২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে এক্স-রে প্যাথলজি বিভাগে কার্যক্রম বন্ধ

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

ঝালকাঠি প্রতিনিধি ::: ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে কেমিক্যাল সামগ্রী সরবরাহ বন্ধ থাকায় এক্স-রে ও প্যাথলিজ বিভাগের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে হাসপাতালে এক্স-রে, রক্ত, প্রসাব, এসবিএসজি, এজিপিটির মতো গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষাগুলো করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে করে দুর্ভোগে পড়েছে সেবাপ্রত্যাশিরা।

কেমিক্যাল সামগ্রী সরবরাহের টেন্ডার হলেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন না মেলায় কার্যাদেশ পাননি ঠিকাদার। ফলে হাসপাতালে প্যাথলজি ও এক্সরে বিভাগের প্রয়োজনীয় কেমিক্যাল সামগ্রী সরবরাহ দিতে পারছেন না তিনি। এতে করে দেড় মাস ধরে এক্স-রে বিভাগ এবং সম্প্রতি প্যাথলজি বিভাগের কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়। অন্যদিকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকেই এক্স-রে পরীক্ষা করা বন্ধ রয়েছে।

হাসপাতালে প্যাথলজি বিভাগে প্রায় ৪০টি আইটেমে প্রতিদিন রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হতো। কিন্তু চলতি মাসের ১১ তারিখ থেকেই অধিকাংশ পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যায়। এর পর জরুরি ভিত্তিতে পাঁচ-ছয়টি পরীক্ষা চালু রাখা গেলেও ২৯ মার্চ থেকে তাও বন্ধ করে দেওয়া হয়।

প্রতি বছর এই হাসপাতালে ওষুধসহ প্যাথলজি, এক্স-রে বিভাগের সার্বিক সামগ্রীর জন্য ৫ কোটি ৪০ লাখ টাকার টেন্ডার আহ্বান করা হয়। এর মধ্যে প্রায় ২ কোটি টাকার টেন্ডার আহ্বান করে ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বাকি ৬৫ শতাংশ টাকার ওষুধ সামগ্রী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে সরবরাহ করা হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের অংশের টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করলেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রশাসনিক অনুমোদন না পাওয়ায় ঠিকাদারকে মালপত্র সরবরাহের কার্যাদেশ দিতে পারেনি।

প্যাথলজি বিভাগের কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ রাখায় চরম বিপাকে পড়ছেন দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীরা। বিশেষ করে বৃদ্ধ, নারী ও শিশু রোগীরা হাসপাতালের ভেতরে পরীক্ষার কার্যক্রম করাতে না পারায় বেশি হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

হাসপাতালে হাঁটুর এক্স-রে পরীক্ষা করাতে আসা গাভারামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের মতিউর রহমান বলেন, তিনি জানতেন না হাসপাতালে এক্স-রে ফ্লিল্মের সংকটে কার্যক্রম বন্ধ। চিকিৎসক বাইরে থেকে এক্স-রে করানোর পরামর্শ দেন। কিন্তু হাসপাতালে সম্ভব না হওয়ায় ৪০০ টাকার এক্স-রে বাইরের ল্যাব থেকে ৯০০ টাকায় করাতে হয়েছে।

ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের আসলাম শেখ জানান, বাইরের ল্যাব থেকে তার পরীক্ষা করাতে ৩ হাজার টাকা খরচ হয়েছে, যা হাসপাতাল থেকে করলে ১৭শ টাকা খরচ হতো।

হাসপাতালে প্যাথলোজিস্টের দায়িত্ব পালন করা জীবন বড়াল বলেন, অনেক দিন ধরে কেমিক্যাল সামগ্রীর সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। তাই অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা বেশ কিছু দিন ধরেই বন্ধ। তবে জরুরি পরীক্ষার কাজ চালু রাখলেও ২৯ মার্চ থেকে সব বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যদিকে এক্স-রে টেকনেশিয়ান দিলীপ রায় জানান, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে হাসপাতালে এক্সরে ফিল্ম সরবরাহ নেই। তাই এক্স-রে বিভাগে কোনো কাজ হচ্ছে না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১১ মার্চ ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের নতুন তত্ত্বাবধায়ক ডা. শামিম আহমেদ যোগদান করেন। তিনি যোগদানের পর ঠিকাদারকে ওষুধ, প্যাথলজি ও এক্স-রের জরুরি কেমিক্যাল সামগ্রীর সরবরাহের কার্যাদেশ দেওয়া হয়নি। ফলে জটিলতা চরম আকার ধারণ করেছে।

হাসপাতালের ওষুধ সরবরাহের ঠিকাদার সোহাগ কৃষ্ণ পিপলাই জানান, ৬ মাস আগে টেন্ডার হলেও এখনও কার্যাদেশ পাননি তিনি। তাই হাসপাতালের ওষুধ, কেমিক্যালসহ অন্য মালপত্র সরবরাহ করতে পারছেন না।

এ প্রসঙ্গে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শামিম আহমেদ জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন না পাওয়ায় তিনি কার্যাদেশ দিতে পারছেন না। অনুমোদন পেলে কার্যাদেশ দেওয়া হবে। প্রতি বছর কার্যাদেশ নিয়ে এরকম জটিলতা সৃষ্টি হয় না, এবার হলো কেন– এমন প্রশ্নের উত্তরে তত্ত্বাবধায়ক বলেন, এ ব্যপারে তাঁর কিছু বলার নেই।

সিভিল সার্জন ডা. জহিরুল ইসলাম বলেন, তিনি তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্বে থাকাকালীন ওষুধ ও জরুরি সামগ্রী ক্রয়ে টেন্ডারের সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে রেখে এসেছেন। কিন্তু তারপরও তত্ত্বাবধায়ক কেন কার্যাদেশ দিচ্ছেন না, সেটা তাঁর বোধগম্য নয়।

সর্বশেষ