২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ট্রাকচালক সিরাজ মিয়া’র আহাজারি আমারে আর দেখার নেই

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

সিলেট প্রতিনিধিঃ সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মর্গের সামনে বসে আহাজারি করছিলেন বৃদ্ধ এক ব্যক্তি। তিনি বুক চাপড়ে শুধু একটি কথাই বলছিলেন, আমার ‘বউ-বাইচ্চা চলে গেলো, এখন আমারে দেখার মত আর কেউ রইল না।’ আর তাকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছিলেন তার মেয়ে সামিয়া বেগম।

আহাজারি যিনি করছিলেন তাহার নাম সিরাজ মিয়া (৫৮)। তিনি পেশায় একজন ট্রাকচালক।
তাঁর বাড়ি বিয়ানীবাজার উপজেলার মাটিকাটা গ্রামে। তবে ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে সিলেটের আখালিয়া এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন।

সিরাজ মিয়ার এক মেয়ে ও ছেলে। মেয়ে সামিয়া বেগম বড়। তাঁর বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়েই ছিল তাঁর সংসার। তাঁরা দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার পর তিনি বর্তমানে একা হয়ে গেছেন।

কান্নার কারন সম্পর্কে স্বজনদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, সিরাজ মিয়ার স্ত্রী জেবু বেগম ও পুত্র সন্তান নুরুল ইসলাম রবিবার (১২ ফেব্রুয়ারী ২৩) বিকেলের দিকে বিয়ানীবাজার থেকে সিলেটের ভাড়া বাসায় আসছিলেন। পথে তাঁদের বহনকারী অটোরিকশাটি দুর্ঘটনার পতিত হলে জেবু বেগম ও নুরুল ইসলাম সাজিদ (২৫) ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এই রোড এক্সিডেন্টে  চার জন নিহত হয়। নিহত অপর দুজন হলেন বিয়ানীবাজার পৌর এলাকার নয়াগ্রামের বাসিন্দা ফারুক আহমদের স্ত্রী রাশেদা বেগম (৩৮) ও মেয়ে ফারিয়া আক্তার (১৬)।

সিরাজ মিয়া কথা বলতে গিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে উঠেন এবং কান্নাজনিত কন্ঠে জানান, আমি এভাবে একা হয়ে যাব কখনো ভাবিনি। আমাকে একা করে এভাবে আমার স্ত্রী সন্তান চলে যাবে তা আমি মেনে নিতে পারছি না। আমার স্বপ্ন ছিল কিছু দিন পর ছেলে চাকরি পেলে আর গাড়ি চালাবো না। অবসর সময় কাটাবো। সে সময় স্ত্রী–সন্তানেরা তাঁকে দেখাশোনা করবে। কিন্তু তাঁর সে স্বপ্ন, স্বপ্নই রয়ে গেছে।

সিরাজ মিয়ার মেয়ে সামিয়া বেগমও বাবার কান্না দেখে নিজেকে আটকে রাখতে পারছিলেন না। তিনিও অঝোরে কেঁদে যাচ্ছিলেন। সামিয়া বেগমের স্বামী বাবুল আহমদ শাশুড়ি ও শ্যালকের লাশের ময়নাতদন্তের বিভিন্ন প্রক্রিয়ার জন্য মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে কথাবার্তা বলছিলেন।

গোলাপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, দুর্ঘটনায় চারজন নিহতের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। নিহত জেবু বেগমের ভাই নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি করেন। এ সময় নিহত আরেক নারী রাশেদা বেগমের স্বামী ফারুক আহমদও উপস্থিত ছিলেন। একটি অভিযোগে চারজনের মৃত্যুর বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। ওসি বলেন, ঘটনাস্থল থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা এবং ট্রাক জব্দ করা হয়েছে। তবে ট্রাকচালক এবং সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক পলাতক রয়েছেন। তাঁদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

সর্বশেষ