তেঁতুলিয়া নদীর ভাঙন কবলে দেশের বৃহৎ বীজ বর্ধণ খামার

প্রকাশের তারিখ: জুন ২২, ২০২৪ | ৭:৫৯ অপরাহ্ণ

সঞ্জয় ব্যানার্জী, দশমিনা (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা।।
স্থাপনের পূর্ব থেকেই তেঁতুলিয়া নদীর ভাঙন কবলে দক্ষিণ উপকূলীয় অঞ্চলে (বরিশাল ও পটুয়াখালী) বীজ বর্ধন খামার স্থাপন প্রকল্প। বালাম ধানের জন্য বিখ্যাত বরিশালের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমপি ২০১৩সালের ১৯মার্চ পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার চরবাঁশবাড়িয়ায় উদ্বোধন করেন এই মেগা প্রকল্প।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক ২শ’ ৫০কোটি টাকা ব্যয়ে বীজ বর্ধন খামার স্থাপনে চর-বাঁশবাড়িয়া, চরসাইমুন ও চরবোথাম এর ১হাজার ৪৪দশমিক ৩৬একর জমি অধিগ্রহণ করে। সুগন্ধি কালিজিরা আর বাঁশফুল বালাম প্রজাতির ধানবীজসহ স্থানীয় জাতের ডাল ও তৈলবীজ উৎপাদন করে কৃষকের মাধ্যমে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে সরকার। ওই খামারকে ঘিরে কৃষক এবং বিএডিসি স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। কিন্তু সেই স্বপ্ন চুরমার করে দিচ্ছে রাক্ষুসে তেঁতুলিয়া নদী। খামার প্রকল্পে বীজ উৎপাদনে আসার পূর্বে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায় ২৬একর জমি। ২০১৩সালের সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে প্রায় এক’শ ত্রিশ একর জমি হারায় প্রকল্প এলাকা থেকে। এ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন সংশ্লিষ্ট কৃষি কর্মকর্তা এবং কৃষকরা। পর্যায়ক্রমে সেখানে নির্মাণ করা হয় বীজ সংরক্ষণের গুদামঘর এবং প্রকল্পে কর্মরতদের জন্য বহুতল বিশিষ্ট কার্যালয় ভবন। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আবাসিক ব্যবস্থাপনাও রাখা হয়েছে। ইতিমধ্যেই জমি চাষ করে বীজ উৎপাদন এবং পরিবহনের জন্য শত শত কোটি টাকার বিভিন্ন সমাগ্রী কেনা হয়েছে। কিন্তু তেঁতুলিয়ার ভাঙনে সব কিছুই বিলীন হয়েছে। ২০১৫সালের শেষের দিকে প্রধানমন্ত্রী অস্থায়ী বিশ্রামাগারের দ্বিতল ভবনটি নদী ভাঙনের কবলে পরে। তেঁতুলিয়ার অব্যাহত ভাঙনের আড়ালে পরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান ভূমি উন্নয়ন, বালু ভরাট, বেড়িবাধ নির্মাণ ও নদী খনন নামক একই কাজ ভিন্ন ভিন্ন নামে দেখিয়ে ৩৪কোটি টাকাসহ নদীতে ব্লক নির্মাণ না করে অর্থ লোপাটের ঘটনায় তার কর্মস্থগিতাদেশ দেন বিএডিসি চেয়ারম্যান।
স্থানীয় কৃষক মনির হোসেন হাওলাদার জানায়, যেহেতু ভাঙন কবলিত নদীর পাড়ে প্রকল্পটি গড়া হয়েছে তাই আগে থেকে ভাঙন রোধে ব্লক দ্বারা বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হলে জমি নদীগর্ভে বিলীন হতো না। পরিকল্পনায় ভুল থাকায় এমনটি হয়েছে। ভাঙন রোধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া না হলে বীজ গুদাম ও অফিস ভবন নদীগর্ভে হারিয়ে যাবে। প্রকল্পে প্রত্যাহিক শ্রমিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, ভাঙনের পরে বর্তমানে বীজ বর্ধণ খামারে সাড়ে ৪একর জমির বেশি অবশিষ্ট নেই।
এবিষয়ে বীজ বর্ধণ খামারের ডিডি শেখ ইকবাল হোসেন বলেন, ২০১৪সালে ১৮কোটি টাকা ব্যায়ে ‘নদীর গতিপথ পরিবর্তন করে ভাঙন রোধের পরিকল্পনা ভুল ছিল। তারচেয়ে তেঁতুলিয়া নদীর মাঝখানে যে ডুবো চরটি রয়েছে সেটি গভীর করে খনন করলে ভাঙন রোধ করা সম্ভব। এ ছাড়া ব্লক কিংবা আরসিসি শিটের মাধ্যমে বেড়িবাঁধ তৈরি করা হলে ভাঙন রোধ করা সম্ভব।’

© 2023 বরিশাল বাণী কতৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by Eclipse Web Host