বাণী ডেস্ক: একবার আওয়ামী লীগের পক্ষে কথা বলবেন। আবার পরক্ষণেই সমালোচনা করে বিরোধী অবস্থান গ্রহণ করবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সঙ্গেই থাকবে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির সখ্যতা সেই ১৯৮৬ সাল থেকেই। ওই সময় বিএনপিসহ অন্যান্যরা নির্বাচন বর্জন করলেও আওয়ামী লীগ অংশ নিয়ে নির্বাচনকে বৈধতা দিয়েছিল। জামায়াতও আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির সঙ্গে নির্বাচনে গিয়েছিল। এরপর থেকে জাতীয় পার্টি আর আওয়ামী লীগের হাত ছাড়েনি। দীর্ঘ তিনযুগ ধরে নানা পর্যায়ের মান, অভিমান, পাওয়া না পাওয়ার হিসাবে থাকলেও তাদের সম্পর্কে খুব চ্যুতি লক্ষ্য করা যায় না। একই সঙ্গে রাজনীতি অবস্থান করেছে। জাতীয় পার্টি কখনোই জোরালোভাবে আওয়ামী লীগের বিপক্ষে অবস্থান নিতে পারেনি। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের হয়ে কথা বলেছে। আওয়ামী লীগ যা বলতে পারেনি বা বলতে চায়নি সেটা জাতীয় পার্টি বলে দিয়েছে।
এই যেমন আজকে (রবিবার) জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সংসদে বিরোধী দলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে দেখা করে যথা সময়ে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন। তবে সব দলের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে আলোচনার বিষয়টিও রাষ্ট্রপতির কাছে তুলে ধরেছেন। সব দলের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাবের মধ্যেই রাজনীতি লুকিয়ে আছে। তবে কি জাতীয় পার্টির পরামর্শে সরকার সব দলকে আলোচনায় ডাকবে? ডাকতে পারে। আবারও নাও ডাকতে পারে। যদিও সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডনাল্ড লুকে চিঠি দিয়ে বলেছে, এখন আর আলোচনার সুযোগ নেই। এর আগে ডনাল্ড লু বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিকে পৃথক পৃথক চিঠি দিয়ে শর্তহীন সংলাপে বসে চলমান রাজনৈতিক সংকট সমাধানের আহ্বান জানিয়েছিলেন। চিঠি দিয়ে মাকির্নীদের না করে দেয়ার পর সরকারের পক্ষে আবার আলোচনা শুরুর আহ্বান করা সম্মানজনক না। কিন্তু আমরা আঁচ করতে পারি রাজনৈতিক সংকট সমাধানের জন্য সরকারের উপর দেশের ভিতরে ও বাইরে থেকে চাপ আছে। বিএনপিসহ আন্দোলনে থাকা দলগুলো টানা অবরোধ, হরতাল পালন করছে। এই মুহূর্তে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা সুবিধাজনক নয়। বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ নিয়ে সরকার বিপাকে আছে। মজুদ ক্রমশ কমছেই। বাজারে পর্যাপ্ত ডলার নেই। ফলে দাম বাড়ছে ডলারের। দ্রব্যমূলের ঊর্ধ্বগতি আকাশের দিকে ধাইছে। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম পথ পোশাক খাতে অস্থিরতা বিরাজ করছে। শ্রমিকরা বেতন বৃদ্ধির দাবিতে মাঠে নেমেছিল। শ্রমিক আন্দোলনে চারজন নিহত হয়েছেন পুলিশের গুলিতে।
এই অবস্থায় সরকার হয়ত নিজেদের মতো রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে নির্বাচন করে ফেলতে পারবে। কিন্তু পরিস্থিতি সামাল দেয়া সহজ হবে না। ২০১৪ বা ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন করলে আওয়ামী লীগের উপর চাপ আরো বাড়বে। কিন্তু আওয়ামী লীগ রাজনীতিকে এমন এক জায়গায় নিয়ে গিয়েছে যেখান থেকে ফিরে আসা অসম্ভব না হলেও রাজনৈতিক পরাজয়ের কারণ হবে। ফলে আওয়ামী লীগের দরকার ছিল নিজস্ব লোক যারা আলোচনার প্রসঙ্গটি তুলবেন এবং এতে অন্যরা আশান্বিত হবেন। এতে করে কিছুটা সময়ক্ষেপণ হবে। আওয়ামী লীগ নতুন করে কৌশল নির্ধারণের সুযোগ পাবে। জাতীয় পার্টি ঠিক সেই কাজটিই করে দিচ্ছে আওয়ামী লীগের হয়ে। আর আওয়ামী লীগ যদি খুব বেশি চাপ অনুভব করে তবে জাতীয় পার্টির পরামর্শ মোতাবেক মনোনয়ন জমা দেয়ার তারিখ পরিবর্তন করে সব দলকে আলোচনার জন্য ডাকতে পারে শেষ পর্যন্ত। বাইরে থেকে দেখা না গেলেও পর্দার আড়ালে নানা ধরনের কথাবার্তা নিশ্চয়ই হচ্ছে। জাতীয় পার্টি পর্দার আড়ালের বিষয়টিই সামনে আনার চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগের হয়ে। