প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের ১২ দিনের মাথায় ভেঙ্গে পড়লো দেয়াল !

প্রকাশের তারিখ: ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২১ | ৭:২৩ অপরাহ্ণ

হারুন অর রশিদ, আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের ১২ দিনের মাথায় (বুধবার) বরগুনার তালতলী উপজেলার বেহেলা গ্রামের স্বামী পরিত্যক্তা উর্মিলা রাণী (৭১) নামে এক অসহায় নারীর নির্মাণাধীন বসত গৃহের দেয়াল ভেঙ্গে পড়েছে। গৃহ নির্মাণ করার সময় দু’দফায় ওই নারীর বসতঘরের দেয়াল ধ্বসে পড়েছে বলে ভূক্তভোগী জানায়। এনিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানাগেছে, প্রধানমন্ত্রীর আশ্রায়ণ প্রকল্পের-২ আওতায় যার জমি আছে ঘর নেই, তার জমিতে গৃহ নির্মাণ করে দেওয়ার জন্য বরগুনার তালতলী উপজেলায় ১৭ কোটি ১ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এ টাকা দিয়ে উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ১০০টি গৃহ নির্মাণ করা হয়। এ প্রকল্পের গৃহ নির্মাণ বাস্তবায়নে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আসাদুজ্জামান এবং কাজের তদারকির দায়িত্ব তালতলী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রুনু বেগমের থাকলেও তার পরিবর্তে পার্শ্ববর্তী আমতলী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ মফিজুল ইসলাম কাজের তদারকি করছেন বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছেন। তিনিই নি¤œমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে এসব গৃহ নির্মাণ করেছেন বলে উপজেলার গৃহ পাওয়া একাধিক ব্যক্তিরা অভিযোগ করছেন।

উপজেলার কড়ইবাড়িয়া ইউনিয়নের বেহেলা গ্রামের অসহায় ও স্বামী পরিত্যক্তা উর্মিলা রাণী এ প্রকল্পের আওতায় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আশ্রায়ণ প্রকল্পের-২ আওতায় একটি ঘর উপহার পায়। যা গত ২৩ জানুয়ারী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন। ওই অসহায় নারীর ঘর নির্মাণের সময় দুই দুইবার দেয়াল ধসে পড়ে। সর্বশেষ গতকাল বুধবার সকালে দেয়াল ভেঙ্গে পড়ে এতে তিনি অল্পের জন্য বেঁচে যান।

আজ বৃহস্পতিবার (০৪ ফেব্রুয়ারী) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখাগেছে, নির্মাণাধীন ঘরটির দেয়াল মাটিতে পড়ে রয়েছে। এসময় স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, গৃহ নির্মাণে নি¤œ মানের সামগ্রী ব্যবহার করে ও সিমেন্ট কম দিয়ে মিস্ত্রিরা কোন রকমে ঘর তৈরী করে দিচ্ছেন। এই জন্যই বার বার দেয়াল ভেঙ্গে পড়ছে। নি¤œমানের উপকরণ দিয়ে গৃহ তৈরী করায় ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা। তারা সরকারের কাছে টেকসই মজবুত ঘর নির্মানের জন্য দাবী জানান।

স্বামী পরিত্যক্তা উর্মিলা রাণী বলেন, জীবন দশায় এই প্রথম প্রধানমন্ত্রী আমাকে একটি ঘর উপহার দিয়েছেন। তাও আবার নির্মাণের পূর্বেই দুইবার ঘরের দেয়াল ভেঙ্গে পড়ছে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে আরো বলেন, এই ঘর নির্মাণ শেষে যদি ভেঙ্গে আমার গাঁয়ের উপর পড়ে ও ঘরের মধ্যে যদি আমার জীবন চলে যায় তাহলে সেই ঘরের আমার কোন দরকার নাই। তিনি আরও জানান, রড, ইট, বালিসহ নির্মাণ সামগ্রী গাড়িতে করে আনা নেওয়ার জন্য ঠিকাদারকে আমার ৯ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। যা আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানিয়েছি।

তালতলী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রুনু বেগম মুঠোফোনে বলেন, এ উপজেলার প্রধানমন্ত্রীর আশ্রায়ণ প্রকল্পের-২ আওতায় নির্মিত গৃহগুলোর কোন তদারকি আমি করিনি। ইউএনও স্যার জনৈক ঠিকাদারের মাধ্যমে গৃহ নির্মাণ করিয়েছেন এবং আমতলী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সেই কাজের তদারকি করছেন।

তালতলী প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মুঃ আঃ মুতালিব বলেন, আমতলীর পিআইও এ উপজেলার যে কয়টি গৃহ নির্মাণ কাজের তদারকি করেছেন সবগুলোই নি¤œমানের সামগ্রী দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে।

আমতলী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ মফিজুল ইসলাম তালতলী উপজেলায় গৃহ নির্মাণ ও তদারকির কথা তিনি অস্বীকার করেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আসাদুজ্জামান মুঠোফোনে বলেন, এ উপজেলায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া গৃহগুলোর মধ্য থেকে উপজেলার বেহালা গ্রামের স্বামী পরিত্যক্তা উর্মিলা রাণীর নির্মাণাধীন গৃহের দেয়াল ভাঙ্গার সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ঠিকাদারকে দ্রুত ভেঙ্গে পড়া ঘরের দেয়ালের মালামাল সরিয়ে নতুন করে টেকসই ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছি। উর্মিলা রাণীর কাছ থেকে নেয়া ৯ হাজার টাকা ঠিকাদারকে ফেরৎ দিতে বলেছি।

© 2023 বরিশাল বাণী কতৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by Eclipse Web Host