই দুনিয়া থেকে চির বিদায় নিয়ে চলে গেছেন আমাদের প্রিয় আব্বুজান, আমাদের অভিভাবক আমাদের সবচেয়ে ঘনিষ্ট আপনজন। কষ্টের নিঃসীম অন্ধকারে তলিয়ে যাওয়ার অনুভুতি আমাদের হয়েছে।

হুজুরের বিদায়ের শেষ ১০ মিনিটঃ- হুজুর চিরবিদায় নিয়ে চলে যাবেন এরকম অসুস্থ ছিলেন না। বিদায়ের ১০ মিঃ আগে হুজুর অসুস্থর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে মুহুর্তের মধ্যে চারদিক থেকে হুজুরের বাড়ীতে বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষ আসা শুরু করেন। সকাল ৭.৩৫ মি. হুজুরের কাছে পাসের বাড়ীর হানিফ ও হাসান এসে দেখেন হুজুর ঘরের ভিতরে খাটে বসে (যেই লম্বা জামা, টুপি ও লুঙ্গি পড়ে ফজরের নামাজ পড়াইয়েছিলেন সেই লেবাছে) শুধু পবিত্র আল কোরআন তেলাওয়াত করছেন এবং বিভিন্ন দোয়া-দরুদ পড়ছেন।

বিদায়ের শেষ ৫ মি.হুজুরের কাছে যারা উপস্থিত ছিল তাদের সবার ভাষ্যমতে হুজুর সবাইকে তার পাশে বসতে বলল তিনিও খাটের উপর বসা ছিল এবং কোরআন তেলাওয়াত করতেছিল। হানিফ হাওলাদার হুজুরকে বলল মামা আপনি একটু শুয়ে থাকেন, তখন হুজুর ধীরে ধীরে শুয়ে সুন্দরভাবে নিযের হাত পা সোজা করে পবিত্র কোর আন তেলাওয়াত করতে ছিলেন। শুতে গিয়ে হুজুরের মাথা থেকে টুপিটা একটু সরে গিয়েছিল তা তিনি নিজ হাতেই টুপিটি ঠিককরে মাথায় দিলেন। তখন হুজুরের পাশে বসে বাম হাত ধরে ইয়াছিন সুরা পড়তে ছিলেন হাফেজ আঃ মন্নান এবং ডান হাত ধরে জিকির এবং দোয়া পড়তে ছিলেন মোঃ আবুল হোসেন মেম্বার, হানিফ হাওলাদার, মোঃ হেমায়েত হাওলাদার ও হাসান হাওলাদার । কে জানে! তিনি একটু পরেই মহান রাব্বুল আলামীনের সাক্ষাতে ধন্য হবেন, চির-আবাসস্হল জান্নাতের অতিথি হতে যাচ্ছেন। বেহেশতের হুররা তার আগমনের প্রতীক্ষার প্রহর গুণছেন। রাব্বুল আলামীনের নির্ধারিত ফেরেশতারা দাড়িয়ে আছেন তাকে স্বর্গীয় অভ্যর্থনা জানাতে। হুজুরের চারিদিকে বাড়ীর সবাই পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করতে ছিল।
(দিনটি ছিল ২০১৯ ইং সালের ১৩ জানুয়ারি ১৪১৯ হিযরি রবিউল আউয়াল মাসের রোজ রবিবার) সকাল ৭.৪০ মি. হুজুরের মুখে তাঁর প্রিয় সহধর্মীনী পানি দিলে আস্তে হুজুর পানি খেয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে এই মিছে দুনিয়া থেকে চির বিদায় নিয়ে দামাত বারকাতুহু থেকে রহিমাহুল্লাহ হয়ে গেলেন(ইন্নালিঃ… রজিউন)।
তখন উপস্থিত সবার বক্তব্য হলো তাদের দেখা জীবনে সবচেয়ে সুন্দর মৃত্যু। এরকম মৃত্যু একমাত্র আল্লাহর নিশ্পাপ বান্দা ওলি আল্লাদেরই হয় কেমন যেন মায়ের কোলে শিশুর স্তন পান করার ন্যায় আস্তে মুখ নেরে হুজুর আল্লাহর মেহমান হয়ে তার নাম নিয়ে৷ রহমাতুল্লাহ হয়ে চিরবিদায় নিলেন।

