রপ্তানিমুখী চামড়া শিল্প কী আর ঘুরে দাঁড়াবে না ?

প্রকাশের তারিখ: জুলাই ৩১, ২০২১ | ৭:০৯ অপরাহ্ণ
খাজা আহমেদ :  আমাদের অর্থনৈতিক এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ জুড়ে আছে চামড়া শিল্পের নাম।সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ  শিল্প পোশাকের পরই অবস্থান চামড়া শিল্পের।দেশের অর্থনৈতিক চালিকাশক্তির অনেকটা দখল করে আছে চামড়া। চামড়া শিল্পের প্রধানতম উপকরণ কাঁচা চামড়ার সামগ্রিক বছরের ৫০ ভাগেরও বেশি আসে পবিত্র ঈদুল আজহার কোরবানির পশু থেকে।
দেশের অর্থনীতির চাকা সচল করার মত এই শিল্পখাতে চলছে সময়ের সর্বপেক্ষা বেশি দুর্দশা। গত কয়েক বছর এই দুর্দশার কথা আমরা অনেকেই আমলে না নিলেও বর্তমানে এর করুণ পরিস্থিতি সকলের চোখে পড়ার মত। কভিড-১৯ এই চোখে পড়াকে করেছে অনেক বেশি বেগবান।
চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য দেশীয় কাঁচামালভিত্তিক একটি রপ্তানিমুখী শিল্প।বাংলাদেশের চামড়া এবং চামড়াজাত পণ্যের বড় বাজার হলো ইটালি, যুক্তরাজ্য, স্পেন, ফ্রান্স, জার্মানি, পোল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র এবং ক্যানাডা৷ এর বাইরে জাপান, ভারত, নেপাল ও অস্ট্রেলিয়াতেও বাজার গড়ে উঠছে সাম্প্রতিক সময়ে।
আমাদের দেশে চামড়া শিল্প সম্ভাবনাময় এবং উল্লেখযোগ্য খাত হিসেবে চিহ্নিত। বিশ্বে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের বাজার এখন ২১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের৷ বাংলাদেশ বিশ্ব বাজারের শতকরা ০.৫ ভাগ রপ্তানি করে৷ ২০১৭ সালের পর থেকে চামড়া খাতের চলমান অগ্রযাত্রায় ভাটা পড়তে থাকে।  করোনাকালীন সময়ে বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি আজ ক্রান্তিলগ্নে এসে পৌঁছেছে। দেশের বিশ্লেষকরা চামড়া শিল্প মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে অনেক সম্ভাবনাময় কথা বললেও আশানুরূপ মূল্য তৃণমূল পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছেনা। বিশ্ব বাজারে চামড়ার পাশাপাশি বাংলাদেশের তৈরি চামড়াজাত পণ্যের চাহিদা ও মূল্য সাম্প্রতিক সময়ে অনেকটা বাড়লেও দেশের অভ্যন্তরে তৃনমুল পর্যায়ে কাঁচা চামড়ার মূল্য বাড়েনি সমানুপাতিক হারে।  টানা কয়েক বছর পর এবার বেড়েছে অতীব সামান্য। ট্যানারি শিল্প খাতের প্রধান কাঁচামাল চামড়া।কাঁচা চামড়া শিল্প থেকে বাংলাদেশের মতো একটি দরিদ্র দেশ বিগত সময়ে এক বিলিয়ন ডলারের বেশি রোজগার করেছে। কথা ছিল এ খাতের সম্ভাবনা দিন দিন বাড়তেই থাকবে। পরিবেশগত সমস্যা কাটিয়ে উঠবে এবং চামড়া চলে আসবে সোনালি আঁশ পাটের জায়গায়।
এ দেশে চামড়া শিল্পের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৫১ সালের ৩ অক্টোবর। এরপর নারায়ণগঞ্জ থেকে সরকার চামড়া শিল্পকে ঢাকার হাজারীবাগে নিয়ে আসে; কিন্তু এখানে বর্জ্য শোধনের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। ট্যানারিগুলো প্রতিদিন প্রায় ২৪ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য বুড়িগঙ্গায় ফেলে দিত।ফলে বছরের পর বছর ধরে বুড়িগঙ্গার পানি দূষিত হয়েছে। পরিবেশ দূষণ রোধকল্পে সরকার ২০০৩ সালে হাইকোর্টের নির্দেশে বিসিকের তত্ত্বাবধানে সাভারে চামড়া শিল্পনগরী স্থাপন করে।  কয়েকবছর ধরে সাভারের হেমায়েতপুরে চামড়া শিল্প নগরীতে কার্যক্রম পরিচালনা করছে ট্যানারি মালিকরা। এতে করে এ শিল্পের একটি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়ানোর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু এখন আমাদের অবশ্যই ভাবার বিষয় সেই সম্ভাবনার দোরগোড়া আমাদের কাছথেকে নিতান্তই কাছে কিংবা তা কতো দূরে।
দুঃখজনক হলেও সত্য যে, দীর্ঘদিন ধরেই ব্যর্থতার চক্করে ঘুরপাক খাচ্ছে এ শিল্প খাতটি। এ খাতের বিকাশ এবং স্থায়ীকরণের জন্য ২০০ একর জমিতে চামড়া শিল্পনগরী গড়ে তুলতে দীর্ঘ ১৭ বছর পার হয়েছে। এতে পর্যায়ক্রমে চামড়া রফতানির আয় কমে যাচ্ছে এবং কাঁচা চামড়ার দামের ধস নেমেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, সারা বছর ট্যানারির জন্য চামড়া এলেও কোরবানির পশুর চামড়ার আধিক্য প্রতি বছরই পরিলক্ষিত হয়। অথচ চামড়া শিল্পের প্রধান এই কাঁচামাল চামড়ার দাম বাজারে সবচেয়ে কম। এবারও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। বিশ্লেষকরা মনে করেন, সরকার কাঁচা চামড়ার দাম বেঁধে দিলেও দাম নির্ধারণে ব্যবসায়ীদের স্বার্থই সংরক্ষিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের দাম বেশি হওয়া সত্তে¡ও আমাদের দেশে চামড়ার দাম কমে যাওয়া অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়। চামড়া শিল্পের বিকাশ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচন করতে সক্ষম, অধিক সমন্বয় ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা এ সম্ভাবনাময় খাতটিকে দেশের অর্থনীতির দুঃসময়ের কান্ডারি করে তুলবে নাকি অব্যবস্থাপনা আর দায়িত্বজ্ঞানহীন পর্যালোচনায় তলিয়ে যাবে এই রপ্তানিমুখী চামড়া শিল্পের নানাবিধ অর্থনৈতিক অর্জন!
লেখক: শিক্ষার্থী বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

© 2023 বরিশাল বাণী কতৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by Eclipse Web Host