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের সময় নিশ্চিত হওয়ার পরই বলাবলি হচ্ছিল রওশন এরশাদ সব দলকে আলোচনায় ডাকার জন্য অনুরোধ করতে পারেন। হয়েছেও তাই।
জাতীয় পার্টির জন্য এটা করা ছাড়া খুব বেশি বিকল্পও নেই। কারণ পরিস্থিতি খুব বেশি অনুকূলে না। দলটি রওশন এরশাদ ও জি এম কাদেরের নেতৃত্বে দুই ধারায় বিভক্ত। রওশনপন্থীরা নির্বাচনে যাবেন বলেই নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছেন। তবে জি এম কাদেরপন্থীরা নির্বাচনে যাওয়ার চূড়ান্ত ঘোষণা দেননি। দেশ এখন দুইভাগে বিভক্ত। একদিকে গণতন্ত্রকামীরা। যারা একটি একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করছেন। আরেকটি অংশ হচ্ছে সরকারপন্থী যারা ক্ষমতাকে ধরে রাখতে চাইছেন। নতুন এই মেরুকরণের সামনে দাঁড়িয়ে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে গিয়ে নতুন করে জাতীয় বেইমান হবে না জনগণের সঙ্গে থাকবে তা দেখার বিষয়। ১৯৮৬ সালে জাতীয় বেইমান বলে চিহ্নিত করার হুমকি দিয়ে আওয়ামী লীগ নিজেই নির্বাচনে গিয়েছিল। এ কারণে অনেকেই ঠাট্টা তামাশা করে আওয়ামী লীগকে জাতীয় বেইমান বলে থাকে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে জাতীয় পার্টি সেই ঋণ শোধ করেছে নির্বাচনে গিয়ে। এখন এই সরকারের অধীনে যারাই ২০১৪ বা ২০১৮ মার্কা নির্বাচনে যাবে তারাই নতুন করে জাতীয় বেইমান বলে পরিচিতি পাবেন। জাতীয় পার্টি সরকারে ছিল। জাতীয় পার্টির নেতারা ক্ষমতার কাছাকাছি ছিলেন দীর্ঘদিন। জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতারাও জীবন সায়াহ্নে এসে উপনীত হয়েছেন। জাগতিক চাওয়া পাওয়ার অনেক কিছুই তাদের পূরণ হয়েছে। জনমানুষের পক্ষে দাঁড়ানোর বড় সুযোগ জাতীয় পার্টির সামনে। কিন্তু জনগণের দাবি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে এই তকমা নিজেদের কপালে লাগাবেন কি না সে সিদ্ধান্ত তারাই নিবেন।
এবার জামায়াত প্রসঙ্গে আসি। আওয়ামী লীগের সঙ্গে জামায়াতের আতাঁতের গুঞ্জন ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জামায়াতের নিবন্ধন সরকার দেয়নি। ফলে বুঝাই যাচ্ছে জামায়াতকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে দিবে না সরকার। এখন নিবন্ধন দিলে জামায়াত আর আওয়ামী লীগের কথা নাও শুনতে পারে। বরং আবারো সরকার গঠন করতে পারলে নিবন্ধনের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে, এই টোপ ফেলে জামায়াতকে নির্বাচনে যাওয়ার জন্য চাপ দিতে পারে আওয়ামী লীগ। প্রশ্ন হচ্ছে নিবন্ধন ছাড়া জামায়াত নির্বাচন করবে কিভাবে? এক্ষেত্রে জামায়াতকে নিবন্ধনপ্রাপ্ত তৃণমূল বা বিএনএম এর সঙ্গে ভিড়িয়ে দিতে পারে আওয়ামী লীগ। যদিও জামায়াত বার বার বলেছে তারা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। এবং দলটি আন্দোলনে ভালোভাবেই সক্রিয় আছে। নিবন্ধন না দিয়ে আওয়ামী লীগ জামায়াতকে চাপে রাখতে চাইছে। আওয়ামী লীগ চাইবে যে কোনো প্রকারেই জামায়াতকে আন্দোলন থেকে সরিয়ে আনতে।
