বরিশালে চিকিৎসকের বাসায় শিশু গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনায় অবশেষে মামলা দায়ের

প্রকাশের তারিখ: ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২১ | ৯:৩৩ অপরাহ্ণ

উজিরপুর (বরিশাল) প্রতিনিধি :: চিকিৎসকের বাসায় শিশু গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনায় অবশেষে উজিরপুর মডেল থানায় ৩জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

২৭ ফেব্রুয়ারি দুপুরে নির্যাতিত শিশুর কাকা তপন বাড়ৈ বাদী হয়ে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালের রেজিস্টার ডাঃ সি.এইস রবিনের স্ত্রী রাখী দাস, ডাঃ সি.এইস রবিন ও কম্পাউন্ডার বাসুদেব এর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

এদিকে হঠাৎ করে ২৬ ফেব্রুয়ারি উজিরপুর হাসপাতালে ভর্তি শিশু গৃহকর্মী নিপা বাড়ৈসহ তার পরিবারের লোকজন ভোররাত থেকে নিখোঁজ হয়।

এ ব্যাপারে হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ শওকত আলী থানায় নিখোঁজ মর্মে একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। এর সূত্র ধরে মডেল থানার এস,আই আনিসুর রহমান, মাহাতাব হোসেনসহ একদল পুলিশ সদস্য আগৈলঝাড়ার তপন বাড়ৈর শ্বশুরবাড়ি থেকে তাদেরকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে এসে মামলা দায়ের করেন।

নির্যাতিত শিশু ও তার পরিবার সূত্রে জানা যায়, উজিরপুর উপজেলার ওটরা ইউনিয়নের গজালিয়া গ্রামে ডাঃ সি.এইস রবিনের বাড়ি। চাকুরী করেন ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে বাসা শ্যামলীতে। নিপার পিতা প্রতিবন্ধী মা ছোট বেলায় সংসার ছেড়ে পালিয়ে যায়। অর্ধাহারে-অনাহারের সংসার। করোনার কারণে অভাবের তাড়নায় গত ৬ মাস পূর্বে স্থানীয় বাসুদেবের মাধ্যমে হারতা ইউনিয়নের জামবাড়ি গ্রামের ননী বাড়ৈর মেয়ে নিপা বাড়ৈ (১১) ডাক্তার সি.এইস রবিনের বাসায় গৃহকর্মীর কাজে যায়। গৃহকর্মী নিপা বাড়ৈ জানায় কাজের শুরু থেকেই সামান্য ভুলত্রুটি হলেই ডাক্তার সাহেবের স্ত্রী রাখী তার শরীরে কখনো খুনতি দিয়ে আঘাত, কখনো বা ধারালো চাকু দিয়ে কোপ মারত। এমনকি চিৎকার দিলে গলা চেপে ধরে দেওয়ালের সাথে মাথায় আঘাত করত। এতে তার শরীরের দুই হাত, হাতের আঙ্গুল, মাথা, গলায়, মুখমন্ডল ও পিঠসহ বিভিন্ন স্থানে অগনিত ক্ষতের চিহ্ন রয়েছে। বাড়ি থেকে মাঝে মধ্যে বৃদ্ধ দাদু ও কাকারা ফোন দিলে ডাক্তারের স্ত্রী রাখী মারধরের কথা না বলার জন্য ভয়ভীতি দেখাত। গত ২১ ফেব্রুয়ারি গৃহকর্মী নিপা বাড়ৈর উপর ডাক্তারের স্ত্রী অমানসিক নির্যাতন চালায়। মাথায় চাকু দিয়ে কোপ মারে এতে নিপা সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে। কিছুটা সুস্থ হওয়ার পরে ভয়ভীতি দেখিয়ে কাউকে কিছু না বলার হুমকি দিয়ে ২৩ ফেব্রুয়ারি ডাক্তারের কম্পাউন্ডার বাসুদেবের মাধ্যমে তার গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। গ্রামের বাড়িতে পৌঁছলেই বাড়ির দাদু, কাকিমা, কাকারা মিলে তার শারীরিক অবস্থা দেখে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে শিশু গৃহকর্মী কেঁদে ফেলে সবকিছু খুলে বলে।

পরে স্থানীয়রা উজিরপুর থানা পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করলে মডেল থানার এস,আই মাহাতাব তাকে উদ্ধার করে উজিরপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।

মডেল থানার ওসি জিয়াউল আহসান জানান, হাসপাতাল থেকে নিখোঁজ হওয়া নিপা বাড়ৈকে উদ্ধার করে আনা হয়েছে এবং ভিকটিমের চাচাসহ ৩ জনকে আসামী করে ২৭ ফেব্রুয়ারি মামলা দায়ের করেছেন। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

© 2023 বরিশাল বাণী কতৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by Eclipse Web Host