২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মুক্ত কলামঃ দুর্ঘটনা রোধে গাড়িতে ‘এলইডি স্ট্রিপ লাইট’ ব্যবহার করা উচিৎ

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

বর্তমান সড়ক দুর্ঘটনাকে হত্যা না বলে শুধু দুর্ঘটনা বলে আমাদের এড়িয়ে যাওয়া উচিত হবেনা। বিআরটিএর হিসাবমতে দেশে কমপক্ষে ২ লাখ ২৯ হাজার ৩৬৯ টি বাস, ট্রাক ও মিনিমাস চলমান রয়েছে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্যমতে বছরে ৮ হাজার জন এই সড়ক দুর্ঘটনার কারণেই মৃত্যুবরণ করে। যদিও পুলিশের তথ্য বলেছে এ সংখ্যা ৪ হাজারের কিছু বেশি। বেশিরভাগ দুর্ঘটনা শীতের মওসুমে ঘটে, যখন ঘন কুয়াশা, অন্ধকার এবং প্রতিকূল আবহাওয়ার সংমিশ্রণ বাস, ট্রাক এবং অন্যান্য যানবাহনের দৃশ্যমানতাকে বাধাগ্রস্ত করে। যার ফলে আগত যানবাহন এবং পথচারী উভয়ের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য ঝুঁকি তৈরি হয়। আমরা দেখছি কোনো একটা দুর্ঘটনা হলে তাৎক্ষণিক একটা তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় এবং কিছুদিন পরে বলা হয় গাড়িটির ফিটনেস সনদ নেই বা চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল না। বাংলাদেশের সীমান্তের মধ্যে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মূল্যবান প্রাণ হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কাজনক মাত্রার পরিপ্রেক্ষিতে, একটি ব্যাপক কৌশল প্রণয়ন এবং অবিলম্বে কার্যকর করা অপরিহার্য। আমাদের দেশ যদি জাতিসংঘের পরামর্শ অনুযায়ী উদ্যোগ গ্রহণ করত বা ব্যবস্থা নিতো তাহলে সুইডেনের মতো বাংলাদেশও আজ শতভাগ সড়ক দুর্ঘটনামুক্ত দেশ হতো। জাতিসংঘের পরামর্শ না মানার কারণে এখনো সকাল বেলা পত্রিকার পাতা খুললেই দেখা যায় ভয়ংকর সব দুর্ঘটনার খবর।

রাতে বাস ও ট্রাক অনেক দ্রুত গতিতে চলে। এ অবস্থায় শীতকালে কুয়াশার কারণে হেড লাইটের আলোয় অতটা পরিষ্কার করে সামনের জিনিসকে দেখা যায় না। ফলে রাতে রাস্তায় চলমান গাড়ির আকৃতি বোঝা যায় না বললেই চলে। এক্ষেত্রে সহজেই অনুমান করা যায় কত বিপদই না ঘটতে পারে! স্বল্প দূরত্বের জন্য, আমাদের পছন্দের পরিবহনের মাধ্যম হল প্রাথমিকভাবে ব্যাটারি বা সিএনজি চালিত অটোরিকশা। একটি বিভাজনহীন রাস্তার কোনো স্পষ্ট সীমানা না থাকায়, কাছাকাছি আসা যানবাহনের প্রকৃতি, তা মোটরসাইকেল, অটোরিকশা, প্রাইভেট কার বা এমনকি বাস-ট্রাকই হোক না কেন রাতে তা নিশ্চিতভাবে বোঝা কঠিন হয়ে পড়ে। একটি বাসের যতটুকু জায়গা দরকার স্বাভাবিকভাবেই একটি মটর সাইকেলের ততটুকু দরকার হবে না। তাই যানবাহনের আকৃতি না বুঝতে পারার কারণে অনেক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়। রাতের বেলা যে যানবাহনই চলুক না কেন, যদি সেই যানবাহনের সামনের অংশের চারিদিকে- হালকা কিন্তু দূর থেকে দেখা যায় এমন ঘোরানো এলইডি স্ট্রিপ লাইট ব্যবহার করা হয় এবং রাত্রিবেলা ওটা জ্বালানো থাকে, তাহলে অনেক দূর থেকেও গাড়ির আকৃতি সহজে বোঝা যাবে। গাড়িটির আকৃতি বোঝার কারণে পথচারী কিংবা বিপরীত দিক থেকে আসা সামনের ছোট বাহন খুব দ্রুতই সে তার অবস্থান পরিবর্তন করতে বা নির্দিষ্ট পরিমাণ জায়গা নিয়ে চলতে পারবে। ইদানীং লক্ষণীয় বিষয় হলো অনেক গাড়ির সামনের লাইটও ঠিকমতো জ্বলছে না। বড় বাস বা ট্রাকের সামনের একটি লাইট সঠিক আলো দিচ্ছে অন্যটি জ্বলছে না বা জ্বললেও মৃদু আলো দিচ্ছে, যা বিপরীত দিক থেকে আসা ড্রাইভাররা বুঝতে পারছে না। অনেক ড্রাইভার মনে করেন হয়ত সামনে পাশাপাশি এক বা একাধিক কোনো মটর সাইকেল বা ছোট কোনো যানবাহন হবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় এটা ছিল ৫৩ সিটের ভলভো বাস বা বড় ট্রাক। এটা যখন বুঝতে পাড়া যায় তখন মৃত্যুর আলিঙ্গন বা চিরস্থায়ী অচলতার শেকল ছাড়া আর কিছুই অবসর থাকে না।। আমরা যখন ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা বা ছোট যানবাহনে রাতে চলাচল করি তখন বিপরীত দিক থেকে আসা গাড়ির আকৃতি না বোঝার কারণে মুহূর্তের মধ্যে মারাত্মক দুর্ঘটনায় পরি। ইদানীং প্রায়ই শুনতে পাই বাসের সাথে টেম্পুর ধাক্কা বা ট্রাকের সাথে অটোরিকশার বা প্রাইভেট কারের ধাক্কায় প্রাণহানি। এর বেশিরভাগ কারণই বেপরোয়া গতি, মাদকাসক্ত, শিক্ষানবিশ চালক, লাইসেন্সবিহীন চালক, রাতে গাড়ির আকৃতি বুঝতে না পারা ইত্যাদি।

