আগৈলঝাড়ায় ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ যেন মৃত্যুকুপ !

প্রকাশের তারিখ: আগস্ট ৬, ২০২১ | ৫:৫৬ অপরাহ্ণ

আগৈলঝাড়া প্রতিনিধিঃ বরিশালের আগৈলঝাড়ায় একটি ব্রিজের বেহাল দশার কারণে ভোগান্তিতে পড়েছে শতশত কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী। উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের উত্তর শিহিপাশা গ্রামের পূর্বপাড়া দরগা শরীফ জামে মসজিদ ও নাজেম আলী সিকদার, আমজেদ আলী হাওলাদারের বাড়ি সংলগ্ন খালের উপর ১৯৯৬ সালে জেলা পরিষদের অর্থায়নে নির্মিত ব্রিজটি দীর্ঘ ছয় বছর যাবত জরাজীর্ণ অবস্থায় পরে রয়েছে।
ব্রিজের উপর দুই পাশে সিমেন্টের তৈরি স্লাব ধসে যাওয়ায় এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। এলাকাবাসীর আশঙ্কা, যেকোনো মুহূর্তে এটি ধসে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
ঝুঁকিপূর্ণ বিধ্বস্ত এই ব্রিজটি বিকলাবস্থার কারনে চলাচলের একদম অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসার শত শত কোমলমতি শিক্ষার্থী ও মসজিদের মুসুল্লিরা। বিকল্প কোনো যাতায়াত পথ না থাকায়, মরণফাঁদ জেনেও পার হচ্ছেন গ্রামবাসীসহ কোমলমতি শিশু-বৃদ্ধরা।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ব্রিজের দুইপাশের সিমেন্টের তৈরি স্লাব ধসে যাওয়ায় এ রাস্তা দিয়ে চলাচলের জন্য মোটরসাইকেল, ইজিবাইক ও ভ্যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। প্রতিদিনই ব্রিজ পার হতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ছেন চালকরা।
ব্রিজটির বেহাল দশার কারনে উপরের স্লাব ধসে পড়ায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের তেমন কোনো তৎপরতা না থাকায় স্থানীয় এলাকাবাসী চাঁদা তুলে তাদের নিজ অর্থায়নে কাঠ ক্রয় করে সাময়িকভাবে মেরামত করেন। কিন্তু যোগাযোগের তাগিদে প্রতিনিয়ত ব্রিজ দিয়ে মোটরসাইকেল, রিকশা, ভ্যান, সেই সঙ্গে গুপ্তেরহাটে পোনা মাছের বাজারে হাজার হাজার মানুষ ও শিক্ষার্থীদের চলাচলের কারণে এখন কয়েকটি কাঠও ভেঙে গেছে।
শিশুরা ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে প্রায়ই ছোট-বড় দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। বর্তমানে ব্রিজটির অবস্থা খুবই করুণ। যে কোনো সময় ভেঙে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন পথচারীসহ শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শত শত শিক্ষার্থী ও মসজিদের মুসল্লিদের চলাচলের একমাত্র ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন অভিভাবকসহ স্থানীয়রা।
ব্রিজটির খুঁটি, রেলিং এবং ঢালাই স্লাব ভেঙে যাওয়ায় ৫টি গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে এটি পারাপার হচ্ছে।
এলাকার কয়েকজন জানান, এই ব্রিজটির ওপর দিয়ে তাদের উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করতে হয়। ব্রিজটির কয়েকটি স্থানে একইভাবে ঢালাই ভেঙ্গে যাওয়ায় সেখানে কাঠের তক্তা বিছিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন লোকজন পারাপার হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও সাবেক ইউপি সদস্য শামীম ফড়িয়া বলেন, ১৯৯৬ সালে নির্মিত এই ব্রিজটিতে মানুষ উঠলে কখনো ডানে কখনো বা বামে কাঁত হয়ে যায়। অথচ ব্রিজটি মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরের কোনো মাথা ব্যথাই নেই। মাঝে মধ্যে শুনি ব্রিজটি মেরামত করা হবে, কিন্তু মেরামত কবে হবে তা আমাদের জানা নেই।
উত্তর শিহিপাশা গ্রামের বাসিন্দা বাদল হোসেন ফড়িয়া বলেন, এই ব্রিজের ওপর দিয়ে উপজেলার নবযুগ, চাঁদশী, গৈলা, উত্তর শিহিপাশা, মধ্য শিহিপাশা, রাংতা, কালুপাড়া, মধ্য শিহিপাশা, দাসেরহাট, নাঠৈসহ বিভিন্ন এলাকার অন্তত ২৫ হাজার মানুষ চলাচল করে।
ব্রিজটি নড়বড়ে হয়ে যাওয়ার পরও এর ওপর দিয়ে প্রতিদিন মোটরসাইকেলসহ যাত্রীবাহী ব্যাটারীচালিত ইজিবাইক ও অন্যান্য যানবাহন যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছে। এতে যেকোনো মুহূর্তে এটি ধসে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
স্থানীয় মোটরসাইকেল চালক জাহিদ হোসেন ও মামুন মিয়া বলেন, মোটরসাইকেল নিয়ে ব্রিজের ওপর উঠলেই এটি দুলতে থাকে। জানি না কখন ভেঙ্গে নিচে পরে যাই।
গৈলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শফিকুল ইসলাম টিটু তালকদার বলেন, উত্তর শিহিপাশা গ্রামের গুপ্তের হাটের পূর্ব পাশে অবস্থিত এই ব্রিজটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অচিরেই এ সমস্যার সমাধান করা হবে। যাতে করে ব্রিজটি সংস্কার হলে এই এলাকার মানুষসহ আশপাশের অনেক গ্রামের মানুষ উপকৃত হবে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ এলজিইডি’র উপজেলা প্রকৌশলী রাজ কুমার গাইন বলেন, গুরুত্বপূর্ণ এই ব্রিজটির অবস্থা খুবই বেহাল। ব্রিজটি নির্মাণের জন্য প্রকল্প তৈরি করা হচ্ছে। বরাদ্দ পেলেই দ্রুত এর নির্মাণকাজ শুরু করা হবে বলে আশা করছি।

© 2023 বরিশাল বাণী কতৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by Eclipse Web Host