অনলাইন পরীক্ষা নিয়ে পবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের ভাবনা

প্রকাশের তারিখ: মে ১৮, ২০২১ | ১১:২৪ অপরাহ্ণ

অনলাইন পরীক্ষা নিয়ে পবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের ভাবনা

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

গত বছর (৮ মার্চ) দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। করোনাভাইরাসের দ্রুত সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পেতে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সেই থেকে এখন অবধি বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের এক বছর পূর্ণ হলেও খোলার কোনো সম্ভাবনাই নেই। ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সেশনজটে আটকে গেছে। তাই শিক্ষার্থীদের সেশনজট থেকে মুক্ত রাখতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ এখন অনলাইনে পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে।

অনলাইনে পরীক্ষা যৌক্তিক নাকি অযৌক্তিক এ নিয়ে চলছে নানা তর্ক-বিতর্ক। অনলাইনে পরীক্ষা নিয়ে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের ভাবনা জানিয়েছেন সানজিদা উষা ও ইমরানুল ইসলাম।

অনলাইনে পরীক্ষা বিষয়ে পবিপ্রবির কৃষি অনুষদের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী এস এম রিয়াজ-উস সালেহীন বলেন, আমরা যেহেতু প্রযুক্তি বিষয়ের শিক্ষার্থী সেহেতু আমাদের সবকিছু হাতে হাতে না শিখলে এই জ্ঞান আমরা ভবিষ্যতে কর্মক্ষেত্রে কাজে লাগাতে পারবো না। সেজন্য আমি চাই স্বশরীরে ভার্সিটিতে গিয়ে পরীক্ষার হলে বসে পরীক্ষা দিতে এবং নিজ হাতে প্র‍্যাক্টিক্যাল করতে। বাস্তবিক জ্ঞানের কোনো বিকল্প নেই ও হতে পারে না। এটা সরকার ও শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সকলকে বোঝা উচিৎ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউট্রিশন অ্যান্ড ফুড সায়েন্স বিভাগের অষ্টম ব্যাচের শিক্ষার্থী মোবারক হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অনলাইনে পরীক্ষা নেয়া মেধা যাচাইয়ের কোনো পর্যায়ের মধ্যেই পড়ে না। যেখানে স্বশরীরে পরীক্ষা দেয়ার সময় ছাত্র-ছাত্রীরা বিভিন্ন অসদুপায় অবলম্বন করে সেখানে অনলাইনে পরীক্ষা নিলে তা প্রতিহত করা আরো অনেক কঠিন হবে। অন্যান্য দেশে হয়ত প্রযুক্তির উন্নত ব্যবহার রয়েছে তাই তারা সঠিকভাবে মেধা যাচাই করতে পারলেও এটা বাংলাদেশের জন্য অনেকটা কঠিন! এই মুহূর্তে অসম্ভব।’

অনলাইন পরীক্ষা নিয়ে  নিউট্রিশন অ্যান্ড ফুড সায়েন্সের শিক্ষার্থী জায়াদুল হক জানান, ‘ছুটিতে দিন মোটেই ভালো যাচ্ছে না। লকডাউন স্থবির করেছে জীবন যাপন। স্বাভাবিক জীবন যাপনের যে স্বতঃস্ফূর্ততা সেটি নেই। একদিকে যেমন করোনার দুশ্চিন্তা অন্যদিকে শিক্ষা আর ক্যারিয়ার। সাধারণ নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হিসাবে বর্তমান পরিস্থিতে অনেকের মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়েছে। জীবন এই পর্যায়ে এসেই যেন বন্দী হয়ে গেলো শঙ্খনীল কারাগারে। অনলাইন এক্সাম নিয়ে আমার ভাবনা বলতে গেলে প্রথমত বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের  বেশীর ভাগ ছাত্রছাত্রী মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত। অনলাইন ক্লাসের ডিভাইস খরচ আর ইন্টারনেট বিল তা বহনে অনেকের পক্ষে সম্ভব না। এছাড়াও অনলাইন ক্লাস-পরীক্ষায় অনীহা তো রয়েছেই।

বিজনেস ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের শিক্ষার্থী পাপিয়া অন্তু বলেন, আমাদের দেশে অনলাইন ক্লাস-পরীক্ষা পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত ডিজিটাল অবকাঠামো এখনো তৈরি হয়নি। প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেক শিক্ষার্থী এই অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারে না। কেবলমাত্র ৩০-৪০ ভাগ ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহণে অনলাইন ক্লাসের কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। সেক্ষেত্রে অনলাইন ক্লাস সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হচ্ছে না। আর এক্ষেত্রে অনলাইনে পরীক্ষার মতো বড় একটি সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ বৈষম্যের শিকার হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এমতাবস্থায় সরকারের উচিত যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ক্লাসরুমে ফেরার ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং যথাযথভাবে ক্লাস নিয়ে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা। তবেই হয়ত কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া সম্ভব।

প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী নিশাত তাসনিম তার অনুভূতি জানাতে গিয়ে বলেন, ‘অনলাইনে পরীক্ষায় অনেক রকম জটিলতা আছে। কিন্তু আরো দীর্ঘদিন যদি এভাবে খুলবে করেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খোলা হয় তাহলে অনলাইন পরীক্ষাই নেয়া উচিত। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের পরীক্ষা ক্লাস এসব প্রথম থেকেই চালু রাখছে।’

© 2023 বরিশাল বাণী কতৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by Eclipse Web Host