ব্যবসায়ীদের স্বআরোপিত নিয়ম গলাচিপায় ৪৮ কেজিতে ধানের মণ

প্রকাশের তারিখ: মে ১০, ২০২১ | ১:৫১ অপরাহ্ণ

সঞ্জিব দাস, গলাচিপা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
গলাচিপা উপজেলা কৃষকরা চলতি বোরো মৌসুমে ধান বিক্রি করতে এসে আড়তদার ও ফরিয়া চক্রের প্রতারণার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগী কৃষকদের অভিযোগ, নিয়ম-নীতি লঙ্ঘন করে স্থানীয় ধান বাজারে আড়তদার ও ফরিয়া চক্রটি সংঘবদ্ধ হয়ে ৪০ কেজিতে এক মণের পরিবর্তে ৪৮ কেজি নির্ধারণ করায় প্রতি মণে ১৫০ টাকা করে ঠকছেন দরিদ্র কৃষকেরা। দীর্ঘদিন ধরে ওজনে এমন কারচুপি চললেও উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার কৃষক এই চক্রের হাতে জিম্মি হয়ে তা নীরবে মেনে নিচ্ছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গলাচিপা উপজেলার ধান ক্রয়ের ৮০-৯০ জন আড়তদার এবং কয়েকশ ফরিয়া রয়েছে। এরা মৌসুমভিত্তিক ধান, ডাল, বাদাম, মরিচসহ অন্যান্য ভুষামাল কেনেন। আড়তদার মালিক সমিতির অধীনে এদের রয়েছে একটি শক্তিশালী চক্র। বিভিন্ন ফসল মৌসুমে এই চক্র নিজেদের ইচ্ছামতো উৎপাদিত কৃষি পণ্যের মূল্য ও পরিমাণ নির্ধারণ করে কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য কম মূল্যে বিক্রি করতে বাধ্য করছেন।
ভুক্তভোগী কৃষক আবুল হোসেন জানান, চলতি বোরো মৌসুমে বাজারে প্রতি মণ (৪০ কেজি) ধান ৯০০ টাকা থাকলেও গলাচিপায় ধানের বাজারের আড়তদারের তারা ৪৮ কেজিতে এক মণ নির্ধারণ করে তা ৯০০ টাকায় কিনছেন। এতে কৃষকরা মণপ্রতি ধানে ১৫০ টাকা করে ঠকছেন। এতে আপত্তি জানালে ফড়িয়া এবং আড়তদারেরা কৃষকদের কাছ থেকে কেউ ধান কিনছেন না।গোলখালী ইউনিয়নের কালিরচর গ্রামের কৃষক নাসির হাওলদার জানান, গলাচিপা বাজারে ধান বিক্রি করতে এসে দেখেন ৪০ কেজির স্থালে ৪৮ কেজিতে মণ হিসাব করা হচ্ছে। এ সময় তিনি এর প্রতিবাদ জানালে আড়তদার তার ধান কিনতে অস্বীকৃতি জানান, পরে অন্য আড়তে গিয়েও একই নিয়মের কথা জানতে পারেন। পরে ধান ফিরিয়ে নেওয়ার পরিবহণ খরচের কথা চিন্তা করে তিনি ওই নিয়মেই ধান বিক্রি করতে বাধ্য হন। আরেক দরিদ্র কৃষক হাসান মির জানান, ৪০ কেজির জায়গায় আড়তদার আট কেজি ধান বেশি নিচ্ছে। কিন্তু আড়তদার ফড়িয়ারা একজোট হয়ে এই অনিয়ম করায় তারা এ অন্যয় মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। গলাচিপা আড়ৎদার সমিতির সভাপতি তাপস দত্ত ৪৮ কেজিতে মন হিসাব করার কথা স্বীকার করে বলেন, আমরা ঠিকই ৪৮ কেজিতে মন হিসাব করি। এজন্য অন্যান্য বাজারের তুলনায় এখানে ধানের মূল্যও বেশি। এতে কৃষকদের সমস্যা হওয়ার কথা নয়। শনিবার সকালে গলাচিপা সরেজমিনে ধানের হাট ঘুরে দেখা গেছে, অনেক কৃষক এই পরিমাপের কথা জেনে বিক্রি করতে আনা ধান বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যা্েচ্ছন। আবার অনেকে আড়ৎদার ও ফড়িয়াদের সঙ্গে দরকষাকষি করছেন। গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশিষ কুমার বলেন, ৪০ কেজির পরিবর্তে কেউ যদি কৃষকদের কাছ থেকে ওজনে ৪৮ কেজি নেয় সেটা অন্যায়। বিষয়টি তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

© 2023 বরিশাল বাণী কতৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by Eclipse Web Host