এবার ডিজিটাল আইনের মামলার আসামী হলেন ঝালকাঠি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক

প্রকাশের তারিখ: জুলাই ৩০, ২০২১ | ১:২৫ পূর্বাহ্ণ
বরিশাল বাণী: ঝালকাঠি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও যুগান্তরের জেলা প্রতিনিধি অ্যাডভোকেট আক্কাস সিকদারের নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ফেসবুকে একটি কমেন্টকে কেন্দ্র করে বুধবার রাতে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শারমিন মৌসুমি কেকা বাদী হয়ে ঝালকাঠি থানায় এ মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ঝালকাঠি প্রেস ক্লাব। অবিলম্বের মামলা প্রত্যাহার করা না হলে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারি দেন প্রেস ক্লাব নেতারা। ঝালকাঠি থানার ওসি খুলিলুর রহমান জানান, একজনের ফেসবুকের একটি পোস্টে আক্কাস সিকদার কমেন্ট করেন। ওই কমেন্টের সূত্র ধরে বুধবার রাতে মামলাটি দায়ের করা হয়। এ ঘটনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। এদিকে প্রেস ক্লাব নেতারা জানিয়েছেন, গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে আওয়ামী লীগ নেত্রী শারমিন মৌসুমী কেকার বিরুদ্ধে এক নারীর চুল কাটা এবং একটি বিদ্যালয়ের শহীদ মিনার ভেঙে স্টল নির্মাণ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশ করায় তিনি আক্কাস সিকদারের ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। চুল কাটার ঘটনায় কেকার বিরুদ্ধে ১৭ সেপ্টেম্বর ঝালকাঠির আদালতে মামলা দায়ের হয়েছিল। এরই জের ধরে সাংবাদিক নেতা আক্কাস সিকদারের নামে এ মামলা দায়ের করা হয় বলে অভিযোগ করেন প্রেস ক্লাবের নেতারা। মামলা দায়েরের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন- ঝালকাঠি প্রেস ক্লাবের সভাপতি চিত্তরঞ্জন দত্ত, সহ-সভাপতি দুলাল সাহা, মানিক রায়, সহ-সাধারণ সম্পাদক কেএম সবুজ, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক অলোক সাহাসহ সব সদস্য।
ঘটনার অন্তরালে জানা যায়, ঝালকাঠির নির্যাতিত গৃহবধূ পারভীন বেগম (৩০) জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শারমিন মৌসুমী, শহর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমানসহ ৬ জনকে আসামি করে মামলা করেন। বাদী পারভীন বেগম আরজিতে উল্লেখ করেন, গত বছরের ১০ জুলাই ব্যবসায়ী বোরহান উদ্দিনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তারা ঝালকাঠি শহরের সুতালড়ির এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন। বিয়ের পর ক্ষিপ্ত হয়ে স্বামীর তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীর ভাই আনিসুর রহমান ও আওয়ামী লীগের নেত্রী শারমিন মৌসুমী কেকার নেতৃত্বে আসামিরা ৩০ আগস্ট তাদের ভাড়া বাসায় হামলা চালান। তাদের মারধর করে ২ লাখ টাকা ও তিন ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নেন। সেখান থেকে বেধড়ক মারধর করে আসামিরা তাকে (পারভীন) তুলে নিয়ে শহরের চাঁদকাঠি এলাকার একটি হোটেলে আটকে রাখেন। সেখানে গভীর রাত পর্যন্ত তাকে নির্যাতন ও শ্লীলতাহানি ঘটায়। একপর্যায়ে আসামিরা তার মাথার চুল কেটে দেন। পরে আনিসুর ও শারমিন মৌসুমী বাদীর ভাইকে মোবাইল ফোনে ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে বোনকে ছাড়িয়ে নিতে বলেন। না হলে তাকে হত্যা করা হবে বলেও ভয় দেখানো হয়। বাদীর ভাই নুরুজ্জামান হাওলাদার পরদিন ৩১ আগস্ট দুপুরে ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ ও স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ না করার শর্তে বাদীকে ছাড়িয়ে নেন। এদিকে ঝালকাঠি সুগন্ধা পৌর আদর্শ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শহিদ মিনার ভাঙচুরের ঘটনায় দ্রুতবিচার আইনে গত বছরের ২১ অক্টোবর আদালতের নির্দেশে বুধবার সকালে ঝালকাঠি থানায় মামলাটি রেকর্ড করা হয়। এ মামলায়ও আসামি করা হয় শারমিন মৌসুমী কেকাকে।
এদিকে শহিদ মিনার ভেঙে ফেলার ঘটনায় সুগন্ধা পৌর আদর্শ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রীতা মণ্ডল বাদী হয়ে গত রোববার বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শারমিন মৌসুমী কেকা ও শহর বিএনপি সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান তাপু, যুবমহিলা লীগকর্মী ফাতেমা শরীফসহ ১৭ জনের নামে দ্রুতবিচার আইনে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি নালিশি মামলা দায়ের করেন। বিচারক এএইচএম ইমরানুর রহমান থানার ওসিকে বাদীর অভিযোগ এফআইআর হিসেবে রেকর্ডের নির্দেশ দেন। আদালতের আদেশ হাতে পেয়ে দ্রুতবিচার আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা রেকর্ড করেন ওসি। মামলা দায়েরের পরপরই তদন্ত কর্মকর্তা এসআই হযরত আলী এজাহারভুক্ত ৩ নম্বর আসামি ফাতেমা শরীফকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রীতা মণ্ডল অভিযোগ করেন, বিদ্যালয়ের খেলার মাঠের উত্তরপূর্ব কোণায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদার প্রতীক ১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে পাঁচ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি শহিদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছিল। গত ১৪ আগস্ট বিদ্যালয়ের সভাপতি পদ থেকে বাদ পড়া শারমিন মৌসুমী কেকা, আনিসুর রহমান তাপু ও ফাতেমা শরীফের নেতৃত্বে অজ্ঞাতনামা আরও ১২-১৪ জন ব্যক্তি খেলার মাঠের গেটের তালা ভেঙে অবৈধভাবে স্কুলের কম্পাউন্ডে প্রবেশ শহিদ মিনার ভেঙে মাটির সঙ্গে গুঁড়িয়ে দেয়। স্থানীয় কিছু লোকজন ও কয়েকজন অভিভাবক এটি ভাঙার কারণ জানতে চাইলে ও বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে ১ ও ২নং আসামি পিস্তল ও ৩নং আসামি দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন করে সবাইকে সরে যেতে বাধ্য করে।
এসব ঘটনায় সাংবাদিক আক্কাস সিকদারসহ একাধিক সাংবাদিক তাদের মিডিয়ায় নিউজ করলে ক্ষিপ্ত হন শারমিন মৌসুমী কেকা। এরপর থেকেই সাংবাদিক আক্কাস সিকদারকে নাজেহালের জন্য মাঠে নামেন তিনি। অবশেষে ঠুনকো একটি বিষয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন তিনি।

© 2023 বরিশাল বাণী কতৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by Eclipse Web Host