ঝালকাঠিতে পরীক্ষার শেষদিনে বালিকা বিদ্যালয় ভাঙচুর করে ছেলেদের উল্লাস

প্রকাশের তারিখ: মার্চ ১০, ২০২৪ | ৯:২০ অপরাহ্ণ

ঝালকাঠি প্রতিনিধি ::: ঝালকাঠির হরচন্দ্র বালিকা বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষার শেষদিনে পরীক্ষাকেন্দ্রে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়ে উল্লাস করেছে ছাত্ররা। মেয়েদের স্কুলটির ফ্যান, বাথরুমের দরজা, কমোড ও বৈদ্যুতিক লাইট ভাঙচুরসহ ব্যাপক তাণ্ডব চালায় তারা।

মোবাইল ফোনে ধারণ করা ভাঙচুরের দৃশ্য সাংবাদিকদের হাতে এসে পৌঁছেছে। আর নিজেদের দায়িত্বহীনতা ঢাকতে এ ঘটনা ধামাচাপা দিতে ব্যস্ত কেন্দ্রটির কর্তৃপক্ষ।

রোববার (১০ মার্চ) দুপুর ১টার পর বিজ্ঞান ও উচ্চতর গণিত (তত্ত্বীয়) পরীক্ষা শেষে এ ঘটনা ঘটে। এতে সরকারি সম্পত্তির লক্ষাধিক টাকার মালামাল নষ্ট হয়েছে। কেন্দ্র সচিব বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষাক নুরুল ইসলাম ছুটিতে থাকায় ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পালন করেন সিনিয়র শিক্ষক মাওলানা এএসএম মাসুম বিল্লাহ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের দোতলার ২০৩ নম্বর কক্ষে ঝালকাঠি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ২৩২৪৫৯ থেকে ২৩২৪৭৩ পর্যন্ত রোল নম্বরধারী ১৫ জন এবং উদ্বোধন বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ২৩২৬০৫ থেকে ২৩২৬২৯ পর্যন্ত ১৫ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। ওই কক্ষের চারটি বৈদ্যুতিক পাখা, ৩টি টিউব লাইট এবং কক্ষ সংলগ্ন প্রসাধন রুমে ৬টি ওয়াশরুম/বাথরুমের দরজা, ফ্লাশ প্যান, কমোড ভাঙচুর করা হয়েছে।

২০৫ নম্বর কক্ষে ঝালকাঠি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ২৩২৪২৮ থেকে ২৩২৪৪৩ পর্যন্ত রোল নম্বরধারী ১৬ জন এবং পৌর আদর্শ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ২৪২৫১৪ থেকে ২৪২৫২৮ পর্যন্ত ১৫ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। ওই কক্ষের দুটি বৈদ্যুতিক পাখা এবং ২টি টিউব লাইট ভাঙচুর করে তারা।

বিদ্যালয়ের কর্মচারী (আয়া) মাকসুদা বেগম বলেন, ‘পরীক্ষা শেষ হলে পরীক্ষার্থীরা হৈ হুল্লোড় করে নেমে যায়। পরে রুম পরিষ্কার করতে গিয়ে দেখি সব ভাঙাচোরা। তখন স্যারেরাও দায়িত্ব পালন শেষ করে চলে গেছে, দেখি।’

এদিকে বিকেলে স্কুলে এসে এ দৃশ্য দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়েন হরচন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা।

তারা বলেন, বিদ্যালয়ের কেন্দ্রে পরীক্ষা গ্রহণের কাজ শেষ হলে উত্তরপত্র জমা নিয়ে পরীক্ষার্থীরা বের হবার পরে কক্ষপরিদর্শকের বের হবার কথা। তাহলে কক্ষ পরিদর্শক কি স্টুডেন্ট (পরীক্ষার্থী) কক্ষে রেখে উত্তরপত্র নিয়ে বের হয়ে গেছেন? কর্মরতরা যদি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতেন, তাহলে সরকারি সম্পদের এত বড় ক্ষতি হতো না।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হরচন্দ্র বালিকা বিদ্যালয়ের আরও কয়েকজন ছাত্রী বলেন, প্রতি বছরই এমন ঘটছে। সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছেলেরা আমাদের ঈর্ষা করে। মেয়েদের স্কুলে ঢুকতে পারে না তারা। কেবল এসএসসি পরীক্ষার সময় স্কুলে ঢোকার সুযোগ পায়। আর প্রতিবছরই প্রতিহিংসা মেটাতে আমাদের বাথরুম এবং বেঞ্চে আজেবাজে কথা লিখে যায়। আর এবার এমন তাণ্ডব চালাল।’

বিদ্যালয় ভাঙচুরের খবর পেয়ে সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে তথ্য করতে গেলে খবর পেয়ে ক্যাম্পাসে আসেন ভারপ্রাপ্ত কেন্দ্র সচিব মাওলানা এএসএম মাসুম বিল্লাহ। তার কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছুই বলব না। যা বলার প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব বলবেন।’

কেন্দ্র সচিব এবং ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ছুটিতে আসছি। ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পালন করছেন মাসুম বিল্লাহ স্যার। তবে ভাঙচুরের ঘটনা শুনেছি।’

এদিকে অভিযোগ ওঠা ছাত্ররা ঝালকাঠির সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এব্যাপারে ওই স্কুলটির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. সুলতান আহম্মেদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হরচন্দ্র বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রেটিতে সাড়ে ৫শ’ শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়েছে। সবাই আমার স্কুলের ছাত্র নয়। কিছু মেয়ে পরীক্ষার্থীও পরীক্ষা দিয়েছে। আর এ বিষয়টি হরচন্দ্র বালিকা বিদ্যালয় বা কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ আমাকে জানায়নি। তারপরও ঘটনার তদন্তে যদি আমার স্কুলের ছাত্ররা দোষী প্রমাণিত হয়, তবে আমি অভিভাবক ও কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’

ঝালকাঠি হরচন্দ্র বালিকা বিদ্যালয় ও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক ফারাহ্ গুল নিঝুম বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি, গুরুত্ব সহকারে দেখছি।’

© 2023 বরিশাল বাণী কতৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by Eclipse Web Host