করোনা যোদ্ধাদের জন্য ঈদ উৎসর্গ : — নিয়ামুর রশিদ শিহাব

প্রকাশের তারিখ: মে ২৬, ২০২০ | ৫:৫৯ অপরাহ্ণ

প্রতিবছর ঈদ আসলে ভিন্ন রকমের উৎসবে সামিল হতাম। সকলে উঠে গোসল করে সুগন্ধী দিয়ে ঈদের নামাজে একটু আগে ভাগেই যেতাম। বন্ধু, বড় ভাই, পাড়া প্রতিবেশি সকলকে নিয়ে মসজিদের উদ্দেশ্যে যেতাম। খুব সাগ্রহে ঈদের নামাজ আদায় করে ছোট বড়, ধনী-গরিব সকলের সাথে কোলাকুলি না করলে যেন ঈদের আমেজটা পেতাম না। তেমনি ঈদের দিন চেনা মানুষদের সাথে দেখা না করলে ঈদের উৎসবটা যেন পূর্ণ হতো না। মজার একটা ব্যাপার ছিল। বন্ধুদের নিয়ে এলাকার প্রত্যেককে ঘরেই হানা দিতাম। সবার বাসা থেকেই কম বেশি কিছু খেয়েই আসতাম। ছোটবেলার ঈদ সালামির কথাতো বলার দরকার হয় না। প্রতিযোগিতা লেগে যেত কার ঈদ সালামি বেশি হতো। বিকেল হলে দাদাবাড়ি-নানাবাড়ি যাওয়া হয় নাই এমন কোনো ঈদ আমার জীবনে ছিলনা। কিন্তু এবার ঈদ উৎসবটা ছিল একটু ভিন্ন রকমের। চারপাশে নেই কোনো আমেজ। উৎসবের কোনো আয়োজন নেই। সবার চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ। বিশ্বব্যপী মহামারীর কারণে সবাই যার যার নিরাপত্তার স্বার্থে দূরত্ব বজায় রেখে চলছে। কেউ কারো বাসায় আসছে না,কেউ কারো বাসায় যাচ্ছে না। ঈদের দিনটায় ঘুম থেকে জাগলাম। মনে নেই কোনো প্রশান্তি। বার বার মনে পড়েছে করোনা যুদ্ধের সম্মুখ যোদ্ধাদের কথা। ঈদের দিনটাতেও যার যার কর্মস্থলে থেকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। গোসল সেরে নামাজের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। এবারের ঈদের জামাতে যাওয়া, না যাওয়া নিয়ে দ্বিধা দ্বন্দ্ব ছিল। তবুও মন যে মানছে। রমজানের ৩০টি রোজা ও তারাবি নামাজ আদায় করে ঈদের নামাজ পড়ার প্রতি মনটা ছটফট করছিল। সব দ্বিধা দ্বন্দ্ব ভুলে সামনে এগিয়ে গেলাম। নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখেই মসজিদে গেলাম ও নামাজ আদায় করেছি। করোনা ভাইরাসের জন্য মসজিদে দোয়াও হয়েছে। এরপর মন খারাপ নিয়েই বাসায় চলে আসলাম। আত্মীয় স্বজনের দেখা নাই, পাড়া-প্রতিবেশির দেখা নাই। এভাবে কি ঈদ উৎসব করা যায়? সারাদিন ঘর বন্দী । তবু করোনা রোগি ও সম্মুখ যোদ্ধাদের কথা স্মরণ হলে মনের ভেতরে কষ্ট টা থাকে না। এবারের ঈদ ঊৎসবটা না হয় তাদের জন্যই ঊৎসর্গ করলাম। তাইতো এভাবে ঈদ উৎসবের বিসর্জনের পরও একটি মাত্র চাওয়া করোনামুক্ত হোক গোটা বিশ্ব।

শিক্ষার্থী,
বরিশাল পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউট

© 2023 বরিশাল বাণী কতৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by Eclipse Web Host