১৪ই জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

রাজাপুরে বেহাল সড়কে ৬ গ্রামের মানুষের ৫০ বছর ধরে দুর্ভোগ

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

ঝালকাঠি প্রতিনিধি–
ঝালকাঠির রাজাপুর মঠবাড়ি ইউনিয়নের ৭ কিলোমিটার সড়কে স্বাধীনতার ৫০ বছর পার হয়ে গেলেও যোগাযোগ ব্যবস্থায় আজ পর্যন্ত কোন উন্নয়নের বা আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি। বর্ষার এ মৌসুমে কার্দমাক্ত হওয়ায় ১৬ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও ৬ গ্রামের ৫ হাজারেরও বেশি মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন যুগ যুগ ধরে।

গর্ভবর্তী নারী ও বৃদ্ধ রোগীদের চিকিৎসাও করানো কঠিন হয়ে পড়েছে। জানা গেছে, ওই ইউনিয়নের গুদিঘাটা নামক এলাকা থেকে দক্ষিণ দিকে প্রায় ৪ কিলোমিটার সড়কের এক কিলোমিটারে যুদ্ধের পরবর্তী কোন এক সময় ইটের সলিং করা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে সেই সলিং ভেঙ্গে চুরে মাটির সাথে মিসে গেছে এবং অনেক স্থান থেকে সড়কের পাশ ভেঙ্গে গর্তে পড়ে গেছে। ওই সড়কের কালভার্ট ব্রীজ গুলো ভেঙ্গে গেছে।

ভাঙ্গা কালভার্ট ও ব্রীজের উপরে এলাকাবাসি কাঠ ও গাছ দিয়ে ঝুকি নিয়ে পারাপার হচ্ছেন। সলিং দেয়া এক কিলো মিটারের শেষ থেকে বাকি ৩ কিলোমিটারের মধ্যে আধা কিলোর কিছু অংশে ইট দেয়া হলেও বাকি মাটির সড়কে কর্দমাক্ত হয়ে গেছে। এ সড়কের ৩টি সংযোগ সড়ক পশ্চিম বাদুরতলা গ্রামে একটি শাখা, চল্লিশ কাহনিয়া গ্রামে একটি শাখা ও উত্তর উত্তমপুর গ্রামে একটি শাখা নিয়ে মোট তিনটি মাটির সড়ক চলে গেছে।

ওই তিনটি সড়কও প্রায় ৩ কিলোমিটার ওই সড়ক দিয়ে উত্তমপুর, পশ্চিম বাদুরতলা, পূর্ব বাদুরতলা, বদনিকাঠি, মঠবাড়ি ও সাউথপুর গ্রামের প্রায় দশহাজার লোক ও ষোলটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা যুগ যুগ ধরে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। স্থানীয় শাহিন, আবু মিয়া, আল ইমরান কিরন, সোহরাপ ও শাহ আলমসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, আমাদের মঠবাড়ি ইউনিয়নের চার কিলোমিটার সড়কে স্বাধীনতার ৫০ বছর পার হয়ে গেলেও যোগাযোগ ব্যবস্থায় আজ পর্যন্ত কোন উন্নয়নের বা আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি। বহু জনপ্রতিনিধি যুগে যুগে নির্বাচিত হয়েছেন।

সকল জনপ্রতিনিধিদের কাছে এলাবাসি সড়কটি পাকা করনের দাবি জানিয়ে আসলেও কোন লাভ হয়নি। প্রতিটি স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রার্থীরা ভোটারদের কাছে এসেছেন এবং বড় বড় অশ্বাসের বাণী শুনিয়েছেণ। কিন্তু নির্বাচনের পরে কেউ কোন কথা রাখেনি। স্থানীয় আব্দুল বারেক হাওলাদার, আবু বক্কর হাওলাদার, হারুন মল্লিক, মজিদ হাওলাদার ও কবির হাওলাদার বলেন, ওই সড়ক দিয়ে মঠবাড়ি ইউনিয়নের পূর্ব বাদুরতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, আফাজ উদ্দিন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, এমএস আলম মাধ্যমিক বিদ্যালয়, উত্তমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, উত্তমপুর দাখিল মাদ্রাসা, আব্দুল মালেক বালিকা বিদ্যালয়, আব্দুল মালেক কলেজ, বড়ইয়া ডিগ্রি কলেজ, আদাখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম বাদুরতলা ১১৫ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গুদিঘাটা সরকারি প্রাথিমক বিদ্যালয়, মঠবাড়ি দাখিল মাদ্রাসা, পশ্চিম বাদুরতলা নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম বাদুরতলা ঈদগাহ ইবতেদায়ী স্বতন্ত্র মাদ্রাসা ও পূর্ব বাদুরতলা নূরানী মাদ্রাসাসহ এলাকাবাসি মীরের হাট, বাগরী হাট ও বাদুরতলা হাটে চরম দুর্ভোগে আসা যাওয়া করছেন। বর্ষা মৌসুমে স্কুলে যাওয়া ছেলে মেয়েরা প্রায়ই কর্দমক্ত হয়ে যায়। কাদায় জামাকাপড় নষ্ট হওয়ায় অনেক সময় শিক্ষার্থীদেরকে বিদ্যালয় না গিয়ে বাড়ি ফেরত অসতে হচ্ছে। স্থানীয় আসলাম হোসেন, শহীদ হাওলাদার, মোহাম্মাদ আলী হাওলাদার ও শিমুল হাওলাদার বলেন, ওই এলাকায় কোন লোক যদি অসুস্থ্য হয়ে পড়ে তখন কোন বাহনে করে চিকিৎসা করাতে নেয়ার উপায় থাকেনা। অসুস্থ্য রোগীকে কাঁধে করে নিয়ে স্বজনদেরকে ডাক্তারের কাছে যেতে হচ্ছে। কোন বোঝা নিয়ে খুব কষ্ট করে এলাবাসির যাতায়াত করতে হচ্ছে। এমনকি বর্ষা মৌসুমে শিশু শিক্ষার্থী, বৃদ্ধদের চলাচলে ভোগান্তির সীমা থাকেনা। এবিষয়ে মঠবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শাহ জালাল হাওলাদার জানান, স্বাধীনতার পরে ওই জনগুরুত্বপূর্ণ জনবহুল এলাকায় তেমন কোন উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি। যাতায়াতের সড়কটিও বেহাল প্রায় ১ কিলোমিটার বেহাল। কিছু এলাকায় ইট সলিং করা হচ্ছে। তবে ঝুকিপূর্ণ একটি সাকোর স্থানে ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে আয়রন ব্রীজ করা হচ্ছে। ইতোপূর্বে ওই সাঁকো থেকে পরে দুই শিশুসহ তিনজনের মৃত্যু ঘটেছে। যুগ যুগ ধরে ওই এলাকার লোকজন অবহেলিত রয়েছে বলে তিনিও মানীয় প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেছেন। এ বিষয়ে ঝালকাঠির এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শহিদুল ইসলাম সরকার জানান, জেলার সকল বেহাল সড়কের খোঁজ নেয়া হচ্ছে। অচিরেই এ সম্পর্কে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে এবং বরাদ্দ পেলে সড়ক সংষ্কার ও মাটির গ্রামীন সড়ক পাকাকরনের আওতায় আনা হবে।

সর্বশেষ