রাজাপুরে বিপুল পরিমান ইয়াবাসহ আটক-২, মোটরসাইকেল জব্দ

প্রকাশের তারিখ: আগস্ট ১১, ২০২০ | ৫:১২ অপরাহ্ণ

সাইদুল ইসলাম, রাজাপুর: ঝালকাঠির রাজাপুরে মরণনেশা ইয়াবার ভয়ঙ্কর বিস্তার লাভ করায় অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার ফলে পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযান নিয়ে নানা প্রশ্নের মধ্যে ৪হাজার ৫শত সতের পিস ইয়াবাসহ কামাল হোসেন (৪২) ও সাইফুল ইসলাম আকন (৪৩) নামে দুই মাদক কারবারিকে আটক করেছে রাজাপুর থানা পুলিশ। সোমবার (১০আগষ্ট) মধ্যরাতে উপজেলার সাতুরিয়া ইউনিয়নের নৈকাঠী এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। এ সময় মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে থাকা মটর সাইকেলসহ ইয়াবা ট্যাবলেটের চালানটি উদ্ধার করে পুলিশ। গত ৪ মাস ধরে কামাল চট্টগ্রাম থেকে মাদকদ্রব্য এনে এ উপজেলায় সরবরাহ করে আসছিল। তারা ইয়াবাগুলো চট্টগ্রাম থেকে নৈকাঠি এলাকায় সরবরাহের জন্য নিয়ে আসছিলো।
আটক কামাল হোসেন চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকার নিজাম উদ্দিনের ছেলে ও পিরোজপুর জেলার দাউদপুর এলাকায় তার শ্বশুর বাড়ি এছাড়া সাইফুল ইসলাম আকন রাজাপুরের গালুয়া ইউনিয়নের কানুদাশকাঠী গ্রামের মৃত জলিল আকনের ছেলে।
পুলিশ জানায়, চট্টগ্রামের কক্সবাজার ও টেকনাফ থেকে গত চারমাস ধরে ইয়াবা এনে এ অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় সহবরাহ করত এই মাদক কারবারিরা। এই খবরের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে নামে পুলিশ। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল পুলিশের কাছে খবর আসে, চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজার এলাকার মাদক ব্যবসায়ী ইরফানের কাছ থেকে ইয়াবার একটি চালান নিয়ে রাজাপুরে আসছে মাদক কারবারি কামাল হোসেন। এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজাপুরের নৈকাঠী এলাকায় সোমবার মধ্যরাতে অবস্থান নেয় পুলিশ। রাত দেড়টার দিকে একটি মোটর সাইকেলে নৈকাঠী এলাকায় ইয়াবার চালানটি নিয়ে এসে পৌঁছায় কামাল ও সাইফুল। এ সময় তাদের আটক করে দেহ তল্লাশি করে চার হাজার পাঁচশ সতের পিস ইয়াবা জব্দ করে পুলিশ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ভৌগলিক অবস্থার কারণে বাইরের জেলা থেকে মাদকের চালান রাজাপুর উপজেলায় প্রবেশ করে সবচেয়ে বেশি। আর সেই কারনেই উপজেলা শহর থেকে অজোপাড়া গাঁ পর্যন্ত সব স্থানেই এখন হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে ‘ক্রেইজি ড্রাগ’ ইয়াবা। মোবাইল ফোনে অর্ডার দিলেই মুহূর্তেই হাতে চলে আসছে ছোট আকারের হরেক রঙের এই মাদক দ্রব্য। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে ইয়াবার খুচরা ব্যবসায়ীরা মাঝে মধ্যে গ্রেফতার হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে মূল হোতারা। এতেকরে ঠেকানো যাচ্ছে না ইয়াবা ব্যবসা। বানের পানির মতো রাজাপুরে ঢুকছে ইয়াবার চালান। আর যারা গ্রেফতার হচ্ছেন তাদেরও আটকিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। আইনের ফাঁক গলে তারা বেরিয়ে আসছে কারাগার থেকে। ফিরছে ইয়াবা ব্যবসায়।
এ বিষয় সহকারি পুলিশ সুপার মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “আটকৃত কামাল হোসেন পিরোজপুর জেলার দাউদপুর এলাকায় তার শ্বশুর বাড়িতে যাওয়া-আসার সময় স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। আমরা গত চারমাস ধরে এই ব্যক্তিদের আটকের চেষ্টা করছি। এ অঞ্চলের অন্য মাদক কারবারিদের বিষয়েও তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের আটক করতে কাজ করছে পুলিশ।”
রাজাপুর থানা অফিসার ইনচার্জ মোঃ শহিদুল ইসলাম বলেন, আটককৃতদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা রুজু করা হয়েছে। আসামীদের ঝালকাঠি আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে এবং আদালতে তাদের বিরুদ্ধে রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, রাজাপুর থানা পুলিশের হাতে এটাই প্রথম মাদকের জেলার বড় চালান আটক। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানবদেহের সবচেয়ে ক্ষতিকর নেশা দ্রব্যের মধ্যে ইয়াবা অন্যতম একটি। ইয়াবা অর্থ হলো ক্রেজি মেডিসিন বা পাগলা ওষুধ। যে যাই বলুক না কেন, বাস্তবে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা বন্ধ না হলে পরিস্থিতির কতটা উন্নতি হবে সেটি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন এলাকাবাসী।

© 2023 বরিশাল বাণী কতৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by Eclipse Web Host