পরিশেষে বলা যায়, রাজনীতিতে নানা হিসাব নিকাশ থাকে। এই প্রক্রিয়া কখনো শেষ হয় না। বরং নিরন্তর নতুন নতুন হিসাবের খাতা খোলা হয়। জাতীয় পার্টি ও জামায়াতকে নিয়েও নতুন হিসাবের খাতা খুলে বৈতরণী পার হতে চাইছে আওয়ামী লীগ। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এই হিসাব সরল অংকের মতই প্যাঁচানো ও জটিল। তাই শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের হিসাব মিলবে কি না তা দেখার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।
গত বৃহস্পতিবার যশোরে একটি গ্রেপ্তারের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত হয়। ওইদিন রাতে অসুস্থ মা ও সন্তানকে দেখতে বাড়িতে আসার পর গ্রেপ্তার করা হয় যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মিফতাহ উদ্দিন শিকদারকে। গ্রেপ্তারের সময় পুলিশের কাছে হাতজোড় করে কাকুতি-মিনতি করে ওই যুবদল নেতা বলেন, আমার মা অনেক অসুস্থ, আমার ছেলে অসুস্থ, আমাকে নিয়েন না, আমাকে ছেড়ে দেন।
মিফতাহকে গ্রেপ্তারের একটি ভিডিও শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়েছে। ব্রেইন টিউমারের অস্ত্রোপচার করা বিএনপি’র নির্বাহী কমিটির সদস্য সাইফুল ইসলাম পটু অসুস্থ অবস্থায় আদালতে হাজিরা দিতে গেলে মঙ্গলবার গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ১৭ বছরের আবদুল সামাদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সিলেটের মোগলা বাজার থেকে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে সামাদের মা রাফিয়া আক্তার মানবজমিনকে বলেন, আমার স্বামী ব্রেইন স্ট্রোক করে প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হওয়ার পর ছেলে সিএনজি চালিয়ে সংসার চালাতো। মামার বাড়ি যাওয়ার পথে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে। আমার ছেলে কোনোদিন কোনো দলের মিছিলে গেছে, সেটা এলাকার কেউ বলতে পারবে না। স্বামী অসুস্থ হওয়ায় এখন ঋণ করে সংসার চালাচ্ছি।
এদিকে বিএনপি’র দপ্তর থেকে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁও উপজেলার মিছিল থেকে জামপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি ফজলে রিমন ভূঁইয়া, যাত্রাবাড়ী থানা বিএনপি নেতা মো. রহমত উল্লাহ, কদমতলী থানাধীন ৬১নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সিনিয়র সহ-সভাপতি নুরনবী সবুজ পাশা, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ ফরিদ উদ্দিন রায়হান, মোহাম্মদপুর থানা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আইয়ুব আলী, যশোর জেলার বাঘারপাড়া পৌর যুবদলের আহ্বায়ক হিরু আহমেদ এবং মঙ্গলকোর্ট ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সভাপতি আব্দুল গনি বিশ্বাস, ইউনিয়ন বিএনপি নেতা মোকাররম হোসেনসহ কয়েকজন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। খাগড়াছড়ি জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি বাচ্চু আহমেদ, পানছড়ি উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক দিদারুল আলম, ৫নং ওয়ার্ড ছাত্রদলের সভাপতি মো. আবুল কাশেম, সাধারণ সম্পাদক মো. ইব্রাহিমকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক মো. জুলফিকার আলী, যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সাজিদুর রহমান, ৭নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সহ-সভাপতি মো. আবু দাউদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. মিরাজ মজুমদার আকাশ, উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব মো. আল-আমিন সরকার পাপ্পু ও ইউনিয়ন যুবদল নেতা মো. আরাফাত হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পাবনার দুলাই ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. আজম আলী খান ও সাঁথিয়া উপজেলার যুবদল নেতা বেলাল হোসেনকেও গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সাতক্ষীরার পৌর যুবদলের সদস্য সচিব মাসুদ রানা এবং বগুড়ার শিবগঞ্জ পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মো. আরিফুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
