২০শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
ইরানের প্রেসিডেন্ট, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও গভর্নর নিহ*ত নিশানবাড়ীয়া ইউপি চেয়ারম্যানকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা লন্ডনে যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ: ফিলি*স্তিনে গ*ণহ*ত্যা বন্ধের দাবী দেশের বীমা খাতে দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে এনআরবি ইসলামিক লাইফ ইন্স্যুরেন্স ২৯ মে সারাদিন লালমোহন উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে কাপ পিরিচ মার্কায় ভোট দিন আবারও বাড়ল স্বর্ণের দাম সৌদিতে ২৮৭৬০ বাংলাদেশি হজযাত্রী পৌঁছেছেন, দুইজনের মৃত্যু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ম বর্ষে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচন : দ্বিতীয় ধাপে ৪৫৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন সোমবার থেকে ৬৫ দিন সমুদ্রে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা

ইবির ইংরেজি বিভাগের মিলনমেলা

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

✒️ইমাদুল হক ফিরদাউছ প্রিন্স

সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়তেই নেমে এলো সন্ধ্যা। সঙ্গে সঙ্গেই আলোকসজ্জায় রঙিন হলো ক্যাম্পাস। বাহারি রঙের ছড়াছড়ি যেনো পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে। ক্যাম্পাসে লাল, নীল, সবুজ, হলুদসহ বাহারি রঙের আলোর ছড়াছড়ি। ক্ষণে ক্ষণে মিটিমিটি জ্বলছে তারা। পিচডালা রাস্তায় শোভা পাচ্ছে রং-বেরঙের আলপনা। ইংরেজি বিভাগের পুনর্মিলনীতে এভাবেই সেজেছিল দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ কুষ্টিয়া
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) ক্যাম্পাস। ‘পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়/ও সেই চোখে দেখা, প্রাণের কথা, সে কি ভোলা যায়।/আয় আর একটিবার আয় রে সখা, প্রাণের মাঝে আয়।/মোরা সুখে দুখের কথা কব, প্রাণ জুড়াবে তায়। কুষ্টিয়া ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস’র অঙ্গনজুড়ে যেন হৃদয়ে হৃদয়ে নীরবে বেজেছে কবি গুরুর গানের এই কথাগুলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগগুলোর মধ্যে সবচেয়ে স্মার্ট বিভাগ ইংরেজি বিভাগ কতৃক আয়োজিত মিলনমেলায় প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা যেন হারিয়ে গিয়েছিলেন সেই পুরনো দিনের স্মৃতিতে। খুঁজে ফিরেছেন শিক্ষাজীবনের দিনগুলোর স্মৃতিকথা। ইংরেজি বিভাগ এর গর্বময় পথচলায় একে একে পেরিয়ে এসেছে ৩২টি বছর। গৌরবোজ্জ্বল ৩২ বছরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হয় পুনর্মিলনী উৎসবের। এই উৎসব ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ে বসেছিল নবীন-প্রবীণের মিলনমেলা। উৎসবে শামিল হওয়া প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের অনেকেই এখন দেশ-বিদেশে নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। আর তাঁরাই যেন ফিরে যান সেই উচ্ছল তারুণ্যভরা দিনগুলোতে। \
অনুষ্ঠানকে ঘিরে বিভাগের নবীন ও প্রবীণ শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে ক্যাম্পাসে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিভাগের প্রবীণ শিক্ষার্থীরা ছুটে এসেছেন চিরচেনা ক্যাম্পাসে। ক্যাম্পাস জীবনের প্রিয় সহপাঠীদের পেয়ে বুকে জড়িয়ে নিচ্ছেন একে অপরকে। দীর্ঘদিন পর ক্যাম্পাস ঘুরে ঘুরে দেখছেন পুরনো দিনের পদচিহ্ন। সহপাঠী, বড় ও ছোট ভাই বোনদের কাছে পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েছেন তারা।

