বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়: গুটি কয়েক অপরাধী যেন মুর্তিমান আতঙ্ক !

প্রকাশের তারিখ: মার্চ ১৬, ২০২৪ | ১০:৩২ পূর্বাহ্ণ

বরিশাল বাণী: একের পর এক অপরাধ করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) ক্যাম্পাসে রীতিমতো আতঙ্কের জন্ম দিয়েছে গুটি কয়েক অপারাধী। মাত্র ১৫ থেকে ২০ জনের গ্রুপটির বিরুদ্ধে ছিনতাই, চাঁদাবাজি,ডাকাতি, শিক্ষার্থী নির্যাতন, মাদক সেবন সহ অসংখ্য অভিযোগ। গ্রুপটির সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলেই শিক্ষকদের কক্ষে তালা দেয়া, সড়ক অবরোধ সহ নানাভাবে বাঁধা দেয়া হয় প্রশাসনকে। নিজেদেরকে ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে পরিচয় দিলেও সংগঠনটির কোন কমিটি নেই সেখানে। জানাগেছে কেন্দ্রীয় যুবলীগের এক নেতাকে মাসিক মাসোহারা দেবার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় ও পার্শ্ববর্তী এলাকার অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়টির ৭ম ও ৮ম ব্যাচের কিছু শিক্ষার্থী মিলে গড়ে তুলেছে এই অপরাধ চক্র। গ্রুপটির প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই রয়েছে একাধিক মামলা। সম্প্রতি হত্যার হুমকি দিয়ে অপহরণ ও ছিনতাইয়ের একটি মামলায় কারাভোগ করেন গ্রুপটির অন্যতম নেতা আরাফাত। পুলিশের নিয়োগ পরীক্ষায় প্রক্সি দেবার ঘটনায় কারাভোগের ইতিহাসও রয়েছে তার।
গতবছর ৫ই আগস্ট মার্কেটিং বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের আয়াত উল্লাহ নামের এক ছাত্রলীগ কর্মীকে কুপিয়ে পঙ্গু করে দেয়ার অভিযোগ ওঠে গ্রুপটির বিরুদ্ধে। ঐ ঘটনার দুটি পৃথক মামলায় রিদম সহ অন্যান্যদের আসামী করা হয়।

গত অক্টোবরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের একটি রুমে আটকে রেখে রাতভর নির্যাতন চালানো হয় ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মুকুল আহমেদকে। নির্যাতনের একপর্যায়ে তার হাত ভেঙে গেলে যন্ত্রণায় অজ্ঞান হয়ে পরে সে। ঐ ঘটনায় এই গ্রুপের একাধিক সদস্যের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীর বাবা। এই অপরাধ চক্রটির বিরুদ্ধে গত ডিসেম্বরে বন্দর থানায় ডাকাতি ও শ্লীলতাহানির মামলা দায়ের করেন এক নারী।

এত অপরাধের পরও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় পার পেয়ে যায় চক্রটির সদস্যরা। একাধিক মামলার আসামী এই গ্রুপটির অন্যতম সদস্য ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী আল সামাদ শান্তকে গত ২ ফেব্রুয়ারী বিকেলে গ্রেফতার করে পুলিশ। ঐ ঘটনার জেরে রাতেই বরিশাল – কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। গত ৪ ফেব্রুয়ারী গ্রুপটির আরেক সদস্য ইংরেজি বিভাগের তানজিদ মঞ্জুর জামিন আবেদন নামঞ্জুর হলে প্রক্টর অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেয় তারা।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোঃ আবদুল কাইয়ুম বলেন, আমার কক্ষে তালা দেবার ঘটনা সত্যি। যারা তালা দিয়েছিল তাদের কিছু দাবি দাওয়া ছিল। বিষয়টি তখন ভিসি (উপাচার্য) স্যারকে জানানো হয়।

আর বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য ড. মোঃ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে এখন নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রাখা হয়েছে। স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম বজায় রাখতে প্রয়োজনে আমরা আরো কঠোর হবো৷

এদিকে বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ আর মুকুল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের গুটিকয়েক চিহ্নিত শিক্ষার্থীরাই বারবার নানা অপরাধে যুক্ত হচ্ছে। আমরা তাদের তালিকা করেছি। উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে পুলিশ কোন পদক্ষেপ নিতে গেলেই যেভাবে বাঁধার সম্মুখীন হয় সেই বিষয়টি দুঃখজনক। আমরা আশা করবো বিশ্ববিদ্যালয়ের সকলেই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে।

© 2023 বরিশাল বাণী কতৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by Eclipse Web Host