ভোলায় গ্রাহকদের অলংকারসহ কোটি টাকা নিয়ে স্বর্ণ ব্যবসায়ী উধাও

প্রকাশের তারিখ: আগস্ট ২২, ২০২০ | ৯:৩৪ অপরাহ্ণ

ভোলা প্রতিনিধি :: গ্রাহকদের স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা নিয়ে ভোলা পরানগঞ্জ বাজারের ‘বিসমিল্লাহ স্বর্ণ শিল্পালয়’ এর মালিক স্বর্ণ ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম মানিক উধাও হয়েছেন। এ খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা পরানগঞ্জ বাজারের কাজীপট্টি বিসমিল্লাহ স্বর্ণ শিল্পালয়ের সামনে এসে জড়ো হয় এবং তাদের স্বর্ণালংকার ও টাকা ফেরত পেতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

শুক্রবার (২১ আগস্ট) দুপুরে স্বর্ণ ব্যবসায়ী মানিক গ্রাহকদের অলংকার, নগদ টাকা ও বাসার আসবাবপত্র নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে বিকেলে মানিকের দোকান তালাবদ্ধ দেখে ফোন করলেও তাকে পাওয়া যায়নি। এরপর খোঁজ খবর নিয়ে তারা জানতে পারে স্বর্ণ ব্যবসায়ী মানিক সবকিছু নিয়ে পালিয়েছে। গ্রাহকদের কাছ থেকে জানা গেছে, মানিকের কাছে স্বর্ণালংকারসহ নগদ টাকা মিলিয়ে প্রায় কোটি টাকা পাওনা রয়েছে তাদের।

স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, পালিয়ে যাওয়া স্বর্ণ ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম মানিক কুমিল্লা জেলার বাসিন্দা ছিদ্দিকের ছেলে। দীর্ঘ ১৬ বছর আগে ভোলার পরানগঞ্জ বাজারে এসে তিনি স্বর্ণের ব্যবসা শুরু করেছিলেন। ব্যবসার সুবাধে মানিক সেখানে বসতি নির্মাণ করে বসবাস করতে থাকে। দীর্ঘদিন ব্যবসার করার কারণে স্থানীয় মানুষের সাথে মানিকের সুসম্পর্ক গড়ে উঠে। মানিক প্রথম দিকে পরানগঞ্জ বাজারের আনন্দপট্টি ও পরবর্তীতে কাজী মার্কেটে ব্যবসা শুরু করে। সেখানেই তার ব্যবসার বিস্তার লাভ করে। চারদিকে মানিকের স্বর্ণের ব্যবসার কথা ছড়িয়ে পড়ে। মানিক হয়ে ওঠেন পরানগঞ্জ বাজারের বড় স্বর্ণকার। বিশ্বাস করে স্থানীয় পুরুষ-মহিলা মানিকের কাছে স্বর্ণ কিনতে শুরু করে। এছাড়াও মানিকের কাছে স্বর্ণ বন্ধক রাখে অনেক গ্রাহক।

সূত্রে আরও জানা গেছে, ব্যবসার প্রসারের জন্য মানিক কিছু এনজিও এবং স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে থেকে ঋণ গ্রহণ করে। গত কোরবানীর ঈদে গ্রাহকদের বানাতে দেওয়া ও বন্ধক রাখা স্বর্ণ দেয়ার কথা থাকলেও মানিক দেই দিচ্ছি বলে তাদেরকে ঘুরাতে থাকে। একপর্যায়ে গ্রাহকরা চাপ দিতে থাকলে শুক্রবার (২১ আগস্ট) মানিক স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা নিয়ে সপরিবারে পালিয়ে যায়। তার দোকান তালাবদ্ধ দেখে অনেক গ্রাহক ফোন দিলে তাও বন্ধ পান। এরপর মানিকের বাড়িতে ও বিভিন্ন যায়গায় খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারেন মানিক সবকিছু নিয়ে পালিয়ে গেছে।

