৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

এমপি’র দুর্নীতি নিয়ে নিউজ হওয়ায় মামলা করেছে প্রেস ক্লাব সেক্রেটারী, কারাগারে সাংবাদিক

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

অনলাইন ডেস্ক:

বাংলাদেশের হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদকের ডিজিটাল আইনের মামলায় স্থানীয় ‘আমার হবিগঞ্জ’ পত্রিকার সম্পাদক সুশান্ত দাসগুপ্ত এখন কারাগারে৷ মামলায় আসামি করা হয়েছে আরো চারজন সাংবাদিককে৷
গ্রেপ্তারের পরপরই সুশান্ত দাসগুপ্ত ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘আবু জাহির এমপির পক্ষে হবিগঞ্জ প্রেস ক্লাব আমার বিরুদ্ধে দৈনিক আমার হবিগঞ্জ পত্রিকায় প্রকাশিত কিছু নিউজের কারণে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছে৷ আমাকে গ্রেফতার করে এসপি অফিসে আনা হয়েছে৷ সবাইকে বলবো ধৈর্য ধরতে৷ যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় মুক্ত হয়ে আসবো৷ জয় বাংলা৷’’

স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু জাহিরের পক্ষে মামলাটি করেছেন প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সায়েদুজ্জামান জাহির৷
নিজে সাংবাদিক হয়েও আরেক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করার কারণ জানতে চাইলে প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সায়েদুজ্জামান জাহির বলেন, ‘‘সংসদ সদস্যও একটি পত্রিকার সম্পাদক এবং তিনি প্রেসক্লাবের একজন আজীবন সদস্য৷ ওই পত্রিকা তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে৷ শুধু তাই নয় হবিগঞ্জের সাংবাদিকদেরও সে বারবার দুর্নীতিবাজ বলে আখ্যায়িত করেছে৷ ফলে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে৷’’

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করার কারণ জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘সাংবাদিকরা এর বিরোধিতা করলেও আইনটি তো আছে৷ তাই আমি মামলা করেছি৷ আমি প্রেসক্লাবের অনুমতি নিয়ে এই মামলা করি এবং মামলার পর প্রেসক্লাব মিটিং করে আমাকে অভিননন্দন জানিয়েছে৷’’

সায়েদুজ্জামান জাহির নিজেও স্থানীয় একটি পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক এবং আরটিভি’র হবিগঞ্জ প্রতিনিধি৷ তবে তিনি দাবি করেন, ‘‘আমি আরটিভি’র পরিচয়ে চলি না৷’’ ফোনে কথা বলার এক পর্যায়ে তিনি লাইন কেটে দেন৷

গত পহেলা বৈশাখ, অর্থাৎ মাত্র এক মাস আগে প্রকাশিত ‘আমার হবিগঞ্জ’ পত্রিকার সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে কথা বলার জন্য প্রেসক্লাবের সভাপতি ইসমাইল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি৷
‘আমার হবিগঞ্জ’-এর সম্পাদককে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে হবিগঞ্জের চিড়াকান্দি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ তার বাসা এবং পত্রিকা অফিস একই এলাকায়৷ মামলা হয় বুধবার রাতে৷ সম্পাদককে আটক করে কারাগারে পাঠানো হলেও পত্রিকাটির প্রকাশনা অব্যাহত আছে৷

গত ১ পহেলা বৈশাখ দৈনিক পত্রিকা হিসেবে আত্মপ্রকাশের আগে ৫-৬ মাস এটি অনলাইনে ছিল বলে জানান পত্রিকাটির বার্তা সম্পাদক রায়হান উদ্দিন সুমন৷ তিনিও ওই মামলার আসামি৷ চার আসামির বাকি দুজন হলেন: পত্রিকাটির নির্বাহী সম্পাদক নুরুজ্জামান মানিক ও প্রধান প্রতিবেদক তারেক হাবিব৷

মামলার কারণ প্রসঙ্গে রায়হান উদ্দিন সুমন বলেন, ‘‘হবিগঞ্জের লাখাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মলাই চৌধুরীর গরিব মানুষের জন্য সরকারের দুই হাজার ৫০০ টাকা প্রণোদনা নিয়ে অনিয়ম করেছেন৷ তিনি একটি মোবাইল ফোন নাম্বারে ৯৯ জনের নাম দিয়েছেন৷ আমরা কয়েকদিন আগে সেই খবর প্রকাশ করি৷ মলাই চৌধুরী আগে বিএনপির যুব সংগঠন যুবদল করতেন৷ এখন আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন৷ আমরা লিখেছি সে এমপি অ্যাডভোকেট আবু জাহিরের হাত ধরে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছে৷ এই কারণে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে৷’’ তিনি বলেন, ‘‘ওই চেয়ারম্যাকে জনতা আটকও করেছিল৷’’
অডিও শুনুন 02:06
‘একটি মোবাইল ফোন নাম্বারে ৯৯ জনের নাম দিয়েছেন’

এ প্রসঙ্গে সংসদ সদস্য আবু জাহির বলেন, ‘‘সুশান্ত একজন কথিত সম্পাদক৷ সে আসলে এনজিও করে৷ সে তার পত্রিকায় লিখেছে, যুদ্ধারপরাধের অভিযোগে দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক হবিগঞ্জের লিয়াকত আলীকে আমি আওয়ামী লীগে যোগদান করিয়েছি৷ আরো লিখেছে, আমি লাখাই ইউনিয়নের চেয়াম্যান মলাইকেও আওয়ামী লীগে যোগদান করিয়েছি৷ যা সত্য নয়৷ আমি লিয়াকতকে আওয়ামী লীগ থেকে অনেক আগেই বহিস্কার করেছি৷ এছাড়া সে (সুশান্ত) একজন নারী নির্যাতকারীর সঙ্গে আমার ছবি দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছে৷’’

তিনি আরো দাবি করেন, ‘‘সুশান্ত সাংবাদিক এবং প্রেসক্লাবের বিরুদ্ধেও অপপ্রচার চালাচ্ছে৷’’

সংসদ সদস্য নিজেও ‘দৈনিক দেশ জমিন’ নামে একটি পত্রিকার সম্পাদক এবং প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্য৷ তিনি বলেন, ‘‘হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের উন্নয়নে আমার অনেক অবদান আছে৷ আমি হবিগঞ্জের সাংবাদিকদের ঐক্যের প্রতীক৷ আর সুশান্ত হিন্দু মানুষ৷ আওয়মী লীগ করে বলে পরিচয় দেয়৷ আমার প্রতিপক্ষের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আমার বিরুদ্ধে লেগেছে৷’’

হবিগঞ্জ সদর থানার ওসি মো. মাসুক আলী জানান তারা এই মামলার অন্য তিন আসামিকেও গ্রেপ্তারে তৎপর আছেন৷ তিনি বলেন,‘‘আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছি৷ মামলা যখন হয়েছে অন্য আসামিরাও গ্রেপ্তার হবে৷’’

প্রসঙ্গত সুশান্ত দাসগুপ্ত পত্রিকা সম্পাদনার পাশপাশি ‘আমার এমপি ডটকম’ নামে নামে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোক্তাও৷ তিনি আগে এটির চেয়াম্যান ছিলেন৷ এখন নির্বাহী পরিষদ সদস্য হিসেবে কাজ করছেন বলে জানান রায়হান উদ্দিন সুমন৷

 

ডয়েচে ভেলে

সর্বশেষ