হুজুরের গোসলঃ- হুজুরের সেজ জামাতা সুবিদপুর সিনিয়র মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মোঃ ইমামুল হক খান (এমদাদ) এর নেতৃত্বে বরিশাল বরফকল মসজিদের ইমাম মাওলানা নজরুল ইসলাম আবু, বরিশাল বাজার রোড মসজিদের ইমাম মাওলানা গোলাম কিবরিয়া, মরহুম আবদুল কুদ্দুস মোল্লা এবং বায়েজিদ জোমাদ্দার হুজুরের দেহ মোবারক গোসল করান। হুজুরকে গোসল করিয়ে তারা বললেন হুজুর আগেই মনে হয় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে জান্নাতের মেহমান হওয়ার জন্য তৈরি ছিলেন। তার দেহ মোবারক নুরে নুরান্বিত হয়েছিল।

হুজুরের সালাতুল জানাজাঃ- খুলনার হুজুর (রহঃ) এর পরিবারবর্গ ও এলাকাবাসীর সবার সর্বসন্মতিক্রমে সিদ্ধান্তনুযায়ী হুজুরের সালাতুল জানাজা পড়ার সময় নির্ধারন করা হয় আছরের নামাজ শেষে (বিকাল ৫.০০টায়)। হুজুরের অছিয়ত অনুযায়ী হুজুরের নামাজে জানাজা পরিচালনা করেন তার প্রিয় ছাত্র, চরমোনাই দরবার শরীফের সিনিয়র খলিফা, কাঠি পাড়া দরবার শরীফের সম্মানিত পীর সাহেব হজরত মাওলানা মোঃ সেকান্দার আলী সিদ্দিকী সাহেব, জানাজায় অংশ নেন হদুয়া দরবার শরীফের সম্মানিত পীর সাহেব হজরত মাওলানা আব্দুল মাবুদ, বরিশাল, ঢাকা, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, খুলনা, পটুয়াখালী এবং বরগুনা জেলার শতাধিক মসজিদের ইমাম, মাদ্রাসার মুহাদ্দেছ/মুদাররেস, হুজুরের শত শত ছাত্রসহ সহস্রাধীক মুসল্লী। হুজুরের নুরের চেহারা মোবারক দেখে একবাক্যে সকল আলেম ওলামা এবং মুসল্লীরা বলতে ছিলেন তাদের দেখা এবং মহান আল্লাহ ও তার রাসুলের বাণীঅনুযায়ী খুলনার হুজুর (রহঃ) নিশ্চিত একজন মহান আল্লাহর ওলি এবং নিশ্পাপ বান্দা।

হুজুরের নামাজে জানাজায় সর্বস্তরের হাজার হাজার মানুষের অংশগ্রহণ তার গগনচুম্বী জনপ্রিয়তার প্রমাণ বহন করে। দেশের তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী আলহাজ্ব আমির হোসেন আমু, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, হেফাজতের আমির আল্লামা আহমাদ শফি (রহঃ), চরমোনাই পীর সাহেব, নেছারাবাদের পীর সাহেব, ছারছীনা ও মোকামিয়ার পীর সাহেব, আল্লামা জুনাশেদ বাবু নগরীসহ দেশ-বিদেশের বহু খ্যাতনামা ব্যক্তি শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন।