কে শুনবে হাহাকার কে নেবে দায়! নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) এর চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চণ যথার্থই বলেছেন, যতক্ষণে সরকার ও রাজনৈতিক দল না চাইবে ততদিন নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত সম্ভব নয়। এখানে হালকা কিছু উপঢৌকন দিয়ে যা খুশি তাই করা যায়। আমরা এত বছর যাবত আন্দোলন করে যাচ্ছি অথচ কর্মকর্তাদের তেমন কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখছি না। আমাদের মতামতকে পুরোপুরি পালন করা হয় না। এভাবে চলতে দেওয়া যায় না। আমরা আমাদের দেশকে শান্তিপ্রিয় দেশ হিসাবে দেখতে চাই। যেখানে নিরাপদে চলাচলের অধিকার সবাই ভোগ করতে পারবে। এ বছর জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবসের কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীর ৫০টি বিদ্যালয় এবং দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের ১০টি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচির আয়োজন করেছে সরকার। বাস্তবতা হলো সরকার ও রাজনৈতিক দল উদ্যোগ না নিলে নিরাপদ সড়ক কল্পনাই থেকে যাবে।

তাই যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে বিনীত অনুরোধ সড়ক নিরাপদ করতে দ্রুত পদক্ষেপ নিন। সড়ক পরিবহণ সেতু মন্ত্রণালয় মাননীয় মন্ত্রী জনাব ওবায়দুল কাদের এমপি যদি দ্রুত একটা নির্দেশনা দেন যে, সকল প্রকার যানবাহনের (বাস, ট্রাক, প্রাইভেট কার, অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, লরি, টেম্পু, মাহিন্দ্রা ইত্যাদি) সম্মুখভাগের চারপাশে হালকা আলোর এলইডি স্ট্রিপ লাইট ব্যবহার বাধ্যতামূলক। এবং পুলিশ সদর দফতর থেকে পরিপত্র জারি করা হয় যে, গাড়ির আকৃতি বোঝা যায় এমন এলইডি স্ট্রিপ লাইট ব্যবহার না করলে গাড়ি চলতে দেওয়া হবেনা। তাহলে হয়ত দুর্ঘটনার অনেকগুলো কারণের একটি কারণ সমাধান করা সম্ভব হবে এবং অকাল মৃত্যুর হাত থেকে মানুষ মুক্তি পাবে।

শিমুল মুহাম্মাদ মল্লিক

শিক্ষক, পিরোজপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, পিরোজপুর।   

 

সর্বশেষ