স্বেচ্ছাসেবক দলের ঢাকা মহানগর উত্তর শাহ আলী থানার নেতা মো. জুয়েল, গাজীপুর জেলা কালিয়াকৈর পৌর ৮নং ওয়ার্ড সদস্য সচিব কবির সরকার, মানিকগঞ্জ জেলা শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রিপন হোসেন, চট্টগ্রাম মহানগর চান্দগাঁও থানা সদস্য নজরুল ইসলাম বক্কন, ৩৮নং দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ড নেতা রাসেল, বগুড়া জেলাধীন ১৬নং ওয়ার্ড যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সোহেল হোসেন, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা মিরসরাই পৌর যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আব্দুল্লাহ আল ফয়সালকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
চট্টগ্রাম মহানগর পতেঙ্গা থানা কৃষক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ লোকমান, মো. ফোরকান, চট্টগ্রাম মহানগর পতেঙ্গা থানা কৃষক দলের সদস্য সচিব মো. সাইফুল ইসলাম, মগুরা জেলাধীন শ্রীপুর উপজেলা কৃষক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ইকরাম হেসেন, মাগুরা সদর জগদাল ইউনিয়ন কৃষক দলের সহ-সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম, মাগুরা সদর থানার মগি ইউনিয়ন কৃষক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. নায়েব আলী, রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়ন কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক মো. ফারুক হোসেন, কায়েতপাড়া ইউনিয়ন কৃষক দলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আব্দুর রহিম, গোলাকান্দাইল ইউনিয়ন কৃষক দলের সভাপতি আল-আমিন এবং রংপুর সদর ৪নং চন্দনকাঠ ইউনিয়ন কৃষক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ইউসুফ মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
শুক্রবার তিতুমীর কলেজ ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মাজদুক হাসান শ্রাবণকে উত্তরা থেকে তুলে নিয়ে গেছে ডিবি পুলিশ। এ ছাড়া টাঙ্গাইল শহর ছাত্রদলের আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম ইমন, পবা উপজেলা ছাত্রদল নেতা তাফসির হোসেন, ফরিদপুর শহর ছাত্রদল নেতা সুজন, যশোর জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মিফতাহ উদ্দিন শিকদার এবং ৭নং ওয়ার্ড ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেনকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি আল-আমিন অভিকে না পেয়ে তার ভাতিজা (এসএসসি পরিক্ষার্থী) সোহান সরকারকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ।
নেতাদের না পেয়ে স্বজনদের গ্রেপ্তার: অভিযানকালে নেতাদের না পেয়ে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে পরিবারের স্বজন, গাড়িচালক, ব্যক্তিগত কর্মকর্তাকে। গত শুক্রবার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের ছেলে তানভীর রহমান মিথুনের বাসায় অভিযান চালায় পুলিশ। এর আগে শিমুল বিশ্বাসের পাবনার বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। তাকে না পেয়ে তার ছোটভাইকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। চট্টগ্রাম জেলাধীন ভুজপুর থানা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক একরামুল হককে বাড়িতে না পেয়ে তার বড় ভাই এমদাদুলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। রামগতির চরপোড়াগাছা ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি মো. এলাহির বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। তাকে না পেয়ে তার কলেজপড়ুয়া ছোট ভাই মো. শাকিল আহমেদ (১৮)কে তুলে নিয়ে যায় তারা। কেশবপুরের পাজিয়া ইউনিয়ন যুবদল নেতা রিপনকে না পেয়ে তার বাবাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ছাড়া বরগুনা জেলা আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মনিরকে না পেয়ে তার ছোট ভাইকে ডিবি পুলিশ গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেছে। নওগাঁ জেলা যুবদলের আহ্বায়ক মো. মাসুদ হায়দার টিপুকে মারধর করে তার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। নবীনগর উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব কাওছার মিয়ার বাড়িতে হামলা চালিয়ে আসবাবপত্র ভাঙচুর করে পুলিশ।
ঘরছাড়া লাখো নেতাকর্মী: ২৮শে অক্টোবরের পর থেকে সারা দেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গ্রেপ্তার এড়াতে নেতাকর্মীরা অন্য এলাকায় আত্মীয়স্বজন কিংবা বন্ধুবান্ধবদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকে বাড়ির আশপাশে বনে-জঙ্গলে, ধানক্ষেতে, নৌকায় মাঝ নদীতে, পুকুর পাহারা দেয়ার মাচায়, মানুষের রান্নাঘরে আত্মগোপনে থাকছেন। টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, রাজশাহী, যশোর, খুলনা বরিশাল জেলার বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিএনপি’র দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, শুধুমাত্র তফসিল ঘোষণার দিনই বিএনপি’র ৩৪৫ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, এ সময়ে মামলা করা হয়েছে ৯টি। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ১১৩৫ জনকে। তফসিল ঘোষণার পর দিন সারা দেশে বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের ৪৯০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়, এ সময়ে মামলা দায়ের করা হয়েছে ১২টি। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ১৩৭০ জনকে এবং গত শুক্রবার গ্রেপ্তার করা হয় ৩৯৫ জনকে, মামলা দায়ের করা হয়েছে ৮টি। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ১০৬৫ জন নেতাকর্মীকে। আর গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৩১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, মামলা দায়ের করা হয়েছে ৭টি এবং এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ৯৭৫ জন নেতাকর্মীকে।
এ ছাড়া ২৮শে অক্টোবর মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে এখন পর্যন্ত ১৩,২১০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া মামলা হয়েছে ২৯৬টি। আহত হয়েছেন ৪১৩৩ জন নেতাকর্মী। মৃত্যু হয়েছে ১৪ জনের। ১৮টি মামলায় ৯ জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ ও ১৩৫ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে। এদিকে শুক্রবার বিকাল থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত সারা দেশে জামায়াতের ২৪ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরমধ্যে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় একজনকে। আর গত ২৫শে অক্টোবর থেকে ১৮ই নভেম্বর পর্যন্ত ২৩১৭ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দলটির দপ্তর সূত্রে জানা গেছে।
বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী মানবজমিনকে বলেন, ইসি আরও একটি পাতানো নির্বাচন করতেই এই তফসিল ঘোষণা করেছে। আর একতরফা নির্বাচন করার জন্য তফসিলের পরও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ধরপাকড় করা হচ্ছে।
মানবজমিন