মেঘনা নদীর অব্যাহত ভাঙনে বিলিন হচ্ছে প্রাচীনতম দ্বীপ মনপুরা

প্রকাশের তারিখ: জুলাই ৯, ২০২১ | ৬:২০ অপরাহ্ণ

সোহাগ মাহামুদ সৈকত , মনপুরা প্রতিনিধি।।
ভোলার মনপুরা উপজেলা ৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। ভোলা জেলার মূল ভুখন্ড থেকে ৮০ কিলোমিটার বিচ্ছিন্ন চারপাশে মেঘনা নদী দ্বারাবেষ্টিত সবুজ সমোরহে ঘেরা মনপুরা। দেড় লক্ষাধিক লোকের বসবাস। প্রতিদিন রাক্ষসী মেঘনার অব্যাহত ভাঙ্গনে বসত ভিটা ফসলি জমি হারিয়ে মানুষ নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। হাজার হাজার একর ফসলী জমি আজ নদীর গর্ভে বিলীন। ভাঙ্গন কবলিত এলাকার সাধারণ মানুষ আশ্রয় নিচ্ছে নতুন জেগে উঠা চর কিংবা বেড়িবাঁধে।
মেঘনার ভাঙ্গন থেকে মনপুরাকে রক্ষা করতে হলে চারিদিক ব্লক বা ড্যামপিং ব্যাবস্থা করে স্থায়ীভাবে ভাঙ্গন রোধের আকুতি জানান অসহায় পরিবার।একদিকে করোনা ভাইরাস মোকাবেলা হিমশিম খেতে হচ্ছে, অন্যদিকে মেঘনা নদীর তীব্র ভাঙ্গনে ভিটেমাটি হারিয়েছে নদী পাড়ের বসবাস করছেন দ্বীপের শতশত বাসিন্দারা। এই ক্রান্তিকালে নদী ভাঙ্গন এলাকা আসেনি সরকারি কোন উদ্ধত কর্মকর্তা।

কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত মানুষরা জানায়, আমাদের ভাঙ্গন প্রতিরোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হোক আমরা কোনো ত্রাণ চাই না।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, বর্তমানে মনপুরা উপজেলা তীব্র নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে, ফলে ঘরবাড়ি, স্থাপনা, কৃষি জমিসহ সহায় সম্বল হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন এখানকার মানুষজন। সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় ইয়াশের কারণে মনপুরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ অনেক জায়গা বিলিন হয়ে গেছে। এখন পযর্ন্ত সংস্করণ কোন ভূমিকা নাই তাদের।এতে হতাশ হচ্ছে বেড়িবাঁধের মানুষ। একের পর এক ফসলি খেতের জমিসহ নিজেদের থাকার ঘরবাড়ি নদী গর্ভে বিলিন হচ্ছে প্রতিনিয়ত। দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি এসব অসহায় মানুষের।
সোনার চারের বাসিন্দা সাহেলা বেগম বলেন,জন্ম আমার এই দেশে এহন বয়স ৭০ হইছে।এহন পযন্ত ৩বার নদী ভাঙ্গছে।সকল সয়সম্বল হাঁড়িয়ে এখন ছেলে মেয়ে নিয়ে বেড়িবাঁধের উপর বসবাস করি।কোন আয় রোজগার নাই নদীতে মাছ ধরি পাইলে বেছি চাউল আনি।না পাইলে উপবাস থাকি।আমার বাবাও অনেক জমি ছিলো সব জমি এখন নদী মাঝে।এখন আর আমাদের কোন জায়গা নাই এই ভাবে বেড়িবাঁধের উপর কাটতে হবে সামনের জীবনটুকু।
মনপুরা নদীর ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে মনপুরা দখিনাহাওয়া সী, সূর্যমুখী,বাতিরখাল, সোনারচর, মাষ্টারহাট, চৌধুরীবাজার, নাইবেরহাট, কাউওয়ারটেক সহ উপজেলার অনেক জায়গা। মেঘনার ভাঙ্গনের অনেকের ঘর-বাড়িসহ আবাদি জমি নদী গর্ভে চলে গেছে।
এছাড়াও বর্ষা শুরুতে প্রায় শতাধিক বসতবাড়িসহ কয়েক শত একর ফসলি জমি ও গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন হতে চলছে। কেউ কেউ দুই তিনবার পর্যন্ত ঘরবাড়ি সরিয়ে নিয়েছেন। এখন মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই অনেকের।বর্ষার শুরুতে মেঘনা আরো আগ্রাসী রূপ ধারণ করেছেন। বারবার নদী ভাঙনের শিকার এসব পরিবারের কেউ কেউ নদীর বাঁধে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।
দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অলিউল্লাহ কাজল জানান, মনপুরা চতুর্পাশে মেঘনা নদী। ভাঙ্গন প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য আমাদের নেতা আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব এমপি মহোদয়ের সাথে কথা বলেছি।তিনি মনপুরা রক্ষাতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করবেন বলে জানান। তিনি বলেন, দ্রুত মনপুরা চতুর্পাশে স্থায়ী ব্লকবাধ দেয়া প্রয়োজন।
এব্যাপারে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শেলিনা আকতার চৌধুরী বলেন, মেঘনার ভাঙ্গনে মনপুরা ছোট হয়ে যাচ্ছে। মেঘনার ভাঙ্গন রোধে ইতিমধ্যে উত্তর মাথায় নদীর তীর রক্ষা প্রকল্প কাজ আমরা শেষ করেছি। নদীভাঙ্গনের হাত থেকে মনপুরাকে রক্ষা করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি।
এব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডিভিশন-২ নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ জানান,উপকুলীয় এলাকায় স্থায়ীভাবে নদীভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য “ভোলা জেলার মুজিব নগর ও মনপুরা উপজেলা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ পুর্নবাসন নিস্কাসন ব্যাবস্থার উন্নয়ন ও তীর সংরক্ষণ” নামে ১১৯৩ কোটি টাকার প্রকল্প তৈরি করে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেছি। প্রকল্পটি অনুমোদন হলেই স্থায়ীভাবে নদীভাঙ্গনের হাত থেকে মনপুরাকে রক্ষা করতে পারবো।
##

© 2023 বরিশাল বাণী কতৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by Eclipse Web Host