তালতলীতে লাইসেন্স ছাড়াই ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অবৈধ বাণিজ্য

প্রকাশের তারিখ: সেপ্টেম্বর ৬, ২০২১ | ৬:০৪ অপরাহ্ণ

অনলাইন ডেস্ক ::: বরগুনার তালতলীতে চিকিৎসা সেবার নামে চলছে লাইসেন্স ছাড়াই ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অবৈধ বাণিজ্য। মানুষের জীবন-মৃত্যু নিয়ে ব্যবসা করছেন এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মধ্যে একটি ক্লিনিকের অনুমোদন (লাইসেন্স) থাকলেও তাও মেয়াদ উত্তীর্ণ। বাকিগুলোর একটিতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কোনো ধরনের অনুমোদন নেই।

বরগুনার সিভিল সার্জন সূত্রে জানা যায়, তালতলী উপজেলায় নিউ পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, তালতলী ইসলামী হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, তালতলী ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, দোয়েল ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। তার মধ্যে নিউ পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স আছে তবে চলতি বছরের জুন মাসে মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়। বাকি তিনটিতে কোনো ধরেন লাইসেন্স নেই। তবে আবেদন করেছে তারা।

সরকারি অনুমোদন পাওয়ার আগেই ক্লিনিক, হাসপাতাল এবং ডায়াগনস্টিক তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। অনলাইনে আবেদন করা হলেও এখনও তারা লাইসেন্স পাননি। সরকারি বিধি অনুযায়ী লাইসেন্স পাওয়ার একদিন আগেই স্বাস্থ্যসবা দেওয়ার অধিকার তাদের নেই। কিন্তু বছরের পর বছর বরগুনা স্বাস্থ্য বিভাগের উদাসীনতার জন্য এসব প্রতিষ্ঠান খুলে শুরু করেছে অবৈধ বাণিজ্য। এদিকে নবায়ণ না করেও নিউ পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কার্যক্রম চলছে কর্তৃপক্ষের চোখের সামনে।

উপজেলা পরিষদের সামনে মুক্তিযোদ্ধা ভবন ভাড়া নিয়ে তালতলী ইসলামী হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার কাযক্রম শুরু করেন। তবে কোন প্রকার অনুমোদন ছাড়াই ক্লিনিকটিতে রোগী ভর্তি এবং অস্ত্রোপচার চালাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এখানে নেই সার্বক্ষণিক চিকিৎসক। একইভাবে দোয়েল ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার গর্ভবতী রোগী ভর্তি করে অকারণে অস্ত্রোপচার করতে বাধ্য করেন রোগীর স্বজনদের। এই অভিযোগ রয়েছে দোয়েল ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে।

এদিকে নিউ পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সেবা নিতে যাওয়া রোগীদের কারণে অকারণে টেস্ট দিয়ে হয়রানি ও অতিরিক্ত টাকা নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। তালতলী ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধেও এমন অভিযোগ আছে। এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের নামে প্রতিদিন অতিরিক্ত মাইকিং এ অতিষ্ঠি সচেতন মহল।

এসব ক্লিনিকে সেবা নিতে আসা শতাধিক ভুক্তভোগী রোগীদের সাথে কথা বললে তারা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শর্তে বলেন, তালতলীতে যে কয়টি ক্লিনিক রয়েছে তারা টেস্টের নামে আমাদের হয়রানি করে আসছে। এ ছাড়াও টেস্টে অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছে। আমরা গ্রাম থেকে ডাক্তার দেখাতে আসি, আমাদের এমনভাবে হয়রানি করলে কার কাছে বিচার দিবো ও সঠিক সেবা পাবো।

এ বিষয়ে তালতলী ইসলামী হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ম্যানেজার মাসুম ফরাজী বলেন, আমাদের সকল কাগজপত্র স্বাস্থ্য বিভাগে জমা দেওয়া হয়েছে। সেগুলোর চালান ফরমও আমাদের কাছে আছে। অস্ত্রোপচারের বিষয়ে জানতে চাইলে বিষটি এড়িয়ে যায়।

নিউ পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিক মো. আবুল বাসার বলেন, আমাদের লাইসেন্সের মেয়াদ চলতি বছরের জুনে শেষ হয়েছে। তবে মেয়াদ বাড়ানোর জন্য সকল কাগজপত্র ও টাকা জমা দেওয়া হয়েছে।

তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কাওছার হোসেন বলেন, লাইসেন্স ছাড়া ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে সেগুলোর বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ আমাদের জানালে আমরা মোবাইল কোর্ট করবো।

আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকতা ডা. আবদুল মুনয়েম সাদ বলেন, সরেজমিনে ভিজিট করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, ক্লিনিকাল লাইসেন্স ছাড়া অস্ত্রোপচার ও মেজর কোনো সার্জারি করার সুযোগ নেই লাইসেন্স ছাড়া এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর।

সিভিল সার্জন অফিসার ডা. মারিয়া হাসান বলেন, তালতলীতে কয়েটা ক্লিনিকের আবেদন আছে সেগুলো ভিজিট করার কথা রয়েছে। আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকতাকে লাইসেন্স ছাড়া ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের তালিকা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। তালিকা পেলে প্রশাসনের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

© 2023 বরিশাল বাণী কতৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by Eclipse Web Host