হোসাইন আমির,কুয়াকাটা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধিঃ-
দেশের পর্যটন কেন্দ্র গুলোর মধ্যে শুধু কুয়াকাটাকে খোলা পেয়ে এ সুযোগ হাতছাড়া করেনি পর্যটকরা। করোনা দূর্যোগকে পিছু ফেলে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের সমাগমে মুখরিত কুয়াকাটার সমুদ্র সৈকত। ঈদ পরবর্তী সময় সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের বান ডেকেছে। বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে ঈদের চতুর্থ দিনেও হাজার হাজার পর্যটকদের উপচে পড়া ভীড়ে মিলন মেলায় রুপ নেয় কুয়াকাটা। ঢেউয়ের সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে সমুদ্রে হৈ হুল্লোর,গোসল,দৌড় ঝাপ ও উম্মাদনা। পূর্ণিমার জোঁ থাকায় উত্তাল সমুদ্রে ঢেউয়ের সাথে মিতালীতে মাতোয়ারা পর্যটকও দর্শনার্থীরা। নেচে গেয়ে দীর্ঘ দিনের ঘরবন্দী মানুষগুলো মিলিত হয়েছে প্রাণের স্পন্দনে। সব কিছুই মিলিয়ে দীর্ঘ দিনের সুনশান পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা পুনরায় ফিরে পেয়েছে পূর্ণতা। সৈকতের দর্শণীয় স্থানগুলোতে বীচ বাইকে ঘুরে দেখছে ভ্রমন পিপাষু নানা বয়সের মানুষ। ওয়াটার বাইক নিয়ে সমুদ্রে গভীরে এ্যাডভাঞ্চার প্রিয়দের দাপিয়ে বেড়ানো সত্যিই রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা অর্জন। এমন দৃশ্য ছিল চোখে পড়ার মতো। সৈকতে নতুন যুক্ত হওয়া ঘোড়ার গাড়িতে চেপে শিশু ও বয়স্করা এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরে সমুদ্র ও প্রাকৃতি নৈসর্গীক দৃশ্য অবলোকন করছে। কেউ কেউ আবার চার চাকা বিশিষ্ট বীচ বাইকার নিয়ে জলকেলিতে মিলিত হয়েছে। সুন্দর বনের পূর্বাংশ টেংরাগিরি বনাঞ্চল, লেম্বুরবন,গঙ্গামতির লেক, জাতীয় উদ্যান, লাল কাঁকড়ার চর,বৌদ্ধ বিহার ও রাখাইনপল্লীতে অসংখ্য পর্যটকদের ভীড় দেখা গেছে। তবে যুবক যুবতীরা দলবেধে ৩০-৪০ টি দামী মটর সাইকেলের বহর নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সমুদ্র সৈকতে এসেছে। আবাসিক হোটেল মোটেলে রয়েছে চাহিদা মাফিক বুকিং। বেচা কেনা বেড়েছে খাবার হোটেল, শামুক ঝিনুকের দোকান, শুটকি মাকের্ট, বার্মিজ পন্যসহ পর্যটক নির্ভরশীল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। করোনার প্রার্দূভাবে কারণে দীর্ঘ সময়ে বন্ধ থাকার পর এই প্রথম পর্যটকদের পদচারনায় প্রাণ চাঞ্চলতা ফিরে পেয়েছে এমন দাবী ব্যবসায়ীদের। সমুদ্রের সান্নিধ্যে এসে বুক ভরে নিশ্বাস নিতে পেরে খুশী পর্যটকরা।
সমুদ্রের আসল রুপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে এ বর্ষা মৌসুমকেই বেছে নেওয়া উচিত বলে মনে করছেন আব্দুর রব সেরেনিয়াবাদ বরিশাল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন।
ঢাকা থেকে আসা পর্যটক আফজালুল আহম্মেদ টিপুসহ তার সঙ্গীয় কয়েকজন বন্ধুদের নিয়ে মটর বাইক নিয়ে সোমবার বিকেলে কুয়াকাটা এসেছেন। উঠেছেন আবাসিক হোটেল রেইন ড্রপে। সমুদ্র ভ্রমনের জন্য তারা বর্ষা মৌসুমকে প্রধান্য দেয়। পর্যটক টিপু জানান, উত্তাল সমুদ্রের ঢেউ ও গর্জন তাদেরকে বিমোহীত করে। তাই ঈদের ছুটিকে উপভোগ্য করতে কুয়াকাটা সৈকতকে বেছে নিয়েছেন তারা।
সমুদ্র লাগোয়া আবাসিক হোটেল ”সৈকত” এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিয়াউর রহমান শেখ জানিয়েছেন, ঈদের দিন থেকেই পর্যটকরা কুয়াকাটায় আসতে শুরু করেছে। রোববার থেকে ধারাবাহিকভাবে বুধবার পর্যন্ত তার হোটেলের শতভাগ রুমই বুকিং আছে। প্রচন্ড ভ্যাপসা গরমের কারণে অধিকাংশ পর্যটকদের এসি রুমের চাহিদা ছিল এমনটাই জানিয়েছে জিয়া শেখ।
কুয়াকাটা হোটেল মোটেল ওনার্স এসোসিয়েশন’র সাধারণ সম্পাদক ও কুয়াকাটা গেষ্ট হাউজের স্বত্ত্বাধীকারী এম এ মোতালেব শরীফ বলেন, পর্যটকদের কুয়াকাটায় টানতে ৩০-৪০ ভাগ ছাড়ে রুম বুকিং দেয়া হয়। এমন ইতিবাচক সিদ্ধান্তে প্রত্যেক আবাসিক হোটেলে আশানুরুপ রুম বুকিং রয়েছে। এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে করোনাকালীন লোকসান পুঁষিয়ে অচিরেই লাভের মুখ দেখবেন ব্যবসায়ীরা।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা জোন’র ইনচার্জ সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার মো. জহিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ঈদ পরবর্তী কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে অগনিত পর্যটকদের নিরাপত্তায় দর্শনীয় স্থানগুলোতে নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। পর্যটকদের সেবা অব্যাহত রাখতে সার্বক্ষনিক নজরজারীতে ছিল ট্যুরিস্ট পুলিশ।