খুলনার হুজুর রহঃ এর ওসিয়ত অনুযায়ী তাঁর জানাজার নামাজ পড়াতে এসে নামাজে আগত মুসল্লিয়ানদের সামনে হুজুর (রহঃ) সম্পর্কে হুজুরের সুযোগ্য ছাত্র চরমোনাই দরবারের সিনিয়র খলিফা, কাঠিপাড়া দরবার শরীফের সম্মানিত পীর সাহেব জনাব আলহাজ্জ্ব হযরত মাওলানা মোঃ সেকান্দার আলী সিদ্দিকী সাহেব (দাঃ বাঃ) বলেন, আমি যে উস্তাদকে নিয়ে গর্ব করতাম, সেই আমার প্রানপ্রিয় উস্তাদ মানুষ গড়ার কারিগর, বিচক্ষণ, বিদগ্ধ আলেমেদ্বীন, হাজার হাজার আলেম, মুহাদ্দিসগনের উস্তাদ, হদুয়া ও নলছিটি সিঃ ফাজেল মাদ্রাসাসহ শায়খুল হাদীস সাবেক নাজিমে তালিমা হযরত মাওলানা মুফতি মোঃ আব্দুল ওহাব সাহেব আজ মহান আল্লাহর মেহমান হয়ে রহিমাহুল্লাহ হয়ে গেলেন।
পীর সাহেব চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে মহান আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে বলেন, হে মালিক তোমার কাছে একটাই ফরিয়াদ আপনি আমার এই সম্মানিত উস্তাজকে জান্নাতের সর্বোচ্চ মাকাম দান করুন । তিনি আরো বলেন, খুলনার হুজুর (রহঃ) ছিলেন ইলমুন নাহুর এক মহাসাগর, ইলমুল ফিকহের গভীর পান্ডিত্বের অধিকারী, যার ছাত্র হতে পারাটাকে আমি গৌরব এবং সৌভাগ্যের বিষয় মনে করি। আমার শ্রদ্ধেয় উস্তায আল্লামা হজরত মাওঃ আব্দুল ওহাব সাহেব (রাহঃ)। ‘শারহুল ভিকায়া’র দারসের মাধ্যমে যার হাতে আমার ‘ইলমুল ফিকহ’র হাতেখড়ি। এই সম্মানিত উস্তাযের কাছে কুদুরীটাও পড়েছি যা আমার জীবনের বড় সৌভাগ্য বলেই মনে হয়।
দীর্ঘ ৬০ বছর শিক্ষতার মাধ্যমে ইলমে দীনের খেদমত করে গেছেন।

হুজুরের আরেক সুযোগ্য ছাত্র হদুয়া দরবার শরীফের সম্মানিত পীর সাহেব জনাব হজরত মাওলানা শাহ মোঃ আবু তৈয়ব (দাঃ বাঃ) জানাজার নামাজের পূর্বে আগত মুসল্লিদের সামনে বলেন আমার এই উস্তাজ যে কত বড় মাপের আলেম ছিলেন তা আমি বলে বুজাতে পারবনা। আপনারা যদি কোন সত্যিকারের আল্লাহর ওলি দেখতে চান তাহলে এই হুজুরকে দেখেন। আমরা নিঃস্বন্দেহে বলতে পারি আমরা একজন বেহেস্তের মেহমানকে আজ বিদায় দিচ্ছি।
হুজুরের জানাজায় হাজারো মানুষের ঢলঃ- নলছিটির এই প্রবীন আলেমে দ্বীন আলহাজ্ব হযরত মাওলানা আব্দুল ওহাব খুলনার হুজুর (রহঃ) এর উপস্থিতিতে মজলিস গুলে গুলজার হতো এই দিন তিনি নীরব, নির্বাক, স্তব্ধ কন্ঠ, আখিরাতের প্রথম মনযিলের যাত্রী হয়ে চলে গেছেন। হুজুরকে মর্যাদাপূর্ণ বিদায় সংবর্ধনা দিতে সেদিন তার বাড়ীর সামনে ময়দানে হুজুরের সালাতুল জানাযায় সড়ক পথের যোগাযোগ মাধ্যমের চরম খারাপ অবস্থার মধ্যেও সহস্রাধিক মানুষের উপস্থিতি হুজুরের ব্যাপক জনপ্রিয়তা, ব্যাক্তিত্ব এবং গ্রহণযোগ্যতার প্রমাণ করে।

