বরগুনার ২৬৬ লোহার সেতু যেন মরণফাঁদ!

প্রকাশের তারিখ: এপ্রিল ২২, ২০২৪ | ৪:২১ অপরাহ্ণ

বরগুনা প্রতিনিধি ::: বরগুনায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) হালকা যান চলাচল প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ২শ ৬৬টি লোহার সেতু সংস্কারের অভাবে এখন যেন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) বরগুনা কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে এলজিইডি’র আওতায় ‘হালকা যান চলাচল প্রকল্পের’ অধীনে এসব সেতু নির্মাণ করা হয়।

এর মধ্যে বরগুনা সদরে ৩৫টি, বেতাগীতে ৪৬, বামনায় ৩৬, পাথরঘাটায় ৬২ ও আমতলী উপজেলায় ৮৭টি সেতুসহ প্রায় ২শ ৬৬ সেতু নির্মাণ করা হয়।

প্রকল্পটি ২০০৫ সাল পর্যন্ত কার্যকর ছিল। এর পর প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি না করায় এসব সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ এবং মেরামতে আর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি, যা এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। সেতু পারাপারে প্রায়ই ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। বর্তমানে অধিকাংশ সেতুই মানুষ পারাপারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। কোথাও কোথাও স্থানীয়রা বাঁশ, কাঠ দিয়ে কোনোমতে চলাচল করলেও এসব সেতু দিয়ে চলাচলে প্রায়ই ঘটছে নানা দুর্ঘটনা।

প্রায় ২০ বছর আগে তালতলীর কড়ইবাড়িয়া ইউনিয়নের সানুর বাজারে বেহালা খালের উপর একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। ৮ বছর আগে সেতুটি ভেঙে চলাচল অনুপযোগী হয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা কাঠ, বাঁশ দিয়ে সাঁকো তৈরি করে পারাপার হচ্ছেন।

স্থানীয়দের দাবি, ভাঙা সেতু দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স পার না হতে পারায় সেতু সংলগ্ন সাঁকোতেই প্রকাশ্যে সন্তান প্রসব করেছেন এক প্রসূতি। সাঁকো দিয়ে ইতোমধ্যে খালে পড়ে আহত হয়েছে শিশুসহ অনেকেই। সেতুটি ভেঙে যাওয়ার কারণে প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন ওই এলাকার অন্তত ২০ হাজার মানুষ।

বেহেলা গ্রামের রিপন হালদার বলেন, সেতু ভাঙা থাকার কারণে অ্যাম্বুলেন্স গ্রামে ঢুকতে পারে না। আমাদের বেহেলা গ্রামে ৪-৫ জন প্রসূতি নারীর বাচ্চা প্রসব হয়েছে ট্রলারে বসে। এরকম সেতু আমাদের গলার কাঁটা। সেতু না থাকলে বরং ভালোই হতো। নতুন ব্রিজ হতো তখন।

এ বিষয়ে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ কথা না বললেও ভাঙা সেতুগুলো দ্রুত মেরামতের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় সংসদ সদস্য।

এ অবস্থা শুধু বেহালা ও শারিকখালী খালেই নয়, জেলার ৬ উপজেলায় প্রায় ৩শটি লোহার সেতুর একই অবস্থা।

ভোগান্তির শিকার বরগুনা সদরের নলী সাজীপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. রাসেল বলেন, বিগত ৫ বছেরেরও বেশি সময় ধরে পড়ে আছে আমাদের এখানের সেতুটি। আর সেই সমস্যা ভোগ করছি আমরা। চর মাইঠা প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষার্থীরা এ সেতু দিয়ে পারাপার করে। সেতুর ভোগান্তির কারণে শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো স্কুলে যেতে পারে না। দ্রুত এ সেতুটি নির্মাণ করার দাবি এলাকাবাসীর।

বরগুনার জেলা প্রশাসক মুহা. রফিকুল ইসলাম বলেন, যেখানে মানুষের বেশি দুর্ভোগ হচ্ছে, আমরা চেষ্টা করছি সেগুলো সমাধান করার। যদি জেলা পরিষদের পক্ষে কাজগুলো করা সম্ভব হয়, তাদের মাধ্যমে সেতুগুলি মেরামত করানোর চেষ্টা করবো। তাদের আওতায় না থাকলে এলজিইডি’র মাধ্যমে এই সেতুগুলি মেরামত করার চেষ্টা করবো।

বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম সরোয়ার টুকু বলেন, স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী প্রধানের সঙ্গে কথা হয়েছে এবং আমার ধারণা খুব অল্প সময়ের মধ্যে যতগুলি সেতু সম্পূর্ণ করা যায়, তারা সেটা শেষ করবেন।

© 2023 বরিশাল বাণী কতৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by Eclipse Web Host