১৯৯০-এর দশক থেকে শুরু করে সর্বশেষ স্নাতক শেষ করা এই বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে এ অনুষ্ঠান পরিণত হয় মিলন মেলায়। পুনর্মিলনীর আয়োজনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি ছিল বক্তৃতা ও স্মৃতিচারণ। এছাড়া টিএসসিতে ছিল খাবারের আয়োজন। দেশে-বিদেশে বিভিন্ন সেক্টরে কর্মরত প্রাক্তন বন্ধুদের পেয়ে অনেকে মেতে উঠেছেন সুখ-আড্ডায়। ভুল করেননি একে অপরের পরিবার-পরিজনের সঙ্গে এক ফ্রেমে বন্দি হতে।
এছাড়াও পুরনো সব বন্ধু আর সহপাঠীকে পরস্পর জড়িয়ে ধরে হয়েছেন আত্মহারা। হাতে হাত আর বুকে বুক মিলিয়ে করেছেন কুশলবিনিময়। অনেকে আবার প্রিয় সহপাঠীকে পেয়ে সেলফি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। মোবাইল ক্যামেরায় নিজেদের বন্দি করেন নতুন করে। কেউ কেউ খুঁজেছেন বেগম খালেদা জিয়া হল এবং সাদ্দাম হোসেন হল মাঠসংলগ্ন সেই বিশাল খেলার মাঠের পাশে থাকা বড় বড় গাছগুলো। কেননা ওই গাছের ছায়াতলে সহপাঠীদের নিয়ে আড্ডা দেওয়ার সব স্মৃতিকথা ভিড় করে আছে যে মনের গভীরে। অনুষ্ঠানে শামিল হতে দেশ-বিদেশ থেকে ছুটে আসেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। প্রিয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পেরে তাঁরা সবাই ছিলেন উচ্ছ্বসিত। উৎসবে যোগ দিতে খুলনা থেকে এসেছিলেন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের সচিব জনাব মোঃ আজমুল হক। প্রতিষ্ঠানটির ১৯৯৫-৯৬ ব্যাচের এই এলামনাই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন,‘৪ বছর পর আমার প্রাণের বিদ্যাপিঠে আসলাম। পুরোনো বন্ধুদের সাথে দেখা হলো। এই অনুষ্ঠান আমাকে নতুন করে ফিরিয়ে নিয়ে গেল ক্যাম্পাস জীবনে।’ ১৯৯৬ সালের ব্যাচ এর ড. মোঃ শহীদুল ইসলাম তিনি বর্তমানে বরিশালের ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ও রেজিস্ট্রার তিনি বলেন, এ আনন্দের নাম দিতে পারবো না। শুধু বলতে পারি জীবনের জন্য এমন মিলনমেলা খুবই প্রয়োজন। উক্ত পুনর্মিলনীতে ১৯৯১-৯২ থেকে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। দিনটি উপলক্ষে শুক্রবার (১০ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টায় রবীন্দ্র-নজরুল কলা ভবন থেকে আনন্দ শোভাযাত্রা বের করা হয়।

শোভাযাত্রাটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ইংরেজি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাঈদ এ কে মনোয়ারুল ইসলামের সভাপতিত্বে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান, কলা অনুষদের ডিন ও সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-উর-রশীদ আসকারী, বিভাগের মোস্ট সিনিয়র অধ্যাপক ও সাবেক উপ উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ শাহিনুর রহমান এবং বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মিয়া মো. রাসিদুজ্জামান। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি, শাপলা ফোরাম, সাংবাদিক সমিতি, প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দসহ বিভাগের অন্য শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

ইংরেজি ১৯৯০-৯১ ব্যাচের শিক্ষার্থী বর্তমান বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের উপসচিব সাঈয়েদা আক্তার রুনা, ১৯৯৪-৯৫ ব্যাচের বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের উপসচিব আক্তারুন্নাহার জলি, ৯৫-৯৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের উপসচিব মারুফুল আলম ৯৬-৯৭ শিক্ষা বর্ষের পুলিশ সুপার (এসপি)  মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান ৯৮-৯৯ ব্যাচের উপসচিব শিউলি রায় এবং ২০০০-০১ ব্যাচের ছাত্র বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের উপসচিব শাম্মি ইসলাম বলেন, ‘আমরা সময় পেলেই এ অনুষ্ঠানে আসার চেষ্টা করি, আসি। আমাদের খুবই ভালো লাগছে। অনেককে একসঙ্গে পাই, পুরনো-নতুনদের সঙ্গে দেখা হয়, কথা হয়। এটা বেশ ভালো উদ্যোগ।’

শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষা ও যোগাযোগ বিভাগের অধ্যাপক ১৯৯৫-৯৬ ব্যাচের মোঃ আখতার হোসেন, মেহেরপুর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক
১৯৯৭-৯৮ ব্যাচের মোঃ বাসেদ আলী, বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলার ইউএনও ২০০১-০২ শিক্ষাবর্ষের মোঃ কবির হোসেন এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার ২০০২-০৩ সেশনের মোঃ আরিফুল ইসলাম বলেন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকদিন পর বন্ধুদের সঙ্গে আবারও এক হতে পেরে খুবই আনন্দিত। এ মিলন মেলায় বন্ধুবান্ধব ও বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে মিলিত হতে পেরে আবারও মনে সেই তারুণ্যের ছোঁয়া লেগেছে বলে জানান সাবেক এ শিক্ষার্থীরা।

২০১০-১১ ব্যাচের শিক্ষার্থী নাজিয়াতুল ইসলাম তনু, মৌ ও মৌসুমি বলেন, ইবি’র ইংরেজি বিভাগের প্রাক্তন ছাত্রী হিসেবে আমাদের আনন্দ গভীর ও গর্বের। আমরা কামনা করি, বিশ্ববিদ্যালয়টি যেন আলোকিত মানুষ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যায়।’

বিভাগের মোস্ট সিনিয়র প্রফেসর ও সাবেক প্রো ভাইস চ্যান্সেলর ড. মোঃ শাহিনুর রহমান ইংরেজি বিভাগ এবং এ্যালামনাই সংগঠনের ৩০ বছরের পথচলায় বিভিন্ন জনের অবদান স্মরণ করেন এবং সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
২০০০-০১ ব্যাচের শিক্ষার্থী অতিঃ পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মাসুম চঞ্চল এবং ২০০১-০২ ব্যাচের শিক্ষার্থী অতিঃ পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন বলেন, এই মাঠ আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয় অতীত সব স্মৃতি। তারা বলেন, দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের এই প্রতিষ্ঠানটির ইংরেজি বিভাগ ইংরেজি শিক্ষা বিস্তারে অগ্রসর ভূমিকা পালন করেছে।
অনুষ্ঠানে ইবি’র উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, ইংরেজি বিভাগের অ্যালামনাই যারা আছেন তারা অনেক ভালো জায়গায় কাজ করছেন। এছাড়া তারা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বাসেডর হিসেবেও কাজ করছেন। তারা সমাজে, দেশে কিংবা দেশের বাহিরে নেতৃত্ব দিচ্ছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক সুনাম অর্জনে ভুমিকা পালন করছে। আরও যতদিন সময় যাবে ইংরেজি বিভাগ ততো সমৃদ্ধ হবে। ২০০২-০৩ শিক্ষাবর্ষের সজিব উদ্দীন, শাহেদ, রনি, মিরাজ, মাসুম, টুটুল, স্বজন, রুবেল ও রবিউল, ২০০৪-০৫ শিক্ষাবর্ষের সঙ্গিতা টুম্পা, মাসুদ, চঞ্চল, ২০০৫-০৬ শিক্ষাবর্ষের সাধন, বাধন, রিয়াজ, জনি ও রাজু বলেন, পুনর্মিলনী কেন্দ্র করে বিভিন্ন আলোক সজ্জ্বায় সজ্জিত করেছি আমাদের ডিপার্টমেন্ট ও চত্বর। আমাদেরসহ পুনর্মিলনীতে ক্যাম্পাসে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে। এখানে সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থী একে অন্যের সাথে পরিচিত হচ্ছে। এ পরিচিতির মাধ্যমে বড় ভাইয়া ও আপুদের সঙ্গে আমাদের এক এক ধরনের মেল বন্ধন সৃষ্টি হচ্ছে। এমন পুনর্মিলনী প্রতি বছর হওয়া উচিত বলে মনে করেন এ শিক্ষার্থীরা। প্রায় এক হাজার সদস্যের অংশগ্রহণে এ আয়োজন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বক্তৃতা, স্মৃতিচারণ, ভোজের আয়োজন
ও র‍্যাফল ড্রয়ের মাধ্যমে শেষ হয় সন্ধ্যায়।

✒️লেখক:- মুহাম্মদ ইমাদুল হক ফিরদাউছ প্রিন্স

ইংরেজি বিভাগের ২০০২-০৩ শিক্ষাবর্ষের সাবেক শিক্ষার্থী

বর্তমানে ডেপুটি রেজিস্ট্রার পদে কর্মরত পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

সর্বশেষ