খুলনার হুজুর (রহঃ) এর দাফনঃ- বিকাল ৫.৩০ মি. হুজুরের বাড়ীর সামনের উত্তর পার্শের মাঠে সালাতুল জানাজা শেষে হুজুরের বাড়ীর দরজায় তাঁর নির্মিত মসজিদের পার্শে তার নির্ধারন করা কবরস্থানে শত শত আলেমের অংশগ্রহণে হুজুর (রহঃ) কে শেষ বিদায় দিয়ে হুজুরের সুযোগ্য ভাগিনা বরিশাল বরফকল জামে মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি হযরত মাওলানা মোঃ নজরুল ইসলাম আবু (রহঃ) এর উপস্থাপনায় দোয়া-মোনাজাত পরিচালনা করেন কাঠি পারার সম্মানিত পীর সাহেব হুজুর।

খুলনার হুজুর (রহঃ) কাউকে কোনদিন কষ্ট দিয়েছেন এরকম কোন প্রমান পাওয়া যায়নি । হুজুরের অর্ধ শতাধিক বছরের শিক্ষকতার জীবনে সকল প্রতিস্ঠানের লাখ লাখ শিক্ষার্থীদের সবসময় বাবা-মা বলে ডাকতেন। সাক্ষাতে হুজুরের আগে তাকে কেহ সালাম দিতে পারতেননা হুজুর দূর থেকে দেখেই আগে সালাম দিতেন। হুজুরের সহকর্মী এবং ছাত্র-ছাত্রীরা হুজুরের বিদায়ের খবরে হুজুরের জন্য কত যে কেঁদেছে তা কেহ কারো জন্য এত কাদেন কিনা আমাদের জানা নেই, ইতিহাসে বিরল। তাদের হ্রদয় বিদারক কান্না দেখে আমাদের খুব গর্বিত মনে হচ্ছিল এজন্য যে আমরা এমন একজন আল্লাহর মেহমান আমাদের অভিভাবক ছিলেন যাকে দুনিয়ার শতভাগ লোকই ভালো বলে এবং সৃস্টিকর্তার নিশ্পাপ বান্দা বলে আক্ষায়িত করছেন।

হুজুরকে হারানোর পর থেকে আমরা বুঝেছি, সময়টা ঘড়ির কাঁটা আর ক্যালেন্ডারের পাতায় আটকে দিয়ে মানুষ কতটা ছলনা করেছে তার নিজের সঙ্গে। মানুষ মনে করে ঘড়ির কাঁটাগুলো যেন কোন অস্থির পাখির ডানা। উড়তে থাকাটাই তাদের একমাত্র কাজ। অথচ হুজুর (রহঃ) চলে যাওয়ার পর আমরা জেনেছি ঘড়ির কাঁটা তৈরি হয় সবচেয়ে ভারি পাথরে। দিনের ছবিটা তবু কিছুটা সয়ে যায়, কিন্তু সন্ধ্যা হলেই সব থমকে যায়, তখন সন্ধ্যা আর রাতগুলো যে কতটা ভয়ঙ্কর….অথচ এ ভয়ানক রাতগুলোর সঙ্গেই আমাদের মানিয়ে নিতে হয়।তিনি মৃত্যুকে খুব বেশী ভয় করতেন। মৃত্যুর আগেই তিনি মৃত্যুর প্রস্তুতি গ্রহন করেন।

কাফন দাফনের ব্যবস্হা মৃত্যুর আগেই করে রাখেন। তিনি মৃত্যুকে চিনেছেন, মৃত্যুর ইলহাম হয়তো হযরতের কাছে এসেছিল যার কারণেই মৃত্যুর পূর্ব মূহুর্তে মৃত্যুর নির্দিষ্ট সময় বারবার জিজ্ঞাসা করেছিলেন। এমন এক মহান ব্যক্তিত্বকে হারাতে মন কখনো চায়নি তবু হারাতে
হল।জগতে কেউ চিরন্তন নয়। আয়ু শেষ হলেই সকলকে আল্লাহর কাছে ফিরে যেতে হয়,এটাই তার অমোঘ নীতি।

