১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বিনা চিকিসায় মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন দৃষ্টিহীন মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ হোসেন

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

ঝালকাঠি প্রতিনিধি—
ঝালকাঠির রাজাপুরের পুরাতন জেলখানা এলাকায় ভাতার টাকা আপন মেয়ে-জামাতা উত্তোলন করে সঠিক ভাবে না দেয়ায় বার্ধক্যজনিত রোগে আক্রান্ত ও চোখে সানিপড়ে অবসর প্রাপ্ত বিডিআর সদস্য বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ হোসেন মৃধা (৮২) ও তার স্ত্রী সাজেদা বেগম (৭৫) অর্থাভাবে বিনা চিকিসায় ঝুপড়ি ঘরের বিছানায় ধুকে ধুকে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ হোসেন মৃধার ছেলে সফিউল বশার মৃধা ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। সফিউল বশার মৃধা অভিযোগ করে বলেন, বাবা বয়সেরভারে ন্যুব্জ হয়ে গেছে। প্রায় ৫/৬ মাস আগে তার চোখে সানিপড়া রোগে অক্রান্ত হওয়ায় হাটতে পারছে না। বার্ধক্যজনিত কারনে নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে আমার ঝুপড়ি ঘরের বিছানায় পায়খানা প্রসাব করছেন। তার চেখের চিকিৎসা করাতে পারলে চলাফেরা করতে পারতেন। মাও অসুস্থ্য। সেও আমার ঘরে আছেন। তারও জরুরী চিকিৎসা করানো প্রয়োজন। অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি না। বর্তমানে সফিউলের ৪ জন ছেলে মেয়েসহ মা-বাবাকে নিয়ে ৮ সদস্যের পরিবার উপজেলা সদরের জেলখানার পশ্চিম পাশের নিচু জমিতে একটি ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করছেন। একটু বৃষ্টি হলেই তার ঘরে পানি প্রবেশ করে। সফিউল এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিলেও পাশ করতে পারেনি। তার একটি চায়ের দোকান ছিলো। করোনার কারনে সেটা বন্ধ হয়ে গেছে। সফিউলের একমাত্র বোন ছবি বেগমের স্বামী হুমায়উন কবির উপজেলা কৃষি অফিসের উপ সহকারী কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি অবসরে এসেছেন। সফিউলের ঘরের সামনে সড়কের বিপরিত পাশে বিলাশবহুল ৩ তলা ভবন নির্মান করে ছবি ও তার স্বামী হুমায়উন কবির ছেলে মেয়ে নিয়ে বসবাস করে আসছেন। ছবি খোঁজ খবর নেয় না তার ভাই ও অসুস্থ্য মা-বাবার। সফিউল আরো বলেন, তার মা-বাবা সুস্থ্য থাকা অবস্থায় মেয়ে ছবির কাছেও থাকতো ও সফিউলের কাছেও থাকতো। কিন্তু ছবি ও তার স্বামী হুমায়উন কবির সফিউলকে পাগল ও বোকা আখ্যা দিয়ে বাবার রিটার্ড ও পেনশনের টাকা, রাজাপুরে প্রায় ১৩ শতাংশ জমি বিক্রির টাকা, রাজশাহিতে কিছু জমি বিক্রির টাকা, মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে বিনা সুদে দুই লাখ লোনের টাকা ও মুক্তিযোদ্ধা ভাতার টাকা ও কাগজপত্র সব কিছু তারা আত্মসাত করেছেন বলে সফিউলের অভিযোগ। তবে কিছু দিন আগে বোন ছবি বেগম ৫০ হাজার টাকা দিয়ে ১টি ফ্রিজ, ১টি টিভি ও একটি রাইস কুকার কিনে দেয় সফিউলকে। বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ হোসেন মৃধা প্রতি মাসে পেনশনের পান সাড়ে ৭ হাজার টাকা ও মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পান ১২ হাজার টাকা। তা সবই উত্তোন করেন সফিউলের বোন ছবি বেগম ও বোনের স্বামী হুমায়ুন। তাদের মা-বাবা অসুস্থ্য হওয়ার পর থেকে বোন ছবি ও ভগ্নিপতি হুমায়ুন কবির প্রতি মাসে বাবার ওই সারে ১৯ হাজার টাকা থেকে মাত্র ৫ হাজার টাকা মা-বাবার খরচ হিসাবে সফিউলের কাছে দেন। ওই ৫ হাজার টাকা দিয়ে ৮ সদস্যের সংসার চালানোই কষ্ট, তারপর চিকিৎসা করাবেন কি দিয়ে? তাই মা-বাবার উন্নত চিকিৎসা করানোর জন্য অর্থের হিসাব, পেনশনের টাকা ও মুক্তিযোদ্ধা ভাতার টাকা পাওয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আশুহস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সফিউল। এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ছবি বেগম বলেন, আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ হোসেন মৃধার মুক্তিযোদ্ধা ও পেনশনের টাকা আমার স্বামী হুমায়ুন কবিরের ব্যাংক একাউন্টে এসে জমা হলে তা তুলে বাবাকে দেয়া হয়। বাবা ও ভাইয়ের কোন টাকা আমার বা আমার স¦ামীর আত্মসাত করার মত মানসিকতা নেই। এ বিষয়ে ইউএনও মোক্তার হোসেন জানান, মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ হোসেন মৃধার ছেলে সফিউল বশার মৃধার লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। খোঁজখবর নিয়ে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে এবং মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ হোসেনের সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।

সর্বশেষ