ভুক্তভোগী মো. আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ঈদের কিছুদিন আগে মানিকের কাছে আমি ৩ ভরি স্বর্ণ রেখেছি। এগুলো ঈদের পর আমাকে দেয়ার কথা রয়েছে। এছাড়াও আমাদের বাড়ির অনেক লোক তার কাছে স্বর্ণ বানানোর জন্য দিয়েছে এবং বন্ধক রেখেছে। মানিক আমাদের সবকিছু নিয়ে পালিয়ে গেছে। আমাদের স্বর্ণালংকার ফিরে পেতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

প্রবাসী মো. হুমায়ুন কবির বলেন, কোরবানী ঈদের আগে নেকলেস ও রুলি বানানোর জন্য এক লাখ পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছি। সেগুলো ঈদের পর আমাকে দেয়ার কথা। আমি সেগুলো আনতে গেলে আমাকে দেই দিচ্ছি বলে এতোদিন ঘুরিয়েছে। শুক্রবার রাতে শনি মানিক সবকিছু নিয়ে পালিয়ে গেছে।

ব্যবসায়ী মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, স্বর্ণকার মানিক তার ব্যবসার জন্য আমার কাছ থেকে ৫ ভরি স্বর্ণ ধার নেয়। সেগুলো ঈদের পরে দেয়ার কথা। শুক্রবার বিকালে জানতে পারি মানিক সবকিছু নিয়ে গোপনে পালিয়ে গেছে। তার মোবাইলে একাধিকার ফোন করেও বন্ধ পেয়েছি। তাই আমার স্বর্ণ ফিরে পেতে পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

ভুক্তভোগী ফারুক মজগুনী, মাইনুদ্দিন মেস্তরী, সেলিম মাঝি, মোঃ আলামিন, লিটন, তাসনুর বেগম, জোসনা বেগমসহ একাধিক গ্রাহকরা জানান, আমরা কষ্টের অর্জিত শেষ সম্বল দিয়ে স্বর্ণকার মানিকের কাছে স্বর্ণালংকার বানানোর জন্য দিয়েছে। কিছু স্বর্ণ তার কাছে বন্ধক রেখেছি। বন্ধকের টাকা পরিশোধ প্রায় শেষ হয়েছে। আমরা যখন তার কাছ থেকে এগুলো আনার জন্য যেতাম ২/১দিন অপেক্ষা করতে বলে আমাদেরকে ঘুরাতো।

দোকান মালিক মো. মামুন কাজী বলেন, মানিক দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় আগে আমাদের দোকানঘর ভাড়া নিয়ে স্বর্ণের ব্যবসা শুরু করে। মানুষও তার সাথে লেনদেন করতে থাকে। তার ব্যবসার কথা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। দিন দিন তার ব্যবসাও বড় হতে থাকে। কিন্তু শুক্রবার দুপুরে হঠাৎ শুনি মানিক পালিয়ে গেছে। তার কাছে আমাদেরও প্রায় ৫-৬ মাসের ঘর ভাড়া পাওনা রয়েছে।

পূর্ব ইলিশা ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ আবদুর রহমান হাওলাদার বলেন, কুমিল্লা জেলার নাঙ্গল কোট থানার মান্দাবাজার গ্রামের বাসিন্দা ছিদ্দিক স্বর্ণকারের ছেলে মানিক আমার বাড়ির কাছে বসতি স্থাপন করে পরানগঞ্জ বাজারে দীর্ঘ কয়েক বছর যাবত স্বর্ণের ব্যবসা করে আসছে। তার কাছে আমিও কিছু স্বর্ণ বানানোর জন্য দিয়েছি। সেগুলো কিছুদিনের মধ্যে দেওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু শুক্রবার হঠাৎ করে মানিক সব কিছু নিয়ে পালিয়ে যায়। খবরটি চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় ভুক্তভোগীরা আমার কাছে আসে। ভুক্তভোগীরা যাতে তাদের স্বর্ণ ও টাকা ফেরত পেতে পারে সে জন্য পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

এ বিষয়ে ভোলা সদর থানার ওসি এনায়েত হোসেন জানান, আমি বিষয়টি স্থানীয় মেম্বারের কাছে শুনেছি। তবে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করলে সংশ্লিষ্ট থানায় যোগাযোগ করা হবে।’

© 2023 বরিশাল বাণী কতৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by Eclipse Web Host