কিন্তু হযরতের মৃত্যুতো কেবল একজন প্রিয় ব্যক্তিকে হারানো নয় বরং এলমে ওহীর একটি আলোক স্হর চোখের আড়াল হওয়া। যে ক্ষতি অপূরণীয় হয়ে থাকবে চিরক্ষণ। আমাদের অবনতিমুখি শিক্ষাব্যবস্হা দ্বারা স্হলাভিষিক্ত কেউ হবেন তা কল্পনাও করা যায়না।
নিকট ও দুর অতীতে যারা চলে গেছেন তাদের স্হান শূন্যই রয়ে গেছে। আসলে এমন বিজ্ঞ আলেমে দ্বীনের অন্তর্ধান ধরাপৃষ্ঠে থেকে ইলমে ওহী বিদায় গ্রহনের ক্রমধারা। হযরতের বিরহ বেদনায় ও পরবর্তী পরিস্হিতি অনুধাবনে আমাদের অনুভুতি ছিল ঠিক তেমনি, যেমন হযরত ফাতেমা (রাঃ) নবীজির বিয়োগান্তে তার বিখ্যাত কবিতায় এভাবে প্রকাশ করেছেন-“ছুব্বাত আলাইয়া
মাসাইবু লাউ আন্নাহা-ছুব্বাত আলাল আইয়্যাম ছিরনা লায়ালিয়া” অর্থাৎ আকাশ ভেঙ্গে যতেক বিপদ ঠেকল শিরে খুইয়ে তোমার দিবস হত তিমির নিশি রেখে রবি বেদনা ব্যাথায়। বিশাল আয়তনে আকাশদ্বার যাদের হারিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে তাদের তরে এই সামান্য দেহের কান্নায় রক্ত ঝরানো মোটেও কঠিন ছিলনা। সেই মুহুর্তে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখা খুব কঠিন ছিল। কিন্তু পবিত্র কোরআনের ধৈর্য্যের নির্দেশ ও সুফল সম্বলিত আয়াত সমুহ আমাকে স্বাভাবিক করতে সক্ষম হয়।
আমাদের অবস্হাটি কবির ভাষায় এভাবে ব্যক্ত হয়- “নয়ন যদি সুযোগ পেত বইয়ে দিতে রোধির ধারা কোরআন এসে করল বারণ ধৈর্য ধরো স্বজন হারা” হযরত মাওলানা মোঃ আবদুল ওহাব (রহঃ) আজ আমাদের মাঝে নেই কিন্তু রয়ে গেছে তার স্বর্ণালী আদর্শ, যা যুগ যুগ ধরে ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে অনুকরণীয় হয়ে থাকবে। সুন্নাতে রাসূলকে জিন্দা করার প্রয়াস, জনবান্ধব কর্ম, ইলমের খিদমত ও সমাজসংস্কারে তার অনবদ্য অবদানের জন্য জাতি তাকে কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করবে।
মহান আল্লাহপাক রাব্বুল আলামীনের দরবারে এ অধমদের বিনীত আরজ হজরত (আব্বুজান) এর সকল ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো ক্ষমা করুন, আখিরাতে দারাজাত বুলন্দ করে দিন এবং জান্নাতুল ফিরদাউসের উচ্চ মাকাম নসিব করুন। হযরতের (মুহতারাম আব্বুজান)এর প্রতি রইল আমাদের অনিঃশেষ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।

লেখকবৃন্দঃহযরত খুলার হুজুর (রহঃ) এর স্নেহধন্য সন্তান কবি মাহমুদা, দিলরুবা ও মুহাঃ ইমাদুল হক।
সাবেক শিক্ষার্থী, বাংলা ও ইংরেজি সাহিত্য বিভাগ,
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।

সর্বশেষ